ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীরা যখন, ‘পুলিশ কোন ইয়ের ইয়ে ( )’ বলে স্লোগান তুলেছিলো তখন আমার মনে হয়েছিলো এদের অনেকের তো নিজেদেরই ইয়ের ইয়ে ওঠেনি। আর পুলিশকে এসব বলার কি আছে, কারণ পুলিশ তো রাষ্ট্রের ইয়ের ইয়ে। কিন্তু ওই মুহূর্তে এটা নিয়ে কিছু বলা ছিল ভুল এবং বোকামি। কারণ সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস যখন ওঠে তখন নোংরা অনোংরা সব কিছু নিয়ে ওঠে। জলোচ্ছ্বাসের কোন ধর্ম অধর্ম নেই (এই দুই লাইন ব্লগ থেকে নেয়া)। কখনো কোন লণ্ডভণ্ড ধারা নিয়ম মেনে হয় না, সভ্য থেকে হয় না, সব লণ্ডভণ্ড করেই হয়। কাজেই যেভাবে যে ভাষাতেই তীব্র ক্রোধ ফুঁসে উঠেছে সেভাবেই এটাকে জোরালো সমর্থন দিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। ক্রোধের শক্তিই হল একেবারে সব ছিঁড়ে ফেলা, কোন বাঁধ না মানা।
দেবী দুর্গার আরেক রূপ কালী। দুর্গা তাঁর স্বরূপেই অর্থাৎ সভ্য সুশীল রুপেই অসুর বধ করতে পারেন। তাহলে কালী হতে হয় কেন ? ক্রোধের সর্বোচ্চ পর্যায়ের শক্তিই তাঁকে কালী হতে বাধ্য করে। এমন নয় যে স্বেচ্ছায় তিনি তেমন হন। তীব্র ক্রোধে আপনাআপনি তিনি এরুপে প্রকট হন। তখন তাঁর পোশাক, সভ্যতা কোন কিছুই নিয়ম মানে না। সমস্ত লণ্ডভণ্ড করে ক্রোধের শক্তির উদগীরন ঘটিয়ে তবেই তিনি শান্ত হন। এ অবস্থাতে কিন্তু তিনি থাকতে পারেন না, কারণ তাহলে জগতের সব খারাপের বিনাশের সাথে সাথে ভালোও বিনাশ হতে থাকে। শক্তির উদগীরন শেষে তাঁকে আবার সভ্য শান্ত বেশে ফিরে আসতে হয়। কিন্তু এই কালী রূপ ধারণে যদি দেবতারা তাঁকে বাঁধা দিতো তাহলে কি হতো। তিনি অসুরদের সাথে দেবতাদেরও বধ করে দিতেন। এবং একসঙ্গে বিশাল অসুরের পাল বধ করা সম্ভব হতো না। অথচ এই দেবতারা তাঁর সমর্থনে থাকেন বলেই ক্রোধের উদগীরন শেষে তাঁরা তাঁকে শান্তরুপে ফিরিয়ে আনতে পারেন। দেবতারা নিজেরা অসভ্য হননা ঠিক কিন্তু কালীর এই রুপকে তাঁরা সমর্থন দিয়ে যান এবং পরে তাঁকে আবার সুশীল রুপে ফিরতে সহায়তা করেন।
ঠিক তেমনি ছাত্রদের এই আন্দোলনে যাঁরা ভাষা নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছিলেন তাঁরা আসলে শক্তিটাকে ক্ষয় করেছেন। ছাত্রদের ক্রোধের শক্তি প্রকাশে তাদেরকে অপরাধীদের সাথে সাথে আপনাদের সাথেও লড়তে হয়েছে। কালী রূপ ধারণ যেমন আটকানো যায় না তেমনি ক্রোধে ভাষার এরুপ প্রকাশও আটকানো যায়নি। কিন্তু বাধা দিয়ে উল্টো আপনারা শত্রু হয়ে গেছেন। এবং