আমি নিশাচর।
এখন গভীর রাত। কতটা গভীর তা বলতে পারব না। আকাশে একটা আধ খাওয়া মরচে পড়া চাঁদ টিমটিম করছে। ঠিক পঞ্চাশোর্ধ দেহ পসারিণীর মত। রুপ যৌবন লুপ্ত হয়েছে অনেক আগেই, কিন্তু পেটের ক্ষিদে মেটেনি। তাই আজো সে মাঝ আকাশে ঝুলে আছে, নির্লজ্জের মত।
১ম পর্বঃ Birth of a Predator
আমি দাঁড়িয়ে আছি শাহবাগে আজিজ মার্কেটের পেছনে। আমার সামনে একটা নোংরা দো’তলা দালান। দালানটির অবস্থাও পোকায় খওয়া চাদটার মতই। দালানের উপরের তলার মেসে শামিম ভাই থাকেন। আজ রাতে আমি আবার তার সাথে দেখা করতে এসেছি। প্রায় এক বছর পর।
দালানের গা’টা ভেজা ভেজা, ড্যম্প খাওয়া। এখানে সেখানে পলেস্তারা উঠে গেছে। আমি সেই ছাল চামড়াহিন দালানের গায়ে নখ বিঁধিয়ে বিঁধিয়ে উপরে উঠে যেতে থাকি। এই কায়দাটা আমি নতুন শিখেছি। যে কোন অমসৃণ সার্ফেসেই আমি নখ বিঁধিয়ে চলাফেরা করতে পারি, টিকটিকির মত!!
দেয়াল বেয়ে আমি দোতলার পুব কোনে একটা জানালার কাছে পৌছে গেলাম। জানালার অপাশের ঘরটাই শামিম ভাইয়ের। ভেতরে বাতি জ্বলছে। শামিম ভাই জেগে আছেন। এই মানুষটা রাতে ঘুমায় না। আমি শন্তপর্নে জানালার ধারে উঁকি দিলাম। যা ভেবেছিলাম তাই। শামিম ভাই ছবি আঁকছেন। লোকটা রাত জেগে ছবি আঁকে, আর দিনের বেলায় ঘুমায়। রাতেই নাকি তার ছবি আঁকার মুড আসে। আর্টিস্ট হিসেবে শামিম ভাইয়ের মোটামুটী নাম আছে। তবে তিনি শখে আঁকেন না, অর্ডারি কাজ করেন। তার অনেক ছবিই নিউমার্কেটে বেশ দামে বিক্রি হয়। কিন্তু আজ রাতে আমি তার ছবি দেখতে আসিনি।
শামিম ভাই একটা নগ্ন নারীর ছবি আঁকছেন। পেন্সিল স্কেচ। সাদা কাগজে গ্রাফাইটের আঁচরে নিরব প্রতিচ্ছবিটি জিবন্ত হয়ে উঠছে। শামিম ভাইয়ের ঠোঁটে সিগারেট। আশেপাশে অনেকগুলো পোড়া সিগারেটের টুকরো পরে আছে। লোকটা চেইন স্মোকার। শামিম ভাই কল্পনা থেকে ছবি আঁকতে পারেন না। তার সামনে মডেল আছে। একটা টুলের উপর হাঁটু ভাঁজ করে মেয়েটি বসে আছে। চুল খোলা, পড়নে একটা পাতলা ওড়না। শামিম ভাইই বোধ হয় পড়িয়ে দিয়েছেন। একেবারে নগ্ন শরীরের চেয়ে ওড়নায় ঢাকা শরীর বোধ হয় বেশি শৈল্পিক আবেদন রাখে। মডেলটিকে আমি চিনি। ওর কাজের নাম ঊর্মিলা। আসল নাম কি কেজানে। প্রফেশনাল প্রস্টিটিউট। শামিম ভাইয়ের আঁকা শেষ হলেই ওকে নিয়ে বিছানায় যাবেন। সাথে থাকবে গাঁজার পুরিয়া। আমি যখন শামিম ভাইয়ের বাসায় দুই সপ্তাহ ছিলাম তখন দেখেছি। আমার সামনেই উর্মিলাকে নিয়ে মেতে উঠেছিলেন। আমাকেও আহ্বান করেছিলেন, সাড়া না দেওয়ায় মুচকি হেসেছেন। উর্মিলার চেহারা যেমন-তেমন, শরীরটি অপুর্ব।
ছবি আঁকা ছাড়া আরও একটি পেশা আছে শামিম ভাইয়ের। তিনি শাহবাগ এলাকায় হিরোইনের একজন টপ ডিস্ট্রিবিউটর। আমাকে প্রথম হেরোইন ধরানোর জন্যে এই মানুষটির কাছে আমি ঋণী। আজ আমি এসেছি সেই ঋণের শোধ দিতে।
