somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নফ্‌স ও রূহের পার্থক্য (পর্ব-৩)

১৩ ই অক্টোবর, ২০১১ ভোর ৬:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পড়ে দেখুন না! অজানা কিছু পাইলেও পাইতে পারেন!

পর্ব-১ এখানে
পর্ব-২ এখানে
কোরান-এর ২১ নম্বর সূরা আম্বিয়া-র ৯১ নম্বর আয়াতে আছে ঃ ওয়া(এবং) ল্লাতি(যে) আহসানাত্‌(রক্ষা করিয়াছিল, সংরক্ষন করিয়াছিল, বজায় রাখিয়াছিল, টিকাইয়া রাখিয়াছিল) ফার্‌জাহা(তাহার কাম প্রবৃত্তিকে, তাহার সতীত্বকে, যৌন সম্ভোগকে) ফানাফাখ্‌না(সুতরাং আমরা [আল্লাহ্‌] ফুৎকার দিয়াছিলাম) ফিহা(তাহার [মরিয়ম] মধ্যে) মিন্‌(হইতে) রূহিনা(আমাদের রূহ্‌) ওয়া(এবং) জাআল্‌নাহা(তাহাকে বানাইয়াছিলাম) ওয়া(এবং) আব্‌নাহা(তাহার পুত্রকে) আয়াতাল্‌(একটি আয়াত [নিদর্শন] ) লিল্‌(জন্য) আলামিন(সমস্ত আলমের, বিশ্ববাসিদের)।
অর্থাৎ,"এবং যিনি তাহার(মরিয়ম) সতীত্বকে রক্ষা করিয়াছিলেন সতরাং আমরা ফুৎকার দিলাম তাহার মধ্যে আমাদের রূহ হইতে এবং তাহাকে বানাইয়াছিলাম এবং তাহার পুত্রকে একটি আয়াত সমস্ত আল্মের জন্য"।
এই আয়াতটির সামান্য ব্যাখ্যা লিখতে গিয়ে প্রথমেই বলতে হয় যে, আল্লাহ্‌ কেবল মাত্র পুরুষদের মধ্যেই রূহ্‌ ফুৎকার করেন না, বরং মানুষের তৈরি সমাজে অবহেলিত নারীর মধ্যেও আল্লাহ্‌ রূহ্‌ ফৎকার করেন। নারী জাতিদের দুর্বল পেয়ে পুরুষরা নারীদেরকে সমাজের বুকে তেমন মর্যাদা দেয় না, কিন্তু এই আয়াতে আমরা দেখতে পাই যে নারীর মধ্যেও আল্লাহ্‌ রূহ্‌ ফুৎকার করেন। যদি সেই নারী আল্লাহ্‌র দৃস্টিতে রূহ্‌ ফুৎকা্রের উপযুক্ত হন তো অবশ্যই রুহ্‌ ফুৎকার করা হয়। আমরা কোরান হতে জানতে পারি যে, আখানে তথা এই আয়াতে নফ্‌স ফুৎকার করার কথাটি বলা হয়নি এবং নফ্‌স ফুৎকার করার প্রশ্নই উঠে না, কারন আল্লাহ্‌র কোন নফ্‌স নাই। যেহেতু আল্লাহ্‌র কোন নফ্‌স নাই, সুতরাং ফুৎকার দেবার প্রশ্নই উঠে না। নফ্‌স জিবন-মৃত্যুর অধীন। নফ্‌স সুখ-দুঃখ্য ভোগ করে। নফ্‌সের ক্লান্তি-অবসাদ-ঘুম-আলস্য আছে। সুতরাং আল্লাহ্‌ এইসব বিষয় থেক সম্পুর্ন মুক্ত। নফ্‌স মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করে তথা মৃত্যু ঘটনাটির মুখোমুখি নফ্‌সটিকেই হতে হয় - যাকে আমরা বাংলায় জীবাত্মা বলে থাকি। প্রত্যক নফ্‌স মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করবে -বলা হয়েছে কোরান-এ, কিন্তু কোরান মৃত্যুতে নফ্‌সটি ধংস হয়ে যাবে এ কথাটি বলে নি। 