অলিম্পিক গেমস চলছে, সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে হোস্ট ব্রাজিলের রিও শহরের দিকে। সেই অলিম্পিক ব্রাজিলে না হয়ে আজ যদি ঢাকা এবং বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গায় হোত, তবে ব্যাপারখানা কেমন হোত? সেটাই ভাবতে চেষ্টা করছি.......
সুইমিংঃ
সুইমিং কম্পিটিশনের জন্য ঢাকায় কোন জায়গা খুজে পাওয়া যেতো না, কারণ ঢাকার প্রায় সব খাল ইতিমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে। শেষমেষ ইভেন্ট আয়োজন করা হোত বুড়িগঙ্গায়। বুড়িগঙ্গার পানির ঘনত্ব অন্য বেশিরভাগ জলাশয়ের পানির ঘনত্বের থেকে বেশি বিধায়, সেখানে ভেসে থাকা এবং সাতার কাটা সহজ। তাই সে কম্পিটিশনে স্বর্ণ বিজয়ী মাইকেল ফেলপস (রেকর্ডধারী মার্কিন সাতারু) প্রতিযোগিতা শেষে বুড়িগঙ্গা নদীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতেন।
সারা গায়ে চুলকানির চোটে সে প্রশংসা উবে যেতো অল্পসময়ের মাঝেই। দেশে ফেরত যাবার সময় ঢাকা টু আমেরিকা- সারাটা রাস্তা এক হাতে মেডেল ধরে রেখে আরেক হাতে শরীরের নানা জায়গা চুলকাতে চুলকাতে দেশে ফেরত যেতেন তিনি।
রোড সাইক্লিংঃ
ঢাকার রাস্তায় 'রোড সাইক্লিং' আয়োজন করা হোত। রুটঃ মগবাজার-মালিবাগ- শান্তিনগর-কাকরাইল-বিজয়নগর-প্রেসক্লাব হয়ে ঘুরে আবার মগবাজার.... কিন্তু শান্তিনগর পার হতে না হতেই ভাঙ্গাচোরা রাস্তার কারণে প্রতিযোগীদের সাইকেলের চাক্কা যেতো খুলে। উপায় না দেখে একেকজন সাইকেল কাধে নিয়ে দৌড়ানো শুরু করতো। প্রেসক্লাবের সামনে এসে প্রতিযোগীরা আবার আটকে যেতো মানববন্ধনের খপ্পরে। কোনমতে সে মানববন্ধনের ধাক্কা পার হয়ে যতক্ষণে তারা মগবাজার এসে পৌছেছে, ততক্ষণে সন্ধ্যা সাতটা...
জিমন্যাস্টিকঃ
জিমন্যাস্টিক খেলোয়াড়দের জার্সি সরবরাহ করা হোত বঙ্গবাজার থেকে। ফলে শারীরিক নানা কসরতের ফাকে ফাকে ট্রাউজার 'ছিড়া' এবং 'ফাটা'র আওয়াজ শোনা যেতে থাকতো ক্রমাগত। পদকজয়ী খেলোয়াড়েরা সেই মুমূর্ষু জামাকাপড় সহই ছবি তোলার জন্য পোজ দিতেন- কি আর করা !
বীচ ভলিবলঃ
বীচ ভলিবল খেলার আয়োজন করা হোত কক্সবাজারে। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের উদ্যোগে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতকে এই অলিম্পিকের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার জন্য গ্রহণ করা হোত এক মহাপরিকল্পনা। তারই অংশ হিসেবে 'সৈকতটা যে কত বড়' সেটা বোঝানোর জন্য ভলিবলে অংশ নেয়া দুটি দলের একটিকে বীচের একপ্রান্ত নাজিরার টেকে স্থাপন করে আরেক দলকে রাখা হোত টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে নিয়ে- যেখানে বীচটা শেষ হয়েছে। পৃথিবীবাসী অবাক বিস্ময়ে উপভোগ করতো প্রায় ১২০ কি.মি. ব্যবধানে স্থাপিত দুটি দলের মধ্যকার পৃথিবীর দীর্ঘতম বীচ ভলিবল। খুব স্বাভাবিকভাবেই খেলা একটুও এগুতো না। শেষমেষ দেখা যেতো- কে বা কারা টেকনাফের দলটাকে ট্রলারে তুলে মালয়েশিয়া পাচার করে দিয়েছে......
