লাংকায়ির বিচ ও কেবল কার (১):
লানকাউয়ি আইল্যান্ড হপিং.... (২)(ভ্রমন ছবি ব্লগ):
লানকাউয়ি তে ৩য় দিন আমাদের পরিকল্পনা পুলাও পায়ার মেরিন পার্কে যাওয়ার। এই ট্রিপের সবচেয়ে দামি প্যাকেজ এই মেরিন পার্ক, জন প্রতি ৪০০ রিঙিত খরচ, সারাদিনের ট্যুর।
সকাল বেলা আমরা ট্যুর কম্পানির লোগো লাগানো ব্যাজের মত স্টিকার জামাতে লাগিয়ে ফ্রানজিপানি হোটেল এর সামনে এসে দাড়ালাম, এটাই আমাদের পিকআপ পয়েন্ট। কিছুক্ষন পর একই লোগো লাগানো বিশাল এক বাস এসে আমাদের তুলে নিলো। এরপর শুরু হলো লানকায়ির বিভিন্ন পিকআপ পয়েন্ট থেকে আরো লোকজন তুলতে তুলতে এগিয়ে যাওয়া। প্রায় ঘন্টা দেড়েক পর আমরা জেটিতে পৌছালাম। এখানে আমাদের নাম চেক করে সবাইকে হাতে পড়ার জন্য কাগজের ব্যান্ড দেয়া হলো। জেটি বা ঘাট শুনলেই আমাদের যেরকম সদরঘাটের ছবি চোখে ভেসে উঠে এই ঘাট মোটেও তেমন না, বড় এয়ারপোর্টের মত অনেক অনেক দোকান, হাতে কিছু সময় ছিল আর সকালেও নাস্তা করা হয়নাই, আমাদের কেও ছুটলো ম্যাকডোনাল্ডস এ, কেওবা স্টারবাকস এ। কিছক্ষন পর পেট ঠান্ডা করে আমরা রওয়ানা দিলাম জেটির দিকে। মাঝখানে এয়ারপোর্টের মত কাস্টমস পার হতে হলো, আমাদের হাতের ব্যান্ড দেখাতে আমাদের আটকালো না অফিসাররা, অন্য যাত্রিদের দেখলাম ব্যাগ স্ক্যান করা হচ্ছে। টুরিস্ট দের সুবিদার্থে এই আইল্যান্ডটি ডিউটি ফ্রি আইল্যান্ড করা হয়েছে তাই এই কাস্টমস চেক পয়েন্ট।
১. এই বোটে করে যেতে হবে:
২. ছোট্ট নৌকা:
পথ খুজে খুজে নিদ্রিস্ট জেটি থেকে আমাদের জাহাজে উঠলাম। ষবাইকে ভেতরে পাঠিয়ে দেয়া হলো, আমরা বিরক্তি প্রকাশ করাতে গাইড হেসে বললো জহাজ ছাড়ার কিছুক্ষন পরে উপরে উঠতে পারবো, পরে জানলাম লোকাল রুলস অনুযায়ি নিরাপত্তার কারনে জাহাজ বা ফেরির উপরে উঠা নিষেধ, সবাইকে সিটে বসতে হবে। ঝাহাজ ছাড়ার বেশ কিছুক্ষন পর গাইড এসে সবাইকে জানালো আমরা পোর্ট থেকে বেরিয়ে এসেছি ইচ্ছা করলে উপরে যেতে পারবো। সবাই উপরে উঠলেও গরমের জন্য বেশ কিছুজন আবার ফিরে গেলো নীচে। প্রচন্ড বাতাসের মাঝে ভিষন গতিতে সাগরের নীল পানি কেটে আমাদের জাহাজ চলেছে, বেশ ভালই লাগছি। আমরা এই চমৎকার পরিবেশে ফটো সেশন করতে লাগলাম।
৩. কোরাল আইল্যান্ড/ পুলাও পায়ার মেরিন পার্ক:
৪. প্ল্যাটফরম:
৫। প্ল্যাটফরমের পাশে মাছের দল:
প্রায় ঘন্টা দুয়েক পরে দুরে দেখতে পেলাম একটা ছোট্ট দ্বীপ, ওটাই সেই কোরাল আইল্যান্ড, আমাদের গন্তব্য। দ্বীপের একটু দুরে একটা বিশাল প্ল্যটফরম, ওখানেই জাহাজ ভিড়লো। সবাই নামার পর গাইড জানালো কি করতে হবে, এই প্ল্যটফরমে কাপড় বদলানো ও গোসল করার ব্যাবস্থা আছে, টয়লেট করতে সাথে ভেড়ানো জাহাজে যেতে হবে। প্ল্যটফরমের নীচে একটা আন্ডারওয়াটার অবসারভেটরি আছে, ওখান থেকে পানির নীচের জগত টা কিছুটা দেখা যায়। প্ল্যাটফরমের আসে পাষে সবাই স্নোরকল ও