আমি জানালা খুলে ভেতরে ঢুকলাম, প্রায় নিঃশব্দে। শামিম ভাই ছবি আঁকায় ডুবে আছেন, আমার আগমন টের পেলেন না। ঊর্মিলাই আমাকে প্রথম দেখল, এবং কান ফাটানো শব্দে চিৎকার করে উঠল। শামিম ভাই চট করে ঘুরে তাকালেন। তার হাত থেকে পেন্সিল খসে পড়ল, চোখ বড় বড় হয়ে গেল। আতঙ্কে লোকটার মুখে কথা সরছে না। আমি সহজ ভাবে বল্লাম,”থাম্লেন কেন? ছবিটা চমৎকার হচ্ছিল।” শামিম ভাই উত্তর দিলেন না, আমি উত্তর আশাও করিনি। উর্মিলার চিৎকারটা বেশ কানে লাগছে। অবশ্য ওর চিৎকারে কারো ছুটে আসার সম্ভবনা নেই। এই মেসের প্রতিটা ঘরেই মাদকাসক্তদের আবাস, তাদের ঘর থেকে মেয়ে মানুষের চিৎকার ভেসে আসাটা নিত্যকার ঘটনা। তারপরও ওর চিৎকারটা ভালো লাগল না। ওর চুল ধরে দেয়ালের সাথে মাথা ঠুকে দিলাম। যাক, এতক্ষনে চুপ করেছে। চুল ছেড়ে দিতেই মেঝেতে ওর অচেতন দেহটা এলিয়ে পড়ল। ঊর্মিলাকে ছেরে আমি আবার শামিম ভাইয়ের দিকে মনোযোগ দিলাম। তিনি এই সুযোগে দরোজার কাছে পৌছে গেছেন। কাপা কাপা হাতে দরোজার ছিটকিনি খোলার চেষ্টা করছেন, অতিরিক্ত ভয়ের কারনেই বোধ হয় পারছেন না। আমি এগিয়ে আসতেই ছিটকিনি ফেলে তিনি বিছানার তোষকের নিচ থেকে একটা ছুরি বের করলেন। সেটা আমার দিকে ধরে বললেন, “খবরদার আর কাছে আসবি না” আমার হাসি পেল, বাংলা সিনেমার নায়িকার ডায়লগ। আমি অনায়াসে তার হাত থেকে ছুরিটা কেড়ে নিলাম। তারপর দুই হাতে গলা চেপে ধরে তাকে জানালা দিয়ে ছুড়ে দিলাম। কাঁচ ভাঙ্গার তীক্ষ্ণ শব্দ হল। তারপর পিচ ঢালা পথে নরম কিছু পড়ার আওয়াজ। জানালা দিয়ে নিচে তাকালাম। শামিম ভাই হাত পা ছড়িয়ে পরে আছে, এখনো একটু একটু হাত নাড়াচ্ছে। নাড়াবারই কথা, দো’তলা থেকে পড়লে কেউ মারা যায় না। হয়তো কিছু হাড়গোড় ভেঙ্গেছে কেবল। আমি জানালা থেকে লাফ দিয়ে রাস্তায় নেমে এলাম। ব্যটা আধমড়া হয়ে গেছে। কিন্তু এতো অল্পতে তো আমার চলবে না। আমি শামিম ভাইকে কাঁধে তুলে নিলাম। তারপর দেয়াল বেয়ে ছাদে উঠে গেলাম। এরপর ওর দলামোচড়া শরীরটা ছুড়ে মারলাম নিচে। সব শক্তি দিয়ে! থ্যক করে বিশ্রি শব্দ হল। নাহ, এবার আর নড়ছে না। আমি সন্তুষ্ট হয়ে রাস্তায় নেমে এলাম। একি! শালা এখনো দম নিচ্ছে! আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল। আমি রাস্তা থেকে শামিম ভাইয়ের ভাঙ্গাচোরা শরীরটা আবার টেনে তুললাম। এবার কাঁধে নয়, দেয়ালে ছেঁচড়ে ওকে টেনে তুললাম ছাদের উপর। ওকে আবার ছাদ থেকে ফেলে দেব, যতক্ষণ না মরে এটা করতেই থাকব।
ছাদের ধারে ওর শরীরটা নিয়ে যেতেই চাঁদের আলো পড়ল ওর মুখের উপর। মুখটা রক্তে ঢেকে গেছে, চোয়ালের হাড় ভেঙে বেড়িয়ে এসেছে। আমার হাত দুটো জমে গেল, ধাক্কা খেয়ে আমি আবার জেগে উঠলাম। এ আমি কি করছি! মানুষটাকে আমি আরেকটু হলে মেরেই ফেলছিলাম। ছেরে দিতেই শামিম ভাইয়ের দেহটা ভেজা কাপড়ের মত ছাদে লুটিয়ে পড়ল। আমার ভেতরটা রাগে ফেটে পড়ছে, যেন ক্রোধের একেকটা আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরিত হচ্ছে। কাপাকাপা হাতে আমি পকেট থেকে আইফোনটা বের করে গান ছেরে দিলাম। রবীন্দ্র সঙ্গীত। বিষণ্ণ জোছনার সাথে মিশে গেল বিষণ্ণ সুর, নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে রয়েছ নয়নে নয়নে, হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে রয়েছ হৃদয়ে গোপনে, রয়েছ নয়নে নয়নে...
