somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নামহীন অনুগল্প

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-পথপানে চাহিয়া সখার/নয়নে জমিলো জল/মনের ভাষা বুঝিয়া সখা/আসিবে কবে বল।

এ কথাগুলো শুনে কারো বিরক্ত হবার কথা না।তবে আমি হচ্ছি।সে বিরক্ত ভাব কাটানোর জন্য বাইরে তাকিয়ে আছি।রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম।গাড়িগুলো সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানো।বৃষ্টি পড়ছে মুষল ধারে।উইপার গুলো একসাথে ওঠানামা করছে।খুব সুন্দর দৃশ্য।তবে আমার দৃষ্টি নীল রঙের একটা অ্যালিওন এর দিকে।একটা ফুটফুটে মানব শিশু কাঁচ নামিয়ে বৃষ্টির জল ধরার চেষ্টা করছে।কখনো তার চোখে বিস্ময়,কখনো আনন্দ।সে আনন্দ তার সারা শরীরে খেলছে।একটা মানব শিশুর চেয়ে অপূর্ব কোন দৃশ্য পৃথিবীতে আছে বলে আমার মনে হয়না।আচ্ছা এই বাচ্চাটার চোখ ও কি নীলাভ?কোন এক অদ্ভুত কারণে এসব ছোট বাচ্চাদের চোখ আমার কাছে নীলাভ মনে হয়।আমার বিরক্তি ভাব কেটে গেছে।আমি মেয়েটার কথার জবাব দিলাম,

-আমাকে এটা শোনানোর কারণ?
-বলুন না কেমন হয়েছে?আপনার মত হয়ত লিখতে পারিনা।তবু জানতে ইচ্ছে করছে।
-আমি ছন্দ মাত্রায় কোন বিশেষজ্ঞ নই।লিখালিখিতে এমন কোন পারদর্শিতা আমার নেই যে তোমাকে জাজ করব।
-"প্রথম তুমি যে হাসিটা/হাসো প্রভাতপাতে/সেটাই আমার তন্দ্রা ঘুমের/স্বপ্ন প্রতি রাতে"......এই লাইনগুলি কি তাহলে ভূত লিখেছে?
-দেখো এসব ছন্দ মিলানো ছড়া সবাই লিখে ছোটবেলায়।বড় বেলায় এসে আমারটা হয়ত আমি তুমিতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।এতে অবাক হবার কিছু নেই।
-আচ্ছা আপনি এমন কাঠখোট্টা স্বভাবের কেন?জন্মের সময় নিশ্চিত আমার মুখে মধু দিতে ভুলে গেছে সবাই।
-ভুলে যায়নি।মধু কেনার মত টাকা হয়ত ছিলনা।প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে নিয়ম রীতি পালনের আগ্রহে কোন বাবা মায়ের অভাব থাকেনা,অভাব থাকে টাকা পয়সায়।

মেয়েটা চুপ করে আছে।এই মুহূর্তে কি বলবে বুঝতে পারছে না।না বুঝুক।আমি আবার বাইরে তাকালাম।গাড়িগুলো ধীর গতিতে চলতে শুরু করেছে।সেই বাচ্চাটাকে খুঁজে পেলাম না।সে আবার বলল,

-আচ্ছা আপনি এত বিষণ্ণতাবাদী কেন?
আমি নির্লিপ্ত একটা হাসি দিলাম।বললাম,
-আমাদের প্রত্যেককেই একটা বিষণ্ণতার উর্বর জমি দিয়ে পাঠানো হয়েছে।মানুষ তার মেধা শ্রম সময়কে কাজে লাগিয়ে সে জমিতে সুখের চাষ করে।কাজটা নেহায়েত সহজ নয়।খুব কম মানুষ সেই সুখের ফসলে জীবন ভরাতে পারে।আর বাকিরা পড়ে থাকে হা হুতাসের দলে।

মেয়েটা এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি কয়েকটা ভারী কথা বললাম।আমার এ কথাতেও ও মুগ্ধ হয়েছে জানি।আমাকে ঘিরে ও একটা ঘোরের মাঝে আছে এখন।এই মুহূর্তে যা বলব তাতেই সে অবাক হবে,সে কথাকেই চিরসত্য বলে জানবে।অবচেতন মনে সাময়িকভাবে অন্যের আচরণে তীব্রভাবে প্রভাবিত হওয়া মানুষের এক অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য।ও বলল,

-একটা কথা বলবেন সত্যি করে?আপনি কাউকে খুব ভালবাসতেন তাইনা?
-ভালবাসতাম কিনা?দেখো নিলি ভালোবাসা শব্দটার কোন অতীত বা ভবিষ্যৎ আছে বলে আমার মনে হয়না।আমি তোমাকে ভালবাসতাম বা আমি তোমাকে ভালবাসবো এমন কথা মানুষ বলতে পারেনা।ভালোবাসার মানেই হচ্ছে আমি তোমাকে ভালোবাসি,মানে সবসময়ই বাসি।মানুষ তাই এ জীবনে কাউকে আসলেই ভালবেসেছে কিনা সেটা বলতে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা মোহকে ভালোবাসার সাথে মিলিয়ে ফেলি।অথচ দুইটা ব্যাপার আলাদা।মোহ সাময়িক হতে পারে,আবার দীর্ঘস্থায়ি হতে পারে তবে ভালোবাসা চিরন্তন।তুমি এখন মোহের মধ্যে আছো।আমি চাই তুমি দ্রুত এই মোহ কাটিয়ে উঠো।

