জাতীয় সংগীতের কথা ভাবলেই আমার চোখে ভাসে সাদা প্যান্ট-শার্ট পরা একসারি অসহায় কিশোর পোলাপানের মুখ । সারাজীবন স্কুলে ভরদুপুরে কড়া রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত গাওয়ার অভ্যাস ছিল বলেই মনে হয় এই অবস্থা । স্কুলের পিটি-র বাইরে কখনো সাধ-আহ্লাদ করে জাতীয় সংগীত গাওয়া বা শোনা মনে হয় খুব কম বাংলাদেশীরই হয়েছে। কিন্তু, হঠাৎ আমার কী জানি কী হয়ে গেল বছর সাতেক আগে।
২০০৮ । মিসিসিপির জ্যাকসন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেলাম মাস ছয়েকের জন্য । সুনসান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস । চারপাশে বাঙালীর কোনো চিহ্ন তখনো পর্যন্ত পাই নাই। ফোনে ২-৪ মিনিট কথা বলাটাই বাংলা চর্চার একমাত্র তরীকা । বাংলা ব্লগ তখনো আমার চেনা হয়নি । প্রায় মাসখানেক একরকম অভুক্ত থাকার পর ওয়ালমার্টে গিয়ে একদিন একটা হেডফোন কিনে আনলাম। ভার্সিটির লাইব্রেরীর কম্পিউটারে বসে 'বাংলা সং' লিখে সার্চ দিলাম । শুরুতেই আসলো বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত । প্লে বাটন চেপে গানটা শুনলাম আর প্রাণটা যেন জুড়িয়ে গেল । আমাদের জাতীয় সংগীত এত মধুর? বুভুক্ষুর মত বার বার রিপ্লে চাপতে লাগলাম আর শুনতে লাগলাম - আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি । গান শুনতে শুনতে হঠাৎ কেন যেন চোখ দিয়ে দরদর করে পানি পড়তে লাগল ।
এখনো এমনই আবেগী হয়ে উঠি মাঝে মাঝে । আর বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই উপলক্ষটা এনে দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল । খেলা শুরুর আগে ওরা যখন সার বেঁধে জাতীয় সংগীত গায়, যখন দেশ কিংবা বিদেশের মাটিতে বসে হারিয়ে দেয় বিদেশী একেকটা দলকে, যখন মুশফিকদের ছোট্ট শরীর সমস্ত শক্তি দিয়ে বাউন্দারি হাঁকায় - তখনই মনটা ভিজে যায় আবেগে । ধন্যবাদ বাংলাদেশ দল, মনটাকে আরো একবার ভিজিয়ে দেবার জন্য । এই বিশ্বকাপে আমার মনটাকে ভেজাতে ভেজাতে তোমরা কাদা কাদা বানিয়ে দাও- এই শুভকামনা ।