বুঝলাম আজম খান গাইছে। আজম খানের সুন্দর গানের গলা। আবার অন্যদিকে ভীষণ সাহসী গেরিলা, দুর্ধর্ষ যোদ্ধা। সেদিন সেই রাতে চারদিক ভীষণ অন্ধকার, অন্যসব ব্যারাক আর তাঁবুর সবাই বাতি নিভিয়ে ঘুমিয়ে গেছে। ন’টা-দশটাতেই মনে হচ্ছে নিশুতি রাত। ঐ একটা তাঁবুর ভেতর হারিকেনের আলো ছড়িয়ে সাদা রঙের পুরো তাঁবুটা যেন ফসফরাসের মতো জ্বলছে। উঁচু থেকে দেখে মনে হচ্ছিল বিশাল অন্ধকার সমুদ্রে যেন একটা আলোকিত জাহাজ। আর আজম খানের গানের সুর, মনে হচ্ছিল যেন চারদিকেই ইথারে ভেসে ভেসে হাজার হাজার মাইল ছড়িয়ে পড়ছে। তখন আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল।
এখন এই বৃষ্টি ঝরা গভীর রাতের অন্ধকারে আমিও যেন চোখের সামনে দেখতে পেলাম নির্জন টিলার মাথায় কয়েকটি মুক্তিযোদ্ধা ৩০৩ রাইফেল হাতে সেন্ট্রি ডিউটিতে সমস্ত ইন্দ্রিয় টান করে দাঁড়িয়ে আছে, আর তাদের চারপাশ দিয়ে বায়ুমন্ডলে ভেসে যাচ্ছে আজম খানের উদাত্ত গলার গানঃ
হিমালয় থেকে সুন্দরবন, হঠাৎ বাংলাদেশ
কেঁপে কেঁপে ওঠে পদ্মার উচ্ছ্বাসে,
সে কোলাহলের রুদ্ধস্বরের আমি পাই উদ্দেশ।
জলে ও মাটিতে ভাঙনের বেগ আসে।
হঠাৎ নিরীহ মাটিতে কখন
জন্ম নিয়েছে সচেতনতার ধান
গত আকালের মৃত্যুকে মুছে
আবার এসেছে বাংলাদেশের প্রাণ।
"হয় ধান নয় প্রাণ" এ শব্দে
সারা দেশ দিশাহারা,
একবার মরে ভুলে গেছে আজ
মৃত্যুর ভয় তারা।
সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী
অবাক তাকিয়ে রয়ঃ
জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়। ........ "
(সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা)
শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ থেকে শহীদ রুমীর স্মৃতিচারন ।
পপ গুরু ও দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা আজম খানের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞলী।