স্কুল পলায়ন করে এত বেশী সিনেমা দেখেছি যে, ক্লাসটিচার আমাকে এতটাই প্রহার করলেন যে, পাঁচ বছরের সর্বাধিক হাজিরার পুরষ্কারটি গ্রহণ করতে হয়েছিল। আসলে সিনেমা দেখার জন্য স্কুল- কামাই দিতাম না, স্কুল- কামাই পরবর্তী নিরাপদ স্থান হিসাবে সিনেমা হল ছিল উত্তম স্থান। উদ্দেশ্য না থাকলেও ভালমন্দ যা-ই হউক সিনেমাটি দেখতে হতো। আমাদের কালে আমরা সিনেমা বা চলচ্ছিত্রকে বই বলতাম।ক্লাসটিচারের প্রহার সিনেমা দেখার সাধ মিটাতে পারেনি, তাই সেই দুঃখে আজও দেখে যাচ্ছি। অদ্যাবধি শত- হাজার সিনেমা কিংবা মুভি দেখতে না পারলেও একই মুভি শতশত বার দেখেছি। এবং এর থেকে সঞ্চিত সামান্য অভিজ্ঞতায় যা শিখেছি তা হল- বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগত কিংবা টিভি- জগতে আজ পর্যন্ত পছন্দের কোন ভাঁড়ের দেখা পাইনি। টিভি লাইনে, ভাঁড়ের চরিত্রে কয়েকজন অভিনেতা ভালো করে আসলেও শেষ পর্যন্ত এঁরা জনপ্রিয়তার ভারে ঠিকে থাকতে পারেননি। চেয়ার, ঢেউটিন, চানাচুর ইত্যাদির বিজ্ঞাপনে হারিয়ে গেছেন। বহু যুগ আগে হাসমত, মতি, টেলিসামাদ, দিলদার চলচ্চিত্র জগতের ভাঁড় হিসাবে মন্দের ভালো হয়তো করে গেছেন তারপর আর কেউই বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি। ভারতের বিখ্যাত জনি লিভার রাজপাল যাদবেরাও মাঝে মাঝে সিরিয়াস হয়ে পড়তে দেখেছি এবং সেখানকার শ্রেষ্ঠ অভিনেতারা শ্রেষ্ঠ কৌতুকাভিনেতাও। যদিও, দেশ-সমাজ- রাষ্ট্র- রাজনীতিভেদে রসিকতার ধরন ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে এবং সেই অনুযায়ী ভাঁড়ত্বের ধরনও ভিন্ন হয়। মনে করি, রসিকতা আর ভাঁড়ামি এক জিনিস নয়। তাই, কৌতুকাভিনেতা মানেই ভাঁড় নয়।
বাংলাদেশের বিনোদন জগতে হাস্য-রসিকতা কিংবা প্রহসনপূর্ণ চলচ্চিত্রের অভাব পূরণ করতে এগিয়ে এসেছেন এদেশেরই সুশীল! সমাজের বিদগ্ধ মানুষেরা। তৃণমূল হতে জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও বেছে বেছে ভাঁড়দের মনোনয়ন, নিয়োগ ও পদায়িত করা হয়ে থাকে। মনে হতে পারে, শিক্ষাদীক্ষা, গ্যানগরিমায় না পারলেও ভাঁড়ামিতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশে উন্নীত হবার এক মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই লক্ষ্যে, এক রাজনিতিক নেতা একাধারে কি পরিমাণ অভিনেতা হতে পারেন তা দেখাতে সামনের কাতারে এসে দাঁড়িয়েছেন ড কামাল, বি চৌধুরী, মান্না, কাদির সিদ্দিকির মত ডাকসাইটেরা। অতি সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্যায়ে ভাঁড়ামির শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শিত হয়। গতকাল আরেকটি ভাঁড়ামিপূর্ণ রাজনৈতিক পলটিবাজীর চরিত্র ফোটে উঠে উপরের ছবিটাতে।
এখান থেকে যে বিষয়টি শিক্ষা হিসাবে নেয়া যায় তা হল- কামালরা দেখে শিখে নিয়েছেন এবং বুদ্ধিমানরা দেখেই শিখে নেন। টিভি- সিনেমায়- রাজনিতিতে যারা অভিনয় করেন তারাও উনাদেরকে দেখে শিখুন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:২৯