আমার নিজেকে অপরাধী লাগছে কেন জানি।মেয়েটাকে আমাকে নিয়ে ভাবার সুযোগটা কি আমি করে দিয়েছি?যদি তাই হয় তবে আমি অপরাধী।ভালোবাসায় কখনো অন্যায় থাকেনা,অন্যায়টা হয় ভালোবাসতে দেয়ায়।নিজের জগতে কোন স্থান দেয়ার অবকাশ নেই জেনেও আরেকটা মানুষকে স্বপ্ন দেখানোয়।আমি এসবের কিছুই করিনি।তবু মনে হচ্ছে মাঝে মধ্যে ওর সাথে কথা বলাটা ভুল ছিল।এই ভুল আর বাড়তে দেয়া যায়না।মেয়েটাকে এর আগেও বুঝিয়েছি।লাভ হয়নি।ও চোখ মুখ শক্ত করে রেখেছে।ঠিক আকাশে কালো মেঘের মত।এই আকাশ অল্প সময়ে নীল হবেনা।ঝড় বৃষ্টি শেষে তারপরেই শান্ত হবে।আমি ঝড় বৃষ্টির অপেক্ষা করছি।সে রেগে গিয়েই বলল,

-এটা মোহ?আচ্ছা বলবেন একটু কিভাবে ভালোবাসা আর মোহের পার্থক্য করা হয়?মানুষকে কি তাহলে আজীবন নিঃসঙ্গ অপেক্ষা নিয়ে বেঁচে থেকে ভালোবাসা প্রমাণ করতে হবে?
-তা বলিনি আমি।তবে দুনিয়ায় অধিকাংশ মানুষ অভিনয় করে বেঁচে থাকে।ঘটা করে পালন করা মুহূর্তগুলোর কোনটায় হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা থাকে আর কোনটায় অভিনয় থাকে সে হিসেব তুমি জানোনা।
-আমি জানিনা আর আপনি খুব জানেন তাইনা?
-আমি যতটুকু দেখে শিখে বড় হয়েছি সেটাই বললাম।
-আপনারা এত নিষ্ঠুর কেন বলবেন?কি মনে করেন দু চার কলম লিখে নিজেদের?ভালোবাসার কত বড় বড় থিওরি লিখেন।অথচ যে ভালোবাসা নিজে থেকে ধরা দিতে চায় তাকে অগ্রাহ্য করেন।কাজলের মায়ার কথা লিখেন।সে কাজলের নিচে বিষণ্ণতার খোঁজটুকু জানেন না।এত সুন্দর সুন্দর কথা কেন লিখেন।মানুষের বাহবা আর সিম্প্যাথির জন্য?

মেয়েটির চোখে জল জমেছে।যেকোনো মুহূর্তে গড়িয়ে পড়বে।আমার এ দৃশ্য দেখতে ইচ্ছে করছে না।মেয়েদের চোখের জলে নাকি পাথরসম হৃদয়ও উপেক্ষা করতে পারেনা।তবে নিলির এই অশ্রু আমাকে স্পর্শ করবেনা।নিজেকে এতটা নিষ্ঠুর ভাবতে ইচ্ছে করছেনা আমার।আমি জানি আমি তা না।আমি বললাম,

-আমি এখন উঠি।আর তোমার পাগলামি বন্ধ করো।আমি বুঝতে পারিনি ব্যাপারটা এতদূর আসবে।জানলে অবশ্যই তোমার পাগলামিকে প্রশ্রয় দিতাম না।

মেয়েটিকে বসিয়ে রেখেই আমি বেরিয়ে পড়লাম।শেক্সপিয়ারের একটা কথা আছে,"আই হ্যাভ টু বি ক্রুয়েল অনলি টু বি কাইন্ড।"কথাটা তিতিরের মুখে অনেক শুনতাম।আমি জানি নিলি খুব কষ্ট পেয়েছে।হয়ত আজ রাতে বালিশ ভিজিয়ে কাঁদবে।কাল নাওয়া খাওয়া ভুলে সারাদিন মন খারাপ করে রাখবে।পরশু থেকে সব ঠিক।আবার হয়ত কাউকে ভালো লাগবে,কারো প্রেমে পড়বে।মেয়েদের দ্রুত মোহে পড়া আর দ্রুত মানিয়ে নেয়া দুই ক্ষমতাই প্রবল।এরা অতি সহজেই কাউকে মায়ায় জড়িয়ে ফেলতে পারে।তবে সে মায়ায় একবার পড়লে তা থেকে আর উঠা যায়না সে কথা এরা বুঝতে পারেনা।যেমন বুঝতে পারেনি তিতির।নিলিকে তিতিরের কথা বলিনি।বলতে ইচ্ছে করেনি।তিতির আমার একান্ত নিজের অনুভূতির কথা।যার কথা কাউকে বলতে ইচ্ছে করেনা।

অনেকদিন পর আজ হেঁটে বেড়াতে ইচ্ছা করছে।শ্যামলীর ওইদিকে যাওয়া যায়।তিতিরদের বাসা ওখানে।ঐ দিকটায় গাছপালা খুব একটা নেই।তবুও কেমন জানি একটা শীতল বাতাস গায়ে এসে লাগে।তিতির অবশ্য এখন সেখানে থাকেনা।ওর বরের পি এইচ ডি এর সুবাদে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে।তাও আমি প্রায়ই ওদের বাসার ওখানে যাই।কেন যাই জানিনা।জীবন প্রত্যেকটা মানুষকে নির্দিষ্ট বৃত্তে বন্দী করতে ভালোবাসে।মানুষের ছুটে চলার কারণই হচ্ছে বৃত্ত থেকে পালিয়ে বেড়ানো।আমার ক্ষেত্রে জীবন সফল হয়েছে।আমি বৃত্তে বন্দী হয়েছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:২৬
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×