somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজগর আলির বাড়ি ফেরা

০১ লা মে, ২০১৬ বিকাল ৩:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজগর আলি এক ছেলে-মেয়ে নিয়ে স্ত্রীসহ থাকেন নরসিংদীতে অনেক দিন। এক মাত্র ছোট ভাই সঙ্গে আছে সেই কলেজ জীবন থেকে। বাবা মারা গেছেন স্কুলে পড়া অবস্থায়। ছাত্র হিসেবে মাঝারি মানের ছিলেন—বাবা তেমন পড়া-লেখা করতে না পাড়লেও, সবার কাছে তিনি বুদ্ধিমান বলেই পরিচিত ছিলেন—তার এই বিশেষ গুণটি পেয়েছিল তিনটি সন্তানই। যত দিন বাবা জীবিত ছিলেন, সন্তানদের শিক্ষার ব্যাপারে যথেষ্ট মনোযোগী ছিলেন। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর আজগর আলি পিতার স্বপ্নকে ভাসিয়ে দিয়ে দু:সম্পর্কের এক মামার হাত ধরে গ্রাম ছাড়লেন—যিনি একটা এলুমিনিয়াম হাঁড়িকুঁড়ি তৈরির কারখানায় কাজ করতেন। ছোট্ট একটা কাজও জুটে গেল। মা-কে চিঠি লিখলেন ‘...বেলা আর মোনাকে বলবে ঠিক মতো যেন পড়া-লেখা করে, টাকার জন্য চিন্তা কোরো না, যত লাগে যেভাবেই হোক আমি জোগাড় করে পাঠাব। স্যারকে বলে ওভার টাইম করার সুযোগ করে ফেলেছি। প্রথমে রাজিই হতে চায়নি—বলে তোর বয়স তো পনেরোই হয়েছে কি না সন্দেহ আমার। আমি হাতে-পায়ে ধরে বললাম, না হলে ভাই-বোন দুটোর পড়া-লেখা বন্ধ হয়ে যাবে, আর একটা কথা বলেছি মা, আমায় ক্ষমা কোরো—বলেছি মা হাঁপানি রোগী, তাই অন্যের বাড়িতে খুব বেশি কাজ করতে পারে না। বেলা আর মোনা মানুষ হলে আমি তখন এই চাকরি ছেড়ে দেব, বড় অফিসারের ভাই ডেকচি- শ্রমিক খারাপ শোনায় না? আর মোনাই কি এই ছোট চাকরি করতে দেবে? গ্রামে ফিরে একটা চা এর দোকান দেব, যাতে সবার কাছে ভাই-বোনের কৃতিত্বের কথা গল্প করতে পারি। তুমি পান খাওয়া ধরবে—পান খাবে আর মুখ ভরে গল্প করবে, যারা পান চাইতে তোমার কাছে আসবে। ভাল হবে না মা?...’

মা-ছেলের মিলিত শ্রমের ফল স্বরূপ সংসারের অভাব কমতে শুরু করল—তাই একটা বউ এনে ঝুলিয়ে দিল আত্মীয়রা। কিছু দিন গ্রামে মা এর সঙ্গে আবার কিছু দিন শহরে, এভাবে সুখেই দিন কাটতে লাগল। কিন্তু সেটা খুব বেশি দিন সইল না কপালে—মা-টাও কিছু না বুঝতে দিয়েই বিদায় নিলেন। দেখতে দেখতে আট বছর কেটে গেছে। গ্রামে আর ফেরা হয়নি—যার জন্য ফেরা সে-ই নেই...

বোনটার বিয়ে মা দেখে গিয়েছিলেন। ভাল ঘরেই বিয়ে দিতে পেরেছিলেন—ছেলে কৃষি কর্মকর্তা। বেলা একটা এনজিওতে কর্মরত, থাকে বগুড়া শহরে। ছোট ভাইটা তিন বছর হয় পড়ালেখা শেষ করে একটা চাকুরী জোগাড় করেছে, কিন্তু খুব সুবিধের নয়। ভাল ছাত্র ছিল বলে সবাই খুব আশা করেছিল। তবু আশায় বুক বাঁধে— মোনাকে সাহস দেন। সেও অবিরাম ভাল একটা পদের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে।

বছর প্রায় হয়ে এল নতুন বৌকে নিয়ে দু ভাই মিলেমিশে বড় একটা বাসা ভাড়া নিয়ে আছে। ছোট ভাই অল্প কিছু খরচ দেয়—বৌটা যথেষ্ট ভাল বলে বেশ সুখেই সংসার সামলায়। ভাইটা নতুন সংসার পাতবে—কিন্তু রোজগার এখনও তেমন নয়।

আজগর আলির ছেলে-মেয়ে দুটোর মাথা খুব ভাল। প্রতি বৎসরই ভাল ফল করে এসেছে। ছেলেটা আইএসসিতে ভাল নাম্বার নিয়ে পাশ করায়, সবাই ধরেই নিয়েছে ভাল এক জায়গায় ভর্তি হতে পারবে। তিতাস ভর্তির জন্য মন দিয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকল।

হঠাৎ একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল আজগর আলির জীবনে। তারিখটা ১৪ই জানুয়ারি ২০১৫ অবরোধ চলছে সারাদেশে। কারখানায় যাচ্ছিলেন ঝুঁকি সত্ত্বেও। রাস্তায় কয়টা ছেলে আচমকা চলন্ত বাসে পেট্রোল-বোমা ছুঁড়ে মারে। মুহূর্তে জ্বলে ওঠে সব। সবাই দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে, যারা সাহসী, এগিয়ে যায় বাঁচানোর জন্য। আজগর আলি কিছুদূর দৌড়ে চলে যান—ধরে ফেলেন একজনকে। মুখ বরাবর কয়টা ঘুসি মারলেন আজগর আলি। সবাই ব্যস্ত আহতদের নিয়ে। ছেলেটির সঙ্গীগুলো এগিয়ে এল। ওদের একজন বলল ‘যে হাত দিয়া ঘুসি দিছে, ওইটা কাইটা নিয়া আয়।’ একজন ব্যাগের ভেতর থেকে একটা চাপাতি বের করল এবং ডান কনুইয়ের নিচ থেকে কেটে নিয়ে গেল...


কিছু দিন হাসপাতালে থাকার পর একটু সেরে ওঠার পরই অফিসে গেলেন। সহকর্মীরা গোল হয়ে ঘিরে ধরল—সমবেদনা জানাল, সাহসের প্রশংসা করল। একজন বলল ‘আজকাল চোখ বুজে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ—আগ বাড়িয়ে কে বিপদে পড়তে যাবে! আমি ভাই ওসবে নেই...’ কেউ কেউ মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিল। সারোয়ার বলল ‘যারা পুড়ে মরল তারা কার বাড়া ভাতে ছাই দিতে গিয়েছিল? বলেন তো শুনি! আজ আপনি গা বাঁচাবেন কাল বিপদে পরলে অন্য কেউ গা বাঁচানোর চেষ্টা করবে, তখন দেখবেন কেমন লাগে...’
‘সারোয়ার ভাই ঠিক কথা— আমরা হিংস্র হায়নাদলের সামনে সবাই—কোনও কারণ ছাড়াই ওরা যাকে খুশি, সুবিধা বুঝে বেছে নিতে পারে। সবটাই ওদের মর্জির ওপর।’
সারাদিন এইসব গল্প-গুজব করেই কাটালেন আজগর আলি। ছুটির আগে ম্যানেজার সাহেব ডেকে পাঠালেন। ভাবলেন কোনও এক জায়গায় হয়ত বসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন—এখন সেটাই জানানোর জন্য ডেকেছেন। দিনে বেশ কয়েকবার সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করেছিলেন ‘যদি গোডাউনে সুবিধাজনক কোনও কাজে লাগিয়ে দেয়, তাহলে অন্তত একটা গতি হয়ে যেত। ভাই তোমরা একটু বুঝিয়ে বল-না।’
‘আজগর আপনি পরশু মানে ১৯ তারিখে একবার আসুন।’
‘স্যার কিছু কি করতে পারলেন? ’
‘বলেছি যখন... আসুন তো দেখি তখন জানাব। নিশ্চিন্ত মনে বাড়ি চলে যান, বিশ্রাম নিন।’
বিদায় নেয় আজগর আলি।