লাইফজ্যাকেট নিয়ে সাঁতার কাটতে পারবে যতক্ষন খুশি, এর মাঝে বুফে খাবার দেয়া হবে ১২০০ থেকে ১৩৩০ পর্যন্ত। ১৩৩০ এ একটা বোট ফেরি করা শুরু করবে যারা দ্বিপে নামতে চায় তাদেরকে, ঐ সময় মেরিন পার্কের অফিস থেকে মাছকে খাওয়ার দেয়া হবে, শার্ক ও নাকি আসে ঐ খাবার খেতে। যারা পানিতে নামতে চায় না তাদের জন্য তলা কাচের এমন একটা বিশেষ বোট কিছুক্ষন পর পর চারিদিকে ঘুরে আসবে (আমি একবারো কাউকে ঐ বোটে উঠতে দেখলাম না, পানিতে নামবে না এমন কাউকে এই ট্রিপে খুজে না পাওয়ারি কথা, মনে পড়ে গেলো ব্রিফকেস নিয়ে কেউক্রাডং আর বিশাল সুটকেস নিয়ে সেন্টমার্টিন এ যাওয়া টুরিস্টদের কথা )
আমরা ঝটপট সবাই কাপড় বদলিয়ে স্নোরকল ও লাইফজ্যাকেট পড়ে রেডি, আমি ইচ্ছা করে লাইফজ্যাকেট পড়িনি, কারন লাইফ জ্যাকেট পড়ে ডুব দেয়া যাবে না। একটু পরে দলের সবাইকে স্নোরকল কিভাবে ব্যাবহার করতে হবে এর উপরে একটা ফ্রি ক্লাস নিয়ে নেমে পড়লাম পানিতে। পানিতে নেমে মাথা খারাপ অবস্থা, নীচে এক বর্ণিল জগত, যেমন প্রবালের রং তেমন রং বেরং এর হজারে হাজারে মাছ।
৬. স্নোরকলিং এ ব্যাস্ত সবাই:
৭. পানির নীচে আমি (অবসারভেটরির কাচের জানালা থেকে তোলা)
৮. মাছের ঝাঁক (অবসারভেটরির কাচের জানালা থেকে তোলা)
বেশ অনেক্ষন পানিতে থেকে খাবারের সময় হওয়াতে উঠে পড়লাম, উঠে দেখি বিশাল লাইন, দাড়িয়ে পড়লাম লাইনে।
৯. খাবারের লাইন:
১০. দ্বীপে নামার জন্য বোট:
খাওয়ার পর দ্বিপে নামার জন্য রওয়ানা হলাম, কিন্তু দ্বিপে নেমে নতুন কিছু পেলাম না। দ্বীপের এই অংশে ছোট্ট একটু বিচ, এরপর একটা জেটির মত, ওখান থেকে নীচে পানিতে মাছ দেখা যায়। কিছুক্ষন থেকে বিরক্ত লাগলো, কারন আমাদের প্ল্যাটফরমে এর থেকে ভালো ভিউ। আবার ফিরে এলাম প্ল্যাটফরমে। কিছু করার নাই তাই আবার কাপড় পালটে নেমে পড়লাম পানিতে।
১১. ছোট্ট বিচ:
১২. দ্বীপ থেকে প্ল্যাটফরম:
১৩. প্রবাল:
১৪. প্রবাল:
১৫. প্রবাল ও মাছ:
১৬. মাছ:
যাওয়ার সময় হলো, জাহাজ ছাড়ার পর আমরা ক্যামেরা নিয়ে রেলিং এর পাশে দাড়িয়ে, একটু পর সবাইকে ভেতরে যাওয়ার অনুরোধ করা হলো কারন জাহাজ নাকি এখন স্পিড বাড়াবে, বাইরে আমরা দাড়িয়ে থাকতে পারবো না। ব্যাপার টা শুনে বিশ্বাস না করলেও ভেতরে যেতে হলো। সবাই ভেতরে আসতেই বুঝতে পারলাম স্পিড বেড়ে গেছে জাহাজের, স্পিড বোটের মতো প্রচন্ড গতিতে যাওয়া শুরু হলো, আমার একদম ধারনা ছিলনা এত গতিতে যাওয়া সম্ভব। এর মাঝে একটু পরপর বিশাল বিশাল ঢেউ এর মাথা থেকে নামার সময় মনে হচ্ছে রোলার কোস্টারে বসে আছি, চারিদেকে উত্তেজনা পুর্ন আনন্দের চিৎকার, ভালই লাগছে সবার। জানালা দিয়ে ঢেউ দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে একসময় সামনের টিভিতে মিস্টার বিনের হলিডে উৎযাপন দেখতে লাগলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:৩৮