আল্লাহ্ অসীম। সীমার দেয়ালে তিনি নেই। জ্ঞান অসীম। সীমার দেয়ালে জ্ঞান নেই। যদি জ্ঞানের এখানে শেষ বলে ঘোষনা করা হয়, তবে আল্লাহ্রও একস্থানে এসে শেষ হয়ে যাবার প্রশ্নটি আসে। নতুন নতুন বস্তুর বিজ্ঞানের আবিস্কার এই অসীমতার স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। বস্তুর বিজ্ঞানে যেখানে শেষ বলে কোন কথা আসে না, সেখানে আত্মার বিজ্ঞানের প্রশ্নটি তো আরও ব্যাপক ও জটিল এবং ইহারও শেষ নেই। কোরান শরিফ আল্লাহ্র তথা অসীমের কথাসমষ্টি। অসীমের কথাও অসীম। মানুষ তার সম্পুর্ন অনুবাদ ও ব্যাখ্যা কোন দিনও দিতে পারে না। কারন, অসীমের গুনাবলির শেষ নেই এবং যেহেতু গুনাবলির অন্ত নেই, সেহেতু তার ব্যাখ্যারও শেষ নেই।
আনুষ্ঠানিক ধর্ম পালনের মধ্যে যত সুন্দর এবং পরিপুর্ন রূপই থাক না কেন, ইহা হলো আইন তথা সৈনিক ধর্ম। আইনের ভেতর আনুষ্ঠানিক ধর্ম পালনের সুন্দরতম সামাজিক শৃঙ্খলা পেতে পারি এবং পেতে পারি সুন্দরতম নৈতিক আদর্শ, কিন্তু প্রেম কখনোই পাওয়া যায় না। কারন, আইন প্রেমকে সহ্য করে না। ঠিক তেমনই প্রেমের ভেতর আত্মাহুতি দেবার বৈচিত্র পেতে পারি, কিন্তু আইন কখনই পেতে পারি না। প্রেমের ভেতর জোর করে আইনকে ঢুকানোই যায় না। যেই "মুহর্তেই এম্নি করলে প্রেম হয়, এম্নি করলে প্রেম হয় না" বলা হয়, সেই মুহর্তেই প্রেম সেখান থেকে বিদায় গ্রহন করে। তাই আইনের যেখানে আপনি সুন্দর একটি কবর দেখতে পাবেন, ঠিক সেখান থেকেই দেখতে পাবেন প্রমের আরম্ভ। কারম, প্রেম কোন দিনও বাধাধরা রেললাইনের উপর দিয়ে চলে না এবং চলতেও পারে না। লাইলির রাস্তায় কুকুরের গায়ে মজনু লাইলির গন্ধ পাচ্ছে তাই কুকুরকে চুমু খাওয়া যায় - এটা আইন কোনদিনও মানতে পারে না। হজরত মোহাম্মদ(সঃ) দাঁত মোবারক যোদ্ধে ভেঙ্গে গেছে বলে সব মুসলমানদের দাঁত ভেঙ্গে ফেলতে হবে - এটা আইন কখনোই গ্রহন করতে পারে না। সুতরাং প্রেমের বাজারে আইনের পন্য জোর করে বিক্রি করাটা অন্যায় নয় কি? আইনের আনুষ্ঠানিকতার সৈন্দর্য্য অন্যস্থানে কি ভাল মানায় না? যেমন বনের 'পশুকে বনে মানায় আর শিশুকে মানায় মায়ের কোলে'। পাগলদের নাচানাচি করার গনতান্ত্রিক অধিকারটা কেন হরন করে নিচ্ছেন? যদিও কিছু শ্রদ্ধেয় ভাইদের কাছে এই আবোল-তাবোল নাচানাচি মোটেই ভাল লাগার কথা নয়। ভন্ডামি করা হচ্ছে বলে মনে হবে। বেদে বীন বাজালে সব জাতের সাপ কিন্তু ফনা তুলে নাচে না। জাতী সাপের সামনে বীন বাজালেই আর কথা নেই, ছোট মুখটাকে দশগুন ফুলিয়ে জজবায় আত্মহারা হয়ে নাচতে থাকে। এখন কেউ যদি জাতী সাপকে প্রশ্ন করে যে, বেদের মনে বেদে বীন বাজায়, তাতে তুই কেন ফনা তুলে নাচিস? এই প্রশ্নের উত্তর নেই। কারন, প্রশ্নের শেষ যেখানে সেখানে তো প্রেম। আবার ঢোঁরা সাপের সামনে যদি সারা দিনও বীন বাজান, সে ফনা তোলে নাভা তো দূরে থাক বরং বিরক্ত হয়ে পালিয়ে যেতে চাইবে। শ্রেনীতে এরা সবাই সাপ, কিন্তু চ্রিত্রি বিশ্লেষনে আকাশ-পাতাল প্রভেদ। সে রকম কি একই শ্রেনীর মানুষের মধ্যে আকাশ-পাতাল প্রভেদের বিভিন্নতা আমরা পাই না? এই বিভিন্নতাও সর্বশক্তিমান আল্লাহ্রই সৃস্টি তাই আপনি কাকে দোষারোপ করতে যাবেন? এই বিচিত্রের লীলাখেলা তো তারই খেলা। তাই আপনি কাকে গালমন্দ করবেন? অতি উচুঁ স্তরে যখন আপনার চিন্তাধারার বিকাশ ঘটবে, দেখতে পাবেন যে, গালমন্দ করার স্থান কোথাও খোজে পাচ্ছেন না।
মানুষকে ধোকাদেয় কে? মানুষকে পাপের রাস্তায় কে টেনে নিয়ে যায়? নাম তার শয়তান। এই এক শয়তানই বহুরূপ ধারন করে মানুষকে ধোকা দিয়ে, কুমন্ত্রনা দিয়ে, নিভিন্ন প্রলভনের মাধ্যমে পাপের দিকে নিয়ে যায়। এখন কেউ যদি প্রশ্ন করেই ফেলেন যে, শয়তানের আগেতো কোন শয়তানই ছিল না, তা হলে শয়তান কে কে শয়তান বানালো শয়তান তো আগে সম্মানীত স্থানে উপবিষ্ট ছিলেন। শয়তান তো আগে সমস্ত ফেরেস্তাদের ইমাম তথা সরদার ছিলেন। তবে তাকে শয়তান বানাবার দ্বায়িত্বটা কার? আমরা না হয় শয়তানের ধোকায় পড়ে শয়তানকে গালমন্দ করি। কিন্তু ফেরেস্তাদের ইমাম কার ধোকায় পড়ে শয়তানে পরিনত হলো? সে কাকে গালমন্দ করবে?
