somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পতাকার ফেরিওয়ালা.. .. ..(শেষ অংশ)

২০ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ১২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৪)
কে যেন পন্বাশটা টাকা দিয়েছিল সুলতানাকে-বোধকরি হেডমাস্টার সাহেবই।
এবং লাশ হয়ে যাবার পরও টাকাটা শক্ত করে মুঠোর মাঝে ধরাই ছিল তার। ধর্ষিত হবার সময়েও মূল্যবান পন্বাশ টাকার নোটটা,পরিবারের জন্যে খাদ্য যোগাড়ের সম্ভভাবনাময় নোটটা হাতছাড়া করেনি সে।
কারা যেন ধর্ষণ করার পর সুলতানার তবিত শরীরটাকে মুখ বাঁধা,হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে গেছিল একটা ডোবার পাশে। বিবস্ত্র,নগ্ন শরীরটাকে। নির্যাতিত,প্রাণহীন শরীরটাকে। তিনদিনের অভুক্ত দেহটা তার সহ্য করতে পারেনি একদল পিশাচের লালসার বাষ্প।
মরে গেছে।স্রেফ মরে গেছে!
কখন?কিভাবে?
যখন তাকে ফেলে দেয়া হয়েছিল ডোবার পাশে,তখনও কি বেঁচে ছিল মেয়েটা? বেঁচে থাকার প্রাণপন প্রচেষ্টায় চিৎকার করছিল কি তার রোধ করা কন্ঠ?
কাদাজলে মাখামাখি হয়ে কতণ বৃষ্টিতে ভিজেছে সে?নোনা পানিতে জ্বলুনি ধরেছে শরীরের আঁচড়-কামড়ের ক্ষতগুলোতে,নিঃস্বাসের সাথে সাথে ফুসফুসে প্রবেশ করেছে হিম শীতল জল কণা.. ..
আর একসময়.. ..
একসময় নিষ্ঠুরতম পৃথিবীটার প্রতি একরাশ ঘৃনা আর অভিমান নিয়ে চলে গেছে সে মৃত্যুলোকের ওপারে। কেউ দেখেনি,কেউ শোনেনি।একদল হিংস্র প্রাণী একটি সদ্য কিশোরিকে ছিঁড়ে-খুড়ে খেয়েছে পরম আনন্দে,আর তারপর পৌছে দিয়ে গেছে মৃত্যুর দোরগোড়ায়- চাপা দিতে নিজেদের পাপ,চাপা দিতে নিজেদের পরিচয়।
কিন্তু তাতে সত্যি কি কিছু যায় আসে?
প্রতিদিন না জানি এমনি আরও কত নারী-শরীর ধর্ষিত হচ্ছে,নির্যাতিত হচ্ছে,উত্যক্ত হচ্ছে। কাউকে মেরে ফেলা হচ্ছে,কেউ আবার অপমানের জ্বালা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করছে। ভীষণ অপমানে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে জীবনের বুক থেকে,সাথে নিয়ে নিজের সব আনকোরা স্বপ্ন।
কিন্তু তাতে কি? কি আসে যায় তাতে?
কিচ্ছু না!! কিচ্ছু না!!
আর যায় আসে না বলেই তো সুলতানার মৃত্যুতে শোরগোল হনা কোনো। পাড়া-প্রতিবেশী,আত্মীয়রা রমিজউদ্দিনকে পরামর্শ দেয় নিশ্চুপ থাকবার। অভিযোগ করে এখন হবেটা কি?যার যাবার,সে তো চলেই গেছে। তারপরেও অভিযোগ না হয় করা হলো,কিন্তু প্রমানের কি হবে? কে দেবে স্ব্যা সকলেরই মুখচেনা বখাটেদের বিরুদ্ধে? সবার ঘরেই স্ত্রী-কন্যা আছে,সবারই তো জীবনের মায়া আছে।কে চাইবে পরের জন্যে এলাকা ছাড়া হতে?
কাঁদে না রমিজউদ্দিন। যেন প্রস্তর হয়ে যায়।
আর হাসিনা বানু পন্বাশ টাকার নোটটা বুকে আগলে বসে থাকে কাফনে মোড়ানো লাশটার মুখের দিকে তাকিয়ে। চোখ বেয়ে গড়ায় অশ্র“র ধারা-নিঃস্তব্ধ,অসহায় অশ্র“র ধারা। না বিলাপ করে,না চিৎকার।
সুলতানার সুন্দর মুখটা জুড়ে শুধু সিগারেটের ছ্যাকার দাগ.. .. ..সে দৃশ্য দেখে বৃদ্ধ ইমাম সাহেবও কাঁদেন ছেলেমানুষের মতো। নিজের কর্তব্য ভুলে কাঁদেন।
রমিজউদ্দিনের ভীষন ভীষণ ভীষণ নীরব বাড়ির উঠোনে কথা বলে না কেউ,শব্দ করে না কেউ। দাঁড়িয়ে দেখে কেবল,পরিবারটিকে স্বান্তনা দিতেও এগোয় না কেউ। যেন অচ্ছুত হয়ে গেছে এই পরিবারটি আজ থেকে।
কেউ কথা বলে না। কেউ না।
শুধু একজন নারী অপ্রকৃতস্থের মতো বিলাপ করেই যান ক্রমাগত। সুলতানার শরীরটাকে যারা শেষ গোসল করিয়েছিলেন,তাদের মাঝে একজন এই নারী-বুক চাপড়ে বিলাপ করতেই থাকেন।ভয়ে,ঘৃণায়।
‘.. .. ..আল্লাগো,তুমি বিচার কইরো আল্লা!.. ..মাইয়াডার শরীরের দিকে দেখন যায় না গো.. ..দেখন যায় না!.. .. ..আমারে এইডা কি দেখাইলা গো আল্লা?কি দেখাইলা?.. .. ..ওই গুলি মানুস না। রাক্ষস!.. ..রাক্ষস!!.. ..ও আল্লা.. ..’
একটি কমবয়সী নারী দেহের বাহক সেই রমনী বিলাপ করতেই থাকেন চরম আতঙ্কে। এবং তিনি একাই,আর কেউ নয়।
আর কেউ এগিয়ে আসে না হাসিনা বানুকে একটু স্বান্তনা দিতে,বুকে জড়িয়ে নিয়ে করে দিতে কান্নার সুযোগ। নিজ নিজ কণ্রাকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে থাকে সবাই নিরাপদ দূরত্বে। নীরব,নিশ্চুপ।
কেবল সোহাগ.. ..
সোহাগই কেবল কেঁদে চলে ক্রমাগত একমুঠো ভাতের দাবীতে।ছয় বছরের সোহাগের পৃথিবীতে বড়বোনের মৃতদেহ কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। পারছে না। ক্ষুধার প্রচন্ড তাড়নাটাই আছে এখন শুধু তার অনুভব জুড়ে। এক মুঠো ভাত চাই তার,আর কিচ্ছু না। গরম ভাত কিংবা বাসি,সাথে একটু খানি লবন-ব্যস! আর কিছুই চাই না তার।
‘ভাত দে মা.. ..ভাত দে মা.. .. .ভাত দে.. ..’ক্রমাগত ঘ্যানঘ্যান করেই চলে সোহাগ,হাসিনা বানুর গলা জড়িয়ে। কাকতী-মিনতী করতেই থাকে অবিরাম.. ..এক মুঠো ভাতের জন্যে।
কি যে হয়,একসময় ধীর পায়ে বাড়ির আঙিনা বের হয়ে যায় হাসিনা বানু। সুলতানার দেহটাকে যখন তাড়াহুড়া করে মাটিচাপা দেয়া হচ্ছিল,ঠিক তখনই।
হ্যা,মাটিচাপাই।
বহুদিনে বৃষ্টিভেজা মাটিতে ঠিকতম কবর খোঁড়ার উপায় নেই,কোদাল চালালেই পানি উঠে আসছে। কোনোমতে একটা গর্তের মত করা করা হয়েছিল,তাতেও এখন হাঁটু পানি। এবং বাড়ছে ক্রমাগত। মরার বৃষ্টি যে বন্ধই হচ্ছে না!
বাতাস বাড়ছে,ঝড় ছুটবে যে কোনো সময়ে। পানি ভরা কবরেই তাই আলতো করে নামিয়ে দেয়া হয় শরীরটাকে। হারিয়ে যায় এমন করে পানির নিচে,যেন এক টুকরো পাথর। এবং নির্দয় আকাশ-বিন্দুরা বর্ষেই চলে অবিরাম.. .. ..নিজেদের মতোই।
কৃতজ্ঞ বোধ করে হাসিনা বানু। যে মানুষ গুলো বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে দাফন করছে সুলতানার মৃতদেহটাকে-তাদের প্রতি। এবং সেদিন,সেই মুহূর্তেই আজীবনের জন্যে ফেরারী হয়ে যায় সে।সোহাগের হাত ধরে।
বড় সাধের ঘরটাকে পেছনে ফেলে যায়। ভালোবাসার স্বামীকে একা ফেলে যায়। সোহাগের জন্যে এক মুঠো ভাতের ব্যবস্থা তাকে করতেই হবে। এবং সে করবে। তিন বেলাই করবে।
যেভাবে হোক করবে। যেখান থেকে পারে করবে।
তাতে যদি মেম্বারের সয্যা সঙ্গিনী হতে হয়,তাও হবে। একটি সন্তান হারিয়েছে সে,অপর জনকে হারাবার সাহস তার হবে না কিছুতেই।
কিছুতেই না!!
৫)
মানুষটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি আমি। স্রেফ ভাষাহীন তাকিয়ে থাকি!
একজন মুক্তিযোদ্ধা,জীবন যাকে কিছুই দেয়নি-পরিবার হারাবার ভয়াবহ বেদনা আর দুঃসহ স্মৃতি ছাড়া। এই দেশ তাকে একটি জীবন দিতে পারেনি, ফেরারী করে পথে নামিয়ে নিয়ে দিয়েছে। এই দেশের মানুষেরা তাকে নুন্যতম সম্মানটাও দেয়নি,বরং তিলতিল অসম্মানই দিয়েছে প্রতিদানে।
অথচ এই মানুষ গুলো.. .. .. রমিজউদ্দিনের মতো এই মানুষগুলোই জন্ম দিয়েছেন পৃথিবীর বুকে নতুন একটি মানচিত্রের,নতুন একটি চেহারার।
বাংলাদেশ সেই মানচিত্রের নাম-আমাদের শেকড়,আমাদের পরিচয়!
হতে পারে ছোট্ট,হতে পারে তুচ্ছ। তবু স্বাধীন একটি দেশ,স্বাধীন একটি পরিচয়।
যে মানুষগুলো “বাংলাদেশী” নামে পৃথিবীর বুকে ভিন্ন একটি স্বত্তার জন্ম দিয়েছেন,কি দিয়েছি বিনিময়ে তাদের আমরা?
দিয়েছি তো,অনেক কিছুই দিয়েছি। এত কিছু যে বাকি জীবন ভরেও এর ভার তারা বয়ে শেষ করতে পারবেন না। অসম্মান-অবহেলা-অভাব-দারিদ্র.. .. ..কম কি দিয়েছি কিছু?প্রাপ্যের চাইতে বেশীই দিয়েছি বরং!
অবশ্য যে দেশে স্বাধীনতার পর ছত্রিশ বছর পর্যন্ত বীরশ্রেষ্ঠরা পড়ে থাকেন অন্য দেশের ভূমিতে,৭১ এর যুদ্ধ অপরাধীরা যে দেশে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর সংসদ নির্বাচন করে,যে দেশের নাগরিকদের বড় একটা অংশ জানে পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এবং জানবার চেষ্টাও করে না-সে দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানটা করবে কে?
আমরা মেরুদন্ডহীন,স্বার্থপর একদল প্রানী-যারা নিজেদের গৌরবময় ইতিহাসটাকে স্বীকার পর্যন্ত করতে চাই না। যেদিন করবো,একমাত্র সেই দিন হয়তো দিনবদল হবে এই বাংলাদেশে। যে ভূমির স্বপ্ন বুকে নিয়ে ৭১এ শহীদ হয়েছিলেন ৩০ ল মানুষ,সম্ভভ্রম হারিয়েছিলেন ২লক্ষ নারী.. .. ..সেই স্বপ্ন সত্যি হবে। শুধু মাত্র সেই দিনে।
এবং আমি জানি,বিশ্বাস করি-সেই দিন আসবেই।
যখন অনাহারে প্রাণ হারাবে না কেউ,নির্যাতিত হবে না কোনো মানুষ,ধর্ষিত হবে না কোনো নারী,সমৃদ্ধ জীবনের প্রত্যাশায় কাউকে পাড়ি জমাতে হবে না মাতৃভুমি ছেড়ে অনেক দূরের কোনো দেশে।
মাথা উচু করে পরিচয় দেবো আমরা নিজেকে-হ্যা,আমি বাংলাদেশী। পৃথিবীর সেই একমাত্র দেশের মানুষ আমি,যারা মাতৃভাষার জন্যে জীবন দিতে পারে নির্দ্বিধায়। যারা মাতৃভুমির সম্মানের জন্যে ৭১এ করেছিল অসম একটি যুদ্ধ। এবং শুধুমাত্র অসীম সাহসের ভরসায় নিজেদের জন্যে অর্জন করেছিল একটি লাল-সবুজ পতাকা.. ..আমি সেই দেশের মানুষ! সেই বাংলাদেশের মানুষ!
‘সেই দিন সত্য আসবো,বাপজান?’
‘হ্যা,চাচা। আসবে। অবশ্যই আসবে।’
‘ছেলেপেলেরা অখন বাংলায় কথা কইতে শরম পায়। ইংরেজীতে কথা কয়,হিন্দিতে কথা কয়... ..কেমনে আসবো তাইলে সেই দিন বাপজান? কেমনে আসবো?’
‘আসবে চাচা। অবশ্যই আসবে। আমরা আনবো।’
‘দ্যাশের জন্যে যুদ্ধ করছিলাম বাপজান,মায়ের ইজ্জত বাঁচাইতে যুদ্ধ করছিলাম.. .. ..নিজের মাইয়ার ইজ্জত বাঁচাইতে পারি নাই’!’’ছোট মানুষের মত কাঁদতে পক্ককেশ এক বৃদ্ধ। আর এমনই হতভাগা আমি যে তাঁকে স্বন্তনা দেবার যোগ্যতাটাও আমার নেই।
‘.. ... মাইয়াডা আমার লাশ হইয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বৃষ্টিতে ভিজছে।কেউ তাওে দেখে নাই,দেইখে না দেখার ভান করছে। কেউ তার শইলের উপর একটুকরা কাপড় দেয় নাই।গেরাম শুদ্ধা মানুষ দেখছে আমার মাইয়াডার কাপড় ছাড়া শরীল।.. ... নিজের হাতে.. ..এই দুইটা হাত দিয়া সুলতানার লাশডা তুইলে আনছি আমি,আব্বা।.. ..এই দুইটা হাত দিয়া.. ..’
কল্পনা করতে পারবো আমরা কেউ সেই পিতার অনুভব?
যে পিতা নিজ চোখে দেখেছেন কন্যার ধর্ষিত মৃতদেহ,দু হাতে তুলে এনেছেন বিবস্ত্র দেহটিকে.. .. ..আর এক দুনিয়া ভরা মানুষের কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি!
পারবো কি কল্পনা করতে আমরা সেই পিতার অনুভব?
পরিশিষ্ট ঃ
অনেক আগে একটি মেয়ের সাথে ভালোবাসাবাসি ছিল আমার। স্বামীর ঘরে নির্যাতিতা সেই মেয়েটিকে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে একসময় পালিয়ে বেঁচেছিলাম আমি স্বপ্ন নারীর মোহে।.. ..হ্যা,ধোঁকা দিয়েছিলাম তাকে!
আজ মনে হয় মেয়েটিকে খুঁজে বের করে হাত জোড় মা চাই। তাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলি-“বিশ্বাস করো,আমি থাকতে আর কেউ হাত তুলতে পারবে না তোমার শরীরে।কোনোদিনও না!”
