আমাকে নিয়ে মায়ের স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়া,
ছেলে লেখা-পড়া শিখবে, অনেক বড় হয়ে মানুষের মত মানুষ হবে!
আমি মানুষ হতে পেরেছি কিনা জানি না?
তবে সত্যিই অনেক বড় হয়েছি-
ভাবতে ভাল লাগে,
আজ আমার মায়ের স্বপ্ন গুলো সব বাস্তবে রুপ নিয়েছে! কিন্তু-
আমার এই সাফল্যে মা কী সত্যিই খুশি হতে পেরেছে?
আমি এক বেলা অভুক্ত থাকলে মা'র কপালে দুশ্চিন্তার রেখা পড়তো,
ক্লান্ত বেশে বাড়িতে ফিরলে মা আঁচল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিতো;
আজও আমার সেই মা আছে, মা'র পুরানো সেই আঁচলও আছে! কিন্তু-
আমার শরীরে যে ক্লান্তির ছাপ নেই!
তাই বোধ হয় মা আর ডেকে নেয় না,
পরম স্নেহে তার নিজের আঁচল দিয়ে আর ঘাম মুছিয়ে দেয় না।
আসলে দোষটা মায়ের নয়, হয়তো আমারও নয়;
দোষটা হলো যুগের-
আজ আর কোন সন্তান, কেমন আছো (?) বলে মা'র কাছে যায় না!
বিলাসিতার গড্ডালিকার মধ্যে থেকে মা'র খোঁজও নেয় না।
আর সেই জন্যই তো-
আমার দুঃখিনী মায়ের স্বপ্ন গুলো আজ ডুকরে কেঁদে ওঠে,
বৃদ্ধাশ্রম নামক একটি ঘরের চার দেওয়ালের মাঝে!
আমি পালঙ্কে শুয়ে নিস্তব্দ গভীর রাতে মা'র কথা ভাবি,
নিষ্পলক চোখে দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকি-
কারণ, সেখানে যে টাঙ্গানো আছে আমার দুঃখিনী মায়ের ছবি!
কিন্তু একটু উঁকি দিলে পাশের ভাঙা ঘরে,
মায়ের জীবন্ত মূর্তিটা যে দেখতো পাবো-
সেই ধারণাটাই আজ আমার মন থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
বৃদ্ধাশ্রমে বসে আমার মা আমার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে,
তিন দুই এক এমনি করে,
হয়তো প্রাণ ভরে দোয়াও করছে!
কি জানি, মা বুঝি মনে মনে আমার জন্য চোখের পানিও ফেলছে!
আমি ঠিকই আবারও মায়ের কোলে ফিরে যাবো,
আজ নয়, হয়তো দুইদিন পর-
আবারও মায়ের আদর মাখা ভালবাসায় সিক্ত হবো!
মায়ের কোলে মাথা রেখে দস্যি ছেলেটা আবারও একদিন ঘুম যাবে,
মা পরম স্নেহে মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে আর গাইবে-
খোকা ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো, বর্গী এলো দেশে!
কিন্তু পার্থক্য থাকবে শুধু একটাই,
সেই ঝুঁপড়ি ঘরে বসে আর মায়ের আদর নিতে পারবো না!
কারণ তখন যে ঘরটাতে আমি মার কোলে মাথা রেখে ঘুমাবো,
তার যে একটা আলাদা নাম আছে!
যাকে সবাই 'বৃদ্ধাশ্রম' নামে চেনে!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৩