ধিরে ধিরে আমার শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে এল। রাগলে এখনো আমার ভেতরের ওই অন্যকিছুটা আমার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এই অন্য আমি মানুষকে আঘাত করতে ভালোবাসে, ধ্বংস ভালোবাসে। আমি দেখেছি এই সময় নার্ভকে ঠান্ডা করতে রবীন্দ্র সঙ্গীত বেশ কাজ দেয়।
আমি লম্বা শ্বাস নিয়ে সামনের দিকে তাকালাম। আজকের চাঁদটাই শুধু নয়, সামনের ওই কালো রাজপথ, দালান-কোঠা, গোটা শহরটাকেই আজ বেশ্যার মত লাগছে।
***
সকালের নাস্তায় ডেইলি স্টারের হেড লাইন দেখে ভিরমি খবার দশা হল।
Naked Phantom Terrorizes the City Again…
ন্যেকেড ফ্যন্টম... আর ভালো কোন নাম পেল না! ডেইলি বিউগল পিটার পার্কারের নাম দিয়েছিল স্পাইডারম্যান। আর এরা আমার না দিল ন্যেকেড ফ্যন্টম! “নাহ এদের দিয়ে সাংবাদিকতা হবে না!!”
জসিম কাকা অবশ্য আমার রসিকতাটা নিলেন না। গম্ভীর মুখটাকে আরো গম্ভীর করে বললেন, “এটা হাসি ঠাট্টার ব্যপার না। তুমি যদি এভাবে নিয়মিত খবরের কাগজের হেডলাইন হতে থাক তাহলে এক সময় কোন একটা বিপদ হবেই।”
আমি চোখ নাচিয়ে বললাম, “আমাকে ছোয়ার সাধ্য কারো নেই। তুমি কল্পনাও করতে পারবে না আমি কি করতে পারি।“
চাচা হতাশ ভাবে বললেন, “আমার ভয়টা সেখানেই”
বাবাকে দেখা গেল। নাস্তা করলেন না। তাড়াহুড়া করে বেড়িয়ে গেলেন। কয়েক দিন থেকেই তাকে কিছুটা অস্থির দেখাচ্ছে। একটা কিছু নিয়ে বেশ চিন্তিত বুঝা যায়। যাক ভালোই হয়েছে। সকালের নাস্তার সময় মানুষটার চেহারা দেখতে ভালো লাগে না। জসিম চাচা নিজেই বললেন, “তোমার বাবা কিছু দিন থেকেই একটু ভয়ে ভয়ে আছে। ইদানীং খাওয়া দাওয়া ঠিক মত করছে না”
আমি বললাম “ভালো তো, খারাপ মানুষের শাস্তি হয়া দরকার।”
জসিম চাচা আমার দিকে আহত চোখে তাকালেন, তারপর আবার বলতে শুরু করলেন, “ব্যপারটা সিরিয়াস। নুরুল টেক্সাসে যেখানে কাজ করত, ওই ক্রুজ রেইস ল্যবে, ওখান থেকে কাজ ছেরে চলে আসার সময় ওদের গবেষণার বেশ কিছু ফাইল পত্র সাথে করে নিয়ে এসেছিল। ওর কিছু কিছু ফাইল বেশ কনফেডেন্সিয়াল। বোধ হয় ওই ক্রুজ রেইসের ওরাই এখন তোমার বাবাকে ই-মেইল করে বেনামে হুমকি দিচ্ছে। ফাইলগুলো ফেরত দিতে বলছে, নইলে নাকি বিশাল ক্ষতি হবে।“
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, “বাবার কথা বকবক করা বন্ধ কর তো চাচা। অন্য কথা থাকলে বল।”
চাচা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন “বাবার ব্যপারে এভাবে কেন কথা বল সব সময়? শত হলেও তিনি তোমার বাবা”
আমি দাঁত ঘষে বললাম “তুমি জানো না কেন এভাবে কথা বলি? তুমি জানো না সে আমার কি ক্ষতি করেছে? তুমি জানো না মায়ের সুইসাইড করার পেছনে বাবাই দায়ি?”
