( ) থেকে এমন একটা কাজ পেয়েছি যে শেখ হাসিনাকে একদম খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হচ্ছে। তাঁর ঘরের বারান্দাতেই থাকছি এবং শেখ হাসিনাকে ক্যাজুয়াল পোষাকেও দেখতে পেলাম। আমাকে নতুন দেখে হাসিনা একজনকে ডেকে আমার ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বলাতে একটু দূর থেকেও আমি তা বুঝতে পারলাম। এক বন্ধু আমাকে ফোন করলো। সে কথা থামাচ্ছেই না। বেশ অনেকক্ষণ কথা বলে ফোন কেটে দিয়ে একটু পরে আবার ফোন দিলো। একে তো এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কাজ করছি নতুন, আমাকে এমনিতেই দেখে রাখছে সেখানে বারবার ফোন আসাতে আমার দিক থেকে আর চোখই সরাচ্ছে না লোকটা। কাজ শেষ হোল, কোন একটা অফিস ঘরে আছি। জানালা দিয়ে দেখলাম বেশ কিছু সাদা শার্ট প্যান্ট পরা কলেজ ছাত্রের লাশ রাস্তায়।ওরা অভিনয় করছে না সত্যি বুঝতে পারলাম না।সত্যি হলে ভাবছি এই ছেলেরা কতটা আন্তরিক যে এভাবে অকাতরে প্রাণ দিতে চলে আসে ! যে লোকটা আমাদের কয়েকজনকে পারিশ্রমিক দিলেন তাকে চিনিনা। এতো কম দেয়াতে আমি বলে উঠলাম, এতো কম কেন? আগে তো আমরা আরও বেশি পেয়েছি। লোকটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। অন্যরা আমার চেয়েও একদিন করে কম পেলো। একটি মেয়ে বলে উঠলো, আমি মিথ্যে কথা বলছি। সে অন্য একটা দিনে কাজের কথা বললো যেদিন ওরা এরকম কম পেয়েছে। আমি বললাম, আমি ওই কাজের সময় ছিলাম না। আমি প্রথম যখন আসি তখন বিজ্ঞান ভিত্তিক একটা কাজ এখানের তৎকালীন বড় ভাই আমাকে দিয়েছিলেন, সেই কাজে আমি অনেক বেশি পেয়েছিলাম। এরপর যতবার কাজ পেয়েছি এর চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পেয়েছি। সেই ভাই পাশ থেকে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন।মেয়েটি রেজিস্টার খাতা বের করলো। আমি বললাম দেখো, জুলাই ০৭। পরক্ষনেই বললাম ২০০৭ না ২০১০। মেয়েটি রেজিস্টারের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। হেসে আমাকে দেখালো তাদের ওই কাজের সময় আমি এখানে ছিলাম। আমি বললাম, আমি থাকলেও ওই কাজ আমি করিনি, এই কাজ সম্পর্কে আমি কিছু জানিনা, তোমরা কোথায় করেছো, কবে করেছো, কি পেয়েছো।আমি তো শুধু আমার কাজের পারিশ্রমিকের কথাই বলবো। এরপর মেয়েটি আর কিছু বললো না। অন্যরা বললো,আর টাকা পেলেই বা কি হবে সব তো এই লোকটাকে দিয়ে যেতে হবে। নিষ্ঠুর চেহারার খোঁড়া এক লোকের কাছে সবাই টাকা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। আমি দিতে রাজি হলাম না।সাথে সাথে শাবলের মত ভারী অস্ত্র নিয়ে লোকটার সাথে আমার লড়াই বেঁধে গেলো। তখন জায়গাটা রাস্তার উপর এবং আধো অন্ধকার। খোঁড়া হওয়াতে লোকটাকে আমি দ্রুত বসিয়ে দিতে পারলাম। শাবল দিয়ে বুকের উপর আড় করে কয়েকবার চাপ দিলাম কিন্তু মারিনি। লোকটা শান্ত হয়ে যাওয়াতে আমি সরে এলাম আর সাথে সাথেই লোকটা আবার শুরু করলো। সে তার নিচে থাকা একের পর এক ধারালো দা, বটি আমার দিকে ছুড়ে দিচ্ছে। আমি চিৎকার করে দৌড়ে বাইরে গেলাম। লোকটা বাইরেও দাঁড়িয়ে আছে খোঁড়া পা নিয়ে। আমি সোজা না গিয়ে অন্য লোকের আড়ালে আস্তে করে সে উঠোন পেরিয়েই ছুটলাম। দৌড়াচ্ছি তো দৌড়াচ্ছি।একটা চমৎকার সুরে আল্লাহু আল্লাহু বলা তালের সাথে আমি দৌড়াচ্ছি। দৌড়াতে দৌড়াতে একটা ঘরে গিয়ে ঢুকলাম।পাশের ঘরে বসা বয়স্ক মানুষটা আমায় দেখলেন।একটু পরে ওই খোঁড়া লোকটার পরিচিত তিনজন এই বাসায় আসলেন। আমি বয়স্ক লোকটাকে হাতের ইশারায় আমার কথা বলতে মানা করলাম।উনি বললেন না। কিন্তু লোক তিনজন একাই এঘরে ঢুকে গেলেন এবং আমাকে দেখলেন। দেখেও তারা না দেখার ভান করলেন।ঠিক এসময় খোঁড়া লোকটা এই ঘরের দরোজা দিয়ে ঢুকলো। কিন্তু ওই তিনজন লোক এবং বয়স্ক লোকটি হাউকাউ করে কথা বলার ছলে আমাকে তাঁদের আড়ালে নিয়ে পাশের ঘরে চলে আসতে দিলেন।দেখলাম বয়স্ক লোকটি এবার আমার বাবা হয়ে গেলেন। বাবা সাদা টুপি, কালো গেঞ্জি এবং লুঙ্গি পরিহিত। আমাকে দরোজা দিয়ে পালিয়ে যেতে সাহায্য করছেন এবং দ্রুত আযানের জন্য কামনা করছেন।কারণ আযান দিলেই খোঁড়া লোকটি নামাজ পড়তে বসবে এবং হুট করে এঘরে এসে আমাকে দেখে ফেলতে পারবে না। আল্লাহু আল্লাহু করে আবার দারুণ মধুর সুরে সুনির্দিষ্ট একটি তালে কেউ বলতে শুরু করলো এবং সেই তালে আমি দৌড়াতে লাগলাম। দৌড়াতে দৌড়াতে একটা মফস্বল শহরের নিরাপদ আবাসিক রাস্তায় চলে এলাম যেখানে পথের ধারে বাড়ির বৌ,ঝিরা দাঁড়িয়ে বসে গল্প করছিলো।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ২:২৬