আজ ২২ অক্টোবর, জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস।‘পথ যেন না হয় মৃত্যুর, পথ যেন হয় শান্তির’— -এই স্লোগান নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন করছেন অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন।১৯৯৩ সালে চিত্রনায়ক ইলিয়াছ কাঞ্চনের স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন ঢাকা থেকে বান্দরবান যাবার পথে চন্দনাইশ এলাকায় মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।সেই থেকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশব্যাপী নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। দীর্ঘ দশ বছর ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা) সংগঠনের সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে ২২ অক্টোরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ঘোষণাসহ নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাতে থাকে।এর প্রেক্ষিতে ২০০৩ সালে তৎকালিন সরকার ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ঘোষণা করেন।কিন্তু এ ঘোষণা শুধু ঘোষণায় থেকে যায়। বাস্তবে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে জোরালো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে ব্যাপক প্রাণহানিসহ জাতীয় সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছেপালন করা হলেও নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি আজও।দিন দিন গুণিতক হারে বাড়ছে দুর্ঘটনা।একই সাথে বাড়ছে অকাল মৃত্যুর হার ও জাতীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।বাংলাদেশ সড়ক দূঘটনায় প্রতিদিন ২০/২৫ জন মানুষ মারা যাচ্ছে।নিরাপদ সড়ক চাই পৃথিবীর আর কোন দেশে এমন ধরনের সামাজিক আন্দোলন নেই |বাংলাদেশ তার কার্যক্রম দেখে বিশ্বের অনেক দেশে নিরাপদ সড়ক চাই কাঞ্চনের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেছেন।
একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়,দেশে গত পনের বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৫ হাজার মানুষ।এ নিয়ে মামলা হয়েছে ৭০ হাজার।সারাদেশে গত এক বছরে (অক্টোবর ২০০৯-সেপ্টেম্বর ২০১০) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪ হাজার ৩শ’ ৯৫ জন। আহত ৬ হাজার ১শ’ ৩ জন। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। দুর্ঘটনা রোধে নেওয়া হয়নি উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ।
সরকারি ও নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) হিসাব মতে সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে প্রতিদিন গড়ে প্রাণ হারাচ্ছেন ১২ জন।আহত হচ্ছে ১৭ জনের বেশী।২০০৯ সালে সারাদেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে ৪ হাজার ৪শ’ ২৬টি।এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩ হাজার ৭শ’ ৬৪ জন এবং আহত হন ৩ হাজার ২শ ৮৪ জন। বেসরকারি হিসাবে নিহত ও আহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) হিসাব অনুযায়ি প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান প্রায় চার হাজার মানুষ।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি রোজকার ঘটনা।একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না।জনসচেতনতা, প্রশিক্ষিত চালক ও আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত হলেই নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট মহল।বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনার ১৭টি কারণ চিহ্নিত করেছেন। এরমধ্যে অন্যতম অদক্ষ চালক, সড়কের তুলনায় গাড়ির সংখ্যা বেশি, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, রাস্তার জ্যামিতিক ত্রুটি,নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি চালানো, পথচারী ও যাত্রীদের অসাবধানতা ইত্যাদি ।
নিরাপদ সড়ক দিবস দিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চনের বক্তব্যটি শুনুন
আমরা আর সড়ক দুর্ঘটনা দেখতে চাই না।প্রতিদিন অসংখ্য সড়ক দুর্ঘটনায় এ দেশের হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরন করছে,পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ।একটি সড়ক দুর্ঘটনা বয়ে নিয়ে আসে অপরিসীম যন্ত্রনা-অধিকাংশ পরিবারের কর্মক্ষম মানুষ্টি হারিয়ে হয়ে যায় অসহায়।তাই আসুন-সড়ক ব্যবহারে সবাই সচেতন হই ।
অফটপিকঃ
তাকে বলা হয় রূপসী বাংলার কবি,বলা হয় নির্জনতার কবি, বাংলা সাহিত্যের শুদ্ধতম কবিও বলা হয়।তবে রূপসী বাংলার কবি নামেই তিনি বেশি পরিচিত।জীবনানন্দ দাশ, যিনি কবিতার পঙ্ক্তিতে উঠিয়ে এনেছেন বাংলার রূপকে।বলেছিলেন উপমাই কবিত্ব।বহুমুখী উপমায় বাংলার চিরায়ত রূপকে কে আঁকতে পেরেছে তার চেয়ে বেশি? জীবনানন্দ দাশ বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক কবি।
১৮৯৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন জীবনানন্দ দাশ।১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর কলকাতার বালিগঞ্জের কাছে সড়ক দুর্ঘটনায় (ট্রাম দুর্ঘটনায় )আহত হন জীবনানন্দ দাশ।সেখান থেকে উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু হয়।জানা যায়, একশ' বছরের বেশি সময়ের মধ্যে কলকাতায় ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা মাত্র একটি।তিনি জীবনানন্দ দাশ।কবি জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু নেই।আজও তিনি তার কবিতার মাধ্যমে ভাস্বর।প্রতিদিনই জীবনানন্দ তার হাজার হাজার পাঠকের কাছে ফিরে আসেন এবং তাদের সত্তাকে কবিতার মাধ্যমে স্পর্শ করেন যান।
কবির প্রয়াণ দিবসে তাঁর প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৫