somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতি-সাধারণ এক মানুষের ব্লগ জগতে বছর পূর্তি (প্রায়)

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক)

আর এক সপ্তা' বাদেই ব্লগে আমার লেখালেখির এক বছর পূর্ণ হবে....

এটা পৃথিবীবাসীর জন্য এমন কোন মহৎ সংবাদ না হলেও, আমার নিজের জন্য তো বটেই! তাই এতো ঘটা করে একটা পোস্ট দেয়ার জন্য বসলাম। এই পোস্টে- রেজিস্ট্রেশন করার পর থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত ব্লগ বিষয়ে আমার নিজস্ব পর্যবেক্ষণ, উপলব্ধি আর ভালোলাগার কথাটুকু সংক্ষিপ্ত পরিসরে বলে যেতে চেষ্টা করবো। আর দেরি না করে তাই মূল লেখায় প্রবেশ করি! পাঠকদেরকে স্বাগতম!

ব্লগ সম্পর্কে আমার পর্যবেক্ষণ

১. কবিতায় যেরকম সনেট, বই প্রকাশের বেলায় যেমন ফর্মা, তেমনি ব্লগেও সম্ভবতঃ পোস্ট সাইজের একটা গ্রহণযোগ্য আকার তৈরি হয়েছে। সে আকারের থেকে সাইজে ছোট পোস্ট মানুষ খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে নেয় না, আর বড় হয়ে গেলে সেটাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এড়িয়ে যায়। ব্যতিক্রম নিশ্চই আছে, তবে আমার ধারণা জন-নন্দিত এবং পাঠক-সমাদৃত পোস্টগুলোর বেশিরভাগই সেই বিশেষ কলেবরের হয়।
২. আমার স্বল্প অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়- সারা দেশে কবিতার পাঠক কম হলেও, ব্লগে কবিতার পাঠকই বেশি! নিবন্ধন করার পর থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত এক্সট্রা অর্ডিনারি বেশ কিছু কবি এবং তাদের কবিতাই আমার চোখে পড়েছে। এই সুযোগে একটা কথা বলে রাখি- আমি কবিদেরকে খুব বেশি হিংসা করি, কারণ আমি জানি- আর যাই হোক- আমি কখনো কবিতা লিখতে পারবো না। জোছনার সে অপূর্ব ফুলটাকে স্পর্শ করবার সৌভাগ্য সৃষ্টিকর্তা খুব কম সংখ্যক মানুষকে দেন।
৩. ব্লগে প্রযুক্তি নিয়ে কিছু কিছু পোস্ট এলেও সম্ভবতঃ সব থেকে কম আসে মৌলিক বিজ্ঞান (ফান্ডামেন্টাল সায়েন্স) নিয়ে পোস্ট। পাঠকের মনেও বুঝি এমন একটা ধারণা ঢুকে গিয়েছে যে 'এসব খটমটে বিজ্ঞানের ব্যাপার-স্যাপার আমি কিছু বুঝবো না, এগুলো পড়ে লাভ নেই'.... যাই হোক- আমি মন থেকে চাই ব্লগে বিজ্ঞান সম্পর্কিত পোস্ট আসুক, কোয়ান্টাম ফিজিক্স কিংবা জেনারেল রিলেটিভিটি সৃষ্টিজগতের যে অন্তর্গত শৃংখলাটাকে নির্দেশ করে- সেটার স্বরূপ আমাদের চোখের সামনে ধীরে ধীরে উন্মুক্ত করে দিক কোন প্রতিভাবান, সহজিয়া বিজ্ঞান সাধক।
৪. ব্লগের সিনিয়র ব্লগারেরা অসম্ভব, অসম্ভব হেল্পফুল। তারা একজন নতুন ব্লগারকে সব রকমের উৎসাহ দিয়ে চলেন- অন্ততঃ আমার অভিজ্ঞতা সেরকমই বলে। যেখানে প্রশংসা করা দরকার সেখানে প্রশংসা, যেখানে ভুল ধরিয়ে দেয়া দরকার, সেখানে পরিমিত সমালোচনা- এসবই আমি উনাদের মধ্যে দেখেছি। সুতরাং নতুন কেউ যদি আন্তরিকভাবে ব্লগিং ভালোবেসে লেখালেখি চালিয়ে যেতে চায়, আমি বাজি ধরে বলতে পারি- তারা সব ধরণের সহযোগিতা আশপাশ থেকে পাবেন।

