M24 বোল্ট একশ্যান স্নাইপার রাইফেল বিশ্বের অন্যতম এফিশিয়েন্ট দশটি লঙ রেঞ্জ ফায়ার আর্মসগুলোর একটি। আমেরিকার জন্ম দেয়া সাড়ে পাঁচ কেজি ওজনের এই ডেথ মেশিনটি এমনকি এক কিলোমিটার দূর থেকেও নিখুঁত ভাবে লক্ষ ভেদ করতে সক্ষম। এম২৪ এ ব্যবহার করা হয় ৭.৬২ এম এম ম্যচ গ্রেড বুলেট যা কিনা সেকেন্ড প্রতি ৭৮৬ মাইল বেগে লক্ষে আঘাত হানতে পারে। সেই সাথে এর আছে লিওপোল্ড এমকে ভ্যরিয়েবল স্কোপ যার সাহায্যে রাতের বেলা বা যে কোন বৈরি আবহাওয়ায় চমৎকার ভাবে টার্গেটকে সনাক্ত করা যায়। তবে অস্ত্র যত শক্তিশালীই হোক এর কার্যকারিতা প্রায় সবটুকুই নির্ভর করে অস্ত্রধারি ব্যক্তিটির দক্ষতার উপর। একজন দক্ষ স্নাইপারের রাইফেল হয়ে ওঠে তার হাতেরই একটি বর্ধিত অংশ, রাইফেলের টেলিস্কোপ হয়ে ওঠে তার নিজের চোখ। সেই সাথে টার্গেটের দূরত্ব, বাতাসের দিক এবং গতিবেগ, আর্দ্রতা, আলোছায়ার উপস্থিতি ইত্যাদি ব্যপারগুলোও অনেক সময় লক্ষভেদের সম্ভাবনাকে বদলে দিতে পারে।
মাসুদ রানা একজন ঝানু স্নাইপার। তারপরেও আজ তার রাইফেলের গ্রিপ ধরে থাকা হাতটা একটু পর পর কেঁপে উঠছে, নিশ্বাস পড়ছে অনিয়মিত ভাবে। স্নাইপারের জন্যে হাতের স্থিরতা আর নিঃশ্বাস নিয়ত্রন করতে পারা দুটোই অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন। রাইফেলের টেলিস্কোপে সেটে থাকা রানার চোখটা জ্বালা করছে, যদিও চোখের পলক পড়ছে না। এই সব কিছুর কারন তার M24 এর ব্যরেল থেকে ছয়শ মিটার দুরের প্রৌড় মানুষটি। এই মানুষটি তার আজ রাতের শিকার। ওই মানুষটিকে অত্যন্ত সুচারু ভাবে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে এক মিলিয়ন ডলার দিয়ে রানাকে ভাড়া করে আনা হয়েছে। আর একটু পরেই একটা M24A1 বুলেট তাকে দুনিয়ার বুক থেকে চিরতরে মুছে দেবে। মানুষটি জেনারেল রাহাত খান।
খুনি রাইফেলটা হাতে রানা গত প্রায় পচিশ মিনিট নিস্পলক তার টার্গেটের দিকে চেয়ে আছে। এই মুহুর্তে সে বনানির এক বহুতল ভবনের ছাদে বুক দিয়ে শুয়ে আছে। এখন অনেক রাত। তার উপর আকাশ ভেঙে বৃষ্টি পড়ছে। একটু পর পর বিকট শব্দে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ক্রমাগত বৃষ্টির এলোপাতাড়ি ঝাপ্টা এসে লাগছে রানার চোখে মুখে, ঝাপসা করে দিচ্ছে টেলিস্কোপের কাঁচ। এই ঝুম বৃষ্টির মধ্যে রাস্তার স্ট্রিট ল্যম্পের ঘোলাটে আলোয় খালি চোখেই ভালো দেখা যায় না। কিন্তু রানার এম২৪ এর বিখ্যাত টেলিস্কোপিক সাইট তার নাম রেখেছে। নাইট ভিশনে বৃদ্ধ মানুষটির কপালের ভাজগুলো পর্যন্ত পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। বহুতল ভবনটির বৃষ্টিস্নাত কাঁচের দেয়ালের ওপাশে রাহাত খান ডেস্কে ফেলে রাখা কাগজগুল নাড়াচাড়া করছেন, তারপর ঝুঁকে কম্পিউটারের স্ত্রিনে কি যেন দেখছেন আর আনমনে কফির মগে চুমুক দিচ্ছেন। ট্রাইপডে বসানো এম২৪ এর গায়ে রানার অজান্তেই তার হাত দুটো প্রতি মুহুর্তে আরো বেশি চেপে বসছে। অতিরিক্ত চাপে আঙুলের ডগাগুলো সাদা হয়ে গেছে, ক্রমেই ওই জায়গাগুলো অনুভূতি হারাচ্ছে। গত পচিশ মিনিট ধরে সে নিজের মনের সাথে যে ভীষণ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে তার চিহ্ন প্রকট হতে শুরু করেছে তার বজ্র কঠিন মুষ্টিতে। রানা সেটাই চাইছে। আজকের এই রাতের ঠিক এই মুহুর্তটিতে সে নিজেকে সকল ইন্দ্রিয় অনুভূতি, সকল চেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে চাইছে। কোন প্রকার রাগ দুঃখ বা অপরাধবোধ আজ রানা আর তার শিকারের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। জমিয়ে রাখা কোন পুরোন স্মৃতিই আজ রানার ট্রিগারে আলিঙ্গন করে থাকা আঙুলকে দুর্বল করে দিতে পারবে না। বৃষ্টির পানিতে রানার কপাল ভেসে যাচ্ছে, ধুয়ে দিচ্ছে ওর চোখ। ওই চোখে আজ অশ্রুর স্থান নেই। রানার চোখ আজ লক্ষে স্থির, নিস্পলক, নির্মম। ট্রিগারে রাখা আঙুলটা ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে। ছয়শ মিটার দূরের আরেকটি ভবনে কাঁচের দেয়ালের ওপাশে নিশ্চিন্ত মনে কফি খাচ্ছেন রাহাত খান। গোলাকার টেলিস্কোপ সাইটে তাকে মনে হচ্ছে একেবারে হাতের কাছে। সাইটের ক্রস হেয়ারটা স্থির হয়ে আছে ঠিক তার কপালের উপর। রাহাত খান কফির মগে শেষ চুমুক দিলেন। তারপর সেটা ডেস্কে রেখে বাহিরের দিকে ঘুরে তাকালেন। রানার মনে হল রাহাত যেন ঠিক তার দিকেই তাকিয়ে আছেন।
রানা লম্বা দম নিল। তারপর আলতো ভাবে ট্রিগার টেনে দিল।
এক
গায়ের সব শক্তি এক করে খিচে দৌড়াচ্ছে রানা। তার গতিপথে চলে আসা হতচকিত পথচারীরা লাফিয়ে সরে যাচ্ছে ওর পথ থেকে। দুই একজন হতভাগা যারা সময় মত সরতে পারছে না তারা ওর বলিষ্ঠ দু’হাতের ধাক্কায় ছিটকে পড়ছে এদিক ওদিক। সামনে মালপত্র ভর্তি একটা ট্রলি লাফিয়ে পেড়িয়ে গেল রানা। বাচ্চা কোলে এক মা লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। কোন দিকেই যেন ওর ভ্রূক্ষেপ নেই। আজ যেন ওকে ভুতে পেয়েছে। কোন কিছুরই পরোয়া করছে না সে। রানার থেকে প্রায় বিশ মিটার আগে জান হাতে নিয়ে ছুটছে আরেকটি মানুষ। দির্ঘকায়া মানুষটা পিঠে একটা ভারি ব্যকপ্যাকসহ রানার গতির সাথে পাল্লা দিয়ে ট্রাকের মত ছুটে চলেছে। স্টেশন ভর্তি শত শত মানুষের ভিড়ে তারা দুজন একেবেকে পথ করে দৌড়ে যাচ্ছে। ক্রমেই দুই জনের মধ্যে ব্যবধান বাড়ছে।
সামনের দির্ঘকায় ব্যক্তিটিই আগে পৌছে গেল স্টেশনের গেটে। তার অদৃশ্য হবার দশ সেকেন্ড পরে পৌঁছুল রানা। পাগলের মত এদিক সেদিক তাকিয়ে খুজল মানুষটিকে। এয়ারপোর্ট স্টেশনের বাইরে যেন ট্যক্সি আর মানুষের একটা সমুদ্র। সেই সমুদ্র থেকেও মুহুর্তের মধ্যে লোকটাকে খুঁজে বের করে ফেলল রানার শিকারি চোখ। লোকটার হাতে বেড়িয়ে এসেছে আগ্নেয়াস্ত্র, একটা এম১৯ পিস্তল। পিস্তল দেখিয়ে একটা ট্যক্সিকে থামিয়ে ফেলল সে। ড্রাইভারের পাশের জানালার কাঁচ ঝন ঝন করে ভেঙে পড়ল পিস্তলের আঘাতে। ভাঙা জানালা দিয়ে এক হাতে ট্যক্সির জানালা খুলে ফেলল সে। তারপর হতভম্ব ট্যক্সি ড্রাইভারকে টেনে হিঁচড়ে রাস্তায় ছুরে ফেলে উঠে বসল গাড়িতে। মরিয়া হয়ে রানা কোমড় থেকে তার বিশ্বস্ত ওয়ালথার পিপিকে টেনে বের করল । তারপর ছুটতে ছুটতেই গুলি করল, দুই বার। কর্কশ শব্দে ভেঙে পড়ল ট্যক্সির পেছনের জানালার কাঁচ। কিন্তু লোকটা থামল না। গাড়ি হাকিয়ে রাস্তার উপর তীক্ষ্ণ ইউটার্ন নিল। তারপর বাতাসে টায়ার পোড়া কড়া গন্ধ ফেলে রেখে ছুট লাগাল অন্ধের মত। গুলির শব্দে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ভিরের মধ্যে। সবাই একসাথে চিৎকার করে দিগ্বিদিক ছুটে পালাতে চাইছে। এই চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যেই দ্রুত চারপাশে তাকিয়ে একটা টয়োটা কনভার্টিবলকে বেছে নিল রানা। এক হাতে উদ্যত পিস্তল আর আরেক হাতে নিজের পরিচয়পত্র বাগিয়ে চিৎকার করে বলল, “ন্যশনাল সিকিউরিটি... গাড়ি থেকে বের হন... এক্ষুনি।” ড্রাইভার ভদ্রলোকের জবাবের অপেক্ষা না করেই তাকে রাস্তায় ঠেলে ফেলে দিয়ে টয়োটার ড্রাইভিং সিটে চরে বসল রানা। এক্সিলেটরে পা দাবিয়ে দিল। চাপা গর্জন ছেড়ে লাফিয়ে সামনে বাড়ল টয়োটা কনভার্টিবল। তারপর গুলির মত ছুট লাগাল পলায়নরত ট্যক্সির পিছু পিছু।
পিক আওয়ার, কুড়িল বিশ্বরোডে এই সময় অসম্ভব বিজি ট্রাফিক। রাস্তা ভর্তি নানা সাইজের গাড়ি। কিন্তু সামনের লোকটা কোন কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। সামনের গাড়িগুলকে সমানে নাকের গুতো মেরে পথ থেকে হটিয়ে দিয়ে ছুটে চলেছে। তবে এভাবে বেশিক্ষণ চলল না, সামনে চৌরাস্তায় ট্রাফিক লাইট চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে। গাড়ির বিশাল জ্যাম পথ আটকে আছে। কিন্তু লোকটা গতি কমানোর কোন লক্ষন দেখাল না। এক ঝাটকায় ট্যক্সির নাক ঘুড়িয়ে চলে গেল পাশের রাস্তায়। তারপর রঙ সাইড ধরেই উল্কার বেগে গাড়ি ছোটাল। তাকে সাইড দিতে গিয়ে রাস্তার অন্যান্য গাড়িগুল পথ ছেড়ে উঠে পড়ছে ফুটপাথের উপর, একে অন্যের গায়ে ধাক্কা লাগিয়ে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। কিন্তু লোকটার ভ্রূক্ষেপ নেই। তারপরেও শেষ রক্ষা হল না। ইন্টারসেকশন পার হবার সময় একেবারে শেষ মুহুর্তে পাশ থেকে ভারি একটা বাস এসে সবেগে ধাক্কা লাগালো ট্যক্সির গায়ে, মাটি থেকে তুলে প্রায় দশ হাত দূরে নিয়ে ফেলল চুর্ন বিচুর্ন ট্যক্সিটাকে।
ঘ্যাসস করে রাস্তার পাশে ব্রেক কশল রানা। তারপর পিস্তল হাতে বের হয়ে এল গাড়ি থেকে। নিজের চোখকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না। ভাঙাচোরা ট্যক্সিটার একপাশের দুমড়ানো দরজা ভেতর থেকে লাথির আঘাতে ছিটকে পড়ল । ভেতর থেকে চার হাতপায়ে ভর দিয়ে বের হয়ে এল সেই মানুষটা। তার সারা মুখ রক্তে ঢেকে গেছে। ওই অবস্থায়ই একবার মাথা ঘুরিয়ে সে রানাকে দেখে নিল। তারপর হাচরে পাচরে উঠে দাঁড়িয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে আবার ছুটল। লোকটা কি আসলেই উন্মাদ হয়ে গেছে? রানা পিস্তল তুলে আবার গুলি করল। গায়ে লাগাল কিনা বুঝা গেল না। লোকটা রাস্তার পাশের দেয়াল টপকে ওপাশে অদৃশ্য হয়ে গেল। গুলির শব্দে আবার নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। রানা চোখের কোন দিয়ে দেখতে পেল হাত দুলে দুইজন পুলিশ দৌড়ে আসছে ওর দিকে। কিন্তু নষ্ট করার মত সময় রানার হাতে নেই। ছুটে গিয়ে দুইহাতে ভর রেখে দেয়ালে চরে বসল সে। দেয়ালের গায়ে বসানো ধারালো পেরেক গেঁথে গেল হাতের তালুতে। কিন্তু হাতের জ্বলুনি টেরই পেল না রানা। দেয়ালের ওপাশে আদিগন্ত বিস্তৃত কুড়িল বস্তি। সেই বস্তির বিশাল গোলক ধাঁধায় হারিয়ে গেছে লোকটা। কিন্তু রানাও হাল ছাড়ার পাত্র নয়। একটা দো’তলা দালান খুঁজে বের করে পাইপ বেয়ে উঠে পড়ল তার ছাদে। ছাদের আঠারো ফুট উচ্চতা থেকে নিচে তাকিয়ে চোখ দিয়ে যেন ছেকে ফেলল নিচের গলি-কানাগলি গুলোকে। এবারো ওর শিকারি দৃষ্টি ঠিকই খুঁজে পেয়ে গেল লোকটাকে। লোকটা অসম্ভব ভালো পার্কোর জানে, পথের খানাখন্দ দেয়াল কাটাতারের বেড়া কিছুই তাকে থামাতে পারছে না। চার হাত পায়ে যেন বানরের মত ছুটে চলেছে সে। রানাও থেমে থাকল না। এক ছাদ থেকে আরেক ছাদে লাফিয়ে লাফিয়ে তাড়া করল লোকটা। বস্তির বাড়িগুল সব যেন গায়ে গাঁ লাগিয়ে কচুরিপানার মত গজিয়ে উঠেছে। এক বাড়ির ছাদ থেকে আরেক বাড়ির ছাদ খুব বেশি হলে তিন হাত তফাৎ। লাফিয়ে যেতে রানার মোটেই বেগ পেতে হচ্ছে না। বস্তির ন্যংটো পিচ্চিপাচ্চির দল চোখ বড়বড় করে দেখছে রানার কান্ড কারখানা। ছাদের উপর দিয়ে লাফিয়ে দেখতে দেখতে সামনের মানুষটির সাথে দুরুত্ব কমিয়ে ফেলল রানা। নিচের মানুষটা বুঝতে পারল এইভাবে পালাতে পারবে না। দৌড় থামিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে গুলি ছুড়তে শুরু করল সে। গুলির তোয়াক্কা না করে লোকটির কোমর লক্ষ করে দশ ফিট উঁচু ছাদ থেকে লাফ দিল রানা। লোকটিকে নিয়ে সে নিজেও ছিটকে পড়ল গলির উপর। মাটি থেকে বের হয়ে থাকা একটা ধারালো পাইপে ওর মাথা ঠুকে গেল। কপাল কেটে রক্তে ঢেকে যাচ্ছে ওর চোখ। একটা ভারি লাল পর্দার ওপাশে রানা দেখতে পেল মানুষটা আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। এটা মানুষ না মেশিন? ব্যথা পায় না নাকি?? লোকটার হাতে বেড়িয়ে এসেছে একটা ধারালো ফোল্ডিং নাইফ। রানার পিস্তল কই গিয়ে পড়েছে কে জানে। দাঁতে দাঁত চেপে উঠে দাঁড়াল রানা। ছুরি হাতে লোকটা এগিয়ে আসছে। রানাও প্রস্তত।
***
“ইউ আর এন ইডিয়ট... আই জাস্ট ক্যন্ট বিলিভ হাউ মাচ অভ এন ইডিয়ট ইউ আর।”
রানা জবাব দিল না। ক্ষেপা ভালুকের মত ফুঁসছেন জেনারেল রাহাত খান। তার চেহারা দেখে রানার বার বার শুধু ভিসুভিয়াসের অগ্নিউৎপাতের কথা মনে পরে যাচ্ছে।
“হোয়াট ওয়্যার ইউ থিঙ্কিং?? তুমি ক্রাউডের মাঝে দুই দুইবার ফায়ার আর্মস ডিসচার্জ করেছ। কোন সিভিলিয়ান ক্যজুয়েলটি যে হয়নি এটা তোমার সাত জনমের ভাগ্য। আজ তোমার এই এক ঘন্টার স্টান্টে সরকারে কত লাখ টাকার সম্পত্তি নষ্ট করেছ তুমি জান? অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি ডিজিএফআই এর বাজেটেরও একটা সীমা আছে। একটা শিম্পাঞ্জিকে দুই মাস ট্রেনিং দিলে সেটাও তোমার চেয়ে ভালো এজেন্ট হবে।” এটুকু বলে জেনারেল বড় দম নিলেন, তারপর কপালের ঘাম মুছে ইনটারকমে সেক্রেটারিকে জলদি এক মগ গরম কফি দিতে বললেন। রানা জবাব দিচ্ছে না, এই মুহুর্তে কথা না বলাই ভালো। তাৎক্ষনিক রাগটুকু কেটে যাক। তারা এখন বসে আছে ঢাকা ক্যন্টন্মেন্টে ডিজিএফআই (Directorate General of Forces Intelligence) এর চৌদ্দতলা হেডকোয়ার্টার ভবনের বারোতলায়, রাহাতখানের অফিসে। রাহাত খান ডিজিএফআই এর একজন ডেপুটি জেনারেল সেক্রেটারি।
ইন্টারকম রেখে রাহাত আবার শুরু করলেন “আচ্ছা আমাকে তুমি পরিষ্কার করে বল তো তোমার মিশন কি ছিল?”
এই রে! এবার তো মুখ না খুলে উপায় নেই। আর রানা যাই উত্তর দিক না কেন রাহাত পাল্টা আক্রমন করবেনই। ও মিনমিন করে বলল, “ইয়ে স্যার মানে...”
রাহাত মুখ খিচিয়ে বলল “তুমি আমাকে বল ‘ওয়াচ এন্ড ফলো’ এই দুইটা শব্দ কি তোমার মনে পরে?”
“জি স্যার”
“আর তুমি কি করেছ? তোমাদের উপর ক্লিয়ার অর্ডার ছিল টার্গেটের উপর কেবল নজর রাখো। তাকে অনুসরণ কর। দেখ সে কোথায় যায়, কার সাথে কথা বলে, কোথায় লাঞ্চ করে, কাকে ফোন করে। ইউ ওয়ার অর্ডারড টু বি আ গোস্ট। আর তুমি একটা সিম্পল recon মিশনকে পুরদস্তুর পাব্লিক শুট আউটে পালটে দিলে।”
“স্যার আমরা পরিকল্পনা মতই এগুচ্ছিলাম। কিন্তু টার্গেট এতো তাড়াতাড়ি আমাদের সবগুলো ওয়াচারকে স্পট করে ফেলে যে আমরা অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলাম। এমন কিছুর জন্যে আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। দেয়ার ওয়াজ নো প্ল্যন বি ফর দ্যেট কাইন্ড অফ সিচ্যুয়েশন। সো আই এক্টেড অন ইন্সটিঙ্কট। আমাকে সেকেন্ডের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তখন চিন্তা ভাবনার সময় ছিল না। এবং আমি সিদ্ধান্ত নেই এমন হট লিডকে কিছুতেই হারানো যাবে না।”
“হোয়াট আর ইউ কিডিং মি? এই লাইনে এইরকম সিচ্যুয়েশন সব সময়ই দেখা যায়। এমন পরিস্থিতি তোমাকে অবশ্যই প্রটোকল ফলো করতে হবে। এসব প্রটোকল আছেই সেই জন্যে। আর একটা লিড হারালে আমরা আরেকটা লিড পাবার জন্যে অপেক্ষা করব। ইন্টেলিজেন্স ইজ অল এবাউট পেশেন্স, ডিড ইউ ফরগেট দ্যট? আর যত ভাইটাল লিডই হোক না কেন কোন পরিস্থিতেই তুমি পাব্লিক প্লেসে উইপন ফায়ার করতে অথোরাইজড নও। ইউ ওয়ার ক্লিয়ারলি ইন্সট্রাক্টেড টু নট এনগেজ দ্য টার্গেট। তুমি কি জান তোমার আজকের এই কির্তি ধামাচাপা দিতে আমাদের কি পরিমাণ ভোগান্তি হবে? শিট লাইক দিস উইল গেট ইউ ফায়ার্ড ইন নো টাইম।”
“স্যার এই মানুষটার জন্যে আমরা পাঁচ মাস ধরে অপেক্ষা করেছিলাম। এই মানুষটা একটা ইনটেল গোল্ড মাইন।”
“ডেডম্যন ডাজনট টক মাই বয় ... তুমি যদি তাকে জীবিত ধরে আনতে পারতে তবুও একটা কথা ছিল। বাট ইউ ফাকিং মার্ডারড হিম।”
“স্যার ইট ওয়াজ সেলফ ডিফেন্স। সে আমাকে ছুরি নিয়ে এট্যাক করেছিল, সেই মুহুর্তে আমার আর কিছু করার ছিল না। ইট ওয়াজ মি অর হিম। সিম্পল এজ দ্যেট। আর তাকে জীবিত ধরা না গেলেও আমরা তার ব্যকপ্যক উদ্ধার করতে পেরেছি। ব্যকপ্যকে তার পার্সোনাল ল্যপটপ ছিল। তার পকেটে তার সেলফোন পাওয়া গেছে। এই মুহুর্তে আমাদের পাঁচজনের একটা স্পেশালিস্ট টিম সেই সেলফোনের এনক্রিপশন ভাঙার চেষ্টা করে যাচ্ছে।”
“ইউ রিস্কড সিভিলিয়ান লাইফ ওভার এ সেলফোন?”
কফির মগে দুইটা লম্বা চুমুক দিয়ে জেনারেল কিছুটা শান্ত হলেন। আস্তে নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “রানা, তোমার যোগ্যতা নিয়ে আমার মনে কোন সন্দেহ নেই। আফ্রিকার ইউএন মিশনে তুমি যা দেখিয়েছ তা তোমার বয়েসি আর কোন এজেন্টের কাছ থেকে কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু তোমার মনে রাখতে হবে তুমি এখন আর আফ্রিকায় নেই। এটা বাংলাদেশ।”
“আমার কাছে খুব বেশি তফাৎ ঠেকছে না।” রানার মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেল।
রাহাত খান আবার চোখ গরম করে পাঁচ সেকেন্ড তাকিয়ে রইলেন। তারপর হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গিতে বললেন, “তোমার এখনো কাঁচা বয়স, আমি জানতাম ইন্টেলিজেন্সে যোগ দেবার সময় তোমার এখনো আসেনি। কিন্তু আমি নিজের জাজমেন্টের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাকে ইন্টেলিজেন্সে ঢুকার সুযোগ করে দিয়েছি। কেন জানো? কারন এটা তোমার সারা জীবনের স্বপ্ন ছিল। কারন তোমার বাবা আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল এবং আমি তার কাছে ঋণী। কিন্তু এই সুযোগটা কাজে লাগানো সম্পুর্ন তোমার উপর।”
ছ্যত করে জলে উঠল রানা, “আই আম স্যরি স্যার। কিন্তু আমি এখানে এসেছি সম্পুর্ন নিজের যোগ্যতায়। কারো দয়ায় নয়। আমি আমার ব্যচের সব কিছুতে প্রথম, আমেরিকাতে নেভি সিল ট্রেনিঙে আমার রেকর্ড অফ দ্যা চার্ট। সোয়াডের এন্টি টেরোরিজম ইউনিটে সবাই আমাকে একনামে চেনে।”
“তোমার ধারণা ট্রেনিং নিলেই ভাল এজেন্ট হয়া যায়? এই ধারণা নিয়ে তুমি ফিল্ডে দুই দিনও টিকতে পারবে না।”
“কঙ্গোতে এর চেয়ে অনেক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে আমি বেঁচে এসেছি।”
“এবং তোমাকে আমি বলেছি তুমি এই মুহুর্তে আফ্রিকাতে নয়, বাংলাদেশে অবস্থান করছ। ইন্টেলিজেন্স সম্পুর্ন একটা ভিন্ন জগত।...... তুমি আসলেই তোমার বাবার সন্তান, বাবার সাথে তোমার বড্ড বেশি মিল। তরুন বয়েসে আনোয়ার ঠিক তোমার মতই ছিল, সাহসি, একগুঁয়ে, নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাহীন... নিজে যা ভালো বুঝত তাই করত। ওর এই অতিরিক্ত একগুঁয়েমিই ওর দুর্ভাগ্যের কারন হয়ছিল...”
“প্লিজ স্যার... আপনি বাবাকে নিয়ে এভাবে কথা বলবেন না” রানা ক্রমেই নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। একটু একটু করে ওর গলার স্বর চড়ছে ও নিজেও বুঝতে পারছে না। “আপনি বাবাকে বলছেন নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাহিন? কিসের নিয়ম? আমার বাবা ছিলেন একজন দেশ প্রেমিক। নিয়ম যা ভাঙার তিনি দেশের জন্যে ভেঙেছেন।”
“আনোয়ারকে আমার চেয়ে ভালো আর কেউ চেনে না। কলেজ জীবন থেকে আমরা বন্ধু। এক সাথে ইউনিভার্সিটিতে পড়েছি। ৭১এ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছি। কত অসংখ্যবার যে আমরা একে অপরের প্রান বাঁচিয়েছি তার ইয়াত্তা নেই। কিন্তু যুদ্ধের পর তোমার বাবা এক্সট্রিম লেফট উইং এর নেতাদের সাথে যোগ দিল। সেনাবাহিনি ছেড়ে গিয়ে কর্নেল তাহেরের সাথে সমাজতান্ত্রিক দল গড়ল। মুজিবের মৃত্যুর পর এই সব নেতারা মিলিটারির নতুন টার্গেটে পরিনত হল।”
“আর তখন আপনি কোথায় ছিলেন? যখন জিয়ার সরকার কর্নেল তাহেরকে ফাসিতে ঝোলায় তখন কোথায় ছিল আপনার বন্ধুত্ত? একটা ভ্রান্ত সরকারের প্রতি আপনার আনুগত্য বন্ধুত্যের চেয়ে বেশি হয়ে গেল?”
“সরকার নয়, আমি অনুগত ছিলাম আমার দেশের প্রতি, এখনো আছি, সব সময় থাকব। তোমার বাবার জন্যে আমি যতটুকু সম্ভব ছিল করেছি। আনোয়ার ছিল কর্নেল তাহেরের অদর্শের এক অন্ধ সমর্থক। সে অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখত। সে সমাজকে ভেঙ্গেচুরে আবার নতুন করে সাজানোর কথা বলত, দেশ জুড়ে একটা ব্যপক রেভ্যুলুশনের কথা বলত। আমি তাকে অনেক বুঝাতে চেষ্টা করেছি। রেভ্যুলুশন একদিনে হয় না। বহুদিন ধরে চলে আসা একটা সিস্টেমকে এক নিমেষে বদলে দেয়া যায় না। তাতে উল্টো সিস্টেমের পদতলে পিস্ট হতে হয়। সমাজকে বদলাতে হলে সিস্টেমের মধ্যে থেকেই কাজ করে যেতে হবে। কিন্তু তোমার বাবা কখোন বুঝতে চায়নি। আনোয়ার ছিল তোমার মতই একরোখা। আর এর কারনেই তাকে জিয়ার সরকারের রোষানলে পড়তে হয়েছিল।”
“আমার বাবা দেশের জন্যে প্রান দিয়েছে। একটা সুন্দর সমাজের জন্যে প্রান দিয়েছে। যেই সমাজে সবাই সমান অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। আমার বাবা তার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত দেশের জন্যে লড়ে গেছেন আর আপনি তখন সরকারের আচলের নিচে লুকিয়ে ছিলেন।”
“ডোন্ট ফরগেট ইওর পজিশন মাই বয়। তোমার কাছে আমি জবাবদিহি করতে বাধ্য নই। আমি যা করেছি দেশের সার্থেই করেছি। আর সে জন্যে আমি গর্বিত।” অস্বাভাবিক শীতল কণ্ঠে বললেন জেনারেল রাহাত।
“আপনি অস্বিকার করতে পারেন আপনি সারা জীবন সরকারের সুবিধাভাজন ছিলেন না? যেই সরকার আপনার বন্ধুকে রাতের অন্ধকারে ঘর থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করেছে, আপনি বছরের পর বছর সেই সরকারের চাকরি করে গেছেন। বন্ধুর খুনের প্রতিশোধ আপনি নিতে পারেননি। নিতে চাননি।”
“আমি তোমার মুখ থেকে আর একটা কথাও শুনতে চাই না। ওয়ান মোর ওয়ার্ড এন্ড আই উইল সাস্পেন্ড ইউ... ইউ আনগ্রেটফুল ব্র্যট।” রাহাতের মুখ রাগে থমথম করছে।
“ট্রুথ হার্টস... ডাজন্ট ইট?” হিসিয়ে উঠল রানা।
“দ্যটস ইট... মাসুদ রানা ... ইউ আর সাসপেন্ডেড ফ্রম ডিউটি ফর ইন্সাবোর্ডিনেশন, ল্যাক অফ ডিসিপ্লিন এন্ড জাজমেন্ট। ইউ উইল রিমেইন সাস্পেন্ডেড ইন্ডিফিনিটলি উইডাউট পে আনটিল ফারদার নোটিস। আ ডিটেইল্ড ইভ্যালুয়েশন অফ ইওর জব পারফর্মেন্স উইল বি ক্যরিড আউট হুইচ উইল ডিটারমাইন ইওর ফিউচার ইন দিস অর্গানাইজেশন। নাউ গিভ মি ইওর ব্যজ এন্ড গেট আউট অফ মাই সাইট।”
রানা পকেট থেকে ব্যজটা টেনে বের করে ছুড়ে ফেলল টেবিলে, তারপর কোন দিকে না তাকিয়ে গটগট করে অফিস থেকে হেঁটে বের হয়ে গেল। রাহাত খান কপালের ঘাম মুছে আর্ম চেয়ারে গাঁ এলিয়ে দিলেন। বুকটা কেমন যেন ব্যথা করছে। আসলে বয়েস বাড়ছে তো। ড্রয়ার থেকে সাধের পাইপটা বের করে ঠোঁটে পুরলেন। তামাকে চেপে আগুন ধরাতে যাবেন এই সময় চোখ পড়ল ড্রয়ারের ভাজে সযত্নে রাখা একটা সাদাকালো ছবির উপর। রাহাত খানের কলেজ জীবনের ছবি। ঢলঢলে শার্ট পড়া, উস্কুখুস্কু চুল। তার পাশে কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে তার সব চেয়ে ভালো বন্ধু আনোয়ার হোসেন। কলেজ লাইফে ওকে অবশ্য সবাই কাজি নামে ডাকত। কেন কে জানে? এতদিন পরে আর মনে নেই। দুইজনেরই হাস্যোজ্জল চেহারা। আহা কি ছিল সেই দিনগুলো। ছবির ডানদিকের কিছুটা অংশ ছেড়া। ছবিতে রাহাতখান আর কাজির পাশে তৃতীয় আরো একজন ছিল। তাকে ছবি থেকে ছিঁড়ে আলাদা করে ফেলা হয়েছে।
***
হনহন করে রানা হেডকোয়ার্টার থেকে বের হয়ে গেল। প্রায় অন্ধের মত পা ফেলছে রানা, কোথায় যে যাচ্ছে নিজেও জানে না। মাথার ভেতরে আগুন জ্বলছে। বাইরে এতক্ষন বৃষ্টি হয়েছে বুঝা যায়। ফুটপাত ভিজে পিচ্ছিল হয়ে আছে। ধিরে ধিরে সন্ধ্যা নামছে। পথের দুধারে স্ট্রিট ল্যম্পগুলো জলে উঠতে শুরু করেছে। ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। প্রকৃতিতে একটা স্নিগ্ধ আবহ ছড়িয়ে পরছে। কিন্তু প্রকৃতির স্নিগ্ধতা রানাকে স্পর্শ করছে না। রানা বারবার মুঠি পাকাচ্ছে, হৃদপিণ্ডটা যেন ক্ষোভে ফেটে বুকের খাঁচা ভেঙে বের হয়ে আসতে চাইছে।
হুশ করে একটা কালো ল্যন্ড রোভার এসে থামলো রানার পায়ের একদম কাছে। নিঃশব্দে রোভারের দরোজা খুলে গেল। ভেতরের অন্ধকার থেকে যান্ত্রিক কণ্ঠে নির্দেশ এল “গাড়িতে উঠুন প্লিজ”
“আপনারা কারা? আমার কাছে কি চান?”
উত্তরে আবার সেই একই নির্দেশ “গাড়িতে উঠুন প্লিজ।”
একটু ইতস্তত করে রানা রোভারে উঠে পড়ল। সাথে রোভার আবার নিঃশব্দে চলতে শুরু করল। গাড়ির ভেতর বোধ হয় ইচ্ছে করেই আলো কমিয়ে রাখা হয়েছে। সেই স্বল্প আলোতেই রানা দেখতে পেল রোভারের দামি লেদারের সিটে গাঁ এলিয়ে প্রশান্ত মুখে বসে আছেন বাংলাদেশের হোম মিনিস্টার। রানার দিকে ভ্রু নাচিয়ে বললেন, “হ্যল্লো রানা। কেমন আছ?”
“স্যার, আপনি...” রানা সম্পুর্ন আপ্রস্তুত বোধ করছে।
“তোমার নার্ভাস হয়ার দরকার নেই। বি এট ইজ সন। আমরা দুইজন এখন একটা পনেরো মিনিটের ছোট্ট ড্রাইভে যাব। যেতে যেতে তোমার সাথে আমি কিছু কথা বলব। কথা শেষ হলেই তোমাকে তোমার গন্তব্যে নামিয়ে দেয়া হবে।”
রানা অনিশ্চিত ভাবে মাথা নাড়ল। সে গাড়িতে উঠে বস্তেই ল্যন্ড রভার আবার নিঃশব্দে চলতে শুরু করল।
হোম মিনিস্টার বললেন, “তুমি কি ধুমপান কর? চাইলে গাড়িতে ধুমপান করতে পার। আমি চাচ্ছি যাতে তুমি কম্ফোর্টেবল ফিল কর।”
“না স্যার ধুমপানের অভ্যেস নেই”
“তাহলে এক গ্লাস ড্রিংক নিতে পার। গাড়িতে ভালো ব্ল্যক লেভেল আছে।”
“না স্যর ঠিক আছে।”
“স্যুট ইওর সেলফ। আমি তোমার আজকের অপারেশনের কথা শুনেছি। ইউ মেইড কোয়াইট আ মেস টুডে, ডিডন্ট ইউ?”
আহহ, উনিও কি এখন লেকচার দেবেন? অজান্তেই রানা ভ্রুকুটি করল।
“ডোন্ট ওরি।। আমাকে স্বিকার করতেই হবে তোমার কাজে আমি যেমন বিরক্ত হয়েছি তেমনি কিছুটা ইমপ্রেসডও হয়েছি। এমন স্টান্ট প্রতিদিন দেখা যায় না। এখন বল আজ যে মানুষটা তোমার হাতে মারা গেল তার পরিচয় কি জান?”
“আমরা শুধু জানি সে ইন্টারন্যাশনাল স্পাই কম্যুনিটির সদস্য, বাকিটা ক্লাসিফাইড, এবোভ মাই ক্লিয়ারেন্স লেভেল।”
“হুম্ম আমিও তাই ভেবেছিলাম। রাহাত কিছু কিছু ব্যপারে কাউকেই বিশ্বাস করে না, এমন কি নিজের ঘরের মানুষকেও না। ওর এই গুনটাকে আসলে আমি শ্রদ্ধা করি। যাই হোক, ওই মানুষটার নাম ইমরান ক্লিফোর্ড। পাকিস্তান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সিটিজেন। সে বড় হয়েছে আমস্টারডেম এ। ক্যম্ব্রিজ থেকে এপ্লাইড কেমিস্ট্রিতে গ্র্যাজুয়েট করেছে। জানা যায় আফগান ওয়্যারে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। ২০১১তে লাদেনের মৃত্যুর পর সে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায়। তার প্রায় একবছর পর আবার আত্মপ্রকাশ করে ইন্ডিপেনডেন্ট কনট্রাক্টর হিসেবে। বর্তমানে সে একজন ফ্রিল্যন্সার মার্সেনারি, হাইলি ডেঞ্জারাস পার্সন।”
এটুকু বলে মিনিস্টার একটু বিরতি নিলেন। রানা ভ্রুকুচকে বলল, “সে বাংলাদেশে কি করছিল?”
“বলছি। কিন্তু তার আগে তুমি বল প্রজেক্ট ব্লাইন্ড ফেইট সম্পর্কে তুমি কিছু জান?”
“তেমন কিছু না। শুনেছি এটা নব্বুই দশকের মিলিটারি ক্ল্যন্ডেস্টাইন প্রজেক্টগুলোর একটা। এর অধিনে মিলিটারি দেশের নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে অস্থায়িভাবে সিভিলিয়ানদের মধ্যে থেকে মিলিশিয়া বাহিনি তৈরি করার ক্ষমতা রাখে। এই মিলিশিয়া বাহিনি শান্তি রক্ষার্তে প্রয়োজনে লিথ্যাল ফোর্স প্রয়োগ করতে সক্ষম। প্রেসিডেন্ট অনুমোদন না দেয়ায় শেষ পর্যন্ত আর প্রজেক্টটা আলোর মুখ দেখেনি।”
“বাহ অনেক কিছুই জান দেখছি। এবার বল তুমি টাইগার রমিজ এর নাম শুনেছ?”
“আপনি কি সোর্ড অভ আহকামের লিডারের কথা বলছেন? দ্যা বুগিম্যান। সে তো পার্বত্য এলাকার ত্রাস। দক্ষিনাঞ্চলের বেশ কিছু জেলায় তার দল সোর্ড অভ আহকাম এর নেটয়ার্ক বিস্তৃত। মার্ডার, এক্সটর্শন, কিডন্যপিং, স্মাগ্লিং, হিউম্যান ট্রাফিকিং এমন কোন কুকির্তি নেই যা সে করেনি। গত পাঁচ বছর ধরে দুর্দন্ড প্রতাপের সাথে সে টেরোরিজম চালিয়ে আসছে। যদিও মাস ছয়েক হল সে কিছুটা ঝিমিয়ে গেছে। কিন্তু সে তো লোকাল ল এনফোর্স্মেন্টের মাথা ব্যথা। এর সাথে মিলিটারির সম্পর্ক কি?”
“দুইয়ে দুইয়ে চার মিলাতে পারছ না?”
রানা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। ধিরে ধিরে তার মুখে বিস্ময় ছড়িয়ে পড়ছে। “আপনি বলতে চাচ্ছেন প্রজেক্ট ব্লাইন্ড ফেইট ওয়াজ অপারেশনাল? তার মানে...”
“বাংলাদেশ আর্মি সোর্ড অভ আহকাম এর জন্ম দিয়েছে।” মন্ত্রি শান্ত ভাবে কথা শেষ করলেন।
রানা চুপ করে গেল। খবরটা হজম করতে সময় লাগছে। মন্ত্রি আবার বলতে শুরু করলেন, “সোর্ড অভ আহকাম প্রথম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল মুলত পার্বত্য চট্রগ্রামের রেবেল ফোর্সকে শায়েস্তা করার জন্যে। আমরাই ওদের সংঘবদ্ধ করেছি, অস্ত্র দিয়েছি, অর্থ যুগিয়েছি, ট্রেনিং দিয়েছি। পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর সোর্ড অভ আহকাম স্থানিয় সর্বহারা সহ বিভিন্ন ধর্মিয় চরমপন্থি গ্রুপকে শায়েস্তা করতে ব্যবহার করা হয়। মোট কথা অফিশিয়াল আর্মডফোর্স হাত ময়লা করতে চায় না, এমন যে কোন অপারেশনে সোর্ড অভ আহকামকে ব্যবহার করা হয়ছে। SOA হয়ে উঠেছিল মিলিটারির মোক্ষম অস্ত্র।”
“তারপর একসময় নিশচয়ি সেই মোক্ষম অস্ত্রটি মিলিটারির নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেল।”
“তা না হলে এই মুহুর্তে আমাদের এই আলাপের কোন দরকার ছিল না। দুইহাজার সালে বিএনপি সরকারের আমলে স্থানিয় আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে মিলিটারির অধিনে অপারেশন ক্লিন হার্ট চালানো হয়। সেই সময় দেশের সব বড়বড় চোর ডাকাত আর গডফাদারেরা আন্ডার গ্রাউন্ডে গাঁ ঢাকা দেয়। কিন্তু আমরা জানতাম এভাবে দিনের পর দিন মিলিটারিকে মাঠে নামিয়ে রাখা যাবে না। অপারেশন ক্লিন হার্ট গুঁটিয়ে ফেলার সাথে সাথেই এইসব গডফাদারেরা আবার মাথা তুলে দাঁড়াবে। মিলিটারি সেটা হতে দিতে চায়নি। মুলত ওই সময়ই SOA’র অপারেশনের পরিধি আরো বৃদ্ধি করা হয়। র্যাব একটা ক্রস্ফায়ার করলে মিডিয়া, ইউম্যন রাইটস, এমনেস্টি ইন্টারন্যশন্যাল ইত্যাদি সবার ঘুম হারাম করে ছারে। কিন্তু SOA’র সেই সমস্যা নেই। তারা রাতের অন্ধকারে গিয়ে চুপিসারে কাজ সেরে ফেলে, কেউ একটা প্রশ্ন করে না। কিন্তু সমস্যাটা হয় যখন বছর খানেক আগে সোর্ড অভ আহকামকে ডিএসেম্বল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। টাইগার রমিজের নেতৃত্বে SOA’র নেতারা মিলিটারির সাথে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায়। এক সময় মিলিটারি SOA’র উপর থেকে সব নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। SOA স্বাধিন ভাবে নিজেদের টার্গেট নির্বাচন করতে থাকে। তাদের হিট লিস্টে দেশের বড় বড় রাজনিতিক বুদ্ধিজিবি থেকে শুরু করে সরকারি আমলা, ব্যবসায়ি, সাংবাদিক অনেকেই আছে। SOA’র মুল উদ্দেশ্যটা কি, কারা ওদের ফান্ডিং দিচ্ছে, ওদের পেছনে বিদেশী কোন শক্তি কাজ করছে কিনা আমরা কিচ্ছু জানি না।”
“আপনারা এখন আমার কাছে ঠিক কি চাইছেন?” রানা একটু অধৈর্য হয়ে উঠল।
মন্ত্রি বললেন, “আজ দুপুরে ইমরান ক্লিফোর্ড নামে যেই মার্সেনারিকে তুমি ঘায়েল করেছ তার ল্যপটপ আমরা ক্র্যক করতে সক্ষম হয়েছি। প্রাথমিক ভাবে দেখে যা মনে হচ্ছে ইমরানকে SOA বিদেশ থেকে ভাড়া করে নিয়ে এসেছে।”
“বলেন কি?” বিস্ময়ে রানার চোখ কপালে গিয়ে ঠেকল।
“ঠিকই বলছি। ঠিক কি জন্যে তারা ইমরানের মত একজন এক্সপার্ট এসাসিনকে ভাড়া করেছে জানা না গেলেও আমরা ধারণা করছি SOA এবার নিশ্চয়ই খুবই হাই প্রোফাইল কাউকে টার্গেট করেছে, সরকারের মন্ত্রি বা কোন মিলিটারি পার্সন। এমন কেউ যাকে তারা নিজ হাতে খুন করার সাহস পাচ্ছে না, যাকে খুন করার জন্যে তাদের ইমরানের মত স্কিল্ড কিলারকে এক মিলিয়ন ডলার দিয়ে কন্ট্রাক্ট করতে হয়েছে।”
“এক মিলিয়ন ডলার...!!”
“হুম, টাকার অঙ্কই বলে দেয় টার্গেটটা কতটা গুরুত্বপুর্ন। আশার কথা হচ্ছে ইমরানের ফেসিয়াল প্রোফাইল কেউ জানে না। এই লোকের অনেকগুলো ফেইক এলিয়াস আছে। এমন কি আজকের আগে আমরাও জানতাম না এই লোকটা আসলে দেখতে কেমন। অতয়েব আশা করা যায় SOA ও ইমরানের আসল চেহারা আগে কখনো দেখেনি। তাই আমরা খুব সহজেই ইমরানের জায়গায় আমাদের একজন এজেন্টকে পাঠিয়ে দিতে পারি।”
“আপনি চাচ্ছেন আমি ইমরান সেজে শোর্ড অফ আহকামের সাথে কন্টাক্ট করি?”
