ব্রুকলিনের borough পার্কের কাছে স্লিপ ইন মোটেলের পিছেই ওদের ছোট্ট এপার্টমেন্ট।দুই বন্ধু শেয়ার করে থাকে। রুমমেট ছেলেটি এই সময় বাংলাদেশে যাবে আর দিয়া আসবে ঢাকা থেকে। এভাবেই প্ল্যান করা ছিল, অবশ্য যাবার আগে রুমমেট পুরো ফ্ল্যাট টা যতটা সম্ভব গুছিয়ে দিয়েছে ব্যাচলরের পক্ষে যতাটা পারা যায় আর কি। ছেলেটি উল্টো বলেছে তার গাড়ী ব্যাবহার করতে পাভেলের তো আর নিজের গাড়ী নেই।দুস্টুমি করে বলেও ছিল "পাভেল ,তোমার খাট টা কি ফুল দিয়ে বাসর ঘরের মত সাজায়ে যাবো নাকি ? " পাভেল কটমট করে তাকায় ওর দিকে এমনিতেই সে নার্ভাস দিয়া কে নিয়ে ।বিয়ে না করে একসাথে ১৫ দিন থাকা হয়তো অনেকের কাছেই কিছুই না কিন্তু পাভেলের ভালবাসা, পারিবারিক মুল্যবোধ, সংস্কার,বিশ্বাস যেটুকু অবশিষ্ট আছে সুঁই এর মত বুকের বা দিকে খোঁচা দিচ্ছে। দিয়াকে নামিয়ে দিয়ে পাভেল কমিউনিটি কলেজে গেল একটা পেপার জমা দেবার শেষ দিন বলে, সন্ধ্যা হয়ে এল কলিং বেলের আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল দিয়ার সেই যে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিল এই মাত্র উঠল ।দরজা খুলেই দিয়া গোসলে গেল,এসে দেখে পাভেল চা চড়িয়ে দিয়ে সাথে আনা খাবার গুচাচ্ছে । দিয়া পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল, মনে হোচ্ছে যুগ যুগ ধরে এই মুহুর্তটা থেমে আছে, কোথাও কোনো শব্দ নেই, কেবল দু'জনে দু'জনা কে নিয়ে তোলপাড় ভালবাসা । কেতলির চা চুলায় পুড়তে থাকল দিয়া কোনো মতে নিজেকে ছাড়িয়ে বার্নার বন্ধ করে দিয়ে গেল।
এভাবেই চলল বেশ কটা দিন ।দিনে পাভেল কলেজে যায় বিকেলের মধ্যেই ফিরে আসে, এর পর দু'জনে মিলে Times square, statue of liberty, jackson heights, china town এখানে সেখানে এমনি আরো কত কি ! পাভেল যখন ক্লাসে যায় দিয়া তখন ঘর গুছায়, রান্না করে, লন্ড্রি করে, ঘরের কোনায় কোনায় সব ময়লা পরিষ্কার করে ঝকঝকে করে তোলে এ ক'দিনে দিয়া। এভাবে একদিন ঘর গুছাতে গিয়ে ঘরে আপত্তিকর কিছু সিডি , ম্যাগাজিন দেখতে পায় দিয়া । এ নিয়ে পাভেল কে জিঙ্গেস করায় ও কেমন আবছা উত্তর দেয় । মনটা কেমন খচখচ করছিল দিয়ার জোর করে এইসব আজগুবি চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সে। দেখতে দেখতে যাবার সময় ঘনিয়ে আসে মনটা খারাপ কিন্তু দিয়া তার মনের উদ্বিগ্ন -বিক্ষিপ্ত ভাব লুকিয়ে রাখে।
আজ রাতে চলে যাবে তাই আজ আর কলেজে যায়নি পাভেল, একটু বাইরে গেছে শেষ মুহুর্তের কেনা কাটা করতে , এত মানা করেছে সে কে শুনে কার কথা ? দিয়া এদিকে ঘর গুলো clean করছে, লাগেজ প্যাক করছে। ভয়ঙ্কর আকর্ষনে আবারো রুমমেটের ঘরে যেয়ে কাবিনেট ,ড্রয়ার ঘাটা ঘাটি করল দিয়া। জানে এটা অন্যায় তবুও কি এক অজানা আশংকায় দুরু দুরু বুকে হাতিয়ে বেরিয়েছে সব কিছু। অবশেষে রুমমেটের বিছানার নিচে একটা ছবি পেল পাভেল আর তার রুমমেটের ,দুই বন্ধু জড়াজড়ি করে তোলা ছবি , আর দশটা বাঙালীর মত দিয়ার কাছে ও এটা নিষ্পাপ ছবিই লাগতো যদি না সে পাভেলের ড্রয়ারের সিডি গুলো খুজে পেত । এগুলো কেন এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি পাভেল ! প্রতিদিন রুমমেটের দেশ থেকে ফোন দেয়া , bisexual porn সিডি, দুই জনের এমনতর ছবি সব কিছু কেমন এলোমেলো করে দিচ্ছে দিয়াকে। সন্দেহ দানা বাঁধছে মনে এ কারোনেই কি পাভেল দৈহিক মিলনের পর তৃপ্তির ঢেকুর তুলে না ? দুরে বসে সিগারেট টানে ?
দেশ থেকে দিয়া ফোন দিলে বলে ব্যাস্ত ? বার বার দিয়ার মনে হয়েছিল কি যেন একটা ওদের মাঝে মিসিং ! হে আল্লাহ্ এ কোন পরীক্ষায় ফেললে আমাকে তুমি ! পাভেল কে ও কি জিঙ্গেস করবে ? পাভেল বাই-সেস্কচুয়াল কিনা ? আগে তো এমন ছিলো না পাভেল এই ৩ বছরে ও এত বদলে গেল ? এত দিনের ভবিষ্যত সপ্ন সব ধূলিস্মাৎ ! মুখ শুকনো করে দিয়া বিদায় নিল। গাড়ীতে বার বার কি হয়েছে জানতে চেয়েছে পাভেল দিয়া কিছু বলতে পারে নি , এক ফোঁটা চোখের পানি ও গড়িয়ে পড়েনি দিয়ার.কেমন যেন স্হবির লাশের মত হয়ে গিয়েছিল, এই ছেলেটাকে ভালবেসে কি করেনি দিয়া ? সমাজ, সংসার, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে ছেড়ে একা থাকে দিয়া আর সেই কিনা .........।
আস্তে আস্তে ডিপারচার হয়ে প্লেনে উঠল দিয়া । ফিরে আসার সময় একবারো পিছন ফিরে তাকালোনা আলতো করে কেবল একবার বির বির করে বলেছিল " বিদায় আমার ভালবাসা " ।
প্লেনের Air hostess র দেয়া সাদা গরম টাওয়েল দিয়ে সব ভালোবাসা মুছে নিল সে ।
+++++++++++
Click This Link