আল্লাহ্ই তো বলেন যে, তার আদেশ বিহনে একটি গাছের পাতারও নড়বার শক্তি নেই। এই রকম প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে সন কিছু একেবারেই খেলা বলে ধারনা জন্মাতে চায়। তা হলে গালমন্দ করবোটা কাকে? তাই কারটা ভন্ডামি করা হচ্ছে আর কারটা খাটি হচ্ছে এর জবাব সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র হাতে ছেড়ে দিলেই কি ভাল মানায় না? "তোমার ধর্ম তোমার কাছে, আমার ধর্ম আমার কাছে" - এ রকম উপদেশ কি আমাদের ধর্ম-দর্শনে নেই? 'ধর্মে কোন প্রকার বল প্রয়োগ নেই' বলে কি একটি পরিচিত বাক্য মনে পড়ে না? 'জোর করে মুসলমান বানাও নতুবা হত্যা করো' - এ রকম কোন একটি বাক্য যদি ইসলামে থাকত তবে সেই দিনের পরিচিত পৃথিবীতে একটিও ভিন্ন ধর্মী মানুষ কে ভর্তা বানিয়ে খাওয়ার মতও পাওয়া যেত না। কিন্তু তা নয়। কারম, ইসলাম সাংঘাতিক ভাবে পরধর্মের উপত সহনশীলতার ধর্ম। তাই বলতে ইচ্ছে করে যে, পৃথিবীতে যদি কন বড় পাপ থাকে সেই পাপটা হলো 'আমি সব কিছু বুঝে গেছি,সব কিছু জেনে গেছি'। তাই নয় কি ?
বস্তুর বিজ্ঞান আর আত্মার বিজ্ঞান দুটো সম্পুর্ন আলাদা দর্শন। উভটারই প্রয়োজন অত্যধিক। কোনটাকেই ছোট করা অথবা হেয় পতিপন্ন করাই যায় না। অবশ্য অপ্রিয় হলেও অতি সত্য কথা যে, আত্মার বিজ্ঞানীদের অনেকটা 'ফুলবাবুর চিন্তাধারা' বলে যদি গালমন্দ করেন তবে তিক্ত হলেও কিছু বল্বার নেই। কারন আত্মার বিজ্ঞানীদের কাছে আমরা বস্তুর বিজ্ঞান পাইনা এবং পাবার আশাই করা যায় না। পক্ষান্ততরে বস্তুর বিজ্ঞানের ওলি, দরবেশ, পীর,ফকির পাবেন ইউরোপ এবং আমেরিকাতে। কারন , বস্তুর নিজ্ঞান অনেকটা চরম পর্যায়ে এনে পৃথিবীর মানুষগুলিকে তারা অবাক করে দিয়েছেন। কিন্তু আত্মার প্রকৃত শান্তি কি দিতে পেরেছে? প্রাচুর্যের স্রোতেও আত্মার শান্তি না পেয়ে নৈরাজ্যের আঁধারে হাজার হাজার বুড়ো-যুবক-যুবতিরা আত্মহত্যা করে চলেছেন। কেন? কারন, আত্মার বিজ্ঞান নিয়ে তারা যতটুকু গভেষণা করা দরকার তার কিছুই করেনি, বরং করার প্রয়োজনও অনুভব করেনি। কারন, ধর্মের বিভিন্নতার অভিশাপ এদেরকে উৎসাহ যোগাতে পারেনি। তাই মানুষ প্রাচুর্যের মধ্যেও শান্তি খোজে পায় না। আমরা আত্মার বিজ্ঞানীদের কাছে নিজেকে কেমন করে চেনা যায়, জানা যায় সেই ফর্মূলাটুকুই পাই।
নফ্স ও রূহের পার্থক্য(পর্ব-১)
নফ্স ও রূহের পার্থক্য(পর্ব-২)
নফ্স ও রূহের পার্থক্য(পর্ব-৩)
নফ্স ও রূহের পার্থক্য(পর্ব-৪)
ইমাম হোসাইন(রঃ)-এর শেষ ভাষন
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১১ ভোর ৪:২০