somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেই বাড়িটি

১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গলির ভিড় বেড়েই চলেছে।আশে পাশের কোন স্কুল বা কলেজ ছুটি হয়েছে হয়ত।জহির ঘড়ির দিকে তাকালো।দশ মিনিটের উপর হয়ে গিয়েছে।কিছুতেই এখন আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।তবু ওর নড়তে ইচ্ছা করছে না।একদমই করছে না।বাড়িটি আর নেই।সেই বাড়িটি।যেই বাড়িতে প্রথম অরণীর সাথে দেখা হয়েছিল।বাড়িটির দোতলায় ছিল ওদের কোচিং।সেই কোচিংয়েই জহির অরণীর প্রেমে পড়ে।

এখনও জহিরের সব স্পষ্ট মনে আছে।গলির মাথার বিল্ডিঙটার নাম 'স্নেহালয়'।সেখান থেকে পাঁচ ছয় কদম আগালেই কোচিং।রিক্সা এসে স্নেহালয়ের সামনে থামতেই জহিরের অনুভূতিগুলো অন্যরকম হয়ে উঠত।হৃদস্পন্দনটা অসম্ভব রকমের বেড়ে যেত।ও অপেক্ষা করত অরণীর জন্য।অরণীকে একনজর দেখার জন্য জহিরের চোখে থাকত জনম জনমের তৃষ্ণা।সেই তৃষ্ণা এক দেড় ঘণ্টার একটা ক্লাসে মেটানো সম্ভব ছিল না।জহির অবাক হয়ে লক্ষ্য করত ও শুধু এই মেয়েটার প্রেমেই পড়েনি বরং ডুবে চলেছে।অনুভূতিগুলোর তীব্র আলোড়ন কোন এক প্রহরে অরণীকেও স্পর্শ করে।তারপর হয় প্রণয়।প্রণয়ের পর আসে বিচ্ছেদ।ওদেরও এসেছিল।তবে জহিরের প্রেমে পড়ার অভ্যাস বদলায়নি।সে এখনও রোজ নিয়মের বাহুডোরে অরণীর প্রেমে পড়ে,অনিয়মের অবাধ্যতায় ওর প্রেমে পড়ে।

সময়ের সাথে সব বদলে যায়।বাড়িটিও বদলে গেছে।পুরনো সেই বাড়িটি ভেঙ্গে নতুন অ্যাপার্টমেন্ট করা হচ্ছে।কিছু মানুষের জন্ম অপ্রাপ্তির অসহায়ত্বকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার জন্য।অরণী চলে যাবার পর থেকে এই সত্যটা জহির মেনে নিয়েছে।তবু আজ ওর অসম্ভব কষ্ট হচ্ছে।ওর প্রেমের সেই তীর্থালয় ভেঙ্গে নতুন বাড়ি বানানো হচ্ছে।অসম্ভব মূল্যবান আর দামী কিছু হারানোর হাহাকার ওর ভেতরের আমিটাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে।ওর মনে হচ্ছে এই বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটটিকে যদি কিনে নিতে পারত।কিন্তু তা সম্ভব নয়।তার সেই সামর্থ্য নেই।

এই নতুন বাড়ির দোতলাতেও হয়ত কোন এক মায়াবতী থাকবে।সেই মায়াবতীর জানালায় থাকবে ভারী পর্দা।কোন এক বর্ষার বিকেলে বৃষ্টি ধরার জন্য সেই মায়াবতী জানালা দিয়ে হাত বাড়াবে।আলো ঝলমলে দুপুরে স্নান শেষে বারান্দায় এসে চুল শুকোবে।জহিরের মত কেউ একজন মুগ্ধ নয়নে সেই দৃশ্য দেখবে।সেই ছেলেটির কাছে এই নতুন বাড়িটি হয়ে উঠবে অতি আপন।
অরণীকে ফেরানোর জন্য জহির কম চেষ্টা করেনি।সবটুকু দিয়ে অনুভূতির অনুবাদ করেছিলো অরণীর জন্য।ভালোবাসার কাঁটা বেশি কম দুদিকেই যায়।কিন্তু ঘৃণার কাঁটা ঘড়ির কাঁটার মত।কেবল সামনের দিকেই বাড়তে থাকে।অরণীর ঘৃণাও এভাবেই বেড়ে চলেছে।তবু আজ অরণীকে রুদ্র গোস্বামীর মত বলতে ইচ্ছে করছে
আয় একটিবার তুই সন্ধ্যা নামার আগে,
আয় একটিবার তুই বুকের বারান্দায়।
আয় একটি বার তুই অভিমানে রাগে,
আয় একটিবার তুই বাক-বিতন্ডায়।

জহির বিড় বিড় করছে।আশে পাশের লোকজন ওর দিকে তাকিয়ে আছে।পরিপাটি পোষাকের তরুণ বয়সের পাগল ভেবে তাদের আগ্রহ আরও বেশি।জহিরের সেসবের দিকে খেয়াল নেই।ও দ্রুত হাঁটছে।আকাশে কটকটা রোদ।জহিরের চোখ ঝাপসা।সে ঝাপসা চোখে একটা নতুন বাড়ির স্বপ্ন দেখছে।পুরনো ভালোবাসায় ঘেরা নতুন বাড়ি।যে বাড়িতে অরণী থাকবে,ওকে শাসন করবে,আবার গভীর মমতায় জড়িয়ে নিবে।জহিরের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।সে অশ্রু স্বপ্ন দেখার আনন্দের নাকি না পাওয়ার তীব্র বিষাদের কেউ জানেনা।

১৭ই চৈত্র ১৪২১
৩১ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:০৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×