ব্লগের ব্যাপারে আমার কিছু উপদেশ এবং পাকনামি

বাঙালি মাত্রই উপদেশ দিতে ভালোবাসে, সুতরাং আমিই বা শুধু শুধু ব্যাতিক্রম হতে যাবো কেন! তাই ব্লগের উজ্জ্বল ভবিষ্যত বিনির্মাণে আমারো কিছু বলার আছে!! সপ্তম বাংলা ব্লগ দিবস উপলক্ষ্যে গত বছর যেরকম একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিলো- নতুন ব্লগারদের জন্য-অন্ততঃ সীমিত পরিসরে হলেও- প্রতিবছর সেরকম একটা প্রতিযোগিতা আয়োজন করা যেতে পারে। সেখানে অংশ নিতে পারবেন শুধুমাত্র ঐ বছর রেজিস্ট্রেশন করা ব্লগারগণ। অর্থাৎ, কথার কথা- ২০১৬ এর ডিসেম্বরে একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলে সেখানে অংশ নিতে পারবেন শুধুমাত্র ২০১৬ ইংরেজি বছরে রেজিস্ট্রেশন করা ব্লগারেরাই। এতে দু'টো জিনিস হবে-

১. নতুন ব্লগারদের মধ্যেও নিজেদেরকে প্রমাণ করার একটা তাড়না থাকবে।
২. পুরোন ব্লগারদেরও সুবিধা হবে নতুন, ভালো ভালো লেখার সাথে পরিচিত হবার ক্ষেত্রে।
আগেই উল্লেখ করেছি সপ্তম বাংলা ব্লগ দিবসের স্টাইলে অত আয়োজন করে প্রতিযোগিতা করবার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। ইন ফ্যাক্ট, এটাকে প্রতিযোগিতা না বলে- একরকমের প্রমোশন বলাটাই শ্রেয়। সেখানে বছর বছর ভালো লেখা, নতুন ভালো লেখকদের প্রমোশন করে দেবে সামু স্বয়ং- এই যা।

শেষ কথা

মুদ্রার দু'পিঠের মত করেই ভালো/খারাপ সবখানেই দেখতে পাওয়া যায়, সামহোয়্যার ইন ব্লগও সেটার ব্যাতিক্রম নয়। এই প্ল্যাটফর্মে রেজিস্ট্রেশন করবার পর থেকে আমি প্রচুর ভালো ভালো লেখক এবং তাদের লেখা পেয়েছি- যারা কি না- সমাজের অন্যায়, অত্যাচার কিংবা অসঙ্গতি গুলোকে তুলে ধরবার জন্য এবং মানুষকে সচেতন করার মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে নিজেরা লেখালেখি করে যাচ্ছেন। অনেকে লিখছেন পৃথিবীর কথা, আমাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন দেশ-বিদেশের প্রকৃতি, সংস্কৃতি আর সেখানকার মানুষের সাথে। কেউ কেউ হাস্য-রসাত্মক লেখা লিখে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন মানুষকে হাসানোর মত অসম্ভব জটিল কোন কাজ; গল্প-কবিতায় অনেকে তুলে ধরছেন জীবন, মানুষ অথবা সৃষ্টিজগতের মঙ্গলময় কোন মহাসত্য.... কত বিচিত্র সব বিষয়, তার থেকেও কত বিচিত্র মানুষের ভাবনা ! আর এ সবই পরম গৌরবে ধারণ করে আছে আমাদের সকলের প্রিয় এই সামহোয়্যার ইন ব্লগ।

