একজন পল্লী চিকিৎসকের নুন্যতম যোগ্যতাও নেই অথচ উপজেলা সদর তথা প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় অন্তত পাঁচ বছর ধরে চিকিৎসার নামে প্রকাশ্যে ও নির্বিঘ্নে অপচিকিৎসা ও প্রতারণা চালাচ্ছে প্রদীপ চন্দ্র নাথ নামক এক ভুয়া ডাক্তার। এ অপচিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হয়ে থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
চুনারুঘাট উপজেলা সদর তথা পৌর শহরের বাল্লা রোডের গ্রীন সুপার মার্কেটে পপুলার ফার্মেসিতে প্রদীপ চন্দ্র নাথের চেম্বার। ডিএমএস(ডিপ্লোমা মেডিসিন এন্ড সার্জারী) ও ডিডিটি (ডিপ্লোমা ডেন্টাল টেকনোলজি) এই দুটি ভূয়া ডিগ্রী ব্যবহার করে তার চেম্বারে আগত সাধারণ রোগীদেরকে অপচিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। তার অপচিকিৎসার শিকার হয়ে অনেক রোগী এখন মৃত্যু পথযাত্রী। ভূয়া প্রদীপ চন্দ্রের বিরুদ্ধে রোগীদের সাথে প্রতারনা করার অসংখ্য অভিযোগের সত্যতাও রয়েছে।
ইতোপূর্বে, উক্ত প্রদিপ চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে ভুয়া ও ভুল চিকিৎসায় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এবং পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে, হবিগঞ্জের তৎকালীন সিভিল সার্জন ডাঃ দেবপদ রায়ের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। গত ২৪/০১/২০১৭ তারিখে জেলা সিভিল কার্যালয়ের প্রেরিত পত্রে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনায় দুইজন মেডিক্যাল অফিসার ও একজন সহকারী সার্জনের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।ওই বছর ফেব্রুয়ারী মাসে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির করা তদন্ত প্রতিবেদন (স্মারক- উঃ স্বাঃ ক/ চুনারু/১৭/২৬৬//৩ তাং- ০৬/০২/২০১৭ খ্রি) দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভুয়া চিকিৎসক প্রদীপ চন্দ্র নাথ তার নিজের অযোগ্যতার কথা স্বীকার করেন এমনকি চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধের প্রয়োগ-মাত্রা সম্পর্কেও প্রদীপ চন্দ্র নাথের কোন ধারণা নাই। এর প্রেক্ষিতে চিকিৎসাসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রদীপের অজ্ঞতা ও অযোগ্যতার কথা প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়।
চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ গোলাম মহিদুল আলম জানান, প্রদীপ চন্দ্র নাথের কোন ধরণের কোনো ডিগ্রি আছে বলে আমার জানা নেই। তার পরও কেটে গেল আরেকটি বৎসর। প্রদীপ চন্দ্র নিয়মিত রুগি দেখেই যাচ্ছেন, চিকিৎসার নামে ঠকিয়ে যাচ্ছেন অসুস্থ-অসহায় মানুষদেরকে।
প্রদীপের সার্টিফিকেট গুলোর সত্যটা যাচাইয়ের জন্য 'লোকাল হেলথ সার্ভিস এন্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এলএইচএসএইচডিএ)'-র সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ওই ধরনের কোন প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রদীপ চন্দ্র নাথের ডিএমএস ডিডিটি সনদ দুটি এবং সাইনবোর্ড এবং ব্যবস্থাপত্রে ব্যবহৃত রেজি নম্বরটিও ভুয়া বলে প্রমানিত হয়।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে করা তদন্ত প্রতিবেদনে ভুয়া ডাক্তারটির অযোগ্যতা এবং অবৈধভাবে ডিগ্রি ব্যবহারের কথা উল্লেখ থাকার পরও প্রকাশ্যে চেম্বার খুলার সাহস পায়।সে একজন অপরাধী। তার টিকে থাকার ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটি, সরকারী প্রশাসন, স্থানীয় নাগরিক সমাজসহ সংশ্লিষ্ট সকলের উদাসীনতা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে জনস্বার্থে গৃহীত পদক্ষেপ জন বিরোধী রূপ ধারণ করে এবং ভুক্তভোগী আরও অসহায় করে তোলে।এটি সামাজিক অপরাধ তাই এসব বন্ধ করতে সমাজকেই অবদান রাখতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:৫৫