-হ্যালো, হেনা? কেমন আছো?
-হ্যাঁ বলছি। কে বলছেন প্লিজ?
-একটু ঠাণ্ডা লেগেছে তো তাই চিনতে পারছো না আর কি।
কিছুক্ষণ নীরবতা...
-তুমি এতদিন পরে ! নাম্বারও তো চেঞ্জ করেছো দেখছি।
- না, ওই নাম্বারটাও চালু। যদি তুমি না ধরো তাই এটা থেকে দিলাম।
-আচ্ছা, কি মনে করে বলো? ঠাণ্ডা লেগেছে মানে করোনা বাঁধিয়েছো নাকি?
-জানি না, টেস্ট তো করাইনি। দুই দিন হল নাক দিয়ে পানি পড়ছে আর হালকা জ্বর।
-তুমি বাড়ি চলে যাওনি কেন? নাকি বউ ঢাকায়?
-বাড়িতে আমার কে আছে বলো, বউ তো থেকেও নেই।
-আচ্ছা বাদ দাও। হঠাৎ কি মনে করে ফোন করলে বলো তো?
-আসলে কোনদিন তো এই অবস্থায় পড়িনি। লকডাউন শুরুর পর সব হোটেল বন্ধ, বুয়াও আসে না। আবার অসুস্থ্ও হয়ে পড়লাম...
-হুম। দেখো আবার ক্ষমা টমা চেয়ো না। এসব ন্যাকামো করো না। তোমার প্রতি কোন রাগ নেই আমার।
-আরে না, বলছিলাম পাবদা মাছ...
-মানে?
-লকডাউনের আগে কিনেছিলাম। ফ্রিজে ছিল। রান্না তো নিজেই কোনরকমে করছি। কিন্তু পাবদা মাছ কিভাবে রাঁধবো বুঝতে পারছি না।
-অন্য কিছু যেভাবে রাঁধছো সেভাবেই রাঁধবে।
-তুমি কি দারুণ করে পাবদা মাছ রাঁধতে ! একটু বলবে প্রসেসটা, যদি তোমার সময় থাকে।
-কি জ্বালা! আমি তো নিজেদের রান্নাই করিনি এখনো। ও তো গোসল করেই খেতে চাইবে।
-প্লিজ... খুব দ্রুত। আমি মাছ কেটে ধুয়ে রেখেছি। ভিডিও কল দেই?
-আচ্ছা, দাও।
ভিডিও কল।
-তুমি তো দেখছি শুকিয়ে কালো ভূত হয়ে গেছো।
-আমি তো আফ্রিকার কালুয়া আগে থেকেই ছিলাম। কিন্তু তুমি তো এমন রূপসী শ্বেত হস্তী ছিলে না। স্বামী বেশ খাওয়াচ্ছে বুঝি ?
-তোমার জানার কথা নয় যে আমি আট মাসের প্রেগন্যান্ট, তাই এ’কথা বললে।
-সেকি! এই করোনাকালে আগামী মাসে হাসপাতালে গেলে তো মহা ঝামেলায় পড়বে।
-তোমায় কে বলেছে হাসপাতালে যেতেই হবে? তুমি নিজেও তো হাসপাতালে হওনি। ছাড়ো এসব। রান্নাঘরের একী ছিরি করে রেখেছো?
তোমার নোংরা স্বভাব গেলো না।
-আমার শরীরটা ভালো না, আর বুয়াও আসে না তাই। আমি অনেক পরিচ্ছন্ন থাকি এখন।
-হুম। মাছ ঝোল খাবে নাকি ভুনা খাবে?
-এবেলা রেঁধে যেন তিনবেলা খেতে পারি তেমন চাই।
-আচ্ছা, একটা চুলায় পানি গরম দাও। আর আরেকটাতে মাছগুলো ভেজে নাও।
-তেল ছিটকে পড়বে যে। আমি এক’দিন মাছ না ভেজেই রেঁধেছি।
-আহারে! আচ্ছা তোমার হেলমেটটা নিয়ে আসো যাও।
হেলমেট পরে আসার পর;
-হাহাহা হিহিহি। এমন হনুমানের খুলির মত ছোট হেলমেট কিনেছো কেন? এটা দিয়ে তো কিছুই হবে না, মুখ ঢাকার কিছু নেই।
-কি করবো, পাঠাও চালাতে গিয়ে দুটো ভালো হেলমেট ভেঙেছে। শেষে এগুলো কিনেছি।
-ঘরে বার্নল বা টুথপেস্ট আছে না? পুড়ে গেলে ওগুলো লাগাবে, এখন মাছ ভেজে নাও।
-বার্নল নেই, টুথপেস্ট আছে। তবে... একটা কথা বলবো?
-ন্যাকামো করছো কেন? আমার সময় কিন্তু খুব কম।
-আহা! রেগো না। আসলে হইছে কি, আমি টুথপেস্ট দিয়েই সবকিছু করছি। শেভিং ফোম এবং সাবান শেষ হয়ে গিয়েছিল, নিচে যাবো না
তাই টুথপেস্ট দিয়েই এগুলোর কাজ চালাচ্ছি। এমনকি থালাবাসনও ধুচ্ছি। বড় টুথপেস্ট, তবুও তো খুব সেভে ব্যবহার করছি।
- হে হে। এসব করেও তো তোমার ঠাণ্ডা বাঁধানো আটকাতে পারোনি। ওই গু খেতে... সর্যি সিগারেট আনতে নিশ্চয়ই বাইরে যাও।
- তোমার মুখে এ’কথা মানায় না। তুমি নিজেও তো খেতে। এখনকার কথা অবশ্য জানি না।
-শোন, আমি খেলেও কখনোই আমার এমন অভ্যাস ছিল না যে খেতেই হবে। জীবনে কোনোদিন কোন কিছুর প্রতি আসক্ত হইনি আমি।
শুধু একবার কি করে যেন তোমার প্রতিই আসক্ত হয়ে গিয়েছিলাম, আর সেটাই আমাকে বেশ ভালো শিক্ষা দিয়েছে।
-তার মানে তুমি এখন তোমার স্বামীর প্রতিও আসক্ত নও। তাহলে তো এখনো আমার একটা চান্স রয়ে গেলো, কি বলো? হা হা।
- তুমি বাজে কথা শুরু করেছো। পাবদা মাছ রাঁধবে কি না?
-থাক, আজ আর রাঁধতে ইচ্ছে করছে না। ডিম ভাজি করে খেয়ে ফেলবো। তোমার সাথে কথা বলে আমার পেট, মন দুটোই ভরে গেছে।
-ঠিক আছে, রাখছি। অসুখ তো বাধিয়েছো, অন্তত মশলা চা করে খেও। এই কিছুক্ষণ কথা বলার মধ্যেই তুমি সাতবার হাঁচি দিয়েছো,
আর তিনবার কেশেছো। তোমাকে দেখতেও কাহিল লাগছে। অলসতা করলেও নিজের এইটুকু যত্ন অন্তত নিও।
-তোমাকে একটা কথা মিথ্যে বলেছি আমি। আসলে আমি টেস্ট করিয়েছিলাম। পজেটিভ এসেছে। পাবদা মাছ একটা উছিলা ছিল তোমার
সাথে কথা বলার। ভালো থেকো তুমিও, যত্ন নিও নিজের।
ফোন কেটে দিয়ে দুজনেই দু’প্রান্তে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। তারপর নিত্যতার নিয়মেই দুটো দিন পেরিয়ে যায়।
-হ্যালো, কে বলছেন?
-এটা রায়হানের নাম্বার না? আমি হেনা বলছি।
-হ্যাঁ, এটা রায়হান ভাইয়ের নাম্বার। আমি উনার বাড়িওয়ালার ছেলে। ভাই গতকাল খুব অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। এখন আই.সি.ইউ-তে আছে কিন্তু ভেন্টিলেটর পাচ্ছি না। উনার বাড়ির লোকজনকে জানিয়েছি। আপনি যদি কাছের কেউ হন তাহলে একবার পিজি হাসপাতালে আসেন।
ফোনটা আর ধরে রাখতে পারে না হেনা। ছেড়ে দিয়ে নীরবে অথচ অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকে সে। যদিও জানে না কেন সে কাঁদছে...
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৪