শনিবার । ঘুমটা ভেঙে গেল একেবারে সক্কাল সকাল । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি মাত্র সকাল সাতটা বাজে । ছুটির দিনে এত সকালে ঘুমটা মাটি করার কোনো মানে হয় ? কী আর করা , ঘুম যখন ভেঙেই গেল ! বিছানার পাশে পড়ে থাকা ল্যাপটপটা আলগোছে তুলে অন করি ।
গতকাল অনেক রাত করে ঘুমিয়েছিলাম। তার আগে টানা চারঘন্টা চারদফায় স্কাইপে আড্ডা দিয়েছি সাত সমুদ্দুর তের নদীর ওপারের মানুষদের সাথে । তারা জানতে চায় আমার কথা, আমার ভাল-মন্দ, জীবনের স্বপ্ন কিংবা পরিকল্পনা নিয়ে । এসব বলতে আমার ভালই লাগে । কিন্তু তাই বলে চার ঘন্টা? এভাবেই গত এক মাস ধরে প্রতি রাতে আমার স্বপ্ন ফেরী করে চলেছি দূরদেশের মানুষদের কাছে। আজ পেটমোটা হাম্পটির কাছে, তো কাল স্বর্নকেশি ললনার কাছে । আজ ওহাইয়ো তো কাল ইন্ডিয়ানা, তো পরদিন ইলিনয় কিংবা কলোরাডো । কিন্তু কী হবে শেষমেষ? ওরা দেবেতো আমায় স্বপ্নপূরণের টিকেট? কিন্তু, আমি তো তেমন গৌরী নই !
তারপরেও- আমি স্বপ্ন দেখি খুব ; সবার স্বপ্নের আকাশ যেখানে- আমার স্বপ্নের সীমানা শুরু হয় সেখান থেকে ।
এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই ইমেইলটা খুলি । আর সাথে সাথেই আমার দেহে যেন বিদ্যুত খেলে যায়- আনন্দে আর উচ্ছাসে । কলোরাডো আমায় ডাকছে ! কলোরাডো নামটা প্রথম পড়ি সেবা প্রকাশনীর বুনো পশ্চিমের কোনো উপন্যাসে। জন ডেনভারের মুখেও শুনেছি নামটা।ডেনভারের 'কলোরাডো রকি মাউন্টেন হাই' গানটা গুনগুন করতে করতে কখনো কী ভেবেছিলাম কলোরাডো আমাকে স্বপ্নপূরণের টিকেট দেবে?
কলোরাডো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট স্কুল আমার ভর্তি নিশ্চিত করেছে , আলহামদুলিল্লাহ ! সেইসাথে গ্রাজুয়েট অ্যাসিস্টেন্টশীপ হিসেবে আমাকে দিচ্ছে একটা আন্তর্জাতিক হলের সহকারি পরিচালকের দায়ীত্ব , যেখানে থাকে আরো আশিটা দেশের শিক্ষার্থীরা । সেই সুবাদে আমাকে তারা দুই বছরে একটা বড় অংকের ফান্ডিং দিচ্ছে । সেই টাকায় আমার টিউশন-থাকা-খাওয়া-পরা থেকে শুরু করে লুংগি কাচার খরচও হয়ে যাবে , ইনশাআল্লাহ্ ।
এখন খট খট করে আমার স্বপ্নপূরণের গল্পটা লিখতে ভালই লাগছে । কিন্তু স্বপ্নের পথে যাত্রাটা অত সহজ ছিল না। জিআরই দেয়া, আই্যেল্টস দেয়া, রেজুমে লেখা, পারসোনাল স্ট্যাটমেন্ট, রেফারেন্স লেটার, ট্রান্সক্রিপ্ট.......আরো কত্তো কী । যারা কিছুটা হলেও আমার মত করে চেষ্টা করেছেন, তারা বুঝবেন কত ধানে কত চাল। আর যারা জানে আমার জীবনের পেছনের দিনগুলোর কথা, তারা জানে, এটা বামনের হাতে চাঁদ পাওয়ার সফলতা । কিছু চমতকার মানুষ আমার পাশে ছিল বলেই আজকে আমি সফলতার পথে পা রাখতে যাচ্ছি - সেই চমতকার মানুষদের ধন্যবাদ। সেইসাথে আমার কাছের ও দূরের সকল শুভানুধ্যায়ীদেরকে ধন্যবাদ , যাদের শুভকামানা আর অনুপ্রেরণা আমাকে এতদূরে নিয়ে এসেছে; নিয়ে যাবে আরো অনেকদূর ।
পুনশ্চ: আমার সহকর্মীদের একটা বড় অংশই আমেরিকান । তাদেরকে সুসংবাদটা দিলেই তারা অভিনন্দন জানায় । তবে একটা ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়ার জন্য নয় ! একটা খুব সুন্দর জায়গায় থাকতে যাচ্ছি বলে । এলাকাটা নাকি সেইরকম সুন্দর । নেটে কিছু ছবি পাইসি- দিয়ে দিলাম । যাবেন নাকি আমার বাসায় বেড়াতে ?