চাচা বললেন, “আর সব ঠিক আছে, কিন্তু তুমি নিজের অবস্থার জন্যে কেন বাবাকে দায়ি করছ? তোমার লাইফ তোমার নিজের হাতে। তোমার সাথে যা কিছু হয়েছে তার সবটার দায় ভার তোমার একার।“
“আমার একার?” আমি চিৎকার করে উঠলাম “আমি কেন ড্রাগ ধরেছিলাম? দুনিয়াতে আমার মা ছাড়া আর কেউ ছিল না। সেই মাকেও বাবা মেরে ফেলল। তারপর তারপর... “
“নাফিজ শান্ত হও”
“আজ আমাকে কেন রাতের বেলা পথে পথে ঘুরে বেরাতে হয়? সেটাও ওই বাবার গবেষণারই ফল। বাবার গবেষণা একটা অভিশাপ।”
“তুমি সত্যকে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছ। কেউ তোমাকে নিটোজেন সিরাম নিতে বলেনি, তুমি নিজেই চুরি করে ওই ফর্মুলা নিয়েছ। নিজের ভুলের দায়ভার তুমি অন্যের উপর চাপাতে পার না।”
“তুমি তুমি এই কথা বলতে পারলে? সে আমাকে একা একটা ঘরে আটকে রেখেছিল। তখন কোথায় ছিলে তুমি?”
“নাফিজ, আমরা চেষ্টা করেছি। তোমাকে বহুবার রিহ্যবে ভর্তি করা হয়েছে। তুমি প্রতিবারই পালিয়ে এসেছ। শেষে নুরুল আর উপায়ান্তর না দেখে...আরে নাফিজ”
আমি টেবিল ছেরে উঠে পড়লাম। আর এক মুহুর্ত চাচার সামনে থাকতে ইচ্ছে করছে না। টান দিয়ে শেলফ থেকে ব্যগটা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম। রাস্তায় চরা রোদ। মাথার বাহিরে-ভেতরে দুই জায়গায়ই আগুন জ্বলছে। আমি ভাবতাম চাচা হয়তো অন্তত আমার পক্ষে আছেন, তিনি হয়তো আমার কষ্টটা বুঝেন। কিন্তু না। তিনিও আর দশজনের মতই আমাকে একটা অর্থলেস জাঙ্কি মনে করেন। মা মারা যাবার পর আমি মেথে আসক্ত হয়ে পড়েছিলাম। ঢাকায় আসার পর শামিম ভাইয়ের কল্যানে হিরোইন ধরলাম। ব্যপারটা জানাজানি হয়ে যাবার পর আমাকে বেশ কয়েক বার রিহ্যবে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রত্যেক বারই আমি দুই একদিন থেকে পালিয়ে যাই। তারপর আমার বাবা সে ভয়ঙ্কর কাজটি করলেন। আমাকে দির্ঘ দশ দিন নিজের রুমে তালা আটকে রাখলেন। কি ভয়ঙ্কর দশটা দিন! ভাবলে এখনও আমি শিউরে উঠি। শেষের দিকে আমার বিবেক বুদ্ধি লোপ পেল। আমি ঘরের তালা ভেঙে বের হয়ে এলাম। বাসায় তখন কেউ ছিল না। নেশার তৃষ্ণায় তখন আমার চিন্তা চেতনা লোপ পেয়েছে, চোখে ভ্রম লাগছে। কাপতে কাপতে বাবার ওয়ার্কশপে গেলাম। এখানে বহু আগে একদিন বাবাকে ফ্রিজের ভেতর কিছু মরফিনের এম্পুল রাখতে দেখেছি। সম্ভবত নিজের গবেষণার কাজে এনেছিল। এখনো আছে কিনা কে জানে। ফ্রিজের দরোজা খুলে আগের এম্পুলগুলো আর দেখলাম না। তবে একটা কেসে নতুন কিছু ইঞ্জেকশনের এম্পুল দেখতে পেলাম। ঝাপসা চোখে এম্পুলের গায়ের লেবেলে মরফিন শব্দটা চোখে পড়ল। আর দেরি না করে সিরিঞ্জ নিয়ে বর্নহিন তরলটা পুশ করে দিলাম নিজের হাতে। তারপর কোন মতে নিজের দেহটা টান্তে টান্তে নিয়ে গেলাম বিছানার কাছে। বিছানায় পৌছবার আগেই সব অন্ধকার হয়ে গেল। ঘুম ভাঙ্গার পর বেশ ভালো বোধ করলাম। নেশার তৃষ্ণা আর নেই। মন খুশিতে নেচে উঠল। এরপর যতবার নেশার তৃষ্ণা জাগত, লুকিয়ে গিয়ে বাবার ফ্রিজ থেকে মরফিন ইঞ্জেকশন নিতাম। এতে বেশ কাজ হত। খালি এম্পুলগুলোতে আবার পানি ভরে রাখতাম যাতে বাবা বুঝতে না পারে। এভাবেই চলছিল। তারপর একদিন হঠাত আবিস্কার করলাম আমার হিরোইনের নেশা মরে গেছে। কিন্তু তার জায়গায় জেগে উঠেছে সম্পুর্ন ভিন্ন এক তৃষ্ণা। হেরোইনের চেয়ে যা হাজারগুন মাদকতাময়। এই তৃষ্ণা রাতের তৃষ্ণা, নিশাচরের তৃষ্ণা।
