কয়েক বছর আগের কথা। গ্রীষ্মের ছুটিতে জাপানের এক কান্ট্রিসাইডে বেড়াতে গেছি। আর ভাগ্য আমার এতই খারাপ সেবারই অনেক বড় আকারের ভূমিকম্প দেখা দিল। এবং পরপরই সুনামির পূর্বাভাষ।
আমাকে হোটেল ছেড়ে প্রায় কাছাকাছি একটা প্রাইমারি স্কুলের বিল্ডিঙে গিয়ে উঠতে হল। এটা সবার জন্য নির্ধারিত ইমার্জেন্সি শেলটার।
জাপানে ছোটবেলা থেকেই সবাইকে ভূমিকম্প আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কি করতে হবে তার অনুশীলন করানো হয় বলে শুনেছি। এইবার সেটার ফলাফল নিজের চোখে দেখলাম।
যেখানে রাত কাটাবো বলে ভেবেছিলাম সেখানে দেখা গেল হাজারখানিক লোক এসে জড় হয়েছে। সংখ্যায় আরো কম হবে হয়তো, কিন্তু আমার কাছে মানুষের ভিড় দেখলে দম বন্ধ হয়ে আসে। কে জানতো শহরের বাইরে এরকম নির্জন এলাকাতেও এত মানুষ থাকবে!
সন্ধ্যার শেষ হয়ে রাত হবার পরেও শেল্টারের ভেতরকার মানুষের কথাবার্তার আওয়াজ কমলো না। তার উপর দিব্যি গরম। যে রকম অ্যাডভেঞ্চারের আসা করেছিলাম বাস্তবে সেরকমটি হল না। ভ্যাঁপসা গরম আর গাদাগাদি করে থাকা মানুষের সমাগম; আমার প্রচণ্ড অস্বস্তি লাগলো।
বাইরে খোলা বাতাস নেবার জন্য বের হয়ে এলাম। মানে আমার স্লিপিং ব্যাগটাও সাথে নিয়েছি, অন্য কোথাও থাকার জায়গা আছে কিনা খুঁজে দেখবো আরকি।
বেশিদূর হেঁটে যেতে হল না। শেল্টারের পাশেই দেখলাম আরেকটা বিল্ডিঙ, হুবহু দেখতে। শুধু সেখানে কোনো আলো জ্বলছে না। আমি সেদিকেই এগিয়ে গেলাম।
ভেতরে গিয়ে দেখি সবাই এতক্ষণে ফ্লোরে বিছানা বিছিয়ে ঘুমিয়ে গেছে। আর খুশির কথা হচ্ছে এখানে বেশ ঠাণ্ডা। এই গরমে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমানোর মানে হয় না। মনে মনে ভাবলাম জাপানিজরা ভদ্র সমাজের মানুষই বটে। নয়তো জিনিষ চুরির ভয় না করে লাইট বন্ধ করে নিশ্চিন্তে ঘুমায় কিভাবে।
অন্যদের মাঝে আমিও শুয়ে পড়লাম। ভাগ্য ভালো যে এমন চুপচাপ জায়গা পাওয়া গেল।
কেউ টু শব্দ করলো না।
কিছুক্ষণ ঝিমিয়ে থাকার পর আমি বুঝতে পারলাম এখানে কিছু একটা গোলমাল আছে। চারিদিক একটু বেশিই নিস্তেজ, নিশ্চুপ।
কারো নিঃশ্বাসেরও শব্দ শোনা যাচ্ছে না।
আমি দৌড় দিয়ে সেই বিল্ডিং থেকে বের হয়ে আসলাম।
(গল্পটি ইন্টারনেটে বহুল প্রচারিত জাপানি গল্প থেকে অনূদিত। আমি কিছুটা রূপান্তর করেছি বলা যায়।)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪৮