আমাদের জনপ্রিয় ব্লগার চাঁদগাজী ভাই একটি অত্যন্ত সঠিক কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর আশেপাশে অত্যন্ত বুদ্ধিমান কাউকে রাখেন না। এবং অত্যন্ত গবেট কাউকেও রাখেন না। তিনি তাঁর চেয়ে অবশ্যই কম বুদ্ধির এবং মাঝারী বুদ্ধির লোকদের তাঁর আশেপাশে রাখেন। নতুন মন্ত্রীসভা। এটা এখন একেবারে পরিষ্কার যে রাজনীতির দক্ষ চালে এমুহূর্তে দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ধারে কাছে কেউ নেই। চাঁদগাজী ভাই আরেকটি কথা বলতেন প্রায় সময়ই, শেখ হাসিনা প্রতিশোধ নিতে চেয়েছেন, তাঁর প্রতিশোধ নেয়া শেষ হয়েছে এখন উনার সেই ভাবনা থেকে দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে মনোযোগ দেয়া উচিত। বিভিন্ন পত্রিকায় এবং বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্লেষকদের লেখাতেও এই বিষয়টি ঘুরেফিরে দেখতে পাচ্ছি। পিতৃ হত্যার সাথে বংশ সমূলে নির্মূল করার এবং নিজেও হত্যা হামলার শিকার হওয়ার এই সবকিছুর কঠিন প্রতিশোধ নেয়ার বাসনা এবং দায়িত্ব তাঁর ছিল। তিনি সফল হয়েছেন।
তিনি কখনো সাময়িক বা মুহূর্তের পরিকল্পনা করেন না। অনেক দূরে তাকিয়ে এবং অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় ধীরস্থিরভাবে পরিকল্পনা করেন। নির্বাচনের মাত্র দুই মাস আগে নিজেদের শক্তি জাহির করা বা দল গঠন করার চিন্তাভাবনার রাজনীতিবিদ থেকে রাজনৈতিক চিন্তায় তিনি হাজার মাইল এগিয়ে। তবে অবশ্যই একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ আর একজন প্রকৃত জনবান্ধব শাসক এক কথা নয়।
বহু বছর আগে থেকেই ধাপে ধাপে কাজগুলো সাজিয়ে নিয়ে যা করার তিনি করেছেন। ঝামেলাকারীদের নিজের আয়ত্তে আনার জন্য যে যে পথে চলা দরকার ঠিক তেমন চালই তিনি চেলেছেন। এবার আরও সূক্ষ্মতর পথে চলা। তার প্রথম নিদর্শনটি হল, মহাজোটের শরীক কাউকে মন্ত্রিত্ব না দেওয়া। জোট গঠনের পর বাবার হত্যা পরিকল্পনাকারীদের সাথে হাত মিলিয়েছেন এমন অনেক কথা এবং বিদ্রুপ তিনি শুনেছেন। তিনি নিজেও প্রকৃত সত্য জানেন। কিন্তু তাঁদের নিয়ে জোট গঠন করা ছিল ওই সময়ের দাবী এবং তাঁর পরিকল্পনারই অংশ। এখন তাঁদের আর কোন প্রয়োজনীয়তা তাঁর কাছে তো নেইই, দলেরও বিন্দুমাত্র প্রয়োজন নেই। জোটের উনারা নিজেরাও যে দলের বাইরে একেবারে শক্তিহীন সে কথা বলাই বাহুল্য। জোট গঠনের আগে আলাদা আলাদা ক্ষুদ্র ঝামেলাকারী হিসেবেও যে গলাটা তাঁদের ছিল এখন সবাই মিলে একযোগে চেঁচালেও সেটা ফ্যাসফ্যাসেই শোনাবে। তাঁরা আরও দুর্বল, একেবারে শেষ হয়ে যাওয়ার জন্য এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যা পরিকল্পনাকারী আসামী হিসেবে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিতে পারে। অতিসত্বর নয় অবশ্যই তবে খুব বেশি দূরের পরিকল্পনাও নয় বলেই আমার বিশ্বাস। জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রে বিষয়টা একদম ভিন্ন। প্রধান বিরোধীদল হিসেবে জাতীয় সংসদে গুরুত্বপূর্ণ স্থান তো পাচ্ছেই, তার পাশাপাশি এক রংপুরেই ছয়জন মন্ত্রী! আর কি লাগে বয়োবৃদ্ধ এরশাদ সাহেবের।
বারবার ফ্লিপচিপ করা এবং সেটা সহসা কেউ বুঝতে না পারা একজন দক্ষ রাজনীতিবিদের অতীব জরুরী এবং গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। জলের মত বিভিন্ন পাত্রে বিভিন্ন আকার ধারণ করা, লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট কিন্তু বিভিন্ন পথে ঘুরে এমনকি উল্টো পথে হেঁটেও কাউকে বুঝতে না দেয়া শেষ গন্তব্য কি সেটাই এমন বৈশিষ্ট্যের অংশ। শেখ হাসিনা অত্যন্ত সুচারুভাবেই সেটা করছেন। জোটের শরীকরা প্রধানমন্ত্রীর ব্যাখ্যার জন্য অপেক্ষা করছেন। প্রধানমন্ত্রী ব্যাখ্যা দেবেন, তাঁরা সন্তুষ্টও হবেন। তাঁদের একজনের বক্তব্য অনুযায়ী বছর খানেকের মধ্যে মন্ত্রীসভায় রদবদল হতে পারে, তখন আবার কেউ মন্ত্রিত্ব পেতেও পারে। হতেও পারে সেটা। তবে এসবই ফ্লিপচিপের অংশ। ভাবনাকে বিভিন্ন দিকে ধাবিত করে এলোমেলো করে ফেলার অংশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্য ও চাল স্বয়ং তাঁর বোন, ছেলেমেয়েরাও জানে না। এটা একান্তই তাঁর নিজের কাছে সুরক্ষিত।
নতুন মন্ত্রীসভায় অনেক নতুন মুখ এসেছেন। নতুনদের স্বাগতমই জানাতে হয় নতুন কিছু দেখার আশায়। অভিনন্দন এবং স্বাগতমই জানালাম। কিন্তু শঙ্কাটা হল, দেশের অর্থনীতিক স্তম্ভের প্রায় সবগুলো খাতের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছে দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিরা। টাকার বন্ধুরা মানুষের বন্ধু কতটা হবে সেটা আর লিখে বোঝানোর অবকাশ নেই। ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে কিনা জানি না, তবে তার বহু আগেই পৃথিবীর শীর্ষ দশ ধনী ব্যক্তির তালিকায় এক বাংলাদেশীর নাম ঢুকে যেতে পারে বলেই মনে হয়। তখন সেটাও আবার দেশের একটি অর্জন বলে এদেশের বহু মানুষ এবং মিডিয়াগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে খবর করবে, আনন্দ উদযাপন করবে ! আমি ও আমার মত আমরা আপাতত নিজের কাজে ধ্যান দেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৫৭