পরে জেনেছি ফ্রিজে ওগুলো মরফিন এম্পুল ছিল না। বাবা টেক্সাসে একটা এন্টি-এডিকশন ফর্মুলার উপর কাজ করছিল। মরফিন এডিক্টের উপর এই ফর্মুলা প্রয়োগ করলে তার এডিকশন সেরে যাবে। কাজ যখন মাঝ পথে তখন প্রজেক্টের এথিক্যাল এপ্লিকেশন নিয়ে বাবার সাথে ক্রুজ রেইসের ডিরেক্টরের ঝগড়া হয়ে গেল। বাবা রেগে মেগে চাকরি ছেরে দেশে চলে এল। দেশে ফিরে সে একাই ফর্মুলাটার উপর কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। আমি না বুঝে সেই এন্টি-এডিকশন ফর্মুলা, বাবা যেটাকে নিটোজেন সিরাম বলে, মরফিন ভেবে এতদিন শরীরে পুশ করে এসেছি। নিটোজেন আমার এডিকশন কিউর করেছে ঠিকই, কিন্তু মারাত্মক এক সাইড এফেক্ট ফেলে গেছে। ও আমার শরীরে নিশাচরের বীজ বপন করে রেখে গেছে। আজ সে বীজ থেকে ভয়ঙ্কর এক কালো দানব জন্ম নিয়েছে। আমার শরীরের শিরায় শিরায় সেই রাত্রি প্রেমিক কালো দানবের আবাস। আর এর সব কিছু জন্যেই দায়ি বাবার গবেষণা, আর নিজের সন্তানের প্রতি সিমাহিন অবহেলা, নির্মম অবহেলা।
***
ক্যম্পাসে গিয়ে দেখি আশেপাশে অনেকেই ন্যকেড ফ্যন্টম নিয়ে গল্প করছে। আড়িপাতার লোভ সামলাতে পারলাম না। বুঝা যাচ্ছে ন্যকেড ফ্যন্টমের কথা বেশ কিছু পত্রিকাতে এসেছে। একেক পত্রিকাতে অবশ্য একেক নামে ডাকা হয়েছে। এটা ভালো, ন্যকেড ফ্যন্টম নাম স্থায়ি হয়ে গেলে সমস্যা। ব্যপারটা সবার দৃষ্টি আকর্ষণের কারন জানতে পারলাম। সেই যে হলের এক ছাত্রনেতাকে পিটিয়ে বটগাছে ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম সে নাকি সাধারণ কেউ নয়। পানি-সম্পদ মন্ত্রির ভাতিজা। চাচার দাপটেই ক্যম্পাস দাপিয়ে বেড়াতো। পলিটিক্যাল ব্যকগ্রাউন্ড থাকায় পুলিশ আর সাংবাদিকরা ব্যপারটা বেশ সিরিয়াসলি নিয়েছে। পুলিশ নাকি হলে এসে সবাইকে জেরা করে গেছে। কথাটা শুনে বেশ অস্বস্তিতে পরে গেলাম।
ক্লাসে গিয়ে দেখি সুস্মিতা আসেনি। আরেহ, তাহলে ক্লাসে এসেছি কার জন্যে! কিন্তু সুস্মিতা তো কখনো ক্লাস মিস দেয় না। পড়াশুনা নিয়ে ভারি সিরিয়াস। শরীর টরির খারাপ না তো? ক্লাসে কারুর সাথে কথা বলি না। কাউকে জিজ্ঞেস করে খোঁজ নিতেও সংকোচ হচ্ছে।
পুরোটা ক্লাস ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে পার করলাম। অবশেষে ক্লাস শেষ হল। ডিপার্টমেন্টের সিড়িতে দেখি সুস্মিতা দাঁড়িয়ে আছে। আরে, মেয়েটা ক্যম্পাসে এসেছে ক্লাস করল না কেন? আমি না দেখার ভান করে দ্রুত নেমে যাচ্ছি, এই সময় সুস্মিতা পেছন থেকে ডাকল। বেশ চমকে উঠলাম। সুস্মিতা আমাকে ডাকছে! গত এক বছরে এই প্রথম!!