তেমনি উলটো দিক থেকে নিশ্চই এমন মানুষও আছে- যাদের ইন্টেনশনই হচ্ছে ঝামেলা লাগানো, বিভেদ আর বিভক্তি সৃষ্টি করে ঘৃণা কিংবা অস্থিরতার চাষবাস। প্রথম শ্রেণির মানুষগুলোকে যদি নক্ষত্রের সাথে তুলনা করি, তাহলে দ্বিতীয় শ্রেণির লোকগুলো হোল- ময়লা, যার সর্বোচ্চ দৌড় গন্ধ ছড়ানো পর্যন্ত। ইন ফ্যাক্ট- এদের নিয়ে কথা বলাটাও নিশ্চই একরকম সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু না.....

সুতরাং আমি সে নক্ষত্রদের নিয়েই কথা বলবো- যারা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। ব্লগ হোক, মিডিয়া হোক কিংবা হোক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- যারা এই ঘুণে ধরা সমাজের মেঘাচ্ছন্ন, অস্পষ্ট আকাশকে ভালোবাসা, জ্ঞান আর মঙ্গলের আলোয় আলোয় সাজিয়ে দিতে নিজেরা জ্বলছেন ঠিক নক্ষত্রের মতই! তাদের আশা একদিন মেঘ ঠিক কেটে যাবে- পরিষ্কার হয়ে আসবে কোমলতা আর প্রশান্তির রাতের আকাশ।

সে আকাশের মিটিমিটি নক্ষত্রগুলোকে দেখিয়ে মা তার কোলের সন্তানকে নরম গলায় বলবেনঃ "আব্বু দেখেছো, কি সুন্দর!
কি সুন্দর!!"
----------------------------------
আমার বাছাই করা একটি লেখা

লেখালেখির নামে এই একটা বছর ব্যাঙের মাথা কিংবা পেট যেটাই লিখে থাকি না কেন, এরা প্রত্যেকেই আমার এক একটা সন্তান। প্রায় ২১ জন সন্তানের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেয়া কঠিন, কিন্তু তারপরো আমি নিচের লেখাটিকেই এই পোস্টে সংযুক্ত করবার জন্য বেছে নিলাম। এর একটা কারণ হতে পারে- লেখাটিতে একইসাথে ভালোবাসা, স্বপ্ন আর মানবতাবোধের ছবি আকতে চেয়েছি; আমার অন্য গল্পগুলোতে যে তিনটি অনুভূতির একত্র উপস্থিতি খুব কমই দেখা যায় ..... কেউ অবসর থাকলে লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন !

গল্পের মূল চরিত্র 'খমনু' নামের এক পাহাড়ি শিশু। এই গল্পের সমস্ত চরিত্র আর ঘটনা কাল্পনিক হলেও খমনু নামের এক বাচ্চাকে কিন্তু সত্যি সত্যিই আমি চিনি। বান্দরবানের থানচি ঘুরতে গিয়ে তার সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো !!

যদিও এ গল্পে তার নামটুকুই শুধু ব্যবহৃত হয়েছে, সত্যিকারের সে খমনুর জীবন এখন পর্যন্ত সুন্দর আছে বলেই আমার ধারণা। মানুষের লোভ, পাপ কিংবা প্রতিহিংসার কালো ছায়া এখনো সেখানে তার জীবনটাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে নি....
গল্প কিংবা রূপকথার জগতে যে অপূর্ব ছবিটা আকতে চেয়েও আমি আকতে পারি নি, প্রার্থনা করি- একদিন বাস্তব পৃথিবীর মানুষ সে অসম্পূর্ণ ছবিটাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেবে। পৃথিবীর প্রতিটা খমনুর জন্য এর থেকে বেশি কিছু আর আমার চাইবার নেই !

জয় হোক লেখালেখির !!

গল্পের লিংকঃ একজন খমনু আর একটা রিরৈ পাখি
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:২১
৪৩টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×