somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (পঞ্চমাংশ)

২৪ শে জুন, ২০২৪ রাত ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (চতুর্থাংশ)
আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (তৃতীয়াংশ)
আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয়াংশ)
আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
চতুর্থ শ্রেণিতে সমাজবিজ্ঞান পড়াতেন হালিম স্যার। খুব বদরাগী স্বভাবের মানুষ ছিলেন তিনি। পড়া না পারলে বেদম পেটাতেন। এমন মার মারতেন যে, পিঠে দাগ পড়ে যেত। এক সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যথা থাকত শরীরে।

প্রতিটা অধ্যায়ের নামে একটা করে ছন্দ মেলাতেন তিনি। যেমন কোনো এক অধ্যায়ে ছিল লালবাগ কেল্লা। হালিম স্যার বলতেন, “লালবাগের কেল্লা, যা করে আল্লাহ।” এ কথা দিয়ে তিনি বোঝাতে চাইতেন ক্লাসে পড়া না পারলে কারও আর রক্ষে নেই। উনার ভয়ে সবাই তটস্থ থাকতাম। আর কারও পড়া পারি আর নাই বা পারি, এই স্যারের পড়া সবার আগে পড়ে যেতাম।

পড়লেও যে সবসময় পড়া পারতাম, তা কিন্তু না। এত এত পড়া দেওয়া হতো যে, ছোটো মগজে এত ধরত না। নয়-দশ বছরের বাচ্চা কি এক মণ ধান মাথায় নিতে পারে?

পড়া না পারলেই মার আর মার। পিটিয়ে একদম তক্তা বানিয়ে ফেলা হতো। আমাদের তখন কিছু করার ছিল না। কোনো দোষ না করেও কতদিন যে মার খেতে হয়েছে, তার হিসেব নেই! যেদিন পড়া কম কম শেখা হতো, মনে মনে আশা করতাম স্যার যদি না আসতেন! ছোট্ট মন স্যারের মৃত্যুও কামনা করত।

ক্লাসের পড়ার পাশাপাশি পরীক্ষার খাতা যেদিন দেওয়া হতো, আমাদের জানে পানি থাকত না। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেত। আমরা সেদিন শোকদিবস পালন করতাম। স্যার প্রতিটা লাইন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তেন। একটা-দুটো বানান ভুলের কারণেও আমাদের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যেত।

পঞ্চম শ্রেণিতে এই স্যার বাংলা নিলেন। ততদিনে আমি জড়তা কাটিয়ে ওঠেছি প্রায়। ভালো নম্বর পাই এই স্যারের পরীক্ষায়। হাতের লেখাও ঝরঝরে হয়ে গেছে। পঞ্চম শ্রেণি শেষ করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠলাম। ততদিনে আমার আরও উন্নতি হয়েছে। কিন্তু আমার ভয় তখনও পুরোপুরি কাটেনি। মনে হতো এই বুঝি স্যার মারতে তেড়ে এলেন।

এক মেয়ে, খুব সম্ভব শিল্পী নাম; একদিন ক্লাসে পড়া পারেনি। ইংরেজি স্যার (দ্বিজেন) বললেন, যে কাল থেকে পড়া শিখে আসবে না, তাকে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হবে। সেই মেয়েকে আর কখনও স্কুলের আশপাশে দেখিনি। এই ঘটনার কয়েকবছর পর একবার তার সাথে দেখা হয়েছিল আমার। দেখি তার সিঁথিতে সিঁদুর, হাতে শাখা। কোলে বাচ্চা নিয়ে কোথাও যাচ্ছে সে।

কয়েকটা ক্লাস বাদে বাকি ক্লাসগুলো আরামদায়ক ছিল অবশ্য। পরীক্ষায় নম্বরও ভালো আসত। আমরা উৎসব উৎসব অনুভূতি নিয়ে ক্লাস করতাম। আর টিফিন পিরিয়ডে খেলাধুলো করতাম।

ঝড়-বাদলের দিনে কাকভেজা হয়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতাম। বইগুলো পলিথিনে মোড়ানো থাকত। কী যে আনন্দ হতো তখন! কখনও কখনও বাড়ি ফেরার পথে ছেলেরা সদলবলে পুকুরে সাঁতার কেটে গোসল সেরে নিতাম। একবার পুকুরে গোসলে নেমে প্রায় ডুবে যাচ্ছিলাম। পাশের বাড়ির এক ভাবি আমাকে টেনে পাড়ে তু্লেছিলেন।

ষষ্ঠ গেল, সপ্তম গেল। অষ্টম শ্রেণিতে উঠার পর একবার স্কুল থেকে বনভোজনে গেল। হাতে টাকা দিলেও মা আমাকে যেতে বারণ করলেন। উনি চাচ্ছিলেন না আমি এলাকার বাইরে কোথাও যাই। আমাকে নিয়ে ভয়ে থাকতেন। প্রচণ্ড মন খারাপ হলো আমার। তবে আশা পূর্ণ হয়েছিল দুই বছর পর; এসএসসির টেস্ট পরীক্ষার পর আমি অনেকের সাথে বনভোজনে গিয়েছিলাম। সেবার মা আর বাধা দেননি।

