পৃথিবীর কিছু রহস্যময় প্রাসাদ নিয়ে একটা লেখা শুরু করেছিলাম, এটা তারই ধারাবাহিকতা.........
বেশির ভাগ প্রাসাদই নির্মিত হয়েছিল মধ্যযুগে। সেই সময় এই প্রাসাদ গুলোই ছিল সকল ক্ষমতার উৎস। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতার সাথে জড়িত অনেক নির্যাতন ও নিপিড়নের ক্ষেত্রও ছিল এই মধ্যযূগীয় প্রাসাদগুলো।
আর মধ্যযুগিয় সেই অত্যাচার যে কতটা নির্মম ছিল, তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।
বেশির ভাগ প্রাসাদের দেয়াল, মেঝে গুলো এখনও অনেক অনেক অমানবিক, ক্রুর সব নির্যাতনের নির্বাক দর্শক হয়ে এখনও ঠিকে আছে। এদের সম্পর্কে রয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা ধরনের রহস্যময় উপকথা, যার বেশির ভাগই ভৌতিক।
আসুন দেখে নেই কিছু রহস্যময়, ভৌতিক প্রাসাদ...............
Chillingham Castle
পৃথিবীর অন্যতম ভৌতিক প্রাসাদ হলো ইংল্যন্ডের
Chillingham Castle। ১২০০খ্রী: আর্ল গ্রেপরিবার এটা নির্মান করেছিল। এই
ক্যাসল ছিল মুলত একটা মনেস্ট্রি। এটা পরিপূর্ণ ক্যাসলে পরিণত হয় ১৩৪৪ খ্রী:। উইলিয়াম সেক্সপিয়ারের বেশ কিছু ঐতিহাসিক নাটকে Chillingham Castle এর উল্লেখ আছে।
এখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত অশাররী হলো "নীল বালক"। প্রসাদের পিংক হলে যারা থেকেছে, তাদেরই এই ভৌতিক অভিঙ্ষতা হয়েছে। প্রতক্ষ্যদর্শীদের বক্তব্য অনুযায়ী, মধ্যরাতের প্রথম প্রহরে প্রাসাদের পিংক হলের প্যাসেজের মধ্য দিয়ে ভেসে আসে একটা বাচ্চা ছেলের গলার ভয়ার্ত কাতর চিৎকার তারা শুনতে পায়। সারা রাত জুড়ে চলা এই চিৎকার ভোর রাতের দিকে আস্তে আস্তে কমে আসতে থাকে। শেষ দিকে তারা ঘরের মধ্যে একটি নীল আগুনের গোলক দেখতে পায়, বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখা নীল আবয়বের একটা বাচ্চা ছেলেকে।
বলা হয়ে থাকে, একবার প্রাসাদের সংস্কার করার সময়ে, পিংক হলের একটা প্যাসেজের দেয়ালের পিছনের একটা গুপ্ত কুঠুরী থেকে, একটা বাচ্চা ছেলের দেহের হাড় আর নীল কাপড়ের খন্ডাংশ পাওয়া গিয়েছি.........
আরেক অশাররী অধিবাসী হলেন Lady Mary Berkeley। প্রাসাদের বিশেষ বিশেষ অংশে হটার সময়ে পিছনে তার পরিধেয় বস্ত্রের খসখসানি, ছোট বোনের নাম ধরে ডাকা ইত্যাদি শব্দ শুনতে পাওয়া যায়।
লেডি ম্যারীর ছবি।
The Tower of London
বৃটেনের টেমস নদীর তীরে অবস্থিত খুবই দর্শকপ্রিয় একটা স্থান The Tower of London । এটা বৃটিশ সরকার কতৃক ব্যবহৃত সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপত্য। মূল স্থাপত্য টি ১০৭৪ খ্রী উইলিয়াম দ্যা কনকোরার নির্মান করেছিলেন।
মজার ব্যাপার হলো এখানকার একটা টাওয়ারের নাম, টাওয়ার অব র্যাভেন। আর এখানকার আধিবাসীদের মধ্যে রয়েছে কমপক্ষে ১০ টি কাক। এর কিন্তু বৃটিশ সরকারের বেতন ভূক্ত কর্মচারী।
যাই হোক, এই ক্যাসলের সাথে জড়িয়ে আছে প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাস, যার বেশির ভাগই অত্যাচার, নিপীড়ন আর খুনোখুনির ধুসর চাদরে ঢাকা।
টাওয়ার আব লন্ডনের যার ভূত অনেকেই দেখেছেন, তিনি হলেন অষ্টম হেনরীর পত্নী Anne Boleyn। তাকে ১৫৩৬ খ্রী:এই প্রাসাদে শিরোচ্ছেদ করে হ্ত্যা করা হয়েছিল। রাজকীয় বন্দীদের মৃত্যুদন্ডের আগে এখানকার Salt Tower এ রাখা হতো। স্থানীয় অধিবাসীদের মতে মাঝে মাঝে এই জায়গার সামনে দিয়ে হাটতে গেলে কুকুর, বিড়াল সামনে আগাতে চায় না, কিছু একটা দেখে ভয় পায়.............
