বিজ্ঞানীরা বলেন যে, অনেক অনেক নক্ষত্রের গ্যাস ও ধূলিকনা জমাট বেধে চাঁরশত ষাট কোটি বছর আগে এই পৃথিবীর জন্ম হয়েছিল। প্রানের জন্ম হয়েছিল পৃথিবী জন্ম গ্রহন করার ষাট কোটি বছর পর এবং এই প্রানের অস্তিত্ব প্রথম পাওয়া যায় বিশাল জলরাশি মহাসাগরে। পানির মধ্যেই সর্বপ্রথম প্রানের অস্তিত্ব। পিতার পানিতে পুত্রের অস্তিত্ব। এই প্রানী এককোষী প্রানের মত অদ্ভুত এবং জটিল প্রকৃতির ছিল না। এক রকম জৈব স্যুপ তৈরি হচ্ছিল। সুর্য হতে আগত অতিবেগুনি রশ্মি এবং বিদ্যুৎ চমকানি সরল হাইড্রোজেন-সমৃদ্ধ অনুগুলো ভেঙ্গে আলাদা করছিল আবহাওয়ামন্ডলে এবং সেই টুকরো অংশগুলো মিলিত হয়ে আরও অনেক জটিল অনু তৈরি হতে লাগলো। এই জৈব অনুটি ছিল ডি-অক্সিরিবো নিউক্লিক এসিড যাকে ডিএনএ বলা হয়। যেগুলো তৈরি হয় জেনেটিক কোডের চারটি অক্ষর দিয়ে। নিউক্লিক এসিডের পার্থক্যের কারনেই প্রানীগুলি ভিন্ন হয় এবং বংশ বিস্তারে সহযোগিতা করে। বিজ্ঞানীরা এইখানে এসে ব্যাখ্যা না দিয়ে দৈবপরিবর্তন বলে ঘোষনা দিতে অনেকটা বাধ্য হন। কোন প্রানীকে অধিকতর ভাল অবস্থার দিকে পরিবর্তন আনতে দীর্ঘকাল লেগে যায় বলে ইহাকে দৈবপরিবর্তন বলা হয় এবং এভাবেই বিবর্তন এগিয়ে চলছে। এটাকেই বলা হয় বিবর্তনবাদ। আর সেই বিবর্তনবাদের জনক হলেন চার্লস্ ডারউইন।(লন্ডন টাইমস্ ম্যাগাজিন হতে সংগৃহিত)। তিনি ১৮৫৯ সালে ওরিজন অব স্পেসিস বা প্রজাতির উৎপত্তি গ্রন্থে লিখেছেন যে, এই পৃথিবীর সমস্ত জীবসত্বা কোন এক অজ্ঞাত মহাশক্তি থেকে আগমন করেছে। কোন একটি অজ্ঞাত মহাশক্তি হতে আগমন করার অর্থটি তা হলে কি দাঁড়ায়? সে একটি মাত্র মহাশক্তি বলতে ডারউইন সাহেব কাকে এবং কি বোঝাতে চেয়েছেন? আপনারা এই অজ্ঞাত মহাশক্তি হতে পৃথিবীর আগমন হয়েছে বলার মাঝে যে যাই বলতে চান, কিন্তু আমি অধ্ম সর্বশক্তিমান আল্লাহ্পাককেই বোঝাতে চাই, এবং মনে প্রানে তাই বিশ্বাস করি। নাস্তিক্যবাদীরা অন্য রকম ব্যাখ্যা করেন এবং কার্ল মার্কস্ সাহেব তো নাস্তিক্যবাদের অপুর্ব (?) ফর্মূলাটি আবিস্কার করতে গিয়ে ডারউইনের বুকের উপর পা দিয়ে নাস্তিক্যবাদের কথাটি ঘোষনা করলেন। অথচ অবাক হবেন এই কথাটি শুনে যে, চার্লস্ ডারউইন সবসময় চার্চে গিয়ে ঈশ্বর-প্রেমে দু'চোখ বেয়ে কাঁদতেন। কার্ল মার্কস্ সাহেব এখানে এসে বেচারা ডারউইন সাহেবকে ঈশ্বর-বিশ্বাসের উপর কটাক্ষ করতে পিছপা হন নি এবং হেগেল সাহেবের দ্বান্দ্বিক দর্শনটি নিয়ে আধ্যাত্মদের দর্শনটিকে বাদ দিয়েছেন কথা ও যুক্তির যথেষ্ট মারপ্যাচ দেখিয়ে। অভ্রান্ত এবং ভ্রান্ত দুটি পথই খোলা আছে। যে যেমন সে তেমন পথ দিয়েই চলবে। অনেক মনোবিজ্ঞানী বলে থাকেন যে, যারা চোখের জল বেশি ফেলেন তারা উদার প্রকৃতির হন। কারন চোখের জল মানুষকে নরম প্রকৃতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কারন, সাম্যবাদীরা তথা কমিউনিস্টরা কাঁদেনা। কারন, কান্নাটিকে নরম মনে না করে দুর্বলতার রোগ মনে করে।
বিবর্তনবাদের ভাষ্যকার টমাস হাক্সলি লিখেছেন এই বলে যে, ডারউইন এবং ওয়ালেসের গবেষনাটি হলো ঐ সব মানুষের জন্য যারা রাতের আঁধারে পথ হারিয়েছে ঃ তাদের কাছে একটি বিরাট আলোর বিস্ফোরন, একটি বিরাট আলোর ঝলক। টমাস হাক্সলি আরও বলেছেন যে, কত বড় বোকা ছিলাম বলে এই বিবর্তনবাদের কথাগুলো আগে ভাবতে পারি নি। যখন ওরিজন অব স্পেসিস-এর মূল বিষয়টি বুঝতে পারলাম, জানতে পারলাম, তখনই এরকমটা মনে হয়েছিল।এই কুৎসিত অন্ধকার ঝেঁটিয়ে বিদায় করার জন্য ডারউইন এবং ওয়েলসই যথেষ্ট। গির্জায় পাদ্রিদের যাদুকরি ভাষণের মাঝে ডুবে ছিলাম বলেই এই আসল রহস্যটি বুঝতে পারি নি।
