(ইয়াজিদের প্রেত্মারা ছাড়া অন্য পাঠকরা মনোযোগ দিয়ে পড়লে লেখার মর্ম কথা বোঝতে পারবেন। ইয়াজিদের প্রেত্মারা বোঝবে না এই কারনে যে আল্লাহ্ তাদের অন্তরে সিল-মোহর মেরে দিয়েছেন। এবং এটাই তাদের তকদির!)
বোখারী শরিফ একটি বিরাট হাদিসের বই। যিনি হাদিসগুলো সংগ্রহ করেছেন তার নামেই হাদিস বইটি পরিচিত।
ফৌজদারি আইনের যে রকম ধারাবাহিক নম্বর থাকে সেই রকমভাবে এক দুই করে সাজানো রয়েছে। তা সহজেই
বোঝা যায়। এই বিরাট হাদিস বইটিতে আমরা অনেক মূল্যবান আদেশ-উপদেশ যে হুজুরপাক(আঃ) দিয়ে গেছেন তার পরিচয় পাই। এই কয়েক হাজার হাদিসের মধ্যে একটি হাদিস এক অপূর্ব এবং বিস্ময়কর স্থান জুড়ে সূর্যের আলোর মতো জ্বলজ্বল করে আমাদের চোখে ধরা পড়ছে। হাদিসটা হুজুরপাক(আঃ)-এর বাণী নয়, অথচ হাদিসের মর্যাদার আসন পেয়েছে। সাহাবাদের মধ্যে বিশেষ জ্ঞানী-গুনি যারা তিনি তাদেরই একজন। সেই সাহাবার কথা কয়টি হাদিস না হওয়া সত্ত্বেও হাদিসের মর্যাদার স্থান পাওয়া কম কথা নয় এবং নিঃসন্দেহে স্থান পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। সেই বিশেষ সাহাবার নাম হলো হযরত আবু হোরায়রা(রঃ)। আবু হোরায়রা তার আসল নাম নয়। তিনি খুব বিড়াল প্রিয় ছিলেন বলে হুজুর পাক(সঃ) একদিন 'বিড়ালের বাবা' বলে ডাকলেন। সেই থেকে তার আসল নাম মুছে গিয়ে আবু মানে বাবা এবং হোরায়রা মানে বিড়াল তথা 'বিড়ালের বাবা' বলেই মুসলিম জাহানে সুপরিচিত। হুজুরপাক(সঃ)-এর বেশির ভাগ বানী আমরা পেয়েছি এই মহান সাহাবার নিকটে। তার এই মহান দান আমরা অতি তাজিমের সাথে মনে করি। তবে সবচাইতে বেশি তাজিম করি তার নিজের কয়েকটি অপূর্ব কথা মনে করে, যা বোখারী শরিফ-এর পঁচানব্বই নম্বর হাদিস। তিনি অকপটে শিশুর মতো সরল-সহজভাবে আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, হুজুর পাক(সঃ) হতে তিনি দুই প্রকার জ্ঞান অর্জন করেছেন ঃ একটি জ্ঞান বাহিরের, অপরটি ভেতরের তথা একটি জাহেরি এবং অপরটি বাতেনি। একটি সবাইকে বলা তো দূরে থাক, একদম বিশেষ জ্ঞানী ছাড়া বলাই যায় না এবং সকলের সামনে এই গুপ্তজ্ঞান তথা এলমে মারেফত সকলের সামনে প্রকাশ করলে তার গলা কাটা যাবে। এখানে গলা কাটা মানে একদম খুন করা অর্থে তিনি বোঝান নি। এখানে 'গলা কাটা' একটি বাগধারার মতো ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ এই এলমে মারেফত কখনোই সবার