‘চাইনা মেয়ে তুমি অন্য কারো হও…’ গানের তালে তালে শাকিব খান আর লাক্সতারকা মীম ব্যাপক শ্রম দিচ্ছেন দেখে চোখ আটকে গেল । মীমের পরনে আঁটসাঁট এ্যারাবিয়ান নাইটসের ড্রেস। রোজা হালকা হয়ে যাবে ভেবে আমি তো পুরাই অস্থির । একটু ডিসকভারি কিডস দেখে এসে রোজা ভারি অবস্থাতেই রাখলাম। ফিরে এসে দেখি কাহিনী অনেক জট পাঁকিয়ে গেছে। নায়িকার ভাই মিশা সওদাগর নায়কের বাবার অফিসে গিয়ে হল্লা করছে। নায়ক ইতোমধ্যে সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে গিয়ে নাকি মিশা সওদাগরের জানপাখিকে বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে ইয়া বড় কান্ড করেছে । এখন লাগছে তার অবুঝ বোনের পেছনে। নায়কের নামে এসব বিচার দিতে দিতেই মুখে ফেনা তুলে ফেলল। তারপর নায়কের বাবাকে অপমান করে সে ফিরে গেল। নায়ক সব জেনেশুনে মাথা গরম করে বলল- ই-য়া-আ…
অনেকগুলো কাগজের কার্টনভর্তি একটি গোডাউনে মিশার চ্যালাপ্যালাদের আস্তানা। নায়ক তার ওজনদার ভুড়ি সামলে মাত্র কয়েক মিনিটে সবকটাকে সাইজ করে ফেলল । শেষ গুন্ডাটাকে জানে মেরে ফেলার ভয় দেখাতেই সুড়সুড় করে মিশার মোবাইল নাম্বার শাকিবকে দিয়ে দিল। সামান্য একটা মোবাইল নাম্বারের জন্য এত ঝামেলা এবং পরিশ্রম করার কী ছিল বুঝলাম না । যখন নায়ক ফোন দিয়ে উল্টো মিশা সওদাগরের ঝাড়ি খাচ্ছিল সেই ফাঁকে জনৈক গুন্ডা নায়কের মোটরসাইকেলের ব্রেক কেটে চামে চামে দে ছুট । নায়ক মোবাইলে ব্যাপক ঝাড়ি খেয়ে ছুটছে মিশা সওদাগরের বাসায় । সিনেমার এপর্যায়ে আমি তো পুরাই টাশকি খেয়ে গেলাম। মিশার বাড়ির ঠিকানাই যখন শাকিব জানত তাহলে গুন্ডাপান্ডাদের আস্তানায় এসে মিশার মোবাইল নাম্বার নিল কী করতে!!! মাথা রীতিমত ঘুরতে লাগল । যাই হোক, মোটরসাইকেলের ব্রেক নাই, সারাটা রাস্তা শাকিব অনেক চালকীয় দক্ষতা দেখিয়ে শেষমেষ নায়িকার মায়ের ওপর মোটরসাইকেল তুলে দিল। ভেরি ব্যাড নিউজ, নায়িকা ও মিশার মা অন দ্যা স্পট ডেড। নায়ক উড়ে গিয়ে কাছেই কোথাও পড়ল। আমি ভাবলাম নায়কের স্মৃতিশক্তি বুঝি টাটা বাই বাই!! কিন্তু না, শাকিব খানের কপালে আধা আঙ্গুল সাইজের একটি স্টিকার সেঁটেই চিকিৎসা সম্পন্ন হল । নায়িকা মীম এখন দু’চোক্ষে শাকিবকে দেখতে পারে না কারণ মিশা ক্লিকবাজি করে বলল, মিশা নায়কের বাবাকে অপমান করেছে বলে শাকিব প্রতিশোধ নিতেই তাদের মায়ের ওপর মোটরসাইকেল তুলে দিয়েছে। ওদিকে নায়ক এক গ্লাস দুধ খেয়েই পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে মোহাম্মদপুর কবরাস্থানে গেল। সেখানে নায়িকা ও মিশার মায়ের দাফন হল। শাকিবকে দেখে নায়িকা মীম তাকে জন্মের ঝাড়ি দিল। কঠিন ঝাড়ি খেয়ে নায়ক হতাশ হয়ে ফিরে গেল। পরদিন তাকে দেখা গেল কোনও এক পার্কে মন খারাপ করে বসে বসে কী যেন ভাবছে । হঠাৎ পার্কের গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে কয়েকজন গুন্ডা নায়কের ওপর অকারণেই হামলে পড়ল। এইসব হামলা ব্যর্থ করা শাকিবের কাছে ওয়ান-টু’র ব্যাপার। তাই যথারীতি গুন্ডাদের পিটিয়ে হালুয়া করে সে জানতে চাইল কে তাদেরকে পাঠিয়েছে? ভালোয় ভালোয় এক গুন্ডা বিস্তারিত বলে দিল । ওদিকে নায়িকা মীমকে তার ভাই মিশা সওদাগর বলছে আজ শাকিবকে জানে শেষ করতে যাকে পাঠানো হয়েছে গুন্ডাদের মধ্যে হি ইজ দ্যা বেস্ট, জীবনে কোন মিশনে সে ব্যর্থ হয়নি । এটা বলতে বলতেই দ্যা বেস্ট গুন্ডা উড়ে এসে পড়ল তার সামনে । শুরু হল ট্রাজেডি!