মনে হয় আজ মা চাই সেই রিকশাওয়ালার কাছে,গত সপ্তাহে যাকে একটা চড় মেরেছিলাম; সেই বন্ধুর কাছে,বিনা কারণে যার মনে কষ্ট দিয়েছিলাম; সেই কাজের ছেলেটার কাছে,অকারণে যাকে ধমক দেই প্রতিদিন.. .. ..মনে হয় নিজেকে উৎসর্গ করে দেই সেই পিতা-মাতার পায়ে,যারা পরম মমতায় মানুষ রূপে বড় করে তুলেছেন।.. .. ..
মনে হয় চিৎকার করে বলি-ছোট্ট একটা তো জীবন! আর সেই জীবন শুধু ভালোবাসার জন্যে। ঘৃণা,হানাহানি আর স্বার্থপরতার জন্যে নয়!.. ..
.. .. ..
চলে যেতে থাকেন মানুষটা। আমাকে আগাগোড়া বদলে দিয়ে চলে যেতে থাকেন তিনি.. .. ..একজন পতাকার ফেরিওয়ালা,একজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা। বিগত একটি যুগ ধরে যিনি এই দেশটার পথে পথে ফেরি করছেন লাল-সবুজের পতাকা। আমার পরিচয়.. ..আমাদের পরিচয়!!
কিছুই পাননি তিনি প্রতিদানে,বরং হারিয়েছেন সব। স-অ-ব! তবু মুখ ফেরাননি একটিবারের জন্যে। বরং আজও লাল-সবুজ পতাকার ভার কাঁধে তুলে নিয়ে পথ চলেন তিনি। বড় একাকী,নিঃসঙ্গ সেই পথচলা। হারিয়ে যেতে থাকেন তিনি আমার দৃষ্টিসীমার আড়ালে ক্রমশ.. .. .
তবু শেষ একবার পিছু ডাকি আমি। রাস্তায় পড়ে থাকা পতাকা তুলে নিতে দেখে যে আমাকে আপন ভেবে দুদন্ড কথা বলেছেন তিনি,সেই অধিকারেই যেন পিছু ডাকি শেষ একবার।
‘চাচা.. ..আপনার স্ত্রী.. ..উনার কি হয়েছে?’
‘শুনছিলাম নটি বেটি হইছে,বাজারে নাকি ঘরও নিছিল। একদিন শুনলাম ঢাকা চইলে আসছে সোহাগরে নিয়া.. .. .বড় ভালো বউ আছিলো, বাপজান। বড় ভালো ।’
‘আর দেখা হয়নি কখনও?’
‘একদিন নিশ্চই হইবো। এই জীবনডা অনেক বড়.. .. ..আমি তারে ভুলি নাই। হের লাইগ্যা পরানডা প্রত্যেকদিন পুড়ে.. ..’
আর পিছু ফেরেন না তিনি,চলে যান নিজের পথে। কি খুঁজে বেড়ান এই কংক্রীট নগরীর পথে পথে? এক পৃথিবী মানুষের ভীড়ে হারিয়ে যাওয়া স্ত্রী-পুত্রকে?
আমার জানা নেই!
শুধু এটুকুই জানি যে কুড়িয়ে পাওয়া সেই লাল-সবুজের পতাকাটি তখনও আমার হতেই ছিল। এবং তখন,সেই মুহূর্ত থেকে আমিও একজন লাল-সবুজের ফেরিওয়ালা.. .. ..যাকে নিজ কাঁধে বহন করতে হবে এই পতাকার সম্মানের দায়। আদায় করতে হবে মানচিত্রের মূল্য।
নিজেকে এখন অনেক বেশী পরিপূর্ণ পুরুষ মনে হয় আমার। অনেক বেশী শুদ্ধ একজন মানুষ মনে হয়।
লাল-সবুজের এক টুকরো পবিত্র আলো যার হৃদয়ে আছে,সে কি কখনও অপূর্ণ মানুষ হতে পারে? অশুদ্ধ মানুষ হতে পারে?
২৮শে ফেব্র“য়ারী,২০০৮ ইং
(সমাপ্ত)
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×