খুব ঘরকুনো আর অলস আমি।বাসায় বসে মাসের পর মাস কাটাতেও খুব একটা সমস্যা হয়না আমার।আসলে কোলাহল,হৈচৈ তেমন একটা ভালো লাগেনা।তবু মাঝেমধ্যে বের হই।যেদিন আকাশটা মেঘলা থাকে,তবে বৃষ্টি থাকেনা।যেদিন গোধূলি লগ্নে পুরো পশ্চিমটা রক্তিম হয়ে উঠে সেদিন।সবচেয়ে ভালো লাগে শীতের বিকেলে হাঁটতে।মৃদু আলো থাকে,তাপ থাকেনা।শীতল বাতাস নেই অথচ হিম হিম ভাব থাকে।কিছু পছন্দের জায়গায় হেঁটে বেড়াই।মানুষ দেখি,আনন্দ দেখি,জীবন দেখি।সবচেয়ে ভালো লাগে বেইলি রোডের নাটক পাড়ার রাস্তাটা দিয়ে হাঁটতে।রমনার দিকে চলে গেসে যে রাস্তাটা।সুযোগ পেলেই এ রাস্তা ধরে হেঁটে বেড়াই।গাছ গাছালি ঘেরা,শান্ত,নিরিবিলি।ফুটপাতের ধার ঘেঁষে বসে থাকার মানুষগুলোর বন্ধুত্ব দেখি,প্রেম দেখি।আমার খুব ইচ্ছে করে কোন একদিন দেখব মেয়েটা ছেলেটার জন্য লুকিয়ে লুকিয়ে নিজ হাতে রান্না করা পায়েস নিয়ে এসেছে।ছেলেটা মুখে দিয়েই বলবে
-আচ্ছা তোমার বাবা তো জানি ব্যাংকে চাকরী করে।এছাড়া কোন ব্যবসা আছে তোমাদের?
-না তো!!কেন?
-না পায়েসে যে পরিমাণ চিনি দিয়েছ ভাবলাম চিনির ব্যবসা আছে নাকি।
-বেশি হয়েছে?কই আমিতো দেখলাম ঠিকই আছি।নতুন নতুন তো।ঠিক শিখে যাব।নিজের উপর করা অভিমানের সুরে বলবে মেয়েটা।
-বড় মায়া লাগবে ছেলেটার।বলে উঠবে,আরে বোকা তুমি দেখি কেঁদে দিচ্ছ!আমিতো মজা করলাম।তোমার হাতের রান্নাতো এমনিতেই মিষ্টি।বাড়তি চিনি লাগে বুঝি?
-ফাজিল।তাই বলে এত সিরিয়াস হয়ে বলে কেউ?ছেলেটার গায়ে নরম হাতে কিল ঘুষি দিতে থাকবে মেয়েটা।দুজন খুব হাসবে।প্রকৃতি তাদের দেখবে আর মুগ্ধ হবে।
এসব কিছুই দেখিনা আমি।সব প্রেম আর ভালোবাসাগুলো নামি দামী কফিশপে বন্দী।আচ্ছা ভালোবাসা কি বন্দী করে রাখার মত এত সংকীর্ণ?!
সেদিন অভিকের সাথে গিয়েছিলাম ওদিকটায়।ভাবলেশহীনভাবে বলল "এখনো আসিস এখানে?হাসি দিয়েই সিগারেটটা ধরালো।বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে কয়েকটা টান দিয়ে বলল।এসব পাগলামি রাখ।চাকরী বাকরি কিছু একটা কর।
-চাকরী তো করিই আমি।
-ওসবকে চাকরী বলে?কর্মচারীর মত খাটাখাটনি।বিরহতো আমারও ছিল।কিন্তু তোর মত হয়েছি?চিল মামা চিল।জীবন একটাই।বলেই আবার সুখটান দেয় সে।
-এদিকে কৃষ্ণচূড়া গাছ থাকলে ভালো হত নারে?রোদের আলোয় খুব ভালো একটা আভা পড়ত।
-আজকাল লেখার কাগজ ছেড়ে আঁকার ক্যানভাস ধরলি নাকি?তুই পারিসও বটে।
আমি হেসে উঠলাম।কিছু বলার আগেই একটা থমথমে ভাবের মধ্যে পড়লাম আমরা।এটা পারমিতা না?আরে পারমিতাই তো।খুব সম্ভব অফিসারস ক্লাবে কোন অনুষ্ঠানে এসেছে।বেশ সেজেছে মেয়েটা।অভিকের দিকে তাকাতেই দেখলাম একটা ফ্যাকাসে আর অপ্রস্তুত ভাব।বেশ শান্ত গলায় আসতে করে বলে উঠলো,
-আজ কত তারিখরে?
-৫ ডিসেম্বর,২১শে অগ্রহায়ণ।আর কিছু?
-নারে।আজ পারমিতার বিয়ে।মেয়েটাকে ইন্দ্রাণীর মত লাগছে নারে?
-জানিনা বন্ধু।ইন্দ্রাণী দেখি নাইতো কোনদিন।হালকা রসিকতায় কাজ হলো না।বরং ছেলেটাকে দেখে খারাপ লাগছে।
আঁধারে মিলিয়ে গেছে চারদিক।চায়ের দোকানে এসে দুটো চা দিতে বললাম।
অভিক বেশ চুপচাপ।"দেখলি তো?ভালোবাসার ক্ষত সে যে ক্ষত না?খুব মারাত্মক আর পচে যাওয়া ক্ষত।চিন চিনে একটা ব্যথা মাঝে মধ্যেই উঠে।আর দাগটা তো থেকেই যায়।সেই দাগ সময়ে সময়েই বলবে,ফেঁসে গেছিসরে পাগলা।"
অভিকের চোখ ছলছল করছে।কখনো এই ছেলেকে এতটা অসহায় দেখিনি।ও কাঁদতে চাইছে।কাঁদাটা দরকার।মনের বিষগুলো চোখের পানি হয়ে বের হয়ে যাওয়াটা খুব দরকার।আটকাবো না ওকে।বরং উসকে দিতেই গরম চায়ে চুমুক দিয়ে বেসুরো গলায় গান ধরলাম
ছেড়ে গেলে সোনার গৌর আর তো পাবে না
ছেড়ে যাব না
তোমায় হৃদ মাজারে রাখবো ছেড়ে যাব না
তোমায় মন মাজারে রাখবো ছেড়ে যাব না...
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:৩০