নায়ক- তুমি আমাকে মারতে থার্ডক্লাস গ্রেডের গুন্ডা পাঠিয়েছো! হোয়াট দ্যা…
(নায়িকা কাঁদছে না আরো ক্ষেপছে বোঝা যাচ্ছে না। মারাত্মক কনফিউসিং একটি ক্লোজ ফেসশট।)
নায়ক- আমি না চাইলে কেউ আমার গায়ে ফুলের টোকাও দিতে পারবে না!
(এহেন ফাউল ডায়লগ শুনে মিশা সওদাগরের মারাত্মক বিরক্ত হওয়া আরেকটি ক্লোজ ফেসশট।)
নায়ক- তুমি যদি আমার দেহ থেকে রক্ত ঝরাতে চাও… কত রক্ত চাই, কত রক্ত চাই… (একটি ক্ষুর দিয়ে নায়ক নিজের হাতে পোঁচ মারছে, ও মাই গড!)
নায়িকা আর মিশা দুজনেই নায়কের এহেন কর্মকান্ডে পুরা বেক্কল হয়ে যাওয়ার দুটি ক্লোজ ফেসশট দিল। অবশ্য মিশা চামে একটা পিন মেরে দিল-
মিশা সওদাগর- ও (নায়িকা) কোন রক্ত চায় না, চায় তোর মৃত্যু!
নায়ক মহাশয় ভেবেছিল ক্ষুর দিয়ে কয়েকটা পোঁচ মেরে পরিস্থিতি অনুকূলে আনবে। নায়ক পুরা বেকুব হয়ে গেল। তারপরও নিজের ইমেজ যথাসাধ্য সহিসালামতে রেখে-
নায়ক- এই নাও (নায়িকার হাতে ক্ষুর হস্তান্তর করে) আমার মৃত্যুই যদি তোমার কামনা হয় তবে আমায় শেষ করে দাও!
নিজের হাতে ক্ষুর দিয়ে পোঁচ মারা আর গলায় ক্ষুর চালানো এক জিনিস না এটা বুঝতে পেরে মিশা সামান্য ইয়ার্কিমিশ্রিত ক্লোজ ফেসশট দিল । তারপর মিশা তাকিয়ে দেখল নায়িকা মীম হাতে ক্ষুর পেয়ে কী যেন ভাবছে, তাই তড়িঘড়ি সে আরেকটা পিন মারল-
মিশা- (নায়িকাকে) দেরি করিস না, দে ব্যাটাকে শেষ করে!
এহেন পিন মারাতে নায়ক অসম্ভব বিরক্ত হয়ে ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করছে এমন একটা ক্লোজ ফেসশট দিল।
আমি ইতোমধ্যে হাসতে হাসতে পুরা বিলা হয়ে গেছি। হেঃ হেঃ হেঃ…
নায়িকা কী করবে বুঝতে না পেরে এক দৌড় দিয়ে নিজের বেডরুমে গিয়ে একটা লম্বা ‘ফাল’ দিয়ে বিছানায় গিয়ে পড়ল । বালিসে মুখ চেপে কাঁদতে লাগল
অথচ এই দিকে আমি বেশরমের মত হাসতেই আছি, ব্যাপারটা কেমন দেখায় না? তাই চ্যানেল পাল্টে দিলাম…
(আজকে আমরা যা শিখলাম) মোরালঃ ভালমানের কার্পেট ব্যবহার করুন। সোফা থেকে হাসতে হাসতে তিন/চারবার পড়ে গিয়ে সামান্য হলেও ব্যাথা পেয়েছি, কার্পেট আরেকটু পুরু ও ভালমানের হলে বোধহয় এমনটা হত না। বি কেয়ারফুল!
-- তানভীর আহমেদ
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১২ রাত ৯:৩৯