somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অব্যক্ত প্রণয়

২২ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সেদিন সন্ধ্যের পর সেনবাড়ি রোড ধরে মেসে ফিরছিল অনিকেত। যথারীতি তার কাঁধে ঝোলানো ছিল একটা থলে। তার থলে সবসময়ই বিভিন্ন প্রকার বইয়ে পরিপূর্ণ থাকে। আজও তার ব্যতিক্রম ছিল না। সার্কিট হাউজ মাঠে একটা বিশেষ কাজে গিয়েছিল। ওটা সারতে সারতে বেলা গড়িয়ে যায়। অবশ্য মাঝে মাঝেই সে সার্কিট হাউজ, কিংবা পার্কে যায়। বিশেষত শুক্রবার দিন পার্কে যাওয়া তার নিত্য-নৈমিত্যিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈশাখী মঞ্চের পাশে কতিপয় সাহিত্যিকদের খোলামেলা আড্ডা হয়। সে-ও তাদের সাথে শরিক হয়।

সেনবাড়ি রোডে হঠাৎ কী কাজে দাঁড়িয়েছে অনিকেত! আচমকা রাস্তার ওপাশে নজর গেল। এ যে অধরা! দেখতে আগের চেয়ে সুন্দরী হয়েছে। তার সাথে আরও একজন, বান্ধবী হবে হয়তো। অধরা বোধহয় অনিকেতকে দেখেনি। মাথা নিচু করে চলে যাচ্ছে। আবার এমনও হতে পারে, দেখেও না দেখার ভান করছে।

অনিকেত আর অধরা একই কলেজে পড়ত। সুন্দরী থাকায় কলেজে অধরার বেশ পরিচিতি ছিল, নামডাক ছিল। কলেজের ছেলেরা ওর পেছনে লেগেই থাকত। টগর নামের একটা ছেলে তো পড়ালেখাই ছেড়ে দিল। অধরা কাউকে পাত্তা দিত না।

অনিকেত রক্ষণশীল পরিবারের সন্তান। নারীর প্রতি কখনোই তার কোনো আকর্ষণ ছিল না। থাকলেও তা প্রকাশ পেত না। মেঘে ঢাকা চাঁদের মত ছিলো তার যৌবন। মনের আকাশ হতে সে মেঘ সরাতে পারেনি কখনও।

সহপাঠীরা অনিকেতকে নানা আর অধরাকে নানি বলে ডাকত। এমন কী একজন শিক্ষকও অধরাকে নানি ডাকতেন। সে শুধু হাসত। প্রথম প্রথম খুব বিব্রত হতো অনিকেত। ধীরে ধীরে সয়ে গিয়েছিল সব। মনের মাঝে কী একটা অদ্ভুত অনুভুতি দাঁনা বাঁধতে লাগল ধীরে ধীরে; যা একসময় মহীরুহে পরিণত হয়।

অধরার পায়ে একটা সমস্যা ছিল। হাঁটার সময় বাঁ পা একটু বেঁকে যেত। প্রবাল ব্যাপারটা প্রথমে লক্ষ্য করেছিল। যারে ভালো লাগে, তার ছোটখাটো সমস্যাও ভালো লাগে।

অনিকেত আর তুহিন প্রতিদিন টেম্পুযোগে কলেজে আসত। তুহিন অনিকেতের কলেজের বন্ধু। কলেজে বেশির ভাগ সময় তারা এক সাথে-ই কাটাত। ফেরার পথে টেম্পু স্ট্যান্ডে অধরার অপেক্ষায় তারা কত সময় যে কাটিয়েছে, আজ ভাবলে খুব হাসি পায় অনিকেতের।

চৌরাস্তা হতে উঠত তুহিন আর বাজার হতে উঠত অনিকেত। অধরা আসত বনকুয়া হতে। প্রায়ই তাদের দেখা হয়ে যেত। কেউ কোনো কথা বলত না। সকলের মাঝে এক প্রকার দ্বিধা কাজ করত। কেন যে দ্বিধা কাজ করত, আজও আবিষ্কার করতে পারেনি অনিকেত।

অধরা একটা ছেলেকে ভালবাসত। সে নানান মুখরোচক কথাবার্তা বলত অনিকেতের সাথে। অনিকেত বিশ্বাস করত না কোনোকিছুই। কিন্তু একসময় বিশ্বাস হলো, যখন সেই ছেলে কিছু আপত্তিকর খুদেবার্তা দেখাল। বুকের মাঝে কেমন যেন একটু ব্যথা লাগল অনিকেতের।

