আসলে এই ব্যাপারটা নিয়ে এত লেবু কচলানো হয়েছে যে তিতা হয়ে গেছে.... আর ভাল লাগে না । আমার পরিচয় , আমি কসাই গোত্রের , এই ব্লগে প্রায় ৩ বছর হতে চললো।কখনো নিজ ইচছায় কখনো কারো ক্ষতি করেছি বলে মনে পড়ে না । আমার রোগীদের তো নয় ই। অনেকে ফোন নম্বর নিয়ে যায়। ফোন করে ,সাধ্যমত চেস্ঠা করি সমাধান দেবার।যদিও এভাবে চিকিৎসা পরামর্শ দেয়া একেবারেই উচিৎ না বরং ঝামেলার ভয় থাকে কিন্তু আমার এমন কিছু হয়নি। হয়ত আমার উপর ওনাদের আস্থা ছিলো। কিন্তু আমারই ছোট ভাই বোন দের এ কি অবস্তা হলো। আমার মনে হয়না এমন কিছু কোন ডাক্তারের প্রাপ্য। কি হাস্যকর তাই না ? একটু ঠানডা মাথায় চিন্তা করেন তো।আপনারা যারাই এই পোস্ট টা পরছেন সবাই জীবনে কোন না কোন ডাক্তারের শরানপন্ন হয়েছেন । এখনও আপনে এমন কোন ডাক্তারের নাম মাথায় রাখেন যার কাছে অসুস্থ হলে পরামর্শের জন্য যাবেন। তাই না? তবে? সমস্যা কোথায়? আমরা যখন মেডিকেল কলেজে পড়ি তখন থেকেই শিখি কিভাবে রোগীর সাথে কথা বলতে হবে। এত কস্টের মাঝেও কিভাবে তার রোগের ব্যাপারে তাকে জানাতে হবে, পরামর্শ দিতে হবে, সর্বোপরি রোগের মাঝে ধৈর্য্য ধরা শিখাতে হবে। কারন আসলে রোগ ধরা পড়লে সে রোগের ঔষধ আসলে ইন্টার্ন যেমন জানে প্রফেসর ও তাই জানে। তবে পার্থক্য হলো অভিজ্ঞতায়। এবার আসি ভুল চিকিৎসা প্রসংগে------ আসলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ভুলের অবকাশ নেই। এখানে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু খুব কম হয়....।কি তেড়ে আসবেন নাকি? না ভাই সত্যি বলছি ভুলের জন্য মৃত্যু আসলেই কম হয় ..।যেটা হয় সেটা হলো অবহেলা...সেটার সাথে বিভিন্ন বিষয় জড়িত...। যেমন ধরেন কোন রোগীর রাতে সার্জারী হলো ডাক্তার পরামর্শ দিয়ে চলে গেল। তারপর ??? রোগীটা তখন থাকে নার্সের তত্তাবধানে,প্রাইভেট হাসপাতাল হলে চলে যাবে কিন্তু সরকারী হাসপাতালে????? নার্সের তত্তাবধানে থাকে পুরো একটা ওয়ার্ড। এ মাথা থেকে ও মাথা যদি শুধু এন্টিবায়োটিক ও দিয়ে যায় তাহলে ফেরৎ আসতে ২ ঘন্টা সময় লাগবে।তাছাড়া এমন ওয়ার্ডে লাগে মনিটর যাতে রোগীর নাড়ীর গতি,শ্বাস প্রশ্বাসের গতি মাপা যায়। প্রাইভেট হাসপাতালে এই যন্ত্র বেডে বেডে পাবেন। কিন্তু সরকারী হাসপাতালে???? এই যন্ত্র পুরো ওয়ার্ডে একটা খুজে পাওয়া যাবে না। এর জন্য দায়ী তো প্রশাসন।ডাক্তার নয়।কিন্তু এত অপ্রতুলতার মাঝেও কি এ হাসপাতালে অপারেশন হচ্ছে না? হচ্ছে..এবং রোগী ভালো ও হয়ে যাচ্ছে। কিভাবে? কারন মেশিনের কাজ টা যে ঐ যে পিচ্চি ডাক্তার টা রাতভর করছে।আপনার রোগীর জন্য আপনি যেমন রাতভর সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছেন তেমন সেই ডাক্তারটা ও মনে প্রানে চেয়েছে তার রোগীগুলো যেন ভালো থাকে আর এর জন্য তার পরিশ্রম ছিলো ..তার তিতিক্ষা ছিলো....।এ পরিশ্রম কি টাকা দিয়ে পূরন সম্ভব। সেই ডাক্তার যদি আপনার মেয়ে হয়, বউ হয় বা স্বামী হয়? পারবেন এর মূল্য দিতে। আবার দেখেন না, এই যে ঈদের সময় হাসপাতালে নাকি ডাক্তার থাকে না????? কি যে প্রহসন এটা কিভাবে বুঝাবো? আমার ক্যারিয়ার বেশী দিনের না মাত্র ১০ বছর। কিন্তু এই ১০ বছরে আমি একটা ঈদ মনে করতে পারিনা যেটা আমি বাসায় কাটিয়েছি.....।ভাই আমিও মুসলমান। সারা দিন ডিউটি করে এসে সাংবাদিক ভাই দের কাছে শুনি ডাক্তার ছিলো না... অভিমানের এক বাষ্প গলা পর্যন্ত উঠে আসে। কস্ট লাগে......। কিন্তু সবাই জানি দেশের সব পত্রিকা ঈদের ৩ দিন বন্ধ থাকে.......।হ্যা তবে ডাক্তারের সংখ্যা হয়ত কম থাকে ।যেখানে ৩ জন থাকার কথা সেখানে ১ জন থাকে। সাধারনত ঈদে অন্যধর্মাবলম্বীদের ডিউটি ই থাকে। সুতরাং এই অপবাদটা কি আমাদের না দিলেই না?
কসাইদের কথা তো অনেক হলো এবার আসি জাতির বিবেকের কাছে। আমি অমূলক কথা বলবো না। অনেক সাংবাদিকের কাছে আমরা রীতিমতো ঋনী।কিন্তু ভাই একি অবস্হা? আরে ঘটনা ঘটলে খবর দেন ..ঘটার আগেই লাঠিসোটা নিয়ে হাজির হলে কি চলবে? আরে আপনাদের উপর দেশের মানুষ চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে। আর আপনারা কি করছেন ? তাদের বিশ্বাস নিয়ে রীতিমতো খেলছেন।আপনারা দেশের ডাক্তরদের ভাবমূর্তী ইচ্ছাকরে নস্ট করছেন।কেন দেশের মানুষ যেন চিকিৎসার জন্য ভারতের সরানপন্ন হয় তাই? কেন আপনারা এটা বলেন না যে সরকারী হাসপাতালে এখনও অপ্রতুল ব্যাবস্হা, ডাক্তার কি সব করবে?ঔষধ নাই ,বেড নাই,এগুলিকি ডাক্তারের দোষ? আপনারা ক্ষতি করলেন কাদের ? আপনারা তো দেশের প্রাইভেট হাসপাতালের কর্পোরাট ক্লায়েন্ট..এ কথা কি সেই মানুষ গুলো জানে? ডাক্তারের দেশের বাহিরে বেতন জানেন তো? মালয়শিয়ায় ১৫০০ ডলার, ওমানে ২১০০ ডলার..। আর আমার দেশে? ১৪০০০ টাকা? ইন্টার্ন ডাক্তার পায় ১০০০০ টাকা ..নাহ এটা আপনার টাকা না বিশ্ব সাস্হ্য সংস্হার টাকা।আর অনারারী ডাক্তার ? একটা টাকাও পায়না । ঢাকা মেডিকেলের মতো দেশের এতো বড় হাসপাতাল চলে অনারারী ডাক্তার দিয়ে। আর আপনাদের বিএস এম এম ইউ ডাক্তারের কাছ থেকে উল্টা নেয় ১২০০০ টাকা । এসব তো লিখতে পারেন না । ব্রাকের হাসপাতালে যখন আমার বোনটা নির্যাতিত হলো কই আপনারা এসেও রিপোর্ট না করে চলে গেলেন কেন? কারন তখন ডাক্তারের হাতে কোন রোগীর মৃত্যু হয়নি, ডাক্তার নিজে নির্যাতিত এটা আপনাদের চিন্তার বিষয় ছিলো না ।