'জায়েক' অর্থ স্বাদ গ্রহন করা, চেখে দেখা। মা-বোনরা তরকারীতে লবন হয়েছে কি না তরকারীর শুরুয়া চেখে দেখলে বুঝতে পারেন। সেই রকম প্রতিটি নফ্‌সকে মৃত্যু ঘটনাটি কেমন কেমন উহা চেখে দেখতে হবে। যেহেতু রূহ্‌ সৃস্টির অন্তর্গত নয়, রূহ্‌ সৃস্টির মধ্যে পড়েনা, সেই হেতু রূহ্‌এর মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করার কথাটি কোরান-এ একবারও বলা হয়নি। যেমন 'কুললু রুহিন জায়েকাতুল মউত' অর্থাৎ, প্রত্যেক রুহ্‌ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করবে কথাটি একবারও বলা হয় নি। গায়ের জোরে গুন্ডা হওয়া যায় কিন্তু গুরু হওয়া যায় না। যারা রুহ্‌কেও সৃস্টির আওতায় এনে 'নূরানী মাখলুক' তথা নূরের সৃস্টি বলত চায় এবং ব্যাখ্যা করতে চায়, তাদেরকেও বলার কিছুই থাকে না। কারন তকদির তাকে অথবা তাদেরকে এই বিষয়টি বুঝতে দেয় না। আরও লক্ষ করুন যে আল্লাহ্‌ এক হয়েও 'আমরা" শব্দটি ব্যবহার করেছেন, কিন্তু রূহ্‌ শব্দটি কোরানের কোথাও বহুবচনে ব্যবহার হয় নি। আল্লাহ্‌র রূহ্‌ কেবল মাত্র ঈসা(আঃ) মাকেই ফুৎকার করেন নি, বরং তাহার পুত্র ঈসা(আঃ) কেও (অনেকে যিশুখ্রিস্টও বলে থাকে) রুহ্‌ ফুৎকার করে দিয়েছেন। কোরান-এ 'ওয়া আব্‌নাহা'- অর্থাৎ, 'এবং তাহার পুত্রকেও' রূহ্‌ ফুৎকার করেছেন বলা হয়েছে। তাই আমরা দেখতে পাই কোরান মরিয়ম-এর পুত্রকেও সমস্ত আলমের জন্য একটি আয়াত করে রেখেছেন। তথা 'আইয়াতাল্‌লিল আলামিন'। আল্লাহ্‌র প্রতিটি আয়াতই একেকটি বিস্ময়, কিন্তু ঈসা(আঃ) জন্ম গ্রহন করেই কথা বলে ছিলেন। এবং দোলনায় শুয়ে শুয়ে অনেক কথা বলেছেন - এরও নিদর্শন আমরা দেখতে পাই - যেমন হযরত ঈসা(আঃ) জন্মান্ধকে চক্ষু দান করেছেন, কুষ্ঠ রোগীকে নিরাময় করেছেন এবং যে বিষয়টি সবচেয়ে বিস্ময়কর
ঃ মৃত মানুষকে জীবন দান করেছেন এবং মাটির তৈরি একটি পাখী যার মধ্যে নফ্‌স নাই তথা জীবনই নাই, সেই পাখীটিকে ফুৎকার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবন্ত হয়ে উড়ে গেল এবং ঈসা(আঃ)-র সাহাবারা কে কি দিয়ে খাদ্য খেয়েছেন সেটাও বলে দিতে পারতেন। প্রশ্ন হলো, যেখানে ঈসা(আঃ) এলেমে গায়েব জানাবার পরিস্কার দলিলটি পেলাম, সেখানে মহানবী এলেমে গায়েব জানতেন না বলাটা যে কূফরী আকীদা, এটা অনেকেই বুঝেও বুঝেন না। যারা বুঝেও বুঝেন না তাদেরকেই বা কি করে দোষারোপ করব? কারন ইহা তাদের তকদির। মহানবী আবু-জাহেলের হাতের মুঠোর পাথর কনা গুলোকে কালেমা পাঠ করালেন, যে পাথর কনা গুলোর নফ্‌স থাকার প্রশ্নই উঠে না, সেখানে কোরান-এর কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার পরিপেক্ষিতে মূল বিষয় হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে মহানবী সম্পর্কে যা-তা বলাটাকে সমীচীন মনে করি না। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫৬
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×