ধর্মের উপর যথেষ্ট জ্ঞানের অভাবে বিবর্তন এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন।। এই দুইটি ধারনা নিয়ে ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলা হচ্ছে বলে অনেকেই ভ্রান্ত ধারনার শিকার পরিনত হচ্ছে। পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য ঘুরছে, এই মতবাদকে এখন মৃত, পচা লাশ, অচল এবং লোক-হাসানো গল্প মনে করে। কিন্তু তাও বলে কি সবাই?! না, এখনও এই দিনেও পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য ঘোরার শাস্ত্রকথার কত দলিল হাজির করে বই লিখা হচ্ছে এবং এতে ধর্মের মান ও অবস্থাটিকে দুর্বল করা হচ্ছে। তাই তো আল্লাহ্ বলেছেন যে, তাঁর কিতাব পাঠ করে কেউ পথ পাবে, কেউ পথ পাবে না। এ যেন বিষয় একটাই, কিন্তু দর্শনের বিভিন্নতা। এ যেন পবিত্র কোরান-এর অনুবাদ এবং ব্যাখ্যার মতো। ব্যাখ্যার মাঝে তো মিল না পাওয়াটা একদম স্বাভাবিক। কিন্তু অনুবাদেও যে এত গড়মিল পাওয়া যাবে, এটা পাঠক আশা করেনি।
বিজ্ঞানীদের মতে চারশত বছরের প্রানের অস্তিত্বটি কোটি কোটি বছর অতিক্রান্ত হবার পর মানব আকৃতির রূপ ধারন করতে প্রানীকে কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়েছে। অতিসাধারন ভাবে চিন্তা করতে গেলেও আমরা দেখতে পাই যে, অতি ক্ষুদ্র শুক্রকীট সাদা পানিতে ভাসতে থাকে। তারও তো মানুষের আকৃতি ধারন করতে কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। সদ্যোজাত শিশুটি দেখেই একটি পুর্নবয়স্ক মানুষের কথাটি চিন্তা করি। মানব-আকৃতি পাবার পরও সেই প্রাচিনকালের মানুষটিকে জীবজন্তুর আধুনিক সংস্করন বলা যেতে পারে। কারন সেই মানুষটির আকৃতি মানুষের মতো হলেও নফ্সের অধিকারী মাত্র। সেই মানুষটি তখনই পূর্ন আকৃতি ধারন করতে পারে যখন রূহ্ তথা পরমাত্মা তথা স্বয়ং আল্লাহ্পাক রবরূপ ধারন করে সেই মানুষের মধ্যে অবস্থান করে।(সূরা হিজর)।
পরিপূর্ন মানবের সঙ্গে আল্লাহ্ যে থাকেন তা কোরানই বলছে। "নাহ্নু আকরাবু ইলাইহে মিন হাবলিল ওয়ারিদ" তথা 'আমরা তোমার শাহ্রগের নিকটেই আছি'।
এখানে আল্লাহ্ একবচন ব্যবহার না করে বহুবচন ব্যবহার করেছেন। এখানে আল্লাহ্ 'আমি' তথা একবচন ব্যবহার না করে 'আমরা'' তথা বহুবচন ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ্ এক কিন্তু পরিপূর্ন মানবের মধ্যে প্রবেশ করার সময় 'নাহ্নু' তথা আমরা হয়ে যান। এই বিষয়টির গবেষনা করলে কিছুটা রহস্য উদ্ঘাটন করা যায়। যে মানুষটির মাঝে আল্লাহ্ সর্বপ্রথম রূহ্ ফুৎকার করেছেন সেই মানুষটির নাম আদম (সূরা হিজর)। তা না হলে মাটি আল্লাহ্ আগে সৃষ্টি করেছেন। মাটি সৃষ্টি করলেই প্রানের অস্তিত্ব আসতে বাধ্য। সেই মাটি দিয়ে আদমকে তৈরি করা হয়েছে। তাই জিন আজাজিল আদমকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে। কারন জিন আগুনের তৈরি আর আগুন যে মাটির আগেই তৈরি এটা বৈজ্ঞানিক সত্য। প্রতিটি জীবের মাঝে নফ্স থাকতে পারে, কিন্তু রূহ্ নাই। যখনই জীবের মাঝে রূহ্ ফুৎকার করা হয় তখনই সে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। তাই মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ট জীব। প্রচন্ড ভাবে রূপকের পর রূপকতার আশ্রয়ে সত্যকথাটি ধারনাতে আসতে কষ্ট হয়। আল্লাহ্র বাণীতে রূপকথার আশ্রয় গ্রহন করা হয়েছে। রূপকতার মোড়ক ছাড়া সেই যোগে সত্যটি প্রকাশ করলেও মানুষের উপলব্ধির দরজায় ধাক্কা মারতে হয়তো কষ্ট হতো।