সবকিছু জানার পরও অধরাকে খুব ভালো লাগত অনিকেতের। তাকে নিয়ে কত কবিতা লিখেছে, না ঘুমিয়ে কত রাত কাটিয়ে দিয়েছে। কেন এমন হয়, সে তখনও কিছু বোঝেনি। এখন অবশ্য সবই বোঝে। এখন বোঝে তো কোনো ফায়দা নেই। অনেক দেরি হয়ে গেছে।

টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে দু’জন দুই কোচিং সেন্টারে ভর্তি হলো। পরস্পরের দেখা হয়নি অনেকদিন। একদিন এক ছেলের সাথে রিকশার হুড তুলে কোথাও যাচ্ছিল অধরা। অনিকেতকে দেখে সে মুখ ঢেকে রেখেছিল। অনিকেত পরে জেনেছিল অধরা ঐ ছেলেকে ভালোবাসে; ছেলেটার নাম রানা। কিছুদিন পর অনিকেত জানতে পারল, রানা অধরাকে বাসে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে।

উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর দীর্ঘদিন অধরার সঙ্গে দেখা হয়নি অনিকেতের। শুনেছিল রানার সাথে অধরার সম্পর্ক ভেঙে গেছে। পারিবারিক কারণে অধরার পড়ালেখা একবছর বন্ধ ছিল।

অনিকেত আর অধরা এখন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। অধরা অনিকেতের এক ক্লাস জুনিয়র। পরস্পরের কদাচিৎ দেখাও হয়েছে, কথাও হয়েছে কয়েকবার। অধরা এখন আবার নতুন প্রেম কাহিনী শুরু করেছে। মাঝে মাঝে তাকে প্রেমিকের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদে দেখা যায় অন্তরঙ্গ অবস্থায়।

১২ ভাদ্র ১৪২১ বঙ্গাব্দ
সেনবাড়ি রোড, ময়মনসিংহ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০২৪ সকাল ৯:৫৭
২৭টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশটা কারো একার বাপের না, দেশটা আমার, দেশটা আপনার

লিখেছেন সোহানী, ১৭ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ৮:৩৭



আচ্ছা আপনারা যারা নির্বাচন নির্বাচন কইরা কাপড় চোপড় নস্ট করতাছেন তাদেররে একটু জিগাই, এই ৫৪ বছর কি বা****টা ফালাইছেন??? (সরি ফর মাই ল্যাংগুইজ। বয়স যত বাড়ছে, ধৈর্য্য তত কমছে।)

১৫/১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

রোজাদারের দোয়া: নিশ্চিত কবুলিয়াতের সুযোগ

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৭ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:২৯

রোজাদারের দোয়া: নিশ্চিত কবুলিয়াতের সুযোগ

ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃৃহিত।

রমজান মাস অফুরন্ত কল্যাণ ও বরকতের মাস। এই মাসে রোজাদারের দোয়া বিশেষভাবে কবুল হয়। রমজান কেবল ইবাদতের বিশেষ মৌসুম নয়, বরং দোয়ারও... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেয়া তুমি কি জানো (১)

লিখেছেন দানবিক রাক্ষস, ১৭ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

কেয়া তুমি জানো,
আমি আগে ভাবতাম আমি পৃথিবী তে এসে কি পেলাম,
কিন্তু এখন ভাবি, আমি আমার দেবী কে পেয়েছি, তাকে ভালোবাসতে পেরেছি, আমার মতন করে,
আমার মনে হয় আমি বিশ্ব জয় করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৪৭

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৭ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:৫৯



কয়েকদিন ধরে আমার মন ভালো নেই।
বেশ কয়েকটা কারন আছে। এর মধ্যে প্রধান কারন হচ্ছে- আমার কন্যা ফারাজা'র জ্বর। সুরভি আর আমি আমরা দুজনেই খুব সাবধান... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন মানুষের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য কত টাকার প্রয়োজন?

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৭ ই মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৪

আপনি নিজে যদি দরিদ্র-ঘরে জন্মগ্রহণ করে না থাকেন, তাহলে বুঝবেন না দারিদ্র্য কাকে বলে। একজন হাড়-বেরুনো বৃদ্ধা ভিখারিনীর দুঃখ দেখে সমব্যথী হতে পারেন, কিন্তু তার ক্ষুদায় আর্ত পেটের বেদনা অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×