বাসায় ফিরে স্ত্রীকে আশ্বস্ত করলেন আজগর আলি।
‘তিতাসের যত দিন পড়া-লেখা শেষ না হয় একটু কষ্ট করো। আশা করি তাড়াতাড়ি একটা রাস্তা হয়েই যাবে।’
‘তাই যেন হয়... পানি আছে তো? গোসল করব।’

একটু সকাল সকাল খানিকটা ফুরফুরে মেজাজে বের হলেন। ১৯ তারিখটা যেন আসতেই চাচ্ছিল না—অথচ মাঝে মাত্র একটি দিন গেছে। কারখানায় না ঢুকে প্রথমেই গেলেন অফিসে। বেশিক্ষণ বসতে হয়নি, স্যার ডেকে পাঠালেন। রুমে ঢুকে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন, যেন যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত। ভেতরে ভেতরে দারুণ উত্তেজিত—কোথায় না কোথায় যে দেয়!
‘আপনার কথা আমরা কিছুতেই বিস্মৃত হব না—কিন্তু কী আর করা, সব কিছুই নির্ধারিত...’ হাতে একটা কাগজের টুকরো দিলেন।
‘স্যার কী বলছেন! বু-ঝ-তে...’ চোখ দুটো পিটপিট করতে লাগল।
‘দুঃখিত,কিছুই করার নেই। মালিক পক্ষের সিদ্ধান্ত...’
‘আমি একবার দেখা করে... আমি খুব ভাল চা বানাতে পারি... স্যারের টেবিল মোছা...র...’ তার গলা কাঁপতে লাগল, হাত থেকে চেক পড়ে গেল। এদিক সেদিক তাকাতে লাগলেন—চেয়ার, জানালার কাচ, দরজা... বৈদ্যুতিক সুইচকে মনে হল ওরা সরব হবে এবং তার হয়ে কথা বলবে...
চোখ দুটো ডুবে গেল—ঠোঁটে দাঁত চেপে ধরলেন—লোনা স্বাদে মুখ ভরে গেল।
ছেলেকে কাকার কাছে রেখে মেয়েকে নিয়ে গ্রামে ফিরে গেলেন। মেয়েকে উপজেলা সদর কলেজে ভর্তি করে দিলেন। আসার পূর্বে ভাই-বৌ বলল ‘আপনার সংসার আপনারই থাকবে—তিতাস তো রইলই।’
‘আমিও চেষ্টা করছি, কোথাও একটা কিছুর ব্যবস্থা করা যায় কি না।’
‘হ্যাঁ দেখ একটু সিরিয়াস ভাবেই দেখরে...’
‘আপনি চিন্তা করবেন না। আমি আছি তো... আর এসব টেনে নেয়ার কোনও মানে হয় না। একটা কিছু ব্যবস্থা হলেই তো আবার আসতে হবে। এক দিকে ভালই হল, একটু বেড়িয়ে আসা হল। অনেক দিন হয়, কোথাও যাওয়া হয় না—বুবুর কাছে কয়দিন ঘুরে আসুন—সেই ফাঁকে আমি একটা কাজ না-হয় জুটিয়ে ফেলি। আমার রোজগার বেশি হলে তো আর যেতে দিতাম না।’
ভাইয়ের কথায় ভরসা পেয়ে বলেন ‘তোরা থাকতে আমার কীসের চিন্তা, আমার পরিপূর্ণ আস্থা আছে তোর ওপর।’

এক বৎসর পাঁচ মাস কেটে গেছে। কোনও খবর আসেনি—ভাই আজকাল ফোনও তেমন একটা করে না। শুনেছেন ভাল একটা চাকরি হয়েছে, নতুন চাকরি অনেক দায়িত্ব হয়ত সময় হয়ে ওঠে না। মোনার বন্ধুর সঙ্গে কিছু দিন আগে দেখা হয়েছিল। জানাল একটা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে ওর জয়েন করার সম্ভাবনা আছে। শুনে বললেন ‘আমি জানতাম আমার মোনা অনেক বড় হবে। কত ভাল রেজাল্ট!’

গ্রামের পরিবেশে অনেকটাই মিশে গেছেন আজগর আলি। একটা মুদি দোকান দিয়েছেন—রানি কলেজ শেষে সপ্তাহে দুদিন ভ্যান বোঝাই করে সদাই করে ফেরে। বিকেলে গ্রামের কোচিং সেন্টারে এইট-নাইনের ছাত্রদের ইংরেজি পড়ায়—পড়ার খরচ নিজেই জোগাড় করে। কিন্তু তার মাঝে মাঝে মনে হয়, এখানে বড্ড আগেই এসে পড়েছেন—আরও কিছু দিন চাকরি করতে পারলে সন্তানদের এত কষ্ট করতে হত না। ছেলেটাও বেশি দিন কাকার কাছে থাকেনি—বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর মেসে গিয়ে উঠেছে। মেসের জীবন সম্পর্কে তার নিজের অভিজ্ঞতা মনে করে বুক ভারি হয়ে ওঠে। তারপর দুটো ছাত্রও না কি পড়ায়। দোকানের খুঁটিতে পিঠ ঠেকিয়ে, দোয়েলের পোকা ধরে গাছের ডালে আছড়িয়ে মারা দেখছিলেন আজগর আলি। ‘বাবা তোমার চা নাও।’
‘কত করে বলি চা বানানো বাদ দে, তা না...’
‘জন্মের পর থেকে যাকে দেখে আসছি মগে করে চা খেতে, সে না কি চা বাদ দেবে! আমার বাবা মানেই তো ঘণ্টায় ঘণ্টায় চা...’
আদরের মেয়েটাকে দেখে মাঝে মাঝে বুকটা হু হু করে ওঠে ‘কয়দিন পর তো মেয়েটা পরের ঘরে চলেই যাবে। এই সামান্য কয়টা দিনও ঠিক মতো রাখতে পারলাম না...’

একটা ফোন আজগর আলির পরিবারে খুশির বন্যা নিয়ে এল। ভাইয়ের সেই চাকরিটা হয়ে গেল—গাড়ি, ফ্ল্যাট নানা সুযোগ-সুবিধাসহ মোটা অঙ্কের বেতন। দোকানে বসে সবাইকে খুশির খবরটা দিতে লাগলেন। স্ত্রীকে বললেন ‘এবার তাহলে দেবরের গাড়িতে করে যাবে! আমায় মানাবে তো... কলপ আছে না... তুমি দেখছি সুন্দর হয়ে গেছো খুশিতে, না কি ডাঁটে... হা হা হা...’

একদিন সকালের নাশতা করে মাত্রই দোকানে এসে বসেছেন, আর অমনি ফোন বেজে উঠল।
‘দাদা আমি রাজশাহী এসেছিলাম অফিসের কাজে, ডাক বাংলোয় উঠেছি। আপনি বিকেলের মধ্যেই চলে আসুন, আপনাকে নিয়ে ফিরব।’
স্ত্রীকে বললেন ‘বড় হাঁসটা জবাই করে, ভাল কিছু রান্না কোরো, ও হাঁসের মাংস খুব পছন্দ করত। বাড়িটাও পরিষ্কার করো।’
‘সে তো পরিষ্কার আছেই।’
‘আরও ভাল করে করো, সাথে ড্রাইভার থাকবে তো, আরও কেউ থাকতে পারে। ওদের সামনে মোনা যেন লজ্জা না পায়।’

খুঁজে পেতে কোনও কষ্ট হয়নি। তাকেও স্যার বলে সসম্মানে ছোট ভাইয়ের কাছে নিয়ে গেছে। ভাইকে প্রথমে দেখে কেমন একটু জড়সড় হয়ে গেলেন। মোনা সালাম দিয়ে এগিয়ে এল, বাড়ির সকলের খবর জানতে চাইল। ভাবলেন নাহ আমার মোনা সেই আগের মতোই আছে।

