এই বিশ্ব সংসারের গভীর থেকে গভীরতম প্রাচীনতম সুরের আকুতি আমার হৃদয়ে। অনুভূতির সুদূরে কোথায় যেন টেনে নিয়ে যায় । ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না- তীব্র অনুভবে আকাশ পাতাল এক করে দিয়ে যায় শুধু। আমি যেন এক বিশাল সমুদ্রের প্রান্তরে একা দাঁড়িয়ে আছি অসীম শূন্যতা নিয়ে। যেন আমি পাহাড়ের সবচেয়ে উঁচু চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছি সুতীব্র মৌনতা নিয়ে।
এসব ভেতরে থাকে। বাইরে এক অনির্দিষ্ট কালের অভিমান নিয়ে সংসারের সমস্ত কাজ করে যাচ্ছে নারী। ঠোঁট ফোলানো অভিমানগুলো তার জমে থাকে বাসন মাজা, কাপড় ধোয়া আর ঘর পরিষ্কারের ফাঁকে।
অসুখের সময় কমলা আর আনারস হয়ে অভিমানগুলো ঝরে পড়ে ডায়েরিতে-
‘জ্বরের সময়গুলোতে তুমি কাছে এসে বসনি, মাথায় হাত রাখনি; এজন্য একদিন কথা বলবো না তোমার সাথে’।
এরপর আরও কতো দিন যায়, কথারাও চলতে থাকে। কতক কথা চলতে চলতে হারিয়ে যায়, কতক আবার ডায়েরিতে জমা পড়ে।
এই শেষবার জমলো-‘পিয়ালের ঘরে একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছে। তুমি না বলেছিলে, আমার পেট থেকে তোমার কমরেড বের হবে। এত দেরি করছ; তাই তোমার সাথে আমি এক মাস কথা বলবো না’।
শেষ বিকেলের গান শুনতে শুনতে মাধুরীর সন্ধ্যে শেষ হয়, রাত শেষ হয়। মাধুরী আশায় আশায় থাকে একদিন সমস্ত কথা সে দু’পা ছড়িয়ে বসে বলবে।
ডায়েরি- ‘আমার কি যে ইচ্ছে হচ্ছিলো এশা আর সাবা’র মত আমিও অনেকক্ষন তোমার সাথে ফোনে কথা বলি, অথচ........তোমাকে এজন্য শাস্তি পেতে হবে; একদিন সারাদিন চুপ করে থাকা ’।
মাধুরী রবিবাবুর গানটা শুনতে শুনতে কেঁদে ফেলে, “ও লো সই, ও লো সই আমার ইচ্ছা করে তোদের মতন মনের কথা কই, ছড়িয়ে দিয়ে পা দু’খানি, কোণে বসে কানাকানি, কভু হেসে কভু কেঁদে চেয়ে বসে রই...............ও লো সই, ও লো সই আমার নাই কথা তবু সাধ শত কথা কই......”।
আচ্ছা, কেউ না বুঝল, তাতে কীই-বা এমন হবে ? তোমার মাধুরী- মধুকরী ও মধুমঞ্জরীর মত জমাবে মধু। তুমি কথা দিয়েছিলে, আমি কথা দিয়েছিলাম। আমরা কেউই কথা দেয়ার আগে কথাকে বুঝিনি। আমাকে যদি এভাবেই বুড়ো হতে হয়, একদিন মরে যেতে হয় তখন তোমার শাস্তি......নাহ, শাস্তি তুমি ততক্ষণে পেয়েই যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:৪২