মুখের ভাব যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রেখে ওর সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম "কি ব্যপার?"
সুস্মিতা ওর ঘন কোকড়ানো চুলগুলো কপাল থেকে সরিয়ে বলল, "তোমার সাথে কিছু কথা আছে। আমার সাথে একটু আসবে।" বলে আর দেরি করল না, পেছনে না তাকিয়ে সোজা হাঁটতে শুরু করল। আমিও অগ্যতা ওর পিছু নিলাম। বুক ধুক ধুক করছে। সেদিন সাইমুমের সাথে ওই ঘটনার পর এই প্রথম সুস্মিতার সাথে দেখা। কি বলতে চায় ও?
সুস্মিতা আমাকে বারান্দার একটা নির্জন কোনে নিয়ে গেল। দুজনেই দাঁড়িয়ে আছি। কেউ কথা বলছি না। কেটে গেল কিছু অস্বস্তিকর মুহুর্ত।
অবশেষে সুস্মিতাই নিরবতা ভাঙল। "তোমার শরীর এখন সম্পুর্ন ভালো হয়ে গেছে?"
"দেখ, আমার শরীরের খবর নেয়ার জন্যে নিশ্চই তুমি আমাকে ডাকনি। কেন ডেকেছ বলে ফেল।" জানি না কেন এত রুক্ষ স্বরে জবাব দিলাম।
সুস্মিতা একটু ইতস্তত করে বলল, "সেদিন তুমি সাইমুমের সাথে আচরনটা মোটেই ভালো করনি।"
"সাইমুম কি তোমাকে তার বিচার করতে পাঠিয়েছে?" আমি হালকা শ্লেষের সাথে বললাম।
"না, সাইমুম বলেছে এই ব্যপারে আর কথা না বাড়াতে। কিন্তু আমি নিজে থেকেই এসেছি। তুমি ওর সাথে এমন আচরন করতে পার না। ও তোমার প্রান বাঁচিয়ে দোষের কিছু করেনি। তোমার উচিত ওর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা।"
"আমার কি উচিত না উচিত সেটা কি তুমি বলে দেবে?"
"অবশ্যই, তোমার নিজের যেহেতু সেই সেন্স নেই অন্য কাউকেই তোমাকে এটা বলে দিতে হবে। ক্লাসের সবার সাথে তুমি একটা দূরত্ব বজায় রাখো, সবার সাথেই খারাপ আচরন কর। ক্লাসের একটা মানুষ তোমাকে পছন্দ করে না। এসব তুমি কেন কর?"
আমি কাঁধ ঝাকিয়ে বললাম, "আই ডোন্ট নো"
"এটা তো কোন কথা হল না। যার সাথে যামন খুশী তুমি বিহ্যেভ করতে পার না।" আমি সুস্মিতার কন্ঠের উত্তাপ টের পাই। ওর ফর্সা মুখটা রাগে একটু একটু করে লাল হয়ে উঠছে। "সাইমুমের সাথে তোমার সমস্যাটা কি আমাকে বলতেই হবে।"
আমি আবার বললাম, "আই ডোন্ট নো। আই জাস্ট ডোন্ট লাইক দ্যা গাই।"
"তোমার ওকে অপছন্দ করার কি আছে? তুমি ওকে কতটুকু চেন? ওর সম্পর্কে কতটুকু জানো?"
"আই নো হি লাভস ইউ, দ্যটস এনাফ রিজন ফর মি টু হেট হিম"
কথাটা কিভাবে যে মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেল। আমি আর দাঁড়ালাম না। সিড়ির দিকে প্রায় এক রকম ছুটতে শুরু করলাম।
বাড়ি ফিরছি এই সময় পুলিশের একটা জিপ ঘ্যস করে আমার পথে এসে দাঁড়ালো। সানগ্লাস পড়া এক পুলিশ নেমে এল ড্রাইভিং সিট থেকে। আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, “আপনার নাম নাফিজ”
আমি মাথা নাড়লাম।
পুলিশটা বলল, “বুয়েটে পড়েন, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং?”
আমি আবার মাথা নাড়লাম। পুলিশটি নাক কুচকে বলল “বারবার মাথা নারেন কেন? মুখে বলেন”
“জি আমি নাফিজ, বুয়েটে পরি।“
আপনাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে।”
“থানায় যেতে হবে? কেন? আমি কি করেছি?”