জন্য সমান বোধগম্য নয় বলেই প্রকাশ করা সমিচীন নয়। তাই তিনি অকপটে স্বীকার করলেন, তার বিরাট ভান্ডটি গুপ্তই রেখে গেলেন। এই বিরাট গুপ্তজ্ঞান ভান্ডটি হযরত আবু হোরায়রা(রঃ)-এর মত অন্য সাহাবাদেরও জানা ছিল, যার পরিনতিতে ইসলামের মধ্যে সুফিবাদ তথা ফকিরি প্রকাশ পেল। যদিও ইহা সুফিবাদ তথা ফকিরি নামে আলাদাভাবে সুপরিচিত, আসলে ইহা মোটেই আলাদা নয়। নাম রাখা হয়েছে আলাদা, কিন্তু কর্মে ইহাই ইসলামের প্রানকেন্দ্র। প্রানকে বাদ দিয়ে দেহের মুল্যায়ন করতে গেলেই আমরা বিভিন্নতার মধ্যে হাবুডুবু খাই। সত্যকে আমরা উপেক্ষা করি হাজার বার সব মামুলি বুলি উচ্চারন করে এবং সত্যকে কাঁধ ঝাকিয়ে তুচ্ছ এবং বাজে বলতেও লজ্জা পাইনা, যদিও আমরা পিছনের দিকে পা টেনে টেনেই চলতে সাহসিকতার পরিচয় দিচ্ছি বলে আত্মতৃপ্তি লাভ করি।
আল্লাহ্ যেমন রহস্য, আদমও তেমনি রহস্য এবং আজাজিল তথা শয়তানও আল্লাহ্র একটি উদ্দেশ্যমুলক রহস্য। একের ভেতর তিনের গুপ্ত রহস্য প্রকাশিত হলে রহস্যের সৌন্দর্য অতি প্রকটরূপে প্রকাশিত হয় এবং ইহার সৌন্দর্যে অবগাহন করতে পারলেই শেরেকরূপ পর্দা দূরিভূত হয়। আজাজিল ওরফে শয়তান কিসের তৈরি? ইসলামি দর্শন বলছে, শয়তান এমন এক বিশেষ ধরনের আগুনের তৈরি যে-আগুনের ধোঁয়া নেই তথা ধূম্রবিহীন অগ্নির দ্বারা সৃজিত। কোন অস্তিত্বের নিজস্ব সত্তা নেই আল্লাহ্র অস্তিত্ব ছাড়া। কারণ, তিনি একের মধ্যেই একক। যদি ধূম্রবিহীন অগ্নির মৌলিক কোনো সত্তা না থেকে থাকে তবে উহাও কি একের ভিতর একক? যদি বলি হ্যা, তবে সৃজনের মধ্যেই স্রষ্টার দ্বান্দিক পদ্ধতিতে প্রকাশিত ও বিকশিত হয়ে চলছেন। তার এই প্রকাশ ও বিকাশের ধারা প্রতিটি সেকেন্ডে যদি কয়েক হাজার কোটি ভাগ করা হয় এবং সেই ভাগে যতটুকু পরমানুরূপ ক্ষুদ্রতম সময়ে বিশাল রূপটি আর কোনোদিনও দেখান না, ধূম্রবিহীন অগ্নি তাঁর সম্পূর্ন পৃথক সত্তায় সত্তবান - তা হলে ইহা শেরেকেরই নামান্তর। কিন্তু সৃষ্টিতে শেরেক বলতে কিছু নেই, আবার আছেও - শুনতে অনেকটা আত্মবিরোধী মনে হয়। আসলে অতি গভীরে প্রবেশ করলে কোনো আত্মবিরোধী ভাবধারার সমাবেশ তো দূরে থাক, সবই একেরই অনেক রূপের মধ্যে তিনি একক রূপে খেলে চলেছেন। মূলত চরম সত্য কথা বলতে গেলে তিনি ছাড়া আর কিছুই নেই। তাই আমাদেরকে দেখতে এবং মর্মে-মর্মে বুঝতে চেষ্টা করার তাগিদ দিয়েছেন এই বলে যে - বলো, আল্লাহ্ নিজেই আহাদ।