.. ..ভালো আছি আমি।
আমাকে ছাড়া যতটা ভালো আছো তুমি, ঠিক ততটা ভালো আছি আমিও। বিশ্বাস করো- এতটুকু কম নয় তোমার থেকে।
ভালো আছি আমি। সুখেও আছি তোমার মতো।
শুধু আজ যখন লোডশেডিং আমার এলাকাটাকে ডুবিয়ে দিয়েছিল অন্ধকারে,আর আমি ছয় তলার ছাদের নিঃসঙ্গতায় ডুবে ডুবে যাচ্ছিলাম বসন্তের অপার্থিব জোসনার শরীরে.. .. ..সব কিছু কেন যেন ম্লান ঠেকছিল ভীষণ!
কংক্রীট নগরীর পাষাণ বুকে ছড়িয়ে পড়া রূপালী জোসনা,অপার রহস্য নিয়ে ঝিকমিকিয়ে ওঠা এক আকাশ নক্ষত্র,ছাদের এক কোণে সৌরভ ছড়ানো আমার লেবু গাছটা.. .. ..হঠাৎ করেই যেন নিস্প্রভ হয়ে এসেছিল তাদের সকল সৌন্দর্য্য আমার চোখে। হয়ে উঠেছিল প্রাণহীন,বিষন্ন।
এছাড়া আর সবকিছুই তো ঠিক আছে। বিশ্বাস করো,ভালো আছি আমিও।
শুধু মাঝে মাঝে কোনো ব্যস্ততম সড়কের ভীড়ে থমকে আসে আমার হৃদয়। পাশে পাশে চলতে থাকা কোলাহলমুখর নগরীটা সহসাই নিঃস্তব্ধ হয়ে যায় আমার কানে। পৃথিবী এগোয়,কেবল থমকে থাকি আমি.. .. ..
যখন কখনও নীলচে জিনস আর শুভ্র একটা শার্ট শরীরে জড়িয়ে হেঁটে যায় অপরিচিত কেউ। মুহূর্তের জন্যে তাকে তুমি ভেবে বড্ড ভ্রম হয় আমার। নেহাত অপরিচিত সেই মানুষটাকে বড় আপন লাগে ক্ষণিকের জন্যে.. ...
আর স্থবির হয়ে যায় আমার বর্ণহীন পৃথিবী!
কিন্তু বিশ্বাস করো ক্ষণিকের জন্যেই মাত্র। এছাড়া তোমার কথা একদম মনে করি না আমি।
একদম না।একটুও না।
শুধু সন্ধ্যার আলো-ছায়া প্রহরটাতে কলিংবেলে আওয়াজ হওয়া মাত্র দৌড়ে যাই দরজায়। স্মৃতির অবয়বে আটকে থাকা আমার ঘুণপোকা মনটা বাধ্য করে আমাকে।
লেবু গাছটাকে আজকাল আর আগের মত ভালোবাসতে ইচ্ছা করে না,বেলীর টবগুলোকে আর বলতে ইচ্ছা করে না-আসছে সিজনে ভালো মত ফুল ফোটাবি! আমগাছটায় আর ছাই দিতে ইচ্ছা করে না তোমার অপ্রিয় পোকাগুলি তাড়াতে। শুকনো পাতায় ক্রমশ ছেয়ে যেতে থাকে ছাদটা আমার অবহেলায়। বসন্ত আসে সবখানে,শুধু যেন এই ছাদটাতেই আসে না। আর নিজেকে আমার মনে হতে থাকে ছাদময় ফুটে থাকা গাঁদা ফুল গুলোর মতোই শুধু.. .. ..
রঙিন।
সৌরভবিহীন।
এটুকু ছাড়া ভালোই আছি আমি। অনেক ভালো আছি। হাসছি, ঘুরছি, তোমায় ছাড়া থাকছি.. .. ..
শুধু মাঝে মাঝে কখনও গভীর রাতে ঘুমটা ভেঙে যায়- বুকের গহীনে চাপা অস্বস্তি নিয়ে,দমবন্ধ করা একরকম অনুভব নিয়ে। আর বাকি রাতটা বসে বসে কাটে কম্পিউটার টার সামনে। রাত জাগি বলেই কিনা হয়তো,চোখ ভেঙে পানিও গড়ায়। অশ্রু নয়,পানি। কেবল পানিই।
তোমার জন্যে কাঁদি না আমি। অন্য নারীর একান্ত পুরুষের জন্যে কাঁদা যায় না।
তোমাকে তাই মনেও করি না আমি।
শুধু গতবছর যখন তোমার ভালোবাসায় প্রতারিত আমি ভীষণ অভিমানে পাড়ি জমাচ্ছিলাম অন্য শহরে,আর সেই তুমিই এসেছিলে আমাকে বাসে তুলে দিতে.. .. ..সেই মুহুর্ত গুলির কথা মনে পড়ে।
বাসটা যখন চলতে শুরু করেছিল আপন গন্তব্যের পথে,ক্ষণিকের জন্যে হলেও তোমার মুখোশে ঢাকা চেহারাটায় অসচেতন বেদনার ছায়া দেখেছিলাম আমি। যে বেদনা আমাকে বাধ্য করেছিল তোমায় ক্ষমা করতে, পৃথিবীর উপহাস মাথা পেতে নিয়ে আবার এসে ধরতে তোমার প্রতারক হাত।
আমি তো ধরেছিলাম ঠিকই,ধরিনি বলো?? এই পৃথিবীর সমস্ত কিছুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আমি ধরে রেখেছিলাম শুধু তোমার হাতটা। এক মুহুর্তের জন্যেও ছাড়িনি কখনও.. .. ..কখনও না!
তুমিই ধরে রাখতে পারোনি,ধরে রাখতে চাওনি বলেই। চেয়েছিলে আমি আঁকড়ে রাখি প্রাণপণে তোমার অস্তিত্ব,যেভাবে কোনো লতানো গাছ তার আশ্রয়দাতা বৃক্ষকে। চেয়েছিলে আমি ভালোবাসা দেই তোমাকে নিজেকে উজার করে,কিন্তু জবাবে ভালোবাসতে পারবে না তুমি।
তাই কি হয় কখনও? না হতে পারে?ভালোবাসা পেতেই তো তোমার কাছে যাওয়া আমার,ভালোবাসা পেতেই তো এত কাঙালিপনা.. ..
সে যাই হোক.. ..
শোনো-ভালো আছি আমি!
এতটা ভালো আছি আমি যে বসন্তের দিনগুলো এখন আর স্পর্শ করে না আমাকে।
সুখে আছি.. ..
ঠিক তোমার মতোই।
ঠিক যতোটা তুমি আছো।এতটুকু কম নয়!!!
(এই লেখার সমস্ত চরিত্র কাল্পনিক )
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ১:০২