মুক্ত জীবনে পা রেখেছি প্রায় ছ’মাস হতে চললো। বিভাগের পড়া, এম এর ক্লাস, লেখালেখি, ব্লগিং, পাবলিক লাইব্রেরিতে বসা এসব নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় কাটছে। পেট চালাবার জন্য একটা প্রকাশনীর প্রফরিডিং করি রাতজেগে। বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সময় দেইনা। থাকি বিজয় একাত্তর হলের ৯ তলায়।
আজ শনিবার ক্লাস বন্ধ, সকালেই পাবলিক লাইব্রেরিতে চলে এলাম একটা গল্প লিখতে হবে আজই। সেলফোনে ফ্লাইট মোড চালু করে বসে গেলাম দক্ষিণ-পূর্ব কোণের একটা খালি চেয়ারে।
আসরের নামাজ পড়ে পাবলিক লাইব্রেরির ক্যান্টিনের বারান্দায় বসে পুরি-চা খাচ্ছি। পেছন থেকে মেয়েলি কণ্ঠের ডাক
“এই যে শুনুন” ।
খেয়াল করলাম না কিন্তু ২য়বার শব্দটি সামনে চলে এলো।
“ এই যে শুনছেন?”
সামনে তাকিয়ে দেখলাম দুজন তরুণী দাঁড়িয়ে। তাদের মধ্যে একজনকে পরিচিত মনে হচ্ছিলো এবং তিনিই আহবান কারিনী।
জ্বি বলুন।
আমাকে চিনতে পারছেন? ঐযে সেদিন আপনি বাসে আপনি আমার জন্য সিট ছেড়ে দিয়েছিলেন। মনে পড়ে?
দেখুন ম্যাডাম, রাস্তাঘাটে মাঝেমধ্যেই এরকম সিট ছেড়ে দিতে হয়, কিন্তু সেটা কি মনে রাখার মত কিছু?
উনি একটু বিরক্ত হয়ে বললেন "সেদিন আপনি আমার জন্য যতটুকু উপকার করেছিলেন তার জন্য কৃতজ্ঞতাবোধ জানাতে এসেছি আমি। দয়া করে আমাকে সেটুকু থেকে বঞ্চিত করবেন না আশা করি"।
আমি কথার রেশ টেনে বললাম আপনার সাথে কোথায় দেখা হয়েছিলো? গাজীপুর চৌরাস্তায় মাস ছয়েক আগে, সন্ধ্যার ঠিক আগমুহুর্তে।
ও মনে পড়েছে আমার, হ্যা। কিন্তু আপনি এখানে কি করে এলেন?
সাফিয়া ইসলাম তুলি; উনি ঢাবির দর্শন বিভাগ থেকে মাস্টার্স শেষ করেছিলেন বছর দুয়েক আগে। একটা স্কুলে ক্লাস নেন, এখন আবার এমফিলে ভর্তি হয়ে রোকেয়া হলে উঠেছেন।
আর আমি বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র। থাকি বিজয় একাত্তর হলে। পরিচয় এতটুকুই।
চা খেয়ে পরিচয় পর্ব শেষে আমার মোবাইল নম্বর নিলেন উনি মানে তুলি আপু। আমি উনার মোবাইল নং চাইলাম না হয়ত সংকোচে নয়তো দরকার হবেনা বলে।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
২ মাস পর।
রমজান মাস পড়েছে কদিন হলো। রমজানের শুরুতেই ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেছে। হলগুলিতে ছাত্র নেই বললেই চলে। যারা আছে তারা নিতান্ত দায়ে পড়ে; হয়তো চাকরি পায়নি বেকারত্বের লজ্জায় বাড়িতে যেতে মন চায়নি, অথবা টিউশনির টাকা না পাওয়ায় দেরি হচ্ছে।
এসময় আমার মত নির্জনতাপ্রিয় মানুষদের বেশ সুবিধা। রুমের সবাই বাড়ি। খাই দাই, ঘুমাই, লিখি সারারাত জেগে পড়ি. সেহরি খেয়ে ঘুমাই বেলা অবধি।
কয়েকটা দৈনিকের ঈদসংখ্যার জন্য লেখা দেয়ার ওয়াদা করা, অফিস থেকে বারবার তাড়া দিচ্ছে যাতে দু-চারদিনের মধ্যেই লেখা পাঠাই তাদের লেখা প্রেসে চলে যাবে। রমজানের দশ তারিখের মধ্যেই যাতে সংখ্যা পৌছে যায় গ্রাহকের হাতে সেজন্য সম্পাদক থেকে শুরু করে কারোরই ঘুম নেই চোখে।
কাজ করি, ক্লান্তিতে ভেঙে যেতে থাকলে ন'তলার ব্যলকনিতে গিয়ে বসি, বাতাস খাই, আকাশ দেখি।
তুলি আপুর কথা ভুলেই গেছিলাম বলতে গেলে। এর মধ্যে আর দেখা হয়নি, উনি যদিও আমার ফোন নাম্বার নিয়েছিলেন কিন্তু ফোন দেননি। আজ একাকী বসে উনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। ইচ্ছেটা কি তার সাথে কথা বলার জন্য নাকি বিপরীত কারো সাথে দুদণ্ড গল্প করার খায়েশ তা ঠিক বুঝতে পারলাম না। তবে পরেরটির সম্ভাবনাই প্রবল বলে মনে হলো।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
নিজের উপর খুব রাগ হতে লাগলো। কীসে এত অহংকার তোমার? নামেমাত্র দুবেলা খেয়ে বেঁচে আছো এর বেশি কিছু তো নয়। তুলি আপুর কাছে নাম্বার চাইলে কিইবা ক্ষতি হতো? একজন মেয়ে বন্ধু থাকতে পারেনা তোমার? এসব বলে নিজের উপর রাগ ঝাড়তে লাগলাম।
হাতে মুখে পানি দিয়ে ফেসবুকে লগইন করলাম। এখানে অবশ্য মেয়ে বন্ধুর অভাব নেই বাস্তবে যাদের কাউকেই চিনিনা।
সার্চ অপশনে গিয়ে সাফিয়া ইসলাম তুলি লিখে সার্চ করলাম। মুন্ডু, কিছুই পেলামনা।
---------------------০----------------------------
ঈদুল ফিতরের আর মাত্র দু’দিন বাকী। হাতে কোনো কাজ নেই, একলা সময় পার করছি তার উপর সবগুলো হলের ক্যান্টিন বন্ধ। বাড়ি যাওয়াই উচিত ছিলো। এসব সাত সতের ভাবছি আর বেলকনিতে বসে নতুন-পুরাতন খবরের কাগজ ঘাটছি।
সেলফোনে একটা সেভ না করা নম্বর থেকে কল এলো। তুলি আপুর কণ্ঠ চিনতে একটুও কষ্ট হয়নি। কুশলাদির পর জিজ্ঞেস করলেন ফ্রি আছি কিনা, হ্যা বললাম। আমাকে বললেন সন্ধার পর যেন সায়েন্সল্যাব মোড়ে যাই জরুরি কথা আছে।
চলবে.।.।.।.।।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:৫৬