৩২৬-ক। গণরুম ।একটা নতুন মেম্বারকে নিয়ে ক্যাচাল লেগে গেল গণরুমে। একটা বাচ্চা টিনের ট্রাংক নিয়ে যত গন্ডগোল। হাতে কাঁথা-বালিশের একটা পুঁটলি,একটা টিনের ট্রাংক আর একটা ব্যাগ- মোটামুটি এই জিনিসগুলা নিয়ে একেকজন নতুন মেম্বার রুমে উঠে । কিন্তুু সাগর নামের এক নতুন মেম্বার এইগুলার সাথে আরেকটা বাড়তি বাচ্চা ট্রাংক নিয়ে এসেছে। গণরুম হওয়ার কারণে এমনিতেই রুমে বাড়তি জিনিস উপচে পড়ছে , তারমধ্যে আরেকটা বাড়তি জিনিস মানেই উটকো আপদ । এ'দিকে সাগর কিছুতেই বাচ্চা ট্রাংক হাতছাড়া করবে না । এটা নাকি তার সার্টিফিকেটের ট্রাংক ।
কাহিনী কী? সার্টিফিকেটের জন্য গোটা একটা ট্রাংক লাগে নাকি? হোক বাচ্চা ট্রাংক, তাই বলে সার্টিফিকেটের জন্য আলাদা ট্রাংক? কই, আমাদেরও তো সার্টিফিকেট আছে, মার্কশিট আছে; মেট্রিক-ইন্টার-জাতীয়তা-চারিত্রিক সনদ- সব মিলিয়ে গোটা দশেক সার্টিফিকেট হবে । আমরাতো জাস্ট একটা ফাইলে পুরে বড় ট্রাংকেই সব রেখে দিয়েছি, এইটার জন্য আলাদা ট্রাংক লাগবে কেনো?
সাগর আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করল- আসলে ট্রাংক লাগার কথা না, ফাইলেই সব হয়ে যেত । কিন্তু সব মিলিয়ে তার সার্টিফিকেট সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিনশো । নাচের সার্টিফিকেট, গানের সার্টিফিকেট, আবৃত্তির সার্টিফিকেট, বিতর্কের সার্টিফিকেট, স্কাউটের সার্টিফিকেট- কোনটা নেই? এত সার্টিফিকেটের জন্যতো একটা ট্রাংকা লাগেই- না কি? এখন আমরা, রুমের পুরনো মেম্বাররা যদি একটা বাড়তি ট্রাংক রাখার অনুমতি দিই- তাহলে ভাল হয়।
সাগরের সার্টিফিকেটপ্রেম আমাদের আপ্লুত করল। সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম আমাদের মুগ্ধ করল।তাই একটা বাড়তি ট্রাংক রুমে রাখার অনুমতি সাগরকে দেয়া হল।
দু-চারদিন পরের কথা। সাগরের কাছে তার বিভিন্ন সার্টিফিকেট পাওয়ার গল্প শুনছিলাম । কথায় কথায় সাগর আফসোস করল, ইশ, আরো ছোটবেলাতেই যদি বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় নাম লেখাতাম- তাহলে আরো শ'খানেক সার্টিফিকেট বেশী থাকতো। বেচারাকে স্বান্তনা দিলাম- থাক ! যা যাওয়ার গেসে । তোমার বাচ্চার বেলায় আর এই ভুল করো না ।
সাগর আমার কথা শুনেছে । ওর বাচ্চার বেলায় আর ভুলটা করেনি। তার ছোট্ট মেয়ে আরিশা জন্মের পর বার্থ-সার্টিফিকেট দিয়ে যাত্রা শুরু করেছে । আর গতকাল জাপানের ''শিশু-মডেল'' প্রতিযোগীতায় বাগিয়ে নিয়েছে আরেকটি সার্টিফিকেট, বয়স এক পেরুনোর আগেই ।
আরিশা ! মা! অভিনন্দন ! আর তোর বাপকে বল একটা ফাইল ক্যাবিনেট অর্ডার করতে । বাপ-বেটির সার্টিফিকেট কী আর এক ট্রাংকে আঁটবে?