আল্লাহর জাতনুর নিয়ে মহানবির অবস্থান। কারণ লা-মোকামে সৃষ্টিরাজ্যের কাউকে প্রবেশ করার অধিকারটি দেওয়া হয় নি। এমনকি মহা শক্তিশালী রুহুলআমিন নামক জিব্রাইল ফেরেশতাটিও যাবার অনুমতি পান নি। জিব্রাইল ফেরেশতা সিদরাতুল মুনতাহা তথা সৃষ্টির শেষ সীমায় গিয়ে থেমে যান, কিন্তু মহানবি লা-মুকামে প্রবেশ করলেন। এই প্রবেশটাই বোঝিয়ে দেয় যে মহানবি আল্লাহর জাতনুরে তৈরি। আল্লাহর সঙ্গে মহানবির মিলনটি হয়েছে দুই ধনুকের ব্যবধানে অথবা আরও নিকটে। একটি ধনুক দেখতে একটি বৃত্তের অর্ধেকের মতো, দুইটি ধনুক দুইটি অর্ধবৃত্ত। দুটি অর্ধবৃত্ত সমান সমান একটি বৃত্ত। এই বৃত্তটি সম্পুর্ন এক্ত্র করার জন্য বলা হয়েছে, "আও আদনা" তথা আরও নিকটে। দুইটি সেমি সার্কেল সমান সমান একটি সার্কেল। সুতরাং অপ্রকাশিত রূপটির নাম আল্লাহ্ এবং প্রকাশিত রূপটির নাম নুরে মোহাম্মদ। সুতরাং হযরত আব্দুল্লাহ্(আঃ) এবং হযরত আমেনা(আঃ)-এর মিলনে যে মহানবির আগমনটি ঘটেছে উহা আল্লাহ্র জাতের একটি মেজাজি রূপ। তাই আমরা দেখতে পাই যে, বিশ্বের বড় বড় আল্লাহ্র অলীরা বলে থাকেনঃ 'দোনো হিকা শেকেল এক হ্যায়, কিস কো খোদা কাহু' তথা 'দু-জনেরই চেহারা-সুরত একই, তা হলে কাকে খোদা বলবো?'
বাউল সম্রাট লালন ফকির তো আরও একধাপ নিচে নেমে বলেছেনঃ 'যিনি মুরশিদ তিনিই রসুল খোদাও তিনি হন।'(হুবহু উদ্ধৃত নয়)
আফসোস! আরবি ভাষা জানা আলেম-উলামারা(সবাই নন) এত লেখা-পড়া করেও অশ্বডিম্বটি প্রসব করেন আর বাউল সম্রাট লালন ফকির ধ্যান-সাধনার মাধ্যমে তথা মোরাকাবা-মোশাহেদার মাধ্যমে সত্যকে পরিস্কার বোঝতে পারলেন।
আল্লাহ্ এবং মহানবি যে এক এবং অভিন্ন নুর সেই বিষয়টি কোরান-এর ৪ নম্বর সূরা নেসার ১৫০-১৫১ নম্বর আয়াতে পরিস্কার দেখতে পাই। 'ইন্নল্লাজিনা'ঃ নিশ্চই যাহারা, 'ইউক্ফুরুনা'ঃ কুফরি করে, 'বিল্লাহে'ঃ আল্লাহর সহিত, 'ওয়া রসুলিহি'ঃ এবং রসুলদের সাথে, 'ওয়া ইউরিদুনা'ঃ এবং এরাদা করে, 'আইউফারিক্কু'ঃ ভাগ করিতে চায়, 'বাইনাল্লাহে'ঃ আল্লাহর মধ্যে, 'ওয়া রাসুলেহি'ঃ এবং রসুলদের মধ্যে, 'উলাইকা'ঃ উহারাই, 'হুমুল কাফেরুনা'ঃ হইল কাফের, 'হাক্কান'ঃ পরিপূর্ন তথা ১০০%।
(নিশ্চই যাহারা কুফরি করে আল্লাহর সহিত এবং রসুলদের সাথে এবং যাহারা এরাদা করে ভাগ করিতে চায় আল্লাহর মধ্যে এবং রসুলদের মধ্যে উহারাই হইল পরিপূর্ন তথা ১০০% কাফের)
কোরান-এর ৪ নম্বর সূরা নেসার ১৫০ নম্বর আয়াতটিকে একমাত্র আহলে সুন্নাতুল জামায়াতের অনুসারীরা ছাড়া হুবহু অনুবাদটি কেউ করেন না। দলের তথা ফেরকার সাইনবোর্ডটি কাধে নিয়ে এই রকম হুবহু অনুবাদ করতে গেলে থলি হতে আসল বেড়ালটি বেরিয়ে যাবার বিপদজনক অবস্থানটি দাঁড়িয়ে যেতে পারে। এই আয়াতে পরিস্কার ভাবে বলে দেয়া হইছে, যারা কেবল মনে মনে এইটুকু ইচ্ছা পোষন করলো যে, আল্লাহ্ আলাদা এবং রসুলেরা আলাদা, তারাই কাফের। কাফের বলেই শেষ করা হয়নি, বরং কাফেরের শেষে একটি বিশেষন দেয়া হইছে, তথা 'হাক্কান' শব্দটি ব্যবহার করা হইছে, তথা ১০০% কাফের তথা একদম খাটি কাফের তথা পরিপূর্ন কাফের এবং এই রকম কাফের নামধারীদের উপাসনাগুলো করা আর না করা সমান কথা, কারণ সেটা গাছের ভিত্তি তথা মূল শেকড় কেটে দিয়ে গাছের মাথায় পানি ঢালার মতো।
আজ পৃথিবীর বুকে ৫৭টি মুসলিম দেশের চেহারা-সুরত, নকশা-পড়চা, দাগ নম্বর-খতিয়ানগুলো দেখলেই বোঝা যায় যে, কোন পতনের বিন্দুতে দাঁড়িয়ে পরাশক্তিরগুলোর ধাবমান কুত্তা হয়ে গেছে। সব বাল্বেই একই আলো, তবে বাল্বের রঙ যদি লাল-নীল-বেগুনি-মার্কারি ইত্যাদি তা হইলে বাল্বের রঙ্গেই আলোটি প্রকাশিত হয়। লাল বাল্বে লাল আলো, নীল বাল্বে নীল আলো, হলুদ বাল্বে হলুদ আলো, ইত্যাদি অনেক রঙের আলো দেখতে পাই- আসলে মূলে একই আলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৪৬