“ওদের গ্রুপকে ইনফিল্ট্রেড করার এটাই আমাদের একমাত্র সুযোগ। ইমরানের ল্যাপটপে কন্টাক্টের ডিটেইল্ড ইন্সট্রাকশন্স দেয়া আছে। সেগুলো ঠিক মত অনুসরণ করলে SOA’র সন্দেহ করার কোন কারন থাকবে না।”
রানা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাল। আকাশ থেকে সুর্যের লালিমা মুছে যাচ্ছে দ্রুত। রাত নামছে শহর জুড়ে। রানা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “এত ক্রুশিয়াল একটা মিশনের জন্যে আপনি আমাকে কেন বেছে নিলেন? মানে আমি মাত্র ডিজিএফআই তে জয়েন করেছি। এখনো বড় কোন ফিল্ড মিশনে যাইনি।”
“কিন্তু তোমার সোয়াডের এন্টি টেরোরিজম ইউনিটে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। আর ডিজিএফআই এর ফাইলে তোমার ট্রেনিং সম্প্ররকে একটা মন্তব্য আমার নজর কেড়েছে। ওখানে বলা হয়েছে তোমাকে ভাঙা অসম্ভব। তোমাকে শারীরিক বা মানসিক যত টর্চারই করা হোক তুমি কখনো ভাঙবে না। এই রকম মিশনে তোমার মত এজেন্টই আমাদের দরকার।”
“কিন্তু স্যার তারপরেও আমার মনে হচ্ছে আপনারা আমার কাছে কিছু গোপন করে যাচ্ছেন। আমাকে নির্বাচন করার পেছনে অন্য কারন রয়েছে। আমার মনে হচ্ছে ডিজিএফআই কে আপনারা সম্পুর্ন বিশ্বাস করেন না। আপনাদের ধারণা মিলিটারির কারো কারো সাথে এখনো SOA’র যোগাযোগ আছে। তারা SOA’র কাছে ভেতরের খবর সাপ্লাই করে থাকে। আমি যেহেতু মাত্র ইন্টেলিজেন্সে যোগ দিয়েছি সেহেতু আমার করাপ্টেড হবার চান্স কম। আমি কি ঠিক বলেছি?”
মন্ত্রি কিছুক্ষণ চুপ করে চেয়ে থেকে মুচকি হাসলেন, “আমি জানতাম আমি ঠিক লোককেই বেছে নিয়েছি।”
“ডিজিএফআই এর কে কে এর সাথে জড়িত বলে আপনার ধারণা?”
“নিশ্চিত হয়ে কারো নাম বলা সম্ভব নয়। তবে বাতাসে গুজব শুনা যায় বিসিআই নামে মিলিটারির ভেতর একটা স্প্লিন্টার সেল তৈরি হয়েছে। এরা মিলিটারির মেইন চেইন অভ কম্যান্ড মানে না, নিজেদের খেয়াল খুশী মত তারা অপারেশন চালায়। আমার দৃঢ় সন্দেহ সোর্ড অভ আহকামের পেছনে বিসিআই এর হাত আছে।”
বিসিআই নামে কোন স্প্লিন্টার সেলের নাম রানা আগে শুনেনি। মন্ত্রি কতটা সত্যি কথা বলছেন সেটা নিয়েই ওর এখন সন্দেহ হচ্ছে। রানা বলে, “এটা প্রায় একটা সুইসাইড মিশন। তার উপরে এটা আনস্যঙ্কশন্ড, বুঝাই যায় সরকার বা মিলিটারি কেউ এর দায়িত্ব স্বিকার করবে না। এমন একটা ঝুকিপুর্ন মিশন আমি কেন নেব? এখানে আমার স্বার্থ কোথায়?”
“মানে তুমি বলতে চাইছ যে দেশের স্বার্থ রক্ষা তোমার জন্যে যথেষ্ট নয়?” মন্ত্রি চোখ বাঁকিয়ে বললেন।
রানা কিঞ্চিৎ শীতল গলায় জবাব দিল “দেশের স্বার্থ রক্ষায় জীবন বাজি রাখতে আমার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু এই মিশনে তো আমি আসলে দেশের স্বার্থ রক্ষা করছিনা, বরং সেনাবাহিনি আর সরকারের কতিপয় উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তার ভুলের ফসলকে ধামাচাপা দিচ্ছি। এক্ষত্রে আমার মরাল কাজ করছে না।”
“আল রাইট” মন্ত্রি লম্বা শ্বাস টেনে বললেন, “সেক্ষেত্রে তোমাকে মোটিভেট করার মত মাল মসলা আমার কাছে আছে। কত দিন হল তুমি তোমার বাবার খুনিকে খুঁজে বেড়াচ্ছ রানা? আই মিন এই জন্যেই তো তুমি ইন্টেলিজেন্সে যোগ দিয়েছিলে তাই না? কারন তুমি জানতে চাও সেই রাতে কারা তোমার বাবাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত কি হয়েছিল তোমার বাবার, তাই না?”
“আপনারা জানেন আমার বাবার খুনি কে?” রানার গলা কাঁপছে।
“অবশ্যই। আমরা সব সময়ই জানতাম। তুমি এই মিশনটা শেষ করে ফিরে আসার সাথে সাথেই আমি তোমাকে তার নাম জানাব, সাথে তার বর্তমান ঠিকানা, ফটোগ্রাফ ইত্যাদি সব কিছুই থাকবে। তারপর সেগুলো নিয়ে তুমি যা খুশী করবে। তোমাকে শুধু এই মিশনটা ঠিকঠাক মত শেষ করতে হবে।”
“আমি রাজি।”
“চমৎকার। এখন গাড়ি যে চালাচ্ছে তার নাম সোহেল, আমার সেক্রেটারি। খুব ভালো ছেলে। এই মিশনে ও তোমার হ্যন্ডেলার। ও তোমাকে মিশনের ডিটেইল্ড বুঝিয়ে দেবে। এরপর তোমার সাথে আমার হয়তো আর দেখা হবে না। তুমি সরাসরি সোহেলের কাছে রিপোর্ট করবে।”
রানাকে ওর স্টুডিও এপার্টমেন্টের সামনে নামিয়ে দেয়া হল। রানা পেইভমেন্টে নেমে দাড়াতেই ল্যন্ড ক্রুজারটি নিঃশব্দে গলির ওপাশে অদৃশ্য হয়ে গেল। ক্রুজারের লাল টেইল লাইটের হারিয়ে যাওয়া দেখতে দেখতে রানা নিজের চিন্তায় ডুবে গেল। সরকার সব সময় জানত তার বাবার খুনি কে! আচ্ছা রাহাত খান কি জানতেন? ইচ্ছে করেই কি তিনি তথ্যটা রানার কাছ থেকে গোপন রেখেছেন? রানা জোর করে অন্যদিকে মনযোগ ফেরানোর চেষ্টা করে। ওই ড্রাইভার ছোকরা হবে তার হ্যন্ডেলার। বয়স তো রানার সমান বলেই মনে হচ্ছে। শরীরের কাঠামো দেখে বুঝা যায় এক্স মিলিটারি। হয়তো NSI এর এন্যালিস্ট। এই ছেলে মন্ত্রির গাড়ি চালাচ্ছে কেন? নাম বলল সোহেল। পুরোটা রাস্তা ছেলেটা একবারও মুখ খুলেনি। আচ্ছা ওরা এখন যাচ্ছেটা কোথায়? সোহেল কে জিজ্ঞেস করে লাভ হবে না বুঝা যাচ্ছে। রানা ল্যন্ড ক্র্যজারের নরম গদিতে গাঁ এলিয়ে দিয়ে চেষ্টা করতে থাকে স্নায়ুগুলোকে শান্ত করার।
কে জানে সামনে ওর জন্যে কি অপেক্ষা করছে।
to be continued......
পরের পর্বের লিঙ্ক Click This Link