somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড় গল্প: দাগ অথবা কাজল (কিস্তি — ৭ম)

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১৩

‘তোমার কথা বুঝতে পারছি না। আমার সাথে কি রসিকতা করছ? না কি জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকছ?’
‘না বোঝার তো কিছু নেই— আমি রসিকতা করছি না, বা প্রলাপও বকছি না। আমি কি আপনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারি না? না আপনার ধারণা— শুধু ছেলেরাই মেয়েদের বিয়ের প্রস্তাব দেবে?
‘নীলা, ব্যাপারটা ঠিক তা নয়।’
‘তবে... আমি আপনার অযোগ্য?’
‘তা কেন, বরং বেশিই যোগ্য। কিন্তু কথা হল আমি তো বিবাহিত। জেনেশুনে তুমি এমন কথা বলছ, কেমন একটু অস্বাভাবিক নয়? আমার বয়সটাও তো আর কম হল না? তোমার মাত্র জীবন শুরু।’
‘বিবাহিত বলছেন? সমাধানও আছে... যে কি না ফিরতেই চায় না তার আবার!... আর সম্পর্ক কি কেবল বয়সের ওপর নির্ভর করে? সহমর্মিতা, চাওয়া-পাওয়া, চিন্তার সাদৃশ্য এসব?’ নীলা কাটা-কাটাভাবে বলল।
‘কিন্তু নীলা এসব তো বয়সের পার্থক্যের কারণে ভিন্ন হয়ে যায়।’
‘দিপু ভাই, আপনাকে আমি যতটুকু চিনেছি, শারীরিক বয়স একটু বেশি হলেও, মানসিক বয়স তা নয়। আমিও ছোট্ট খুকিটি নই? আর আপনাকে আমার কাছে একটুও বয়স্ক মনে হয় না।’
দিপুর বয়স আটত্রিশ কিন্তু মনে হয় না। তার সজারুর কাঁটার মতো চুলগুলো, একটু বড় হলে কপালের ওপর এলিয়ে থাকে। এ ধরনের চুল সহজে ঝরে না। তাই মূলত— চুলগুলোই এই সব মানুষদের বয়সকে ঠেকিয়ে রাখে। ওর মুখটাও আবার একটু তৈলাক্ত ত্বকের, এরা ভাগ্যবানই বটে। চেহারায় বয়সের ভাজগুলো বসতে, প্রায়ই বেকায়দায় পড়ে যায়, তেলের জন্য পিছলে যায়।
‘নীলা তোমার-আমার এমন কিছুই ঘটেনি যে, আমাদের বিয়ে পর্যন্ত ভাবতে হতে পারে। আসলে কী হয়েছে, নীলা একটু খুলে বলবে?’
‘খুলে বলার কী আছে। আপনাকে বিয়ে করতে চাই বাস— আর কিছু না। বাবা-মাকে বলেছি, আজকে বাড়িতে হুজুর আসবে, বিয়ে পড়াতে, নয় তো জানাজা পড়াতে, আপনাকেও একই কথা বলছি।’
‘কী পাগলামি হচ্ছে; তুমি জানো! এখন বিয়ে করলে জেলে যেতে হতে পারে?’
‘জানি একবছর জেল আর দশ হাজার টাকা জরিমানা। দিতে পারবেন না!?’
‘মাথা থেকে এসব ভূত নামাও, লোকজন কী বলবে? আর তোমার ভাবি কি সহজে ছেড়ে দেবে মনে করছ?’
‘লোকে বলবে মানে, আমি কি অবৈধ কিছু করছি? আমি আপনার দ্বিতীয় স্ত্রী হতে ইচ্ছা প্রকাশ করছি। আর আমি দেখতে চাই, যে মহিলা অসুস্থ স্বামীর কোনও খোঁজ নেয় না, সে আরও কতটুকু নাজেহাল করতে পারে, আমি এর শেষ দেখতে চাই।’
‘একটু শান্ত হও, নিশ্চয় তোমার মনটা স্বাভাবিক নেই।’
‘হ্যাঁ দিপু ভাই...’
একটু সময় নীরব থাকল নীলা, তারপর বড় একটা শ্বাস ফেলে বলল, ‘আজ ভাবি আমাকে যাচ্ছে-তাই গালাগাল করেছে, ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়। আমি এর প্রতিশোধ নেবই।’
এই বলে নীলা হুহু করে কাঁদতে লাগল।
‘শান্ত হও লক্ষ্মী-মেয়ের মতো এখন ঘুমাও। খুব সকালে চলে এসো, তোমার সঙ্গে কথা হবে।’
‘আপনি কি আমাকে প্রত্যাখ্যান করছেন? ঠিক আছে পারলে আমার জানাজায় আসবেন।’ নীলা ফোন কেটে দিল।

দরজা বন্ধ, পড়ার টেবিলে বসে কথা বলছিল। বাম হাতে ফোন মুঠো করে, জোরে জোরে ঠুকতে লাগল টেবিলে। দু-চোখ বেয়ে অঝরে বৃষ্টির ধারা নামছে। ডান হাতের তালু দিয়ে বার বার চোখ মুছছিল, আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে, নাক টানছিল। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল।
‘ফোন কেটো না নীলা, আমার কথা শোনো। রাগের মাথায় আর ঝোঁকে পড়ে কিছু করলে ভাল হয় না।’
‘আমি তো আমার ভাল চাই না। আমার ধ্বংস চাই, নিজেকে পুড়িয়ে দিতে চাই, দেখতে চাই— আমি কতটুকু জ্বলতে পারি, সহ্য করতে পারি। তাতেই যে আমার আনন্দ!...’
‘কি বলব মাথা ঘুরছে আমার।’
‘দেখুন, আমি তো বলনি ভাবিকে তালাক দিতে, দিলে দিবেন, নয়ত আমি তাকে বড় বোন হিসাবে মেনে নেব। আপনার সমস্যা থাকার কথা নয়।’
‘নীলা তুমি একবার বলছ— সুমিকে পরাজিত করবে, প্রতিশোধ নেবে, আবার বলছ, বড় বোন হিসাবে মেনে নেবে। কেমন উল্টোপাল্টা বকছ...
‘না... কাউকে পরাজিত করতে চাইলে, তাকে চিনতে হয়, জানতে হয়। জানতে চাইলে বুঝতে হয়, মানুষকে বোঝার একমাত্র উপায় তাকে ভালবাসা। আমি প্রতিশোধ চাই; তবে আমার মতো করে।’
‘ঠিক আছে, আমি তো আর তোমার কাছে যেতে পারব না। কাকা-কাকিসহ তুমি আসো, দেখি আলাপ করে কী করা যায়।’

নীলাদের বাড়িতে প্রতিবেশীদের দু-চারজন এসে পড়েছে। নীলার মা-ই তাদের ডেকে এনেছেন। নীলাকে অনেক করে বোঝানোর পরও, একই কথায় গোঁ ধরে রইল। বাবা সারাঘর পায়চারি করছেন, আর কিছুক্ষণ পরপর জগ থেকে পানি ঢেলে খাচ্ছেন। কারও সাথে কোনও কথা বলছেন না। মাঝেমাঝে সোফায় গিয়ে বসছেন, আর হেলান দিয়ে উদাসভাবে দেয়ালঘড়ি দেখছেন।
হঠাৎ তার মনে হল ‘ঘড়িটার সবগুলো কাঁটা সমান হলে, এমন কি ক্ষতি হত? যত্ত সব! এই পিন্টু কোথায় গেছিস?’
‘এই-তো বাবা এখানেই।’
‘যা বসে আছিস কেন? কাকে কাকে ধরে আনবি আন।’
‘কাকে আনব বাবা?’
কটমট করে তাকানোয় পিন্টু সরে গেল, সেখান থেকে।
‘আচ্ছা নীলার হুজুর আনতে কি আমিই যাব। আমাকে একটা টুপি দাও।’
কাউকে উদ্দেশ না করেই কথাগুলো বললেন।
‘পিন্টু?’
‘মা...’
‘সোহেলকে সাথে নিয়ে হুজুরকে ডেকে আন। আর আসার সময় হুজুরকে বুঝিয়ে বলবি ঘটনাটা। উনি এসে যেন, নীলাকে বোঝায়— এভাবে বিয়ে করা ধর্মীয় মতে ঠিক নয়।’
‘মা, তোমার ফতোয়া কি হুজুর শুনবেন? বিয়ে হলে তো উনি টাকা পাবেন।’
‘যা বলছি তাই কর...’
নীলা গোসল সেরে ওর রুমে। বসেই ডাক দিল, ‘ছবি কাকি একটু আসবেন?’
ছবি কাকি নীলার মায়ের মুখ বরাবর কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। নীলার মায়ের মুখ যেন বলছে- ‘যান আপনারাই তো এখন নায়িকা, আর আমি তো কুটনি-বুড়ি।
‘যান শুনে আসুন ভাবি।’

নীলা ও ছবি কাকি গুঁজ হয়ে বসে, কী সব ফুসুর-ফাসুর করছে। হঠাৎ হঠাৎ নীলার কর্কশ একরোখা কিছু শব্দ শোনা যাচ্ছে, পরিষ্কার নয়।

‘ভাবি, নীলাকে অনেক বোঝাবার চেষ্টা করলাম, কাজ হল না। বেশি কিছু করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। ওকে তো ভাবি বেশ শান্ত বলেই মনে হত, এখন... আসলে সহজ-মানুষ বেঁকে গেলে সোজা করা কঠিন। আপনাদের যত খারাপই লাগুক, মনে হয় ওকে বাধা দেয়া ঠিক হবে না।’
নীলার মা এতক্ষণ ছবি ভাবির হাত ধরে ছিলেন। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হাতটা ছেড়ে দিলেন।

১৪

দিপুর বাড়িতে খবর দেয়া হয়েছে। মঙ্গল দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিল। ফোনে সুমিকে খুব কড়া মেজাজে বলল, ‘তুমি তো সব ব্যাপারেই বেশি বোঝো। এবার ঠেলা সামলাও। তোমার দিপুর স্বাভাবিক সম্পর্ক নেই, তো কী হয়েছে, এ-বাড়িতে থাকতে কি তোমাকে ভূতে কিলায়? অনেক পরিবারেই এমন হয়, আবার ঠিকও হয়ে যায়। এক সাথে না থাকলে সম্পর্ক থাকে? নতুন করে হয়? কথায় কথায় বাপের বাড়ি গিয়ে বসে থাকো। স্বামীটা অসুস্থ তুমি নেই— মানুষের চক্ষু-লজ্জা বলেও তো কিছু আছে না কি?’
‘তুমিও ওদের দলে ভিড়েছ, বেশ তো...’
‘দলে ভেরা মানে? ভাই কি খারাপ লোক? তোমাকে মার-ধোর তো আর করে না। অন্যঘরে থাকতে; থাকতেই, এখন এসব কী হচ্ছে? ঘরে বউ না থাকলে, বিয়ে করবে এটাই তো...’
সুমি বাধা দিয়ে বলল, ‘জানি জানি, আমি সব জানি, ঐ বজ্জাত মেয়েকে আমি ভাল করেই চিনি। আমি আসছি... বিয়ের মজা দেখাতে আসছি।’
কিস্তি - ৮মকিস্তি - ৬ষ্ঠ
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৪৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন পড়বেন, ফিকাহ জানবেন ও মানবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০



সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×