“কিছু করেছেন তাতো বলিনি। আমরা জিয়া হলের ছাত্রলিগ নেতা কিবরিয়ার উপর সন্ত্রাসি হামলার তদন্ত করছি। আপনাকে তদন্তের বিসয়েই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে”
“দেখুন কিবরিয়া কে আমি ঠিক মত চিনিও না। তার বিষয়ে আমি আপনাদের কি বলব?”
“ঠিকমত চেনেন না কথাটা তো মিথ্যে বললেন। আমাদের কাছে তথ্য আছে হামলা হবার ছয়দিন আগে কিবরিয়া সাহেবের সাথে আপনার কথা কাটাকাটি হয়েছিল। আপনি সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর সামনে কিবরিয়ার এক বন্ধুর গায়ে হাত তুলেছিলেন। অনেকেই সেটা দেখেছে।”
“দেখুন, ঝামেলাটা আমার সাথে কিবরিয়ার ওই বন্ধুর হয়েছিল। কিবরিয়া কে তখনো আমি জানতাম না”
“সে দেখা যাবে। এখন আপনি আমাদের সাথে চলুন।”
“কোন ওয়ারেন্ট ছাড়া আপনি আমাকে জোর করে থানায় নিতে পারেন না”
পুলিশটি এবার হেসে ফেলল। গাড়িতে বসা আরেকটি পুলিশকে বলল, “স্যার, ওয়ারেন্ট দেখতে চায়।”
গাড়ির ভেতরে বসা পুলিশটি উত্তর দিল, “কানের উপরে ঠাডায়া একটা চড় বসাও, তারপর ঘাড় ধইরা গাড়িতে তুল।”
আমি চর খাওয়ার জন্যে বসে থাকলাম না। পুলিশটি এগিয়ে আসতেই নিজেই “ঠাডায়া” তার গালে একটা চর মারলাম। ফলাফল যা হবার তাই হল।
মিনিট দশেক পর। আমার হাত হ্যন্ডকাফ দিয়ে পিঠের পেছনে বাঁধা। বসে আছি পুলিশ ভ্যনে। আমাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শাহবাগ থানায়।
***
বাংলাদেশের পুলিশ কি জিনিস টের পেলাম। থানায় এনে প্রায় কোন কথা ছাড়াই একটা খালি রুমে নিয়ে গেল। মিনিট খানেক পর এক ষণ্ডামার্কা দানব আকৃতির ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করল। শার্টের সবগুলা বোতাম খুলা, হাতে একটা লোহার রুলার। শুরু হল মার। আহ... এরা আসলেই কাজটা তে বেশ দক্ষ। দেহের কোন জায়গাটাতে ঠিক কতটুকু শক্তিতে আঘাত করলে একজন ঠিক কতটুকু যন্ত্রনা পাবে সব তাদের মুখস্ত মনে হল। ঘন্টা খানেক পর যখন ওরা আমাকে ধরে ধরে একটা সেলে নিয়ে গেল আমি নাভির নিচ থেকে আর কিছু অনুভব করতে পারছি না।
একটু পরে গা কাপিয়ে জ্বর আসল। সন্ধ্যার দিকে খবর পেয়ে জসিম চাচা থানায় এলো। আমার অবস্থা দেখেই কেঁদে ফেলল। আমি হাসতে চেষ্টা করলাম। কাটা ঠোঁটের কারনে হাসিটা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য হল না। থানার ওসি চাচার সাথে পাঁচ মিনিট কথা বলেই বোধ হয় বুঝলেন এরা মালদার পার্টি, টাকা খরচ করতে কার্পণ্য করবে না। এবং সিদ্ধান্ত নিলেন কিছুতেই এই আসামীকে ছাড়া যাবে না। যতটা পারা যায় টাকা পয়সা খসিয়ে নিতে হবে। অনেক চেষ্টা করেও চাচা কিছু করতে পারলেন না, ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেলেন। অবশ্য যাবার আগে ভরসা দিয়ে গেলেন রাতের মধ্যেই উকিল ডেকে একটা কিছু ব্যবস্থা করবেন। রাতের দিকে উকিল এল, ওসির সাথে অনেকক্ষণ দুইজনের কথা হল। কিন্তু বুঝা গেল অবস্থা যা মনে হয়েছিল তার চেয়ে বেশ জটিল। পুলিশ আমাকে শুধু টাকার জন্যে আটকে রাখেনি। কিবরিয়ার মামলায় পুলিশের হাতে কোন সাসপেক্ট নেই। কিন্তু পানি