গাড়িতে তেমন কোনও কথা হল না দুই ভাইয়ের। মোনা ল্যাপটপ খুলে বসেছে, কত সময়ের মূল্য তার কাছে। এমনি এমনি কি আর এত বড় দায়িত্ব পেয়েছে—ভাবলেন আজগর আলি। এতক্ষণ ধান ক্ষেত দেখছিলেন আর ভাবছিলেন রাজার বেশে ছোট ভাইকে নিয়ে কীভাবে গ্রামে ফিরবেন। কিন্তু হঠাৎ খেয়াল হল, গাড়ি যেন পূর্ব দিকে যাত্রা করেছে। তাকালেন ভাইয়ের দিকে, না সে গভীর মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে। ড্রাইভার আছে, তাই চিন্তা করলেন চুপ করে থাকবেন—‘কী বলতে কী বলব যদি ভাই বিব্রত হয়।’

নতুন ফ্ল্যাট ঘুরিয়ে দেখাল। সব সুন্দর করে সাজানো গোছানো, চকচক করছে। তিনি একটি করে ধরেন আর ভাইকে বলেন ‘খুব দামি জিনিস... ’ গর্বের হাসি দেন। এত ‘বড় বাসায় তো ভয় করবে রে!’
‘দাদা চলেন খেয়ে আসি।’
‘আমার বাবাটাকে যে দেখছি না, বৌ কোথায় গেল, এত বড় বাসায় দেখা পাওয়াই তো মুশকিল!’
‘দাদা ওরা একটু ওর নানুর কাছে গেছে কাল বিকেলে ফিরবে—ফ্রেশ হয়ে নিন, কাছে একটা ভাল রেস্টুরেন্ট আছে।’

নতুন ফ্ল্যাটে কোনও কিছুর কমতি নেই আর আজগর আলির ফার্নিচারগুলো সেখানে মানাবেও না। তাই পরের দিন সূর্য ওঠার পূর্বেই একটা ট্রাক এনে সব পুরনো আমলের ফার্নিচারগুলো তোলা হল।
‘দুই মাস ধরে অযথা ভাড়া দিতে হচ্ছে পুরনো বাসার।’
আজগর আলি লজ্জা পেলেন—তার খাট-টেবিল রাখার জন্য ভাই টাকা গুনে যাচ্ছে, পয়সা খরচ করে সব ঢাকায় নিয়ে এসেছে। ছোট ভাই-ই লোক দিয়ে সব করাল।তাকে কোনও কিছু ছুঁতেও হয়নি, এমন কি ভাড়াটাও দিয়ে দিল।

বাড়ির সামনে যখন ট্রাক থামল, মেয়েটা বেড়িয়ে এল সবার আগে।’
‘তুমি কোথায় ছিলে! হঠাৎ ঢাকা গেলে কেন?’
আজগর আলি কোনও জবাব না দিয়ে ট্রাকের ওপর থেকে নামার চেষ্টা করেন। মাঝ পথে সোফার ফোম পড়ে গেলে, ওপরে গিয়ে বসে থাকেন যেন আর কিছু উড়ে না যায়—দুটো শেষ পর্যন্ত আর খুঁজেই পাওয়া যায়নি। সারা পথ ধুলো-বালি খেয়ে সাদা হয়ে আছেন। কিছু লেংটা ছেলে ট্রাকটি ঘিরে ধরেছে। দুপুর গড়িয়েছে অনেকক্ষণ।
‘হুলো মারামারি করে কাদা-কালি মেখে পরাজিত চেহারায় ঘরে ফিরে যেমন কাঁচুমাচু হয়ে থাকে, বাবা তোমাকে লাগছে ঠিক তেমন—ঘরে যাও আয়না দিয়ে একটু দেখ গে, হি হি হি...’
‘মা-রে লোকজন ডাক দিয়ে এগুলো নামা। ভাড়া, বকসিস সবই তোর কাকা দিয়ে দিয়েছে। আমি একটু ঘুমাতে গেলাম।’
কোনও দিকে না তাকিয়ে মাথা নিচু করে হেঁটে সোজা বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলেন আজগর আলি।


আহা রুবন
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ বিকাল ৩:১১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×