Bran Castle
ব্রামস্ট্রোকারের ড্রাকুলা বইটা নিশ্চয়ই অনেকেরই পড়া আছে। রোমানিয়ার কার্পেথিয়ান পর্বতমালার রহস্যময় এক কোণে পাহাড়ের চুড়োয় অবস্থিত সেই ড্রাকুলার বাসভূমি খ্যাত Bran Castle। এটা স্থানীয় ভাবে ড্রাকুলা ক্যসল নামেও পরিচিত।
১২১২ খ্রী: Teutonic Knights রা কাঠ দিয়ে এটা তৈরি করেছিলেন। পরে মঙ্গোলরা এটা ধ্বংস করে ফেলেছিল। এর পর ১৩৭৭ এর দকে স্যাক্সনরা এর পূননির্মান করেন। বর্তমানে এটা একটা মিউজিয়াম।
তবে যার অত্যাচারের জন্য ট্রানসালভিয়া বেশি কুখ্যাত সেই Vlad the Impaler, Bran Castle থাকার কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পুরো প্রাসাদটি নানা রকম চ্যাপেল, গুহা, ভুগর্ভস্থ ঘর প্রসাদটির রহস্যময়তা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
একটি গুপ্ত সিড়ি।
কুইন মেরীর মৃত্যূর পর তার ইচ্ছা অনুযায়ী, ওনার হৃৎপিন্ড একটা কাসকেটে মধ্যে রেখে Bran Castle এর একটা গুহায় সমাহিত করা হয়েছিল............
Moosham Castle
অস্ট্রিয়ার উটেনবার্গের Moosham Castle টি বর্তমানে উইচ ক্যাসল বা ডাইনীয় প্রাসাদ নামে পরিচিত। খ্রী ১৪০০ অব্দে প্রিন্স বিশপ Salzburg কতৃক এই প্রাসাদ নির্মিত হয়েছিল।
এত সুন্দর ক্যাসলটির এমন ভয়াবহ নাম হবার কারণ কিন্তু খুবই করুণ। ১৭ শ এবং ১৮ শ শতকে প্রাসাদের ডনজানে হাজার হাজার কম বয়সি
মেয়েদের ডাইনী সন্দেহে আটকে রেখে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছিল।
Dragsholm Castle
ডেনমার্কে অবস্থিত ১২শ শতকে নির্মিত। বর্তমানে এটা একটা বেশ জনপ্রিয় হোটেল। এবং এখানকার ভূতুরে কান্ড কারখানা গুলো হোটেল কতৃপক্ষ বেশ গর্বের সাথেই প্রচার করে।
এখানকার যে যাদের ভুত দেখা গেছে তারা হলো গ্রে লেডি, হোয়াইট লেডি এবং আর্ল আব বোথওয়েল। এর মধ্যে হোয়াইট লেডি ভূতের কাহিনীটা বেশ হৃদয়স্পর্শী।
স্থানীয় উপকথা অনুযায়ী, অনেক অনেক দিন আগে এক তরুনী, প্রাসাদের কর্মচারীর প্রেমে পড়ে। মেয়েটির বাবা একথা জানতে পেরে মেয়েটিকে একটি কক্ষে বন্দী করে রাখে। এর পর হতভাগ্য মেয়েটিকে আর কেউ কখনো দেখেনি।
পরবর্তীকালে ২০শ শতকে কাছাকাছি সময়ে প্রাসাদ সংস্কারের সময় পুরানো কিছু দেয়াল ধ্বসে পরে। দেয়ালের ওপাশে কি ছিল আনুমান করা যায়?
ওখানে ছিল সাদা কাপড়ে জড়নো নারী দেহের একটা কংকাল..........
চলবে.............????
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১:২৮