মন্ত্রির চাপে পুলিশের প্রান ওষ্ঠাগত। পুলিশ আমাকে ওই ঘটনার আসামি হিসেবে চালিয়ে দিতে চাইছে। এই প্রবল জ্বরের মধ্যেও ঘটনার আয়রনিটা আমার চোখ এরাল না। উকিল কে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যেতে হল। উকিল বললেন আগামি কাল আসামি কে কোর্টে তুলা হবে। মামলা কোর্টে যাবার আগ পর্যন্ত তিনি কিছু করতে পারবেন না। জসিম চাচা বিদায় নেবার সময় ভেজা চোখে বললেন, “ভয় পেয় না। আমি আছি, একটা কিছু করবই।” আমি বললাম, “আমি ভয় পাব কেন চাচা? পুলিশ আমাকে থানায় আটকে রেখেছে, ভয় তো ওদের পাওয়া উচিত।”
মাঝ রাতের দিকে আমাকে আবার সেই খালি ঘরটায় নেয়া হল। এবার ঘরটা আর আগের মত খালি নয়। একটা কাঠের চেয়ার আছে। আমাকে সেতার সাথে শক্ত করে বেধে ফেলা হল। একজন পুলিশ বড় একটা পাত্রে করে কিছুটা পানি নিয়ে এল। আমার পা থেকে জুতা খুলে নিয়ে পা দুটো পাত্রের পানিতে ডুবিয়ে দিল। আরেক জনকে দেখলাম বড় একটা কেমিক্যাল ব্যটারি আর ক্যবল নিয়ে আসতে। ওরা কি আমাকে ইলেকট্রিক শক দেবে নাকি!!
সেই ওসিকে দেখতে পেলাম। আরেকটা চেয়ার টেনে আমার সামনে এসে বসলেন। কোন কথা না বলে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। তারপর বললেন, “দেখ তুমি ভদ্র ঘরের ছেলে। রাগের মাথায় নাহয় একটা কাজ করে ফেলেছ। এখন তাড়াতাড়ি সত্যি কথাটা বলে দাও। তাহলে তোমার আর আমার দুইজনেরই ঝামেলা কমবে।”
“কিসের কথা বলছেন?”
“কিবরিয়ার উপর তুমি হামলা করেছ কথাটা স্বিকার করে ফেল।”
“যে কাজ আমি করিনি সেটা কেন স্বিকার করব?”
“স্বিকার করবে কারন আমাদের কথা মত কাজ না করলে তোমার অনেক ক্ষতি হতে পারে। আমরা যদি তদন্ত করি তাহলে অনেক কিছুই বের হয়ে আসতে পারে। তুমি আগে ছাত্রদলের হয়ে কি কি করেছ, এর আগে আর কাকে হামলা করেছে, কোথায় গাড়ি পুড়িয়েছ সবই বের হয়ে আসবে। এমন কি চাইকি খুনের আসামিও হয়ে যেতে পার। শুধু তাই না, তোমার বাবার ট্যক্স একাউন্টেও ঘাপলা বের হতে পারে। আরো কত কি!!”
আমি ঠান্ডা চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। তারপর লম্বা দম টেনে লোকটার মুখে থুতু মারলাম।
থুতু খেয়ে ওসির মুখের ভাব খুব একটা পরিবর্তন হল না। সে শান্ত মুখে পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ থেকে থুতু মুছল। তারপর কাউকে হাতের ইশারা করল। ষণ্ডা মার্কা সেই পুলিশ অফিসার এগিয়ে এল। পানিতে ক্যব্লের ক্লিপ আগেই ফেলা ছিল। সে ব্যটারির সাথে ক্লিপ দুটো কানেক্ট করে দিল।
এই অনুভুতির কোন তুলনা হয় না।
কতক্ষণ গেল বলতে পারব না। এক সেকেন্ড? এক মিনিট? এক ঘন্টা? এক যুগ?
ওসি আবার একই প্রশ্ন করল। আবার। তারপর আবার।।
এক সময় সব কিছু আঁধার হয়ে গেল।
যখন চোখ খুললাম তখন ঘরে কেউ নেই। আমি তখনো চেয়ারের সাথে বাঁধা। কিন্তু এবার একটা কিছু পরিবর্তিত হয়েছে। আমি পরিবর্তিত হয়েছি। আমি এখন নিশাচর।
হাতে একটু চাপ প্রয়োগ করতেই হ্যন্ডকাফ ভেঙে গেল। উঠে দাঁড়িয়ে আমি ঠোঁটের রক্ত মুছলাম।
GAME ON BITCHES!!!
(চলবে)
পরের পর্বঃ Dance with the Devil in Pale Moon Light