একটি ছেলের গল্প বলা যাক।
ভারী সুন্দর গান করতো সে। তার মোহনীয় সুরে
থমকে যেত বাতাস। মেঘেরা কেঁপে উঠতো
অঝোরে ঝরবার এক অদম্য ইচ্ছায়। হঠাৎ একদিন,
গলির এক বড় ভাই এলো তার কাছে। তারপর দেখা গেল
একবার দু’বার করে হরদমই আসছে সে।
কি জানি, কি এক সখ্যতা গড়ে উঠলো তাদের মাঝে।
এভাবে পেরিয়ে গেল কয়েকটি মাস। এলো দৃশ্যপটে পরিবর্তন।
যে ছেলেটির কণ্ঠে ছিল জীবনের গান,
সে জীবন নিয়ে খেলতে শুরু করলো; হাতে মেশিনগান।
আরেকটি গল্প শুরু হোক।
গল্পটি এক ভদ্রলোকের। নিখুঁত নিপাট ভদ্রলোক।
হঠাৎ করেই তার হৃদপিণ্ড বিদ্রোহ করে বসলো।
প্রচন্ড কষ্ট বুকে নিয়ে তিনি রাস্তায় এসে দাঁড়ালেন;
একটা ট্যাক্সি অথবা রিক্সার আশায়। কিন্তু সেদিন
হরতাল ছিল। তাই দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ ভাড়াতেও
কোন রিক্সাওলার হৃদ্যতা কেনা যায়নি।
দিকে দিকে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, লকলকে আগুন
রিক্সাগুলোর যাত্রা রুদ্ধ করলেও হৃদযন্ত্রের নির্দয় দ্রোহ
থামাবার অধিকার সেদিন হরতালের ছিল না।
তাই একটা মানুষ না হয় চলেই গেল দেশের স্বার্থে।
শেষ গল্পটা পাড়ার রহমত মিয়ার।
পাড়ার গোড়া পত্তনের ইতিহাসটা ঠিক ঠিক মিলে যায়
তার চায়ের স্টলের সাথে। সবচে’ মুখর আড্ডাগুলো
দু’পুরুষ জমে উঠছে এই রহমত মিয়ার চা খেতে খেতে।
একদিন পাড়ায় কিছু বখাটে ছোকরার আবির্ভাব ঘটলো।
পার্টির কল্যানের খাতিরে তাকে মাসিক চাঁদার খাতায় নাম লেখাতে হলো।
কিছুদিন বাদেই গড়ে উঠলো আরো ক’টি কল্যানকামী দল।
অবশেষে অতিষ্ঠ হয়ে চাঁদা থেকে পরিত্রাণ চাইলো সে।
পার্টিগুলোও তাকে পরিত্রাণ দিল। তবে চাঁদার খাতা থেকে নয়;
চাঁদাবাজীতে নিঃশেষ হওয়া একটা জীবন থেকে।
এবার গল্পগুলোর জমিনে একসাথে প্রবেশ করি,
ঈশপের আদলে কোন উপদেশ নয় বরং তিন-তিনটে গল্পের শেষে
শুধুমাত্র একটা বিষয় শিখি-
আসুন আমরা কিছু মানুষকে ঘৃণা করতে শিখি।
অন্তত, তিনটে ক্ষয়ে যাওয়া জীবনের খাতিরে।
-রুম্মান মাহমুদ
(৭ নভেম্বর, ২০০৬)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ১২:৪৪