কি করছেন আপনারা ? কেন করছেন? যে মানুষটি মায়ের হাতে বসে সবার সামনে বসে ভাত খাচ্ছে স্রেফ খবরের তাগিদে তাকে মৃত বানিয়ে দিলেন ।আর যদি সেটা আমার হাতে হতো তাহলে তো আমাকে শুলে চড়াতেন তাই না? আল্লাহ বাচাইসে....।ডাক্তারদের উপর আপনাদের এত কিসের অভিযোগ? আপনারা ইচ্ছামতো কাজ করছেন, আপনাদের জন্য এখন ধর্মপ্রান মুসলমান মানুষ দের রাজাকার বলা হ্য়। কথাটির মানেই আপনারা আমূল পাল্টে দিয়েছেন।আপনারাই পারেন মৃতপ্রায় মানুষকে তার অনুভুতি জিগেস করতে । আর মৃতপ্রায় মানুষ কে বাচাতে প্রানপন চেস্টা করি যদি সফল হই না তার জন্য পুরস্কার দরকার নেই তাদের স্বজনদের একটু হাসিই আমাদের ক্লান্তি মুছে দেয় আর যদি বিফল হই তবে আপনাদের ক্ষুরধার লেখনী ত আছেই।কথায় কথায় আপনারা বলেন যে আমরা সরকারের টাকায় পড়াশুনা করেছি ....।সরকারের টাকায় কি আপনারা পড়েন নাই ? ঢাকা ভার্সিটি তে সব ছাত্র রা তো সরকারী টাকায় ই পড়ে তাই না? কয়জন সরকারী আমলাকে ঘুষ নিতে ছবি তুলেছেন? দূর্নীতি আজ সব ক্ষেত্রে।সেদিন শাহবাগে এই রোদে দাড়িয়ে বাসের অপেক্ষা করছি দেখি সামনে দিয়ে ভার্সিটির বাস চলে গেল। কই এখন পর্যন্ত কোন বাস তো ঢাকা মেডিকেল এ দেখলাম না । কেন? তারাও তো আমারই টাকা তে পড়ছে তাই না? কই তারা তো পাশ করার পর এমন চাপের মুখে কাজ করছে না ? তারা ঘুষ খাক ,দূর্নীতি করুক ,আপনাদের কলম বন্ধ। ভাই আমরা আমাদের রোগীদের বা সাধারন মানুষের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। তারা যেমন বাচ্চার জন্মের পরে আমাদের মুখে মিস্টি তুলে দিয়েছে তেমনি প্রিয়জনের মৃত্যুতে কাছে এসে বলেছে বাবা অনেক কস্ট করেছ আল্লাহ ই হায়াৎ রাখেনাই ..।দোয়া কইরো। এমন একটা সম্পর্কে আপনারা এখন পানি ঘোলা করছেন , যে সময় আপনে আমার ভাই কে বারডেম এ মারছেন হয়তো সে সময় আমি আপনার বাবাকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দিচ্ছি। একটু ভাবুন। আমরাও মানুষ। আমাদের ও অধিকার আছে বাচ্চাকে সময় দেবার , স্বামী-স্ত্রী কে সময় দেবার । আমার নিজের বাবা মা কে দেখার।রাতে ঘুমাবার , একটু আয়েশ করে খাওয়া খাবার, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবার ...... এসব থেকে আমি নিজেকে বন্চিত করেছি আমার রোগীদের জন্য , কারো বাবার জন্য কারো মায়ের জন্য, তাদের একটু হাসি , একটু কথার জন্য আমি আমার পরিবারকে দূরে ঠেলে দিয়েছি। এটা যদি স্বার্থপরতা হয় তবে আমি স্বার্থপর। আর এতে আমার কোনো লজ্জা নেই ।বারবার আমি ডাক্তার হয়েই জন্মাবো। কোন সাংবাদিকের সাধ্য নেই আমার পথচলাকে থামায়। আমার রোগীদের দোয়া যে আছে আমার সাথে যার মূল্য আপনাদের উর্বর মষ্তিষ্কে কুলাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৩৮