কোরবানী সম্পর্কে শরিয়তের যে বিধান রয়েছে তা আমরা সবাই জানি। কোরবানীতে যে পশু জবাই দেওয়া হয় তা শরিয়তের নিয়ম-কানুন তথা আইন মেনে এর গোসত্ ভাগ বন্টন করে গরিব-মিসকিন আত্মীয়-স্বজনকে দেই ও নিজে গ্রহন করে থাকি।নবী ইব্রাহিম(আঃ) তার প্রিয় পুত্র ইসমাইল(আঃ) কে কোরবানী করার যে ঘটনা তা জেনে আসছি। প্রিয় বস্তু কোরবানী করার আদেশ পালন করতে যাওয়ার ঘটনা ছোট-বড় সবাইকে অবাক করে। নবি ইব্রাহিম(আঃ) সে পরীক্ষায় অবতীর্ন হন এবং আল্লাহ্র সে প্রেমের পরীক্ষায় নবী ইব্রাহিম(আঃ) ও তাঁর পুত্র ইসমাইল(আঃ) প্রেম দিয়েই পরিক্ষায় ভাল ভাবে উত্তীর্ন হন। এ ঘটনাও সবার জানা। কিন্তু যে প্রশ্ন এসে যায় তা হলো, নবী ইব্রাহিম(আঃ)-এর সাথে একজন আম মানুষ তথা সাধারন মানুষের তুলনা কি হয়? তুলনা হতে পারে না। নবী ইব্রাহিম(আঃ)-এর ঘটনা আমাদের শিক্ষা নেওয়ার অপূর্ব সুযোগ। কোরবানীর বিষয়গুলো গবেষনা তথা বিশ্লেষন করা প্রয়োজন। কোরাবানীর বিষয়সমূহ গবেষনার জন্য একজন অন্তর্দৃষ্টিপ্রাপ্ত কামেল মোর্শেদ হলে উত্তম হয়।
একজন মহামানব প্রায়ই বলে থাকেন "জান দেওয়া সহজ, কিন্তু দিল দেওয়া কঠিন"
বিষয়টি এই জন্য বলা হলো যে, অর্থশালী/সম্পদশালী ধনী ব্যক্তির জন্য একটা পশু কিনে জবাই করা যতখানি কঠিন কিংবা সহজ বরং তার চেয়ে অনেক কঠিন কাজ হলো নিজের আমিত্বকে বিসর্জন করা। আমিত্বকে বর্জন করা অতি সাধারন মানুষের কাজ নয়। সাধক ব্যতিত এ বর্জন করার কাজটি সবাই করতে সক্ষম হবে না। ভিতরের খান্নাস সক্রিয় থাকলে সেই মানুষটি একা বা 'উদউনি'(একা) নয়। সে একের অধিক বা বহু কিংবা আরবীতে যাকে 'উদউনা'(একের অধিক) বলা হয়। সাধারন মানুষের নফ্সের সাথে অতি গোপনে মিশে থাকা খান্নাস ("মিন সাররিল ওয়াস ওয়াসিল খান্নাস" ঃ সূরা নাস) কে তাড়ানোর গভীর ধ্যান-সাধনা (মোরাকাবা-মোশাহেদা) না করার কারনে নিজের নফ্সের সাথে মিশে থাকা আমিত্ব দীর্ঘায়িত হয়। সে অবস্থায় একজন সাধারন তথা আম মানুষ পশু কোরবানী দিলেই কোরবানীর মূল উদ্দেশ্য অর্জন হবে কিনা তা গভীরভাবে অনুধাবন করলেই বোঝা যাবে। পশু জবাই দেয়ার কোরবানীটিও 'কোরবানী' তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। তবে একমাত্র চাঁরপায়ের নিরীহ পশু জবাই করে কোরবানীর আসল উদ্দেশ্যের কথা ভুলে গেলে আত্মশুদ্ধির কিংবা ইব্রাহিম(আঃ)-এর আদর্শের কোরবানীর তাৎপর্য অর্জিত হয় না। সূরা হজ্ব-এর ৩৭ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় স্পস্টই বোঝা যায় যে, কোরাবানীর গোসত্ ,রক্ত কখনই আল্লাহ্র দরবারে পৌঁছায় না,শুধু পৌঁছায় 'তাকওয়া'। তাকওয়া অর্জনের লক্ষে 'জবাই' আর 'নির্বিচারে জবাই' বিষয়টি এক কথা নয়। নিজের ভেতরের পশুরূপি নফ্সের খান্নাসকে জবাই বা সংশোধনের সাধনার দ্বারা আমিত্বকে বর্জন করাই উত্তম। তা না হলে শুধু নিরীহ পশু জবাইয়ের মাধ্যমে নিজের ভেতরের খান্নাসরূপি শয়তান তথা পশু হাসতে থাকে এবং এরূপ অবস্থা ক্রমাগত চলতে থাকলে সংশোধনের কোন সাধনাই থাকে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ৯:৩৯