রেসলিংঃ
গ্রাম-বাংলার কুস্তি এবং বলিখেলার ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান দেখিয়ে 'রেসলিং' খেলার আয়োজন করা হোত বাংলার নিভৃত কোন গ্রামে। রঙ বেরঙ্গের বেলুন আর শান্তির পায়রা উড়িয়ে খেলার উদ্বোধন ঘোষণা করতেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান (এলাকায় দুর্নীতিবাজ হিসেবে যার কিঞ্চিত খ্যাতি আছে)। এরপর আয়োজন করা হোত প্রীতি ম্যাচের। আয়োজিত প্রীতি ম্যাচটিতে পরবর্তী ইলেকশনের কথা মাথায় রেখে মানুষের মন ভোলানোর জন্য নিজেই নেমে পড়তেন আলোচিত সে চেয়ারম্যান। তার প্রতিপক্ষ বাছাই করা হোত উতসুক জনতার ভীড় থেকে। প্রতিপক্ষ জনৈক মজনু শাহ বিড়বিড় করতে করতে "আজকা পাইছি অরে, গত চাইর বচ্ছরের অর সব চুরি চামারী আইজকা একদিনে বাইর করমু। ঘুষায় যদি অর চাপা খুইল্যা না আনি, তয় আমার নাম মজনু শাহ না..."-- ইত্যাদি বলে খেলার মাঠে নেমে চেয়ারম্যানকে পিটিয়ে আধমরা করতেন। মুমূর্ষু চেয়ারম্যানই আবার খেলা শেষে রক্তাক্ত চেহারায়, হাসিমুখে মজনু শাহের হাতে তুলে দিতেন বিজয়ীর ক্রেস্ট।
এথলেটিক্সঃ
দৌড়ে অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় উসাইন বোল্টকে হারিয়ে স্বর্ণপদক জয় করে নিতেন জনৈক বঙ্গসন্তান নাজমুল। স্বর্ণপদক জয়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি কৃতজ্ঞতা জানাতেন তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু বান্ধবদের। সাথে বিশেষভাবে উল্লেখ করেন নীলখেতের বিরিয়ানীর কথা। তার ভাষায়ঃ "আমার পরিবারের পাশাপাশি নীলক্ষেতের বিরিয়ানীর কাছেও আমি গভীরভাবে ঋণী। সেদিন বিরিয়ানী খেয়ে দোকান থেকে বের হবার পরপরই আমার পেটে সমস্যা শুরু হয়। ঢাকা শহরের যানজটের কথা চিন্তা করেই আমি সিএনজি বা বাসে উঠার রিস্ক নেই নি, বরং এক দৌড়ে চলে এসেছিলাম বাসায়। আর নীলখেত থেকে বাসায় আসার পথেই সেদিন অলিম্পিকের দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম হই আমি।"
এ ঘটনার পর উসাইন বোল্ট নিজেও নীলক্ষেতের বিরিয়ানী খেয়ে দেখার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেতেন বলে শোনা যেতো!
গলফঃ
গলফ খেলায় বিজয়ী প্রতিযোগী স্বর্ণপদক নিতে গেলে তাকে পদক না দিয়ে ফেরত পাঠানো হোত। পদক না দেওয়ার কারণ হিসেবে বেচারাকে বলা হোত "আপনার গর্তগুলো বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত না হওয়ার কারণে অবৈধ হয়ে গেছে। সুতরাং আপনি কোন পদক পাবেন না...."
ওয়েট লিফটিংঃ
ওয়েট লিফটিং এর কতিপয় অসাধু প্রতিযোগী ধোলাইখাল থেকে নকল টিনের ওজন-চাকতি বানিয়ে নিয়ে আসতেন। সেগুলো দেখতে হবহু আসলের মত হলেও ওজনে হতো পাখির পালকের মত হালকা। শেষমেষ ওজন তোলার জান-বের-হয়ে যাওয়া সে ভঙ্গিটুকু অসামান্য দক্ষতায় অভিনয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলে স্বর্ণ/ রৌপ্য/ ব্রোঞ্জ জিতে নিতেন অসাধু ওয়েট-লিফটারগণ। ফাস হওয়া প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দেওয়া জিপিএ ফাইভ প্রাপ্তদের মতই ভি সাইন দেখিয়ে ছবি তুলতেন তারাও।
শেষ করবো নীচের ছবিটার প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ছবিটাতে দেখা যাচ্ছে- চিরশত্রু দুই দেশ উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়ার দুই প্রতিযোগী একসাথে মিলে হাসিমুখে সেলফি তুলছে। অথচ পূর্ব এশিয়ার এ অঞ্চলটি পৃথিবীর অন্যতম অস্থির এবং উতকন্ঠায় ডুবে থাকা একটি অঞ্চল; যার মূল কারণই হোল দুই কোরিয়া এবং তাদের মধ্যকার শত্রুতা।
রিও অলিম্পিকের ছবিটি কি সে কথা বলছে?
নিশ্চই না। আর এটাই সম্ভবত অলিম্পিক গেমসের সব থেকে বড় সাফল্য!
জয় হোক রিও অলিম্পিকের। জয় হোক ভালোবাসার!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:১১