ভোরবেলা কয়েক কিলোমিটার পথ হেঁটে দ্বিজেন স্যারের কাছে ইংরেজি প্রাইভেট পড়তে যেতাম। আরও সহপাঠীরাও আসত। দ্বিজেন স্যারের পাশের বাড়িতে সজল স্যারের কাছে পড়তাম গণিত। পড়া শেষ করে ১৫-২০ জন ছেলেমেয়ের দল একসাথে স্কুলে পৌঁছতাম।

মনে পড়ে স্কুলে বোর্ডিং বাসের কথা। অষ্টম শ্রেণিতে উঠার পর পরীক্ষায় ভালো করার জন্য সবাইকে বোর্ডিংয়ে উঠতে হলো। জীবনের প্রথম রাত বারোটা-একটা পর্যন্ত পড়ালেখা করা শুরু করি। বড়ো ভাইদের সাথে রাতে-বিরাতে ঘোরাঘুরি করি। বৃহস্পতিবার হলেই গানের আসর বসে। নাটক মঞ্চস্থ হয়। আরও কত কী! দশম শ্রেণিতে উঠার পর আবারও বোর্ডিংয়ে উঠতে হয়। এবার আমরাই বড়ো ভাই। জুনিয়র ছেলেদের নিয়ে কত আনন্দ উদ্যাপন!

দশম শ্রেণিতে উঠার পর একবার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাই। টেস্ট পরীক্ষার মাসখানেক আগে আগে। তখন স্কুলে অনুপস্থিত হলে দশ টাকা করে জরিমানা দিতে হতো। আর মারধর তো আছেই। পরপর তিন দিন অনুপস্থিত ছিলাম আমি। আমি নিশ্চিত ত্রিশ টাকা জরিমানা দিতে হবে আর ন্যূনতম ত্রিশটা বেত্রাঘাত সহ্য করতে হবে।

কী করি, কী করি! টেস্ট পরীক্ষার তো আর বেশিদিন নেই। আপাতত বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করতে শুরু করি। এরপর একেবারে টেস্ট পরীক্ষার সময় স্কুলে গিয়েছিলাম।

কয়েকমাস কোচিং চলে। স্কুলের স্যারেরাই পড়ান। মাঝেমধ্যে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এরপর একদিন স্কুলজীবন শেষ হয়ে যায়। আমরা মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি, উত্তীর্ণও হই। পেছনে পড়ে থাকে আনন্দ-বেদনার দিনগুলো।

চলবে...

ছবিঃ প্রতীকী
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:৩৪
৯টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোটা/৩৫ বয়স/ পেনশন দাবি মানছে না আর সরকার

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৭ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৪:২২


কিছুদিন আগে এই ছাত্র ছাত্রীর সিংহভাগ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন ।জাতীয় ভোট দিয়েছে ছাত্র ছাত্রী। আমাদের আজ অধিকার চাইতে গেলে সমস্যা, যারা কোটা ধারী তারা আপনাকে ভোট দিবে কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাইভিং শিখলে ভাগ্য বদলায়?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৭ ই জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩







ড্রাইভিং শিখে স্কিলটা কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে শতকরা কত ভাগের? আপনারা তেমন কি দৃশ্য দেখেছেন আশেপাশে। সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন কোর্স চালু আছে,অনেকেই কোর্স শেষ করে ঠিকমত ব্রেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইচ্ছা তখন ফুলের মত ফুটে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ১২:৩০



ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে মন সাগরের দ্বীপে
সেথা তরুতলে সুন্দরী এক বসে আছে
তার সাথে একান্তে কিছু কথা বলা লোভ
সামলাতে না পেরে মনের অবিরাম উড়া।

এরা মিহি করে কথা বলা সুচারু... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস প্রশ্ন ফাঁস শুধু সবকিছু ভেঙ্গে পড়েছে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ০৮ ই জুলাই, ২০২৪ ভোর ৪:৩৩


কোথায় গেছে ১৬/১৭ বছরের আওয়ামী স্বৈরাচার লীগের বাংলাদেশ? চলেন একটু চিন্তা করার চেষ্টা করি।

বিসিএস প্রশ্ন ফাঁস হয়ঃ যা কখনো কেউ কল্পনাও করেনি তা সম্ভব হয়েছে, কারণ দীর্ঘদিনের জেঁকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামু জননী জানার প্রতি

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ০৮ ই জুলাই, ২০২৪ ভোর ৫:৪৩


খ্যাতিমান সামু অকালে চলে গেলে আমরা লাগাবনা
আমাদের নামের সাথে কোন খ্যাতি,
কেন আজ চারপাশে, আমাদের স্বস্তির জন্য,
মডুকে বাজাতে হচ্ছে , গভীর দুঃখের গান?
যা হৃদয় থেকে কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

×