১৭
নীলার ঘুম ভাঙ্গল, সূর্য উঠে তিন তলার ছাদে দাঁড়িয়ে। ফ্যানের বাতাসের ঝাপটায় জানালার পর্দা, আলো-ছায়া নিয়ে খেলা করছে। মোচড় দিতেই দু-জোড়া চোখ মাখামাখি।
‘ভাঙ্গল তাহলে?’
‘তুমি কখন? ডাকোনি যে?’
‘এই-তো, বসে আমার নীলা-রানিকে দেখছি।’
‘চুরি করে দেখা?...’
‘চুরিতেই তো মজা! কে যেন বলেছিলেন চুরি করে চুমু খাওয়ার মজাটাই অন্যরকম ...’
ঠোঁট ফুলিয়ে কপট রাগ দেখাল নীলা।
‘রাতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম এ-ক-টু-ও বুঝিনি।’
‘বুঝলে কি করতে?’
‘কী আ-র — ’ মিষ্টি করে নীলা একটু হাসল।
‘তোমার ভাল ঘুম হয়েছে, ব্যথা কেমন?’
‘আমায় চুমু দেবার পর থেকে ব্যথাটা বেশ কমে গেছে, তাই ঘুমটাও হয়েছে বেশ। চুম্বন থেরাপি এতটা যে কাজের জানা ছিল না।’
‘যাও শুধু দুষ্টুমি। বেলা হল উঠে পড়ো।’
নীলা উঠে প্রাতঃকৃত্য শেষে, দিপুকে ধরে বাথরুমে নিয়ে গেল।
‘একা বেরোতে চেষ্টা করবে না কিন্তু, ডা-ক-বে?’ চোখে শাসন তুলে বলল সে।
‘আ-চ্ছা-’
রান্না-ঘরে ঢুকে দেখল মঙ্গল ব্যস্ত। ডানপাশে মুখ ঘুরিয়ে বলল, ‘এই তো প্রায় শেষ। একটু অপেক্ষা করো, নিয়ে আসছি।’
‘আপনি করতে গেলেন কেন?’
‘ছিঃ কী বলো — প্রথম সকাল না? আর আমার তো অভ্যাস আছেই, মালিক উঠেছেন?’
‘হ্যাঁ।’
‘ঠিক আছে ঘরে যাও। আজ তোমার ছুটি। এখানে পরশু ঢুকতে পারবে, নয়ত ফাইন হয়ে যাবে।’ মঙ্গল হাসল।
‘একটু ঘুরে দেখি। নাকি তাতেও ফাইন হবে?’
‘তাও হবে, তবে অগ্রিম মাপ করলাম।’
‘আপনি খুব ভাল— মঙ্গল ভাই।’
‘ধন্যবাদ, সাত-সকালে পাম্প দেবার জন্য।’ হাসল মঙ্গল।
‘কী বললেন! আমি পাম্প দিচ্ছি!? এমন করলে কিন্তু আপনার সাথে কথাই বলব না!’
‘কী করব বলো— যা সত্যি তাই বললাম। আমায় পাম্প দেয়াতে আমি ফুলেছি, তাই রুটিগুলোও দেখো-না কেমন ফুলে ফুলে উঠছে। এতক্ষণ ভালমতো ফোলাতেই পারছিলাম না।’
হি হি করে নীলা হেসে উঠল।
নীলা খানিকটা সময় নিয়ে মঙ্গলের তৈরি খাবারগুলো নেড়চেড়ে দেখল। দু-একটা কৌটা খুলে আবার লাগিয়ে যথাস্থানে রেখে দিল।
১৮
তিনজন একত্রে নাশ্তা করতে বসল। দিপুকে একটু রাত-জাগাভাব দেখালেও, বেশ উৎফুল্ল। নীলা এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছিল। এই ফাঁকে
দিপু বলে বসল, ‘দেখো কোন সময় সুমি এসে হাজির হয়। নাস্তায় কম পড়বে না তো মঙ্গল ভাই?’
মঙ্গল রুটি ছিঁড়তে ছিঁড়তে দিপুর দিকে তাকিয়ে একটু হাসল আর বলল, ‘ভাইয়ের ভয় হচ্ছে না কি? সুমি আমার জ্ঞাতি বোন হলেও, উচিত কথা বলতে ছাড়ব না। কাল তো ওকে এসে ছোট-সতিনের সালাম নিতে বলেছিলাম।’
নীলা দিপুর প্লেটে একটু ঝিঙেভাজি উঠিয়ে দিতে দিতে বলল, ‘আসলে কী দিয়ে যে কি হয়ে গেল ভালমতো বুঝতেই পারলাম না।’
‘সুমি আসুক তখন বুঝবে...’ মঙ্গল ফোড়ন কাটল।
‘একদম ঝাল নেই, ভাজিটা মিষ্টি লাগছে।’
‘আপনার কাছে এখন সবই মিষ্টি লাগবে।’
দিপু আর মঙ্গল শব্দ করে হেসে উঠল। দিপু নীলার দিকে তাকাল, ও মাথা নিচু করে হাসছে।
‘মঙ্গল ভাই চা-টা বারান্দায় বসে খাব। একটু কথাও আছে।’
মঙ্গল হুইল চেয়ার ঠেলে বারান্দায় নিয়ে গেল।
‘নীলা তুমি কোথায় গেলে?’
‘ধোয়াধুয়ির কাজটা শেষ করে আসি।’
‘আরে চা তো এক সাথে খাবে?’
দিপু মঙ্গলকে ইশারায় বসতে বলে, মুখ বরাবর তাকিয়ে হেসে ফেলল। মঙ্গল কিছু বুঝল না, হাসির উত্তরে হাসতে হয়, তাই ও-ও হাসল।
গতকাল হিসাব দেখার সুযোগ হয়নি।
‘আজ দোকান খোলার দরকার নেই। একবারে দু-দিন পরেই বসি না কি?’
মঙ্গল কাপটা হাত বদল করে, মাথা বামদিকে কাত করল।
‘হারুন সাহেবের চেকের কী খবর?’
‘পেয়েছি কিন্তু তারিখ দিয়েছে নয় পাঁচ...’
‘এত দেরি?’
‘কিন্তু তার চেক-এ কোনও সমস্যা হয় না কখনও। অনেকে কম সময় নেয়, পরে আবার ফোন করে ব্যাঙ্কে জমা দিতে নিষেধ করে।’
নীলা কাপ নিয়ে বাম হাতে একটা মোড়া ঝুলাতে ঝুলাতে এসে দিপুর পাশে বসল।
‘নীলা, সুমি তো আমার দু:সম্পর্কের বোন, তোমাকে কী বলে সম্বোধন করব?’
‘কী আবার, ছোট বোন; নাম ধরেই তো ডাকছেন, সেই শিশুকাল থেকে।’
‘না, সে-তো আগে থেকেই নামধরে ডাকি, এখন আবার ভিন্ন একটা...’
‘বোনের সতিন বোন, এ পর্যন্তই।’
নীলা মঙ্গলের কথা শেষ করার সুযোগই দিল না।
‘যাক খুশি হলাম।’ মঙ্গল বেশ আত্মতৃপ্তির সঙ্গে বলল।
কিস্তি - ৮ম
কিস্তি - ১০ম
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৫৫