এটা ছিল একটা বিরাট ভুল। বরং আন্দোলন চলাকালে যদি সবাই অকুণ্ঠ সমর্থন দিতো, তাহলে কসম বদমাশদের আরশ আরও অনেক বেশী কেঁপে উঠতো। আবার গুজব নিয়েও আরেকদফা বিপুল পরিমাণ লোক তাঁদের শক্তি ক্ষয় করলো। ভাষাটা ছিল আপনাদের নিজেদের উপলব্ধি না থাকা আর গুজবটা ছিল রাজনীতির ষড়যন্ত্র বুঝতে না পারার বোকামি। এই দুইরকম বাধায় শক্তি ক্ষয় হয়ে আখেরে একটাও অসুর বধ না করে ছাত্রদের ফিরে যেতে হয়েছে। উল্টো এই অসুররা এখন প্রতিশোধের নেশায় আরও আসুরিক হয়ে উঠেছে। সবার উচিত ছিল অন্ততপক্ষে একটা হলেও অসুর বধের পর ছাত্রদের শান্ত করার। কারণ ওরা ছাত্র, ওরা শিশু, অসুরের পাল বধ করা ওদের দায়িত্ব নয়। এরপর ছাত্রছাত্রীরা আপনাআপনি সভ্য বেশে ফিরতে না পারলে ওদেরকে ফিরিয়ে আনা সুশীল সমাজের মায় সকলের দায়িত্ব হত।
এখন ওরা শান্ত হয়ে ফিরেছে। কিন্তু ভাষা ব্যবহারে কতটুকু মার্জিত থাকবে তা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত হয়ে উঠেছেন অনেকে। চিন্তা স্বাভাবিক এবং দরকারও। কিন্তু বিষয়টা এখন জটিল করে ফেলেছেন নিজেরাই। একে তো নিজেরা প্রতিবাদে ব্যর্থ, তার উপর ছোটদের আন্দোলন ব্যর্থ করে দিয়েছেন। বোকা শত্রু হয়েছেন। তাহলে এই ব্যর্থ, বোকা সুশীল বড়দের ছোটরা মানবে কেন। কোন কারণই তো নেই তাদের মানার। তারা নিজেদের মত করে সব সভ্যতা, অসভ্যতা, নীতি নৈতিকতা, মূল্যবোধ বানাবে এবং সেই মত চলবে। বলাই বাহুল্য তাদের বয়সজাত বুদ্ধির অপরিপক্কতার জন্য এসবের মধ্যে অনেক ভুলভ্রান্তি এবং অসংলগ্নতা থাকবে। কিন্তু অভিভাবক এবং শিক্ষকরা তাদের আর ঠেকাতে পারবেন না কারণ তারা আপনাদের বোকামির জন্য ওদের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার দিকে আঙ্গুল তুলবে।
যারা স্লোগান তুলেছে তাদের এবং আমাদেরই অসংখ্য আত্মীয় স্বজন পুলিশ বিভাগে আছে। ওরা সরকারের চাকর, সরকার যা বলে ওরা সেই মত চলে। তাই সরাসরি যদি বলা হত, ‘পুলিশ সরকারের ইয়ের ইয়ে’ তাহলেই সবচেয়ে সাহসী এবং উপযুক্ত হত। কথায় আছে, মুরুব্বীরা যা বলে বুদ্ধিমানরা সেই মত চলে। এখন মুরুব্বীরাই যদি বোকার মত বলে, তবে বুদ্ধিগাছেও তো বোকা ফল ফলে। এই আন্দোলনে বাংলাদেশের মুরুব্বীদের বোকামির ফল এখন টের পাচ্ছে সবাই। না জানি ছাত্রদের আরও কত হয়রানি সহ্য করতে হবে সামনে।
বি.দ্রঃ- যে যে ধর্মেরই হোন, মানুষের ক্রোধের শক্তিকে বোঝার জন্য উপরের উদাহরণটি নিতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:৩৭