ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত লাগে আমার কাছে- মানুষের বাচ্চা কেনো আমার খাবারে ভাগ বসাতে আসবে? আরে, ক্ষিদে যদি লেগেই থাকে তো হোটেলটায় ঢুকে পেটপুরে খেয়ে আসলেই হয়, অন্য মানুষগুলো যা করছে; তা না করে হোটেলের ফেলে দেয়া খাবার কুড়িয়ে খাওয়া কেনো বাবা, ওটা তো আমাদের কাজ, কুকুরদের জন্য কেউ তো আর হোটেল খুলে বসে নি; আমরা বেওয়ারিশ কুকুর, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি, রাস্তার উচ্ছিষ্ট খাবারই তো খেতে হয় আমাদের।
ভালো ঝামেলাই বাধিয়েছে মানুষের বাচ্চাগুলো।
এই জায়গাটা মা চিনিয়েছিলো আমাকে, বলেছিলো এখানকার খাবার নাকি বেশ সুস্বাদু আর উপাদেয়। তখনো আমি হই নি, একদিন ক্ষিদের জালায় ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎই মায়ের চোখে পড়ে জায়গাটা, পাশের হোটেলটা থেকে উচ্ছিষ্ট খাবারগুলো এনে ফেলা হচ্ছে ওখানটায়। নির্বিঘ্নেই মুখ দিতে পারতো মা খাবারগুলোতে, কেউ কোনোদিন বাধা দেয় নি। আমি বড় হওয়ার পর হোটেলটা চিনিয়ে দেয় মা, তারপর থেকে খাওয়ার চিন্তা খুব একটা করতে হয় নি আমাকে। কিছুদিন আগ পর্যন্তও সব ঠিক ছিলো; কিন্তু পরিস্থিতি আস্তে আস্তে খারাপ হচ্ছে, কয়েকটা মানুষের বাচ্চা এসে দখল নিতে চাচ্ছে জায়গাটার, ভাগ বসাতে চাচ্ছে খাবারে।
ভালো ঝামেলাই বাধিয়েছে দেখছি, মানুষের বাচ্চাগুলো।
আসলে মানুষের কিছু কিছু ব্যাপার ঠিক পরিষ্কার না আমার কাছে। এই যে কিছু লোক দেখছি দিব্যি হোটেলে ঢুকে খেয়েদেয়ে হাসতে হাসতে বেরিয়ে যাচ্ছে, আবার অনেকে আছে হোটেলের বাইরে সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে, কেউ বেরিয়ে এলেই হাত পেতে কী যেনো চায়, আমি বুঝি না তারা কেনো হোটেলে ঢুকতে পারেনা। যাক, যা ইচ্ছা করুক আমার অসুবিধা নেই, আমার সুখী হওয়ার জন্যে ঐ উচ্ছিষ্ট খাবারগুলোই যথেষ্ট। কিন্তু সুখ বোধহয় আর কপালে সইলো না আমার, মানুষের বাচ্চাগুলো খাবারে ভাগ বসানোর পর থেকে ঠিকমতো পেট ভরে খাওয়া হচ্ছে না, শুকিয়ে যাচ্ছি দিনে দিনে। এর মাঝে একটা মেয়ের সাথে ভাব হয়েছিলো, আমার ক্রমাগত স্বাস্থ্যহানি দেখে বেচারী ভয় পেয়ে চলে গেছে। আরো কয়েকটা জায়গা ঘুরে দেখে এসেছি, ওগুলোতেও একই ( কোনো কোনোটায় তো এর চাইতেও খারাপ) অবস্থা।
নাহ, ভালো ঝামেলাই বাধালো দেখছি, মানুষের বাচ্চাগুলো।
আমার মতো ওরাও বুঝে গেছে দিনের কোন কোন সময়ে হোটেলটা থেকে খাবারগুলো এনে ফেলা হয়। সেই সময়গুলোতে তক্কে তক্কে থাকে তারা, খাবার দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে সঙ্গে সঙ্গে, মহাউল্লাসে চলতে থাকে ভোজ; আর এদিকে আমার পেটের ভেতর ক্ষণে ক্ষণে মোচড় দিতে থাকে। এতোসব আয়োজনের ভিড়ে আমাকে একফোঁটা সুযোগও দেয় না তারা, একটু কাছে গেলেই তেড়ে আসে। প্রথম প্রথম ভয় পেতাম না ওদের। ভয় পাওয়া শুরু করেছি সেদিন থেকে, যেদিন একদল মানুষ পিটিয়ে মেরে ফেললো আমার মা কে (অবশ্য সেসময় মা পাগল হয়ে গিয়েছিলো, মানুষকে কামড়াতে যেতো, আমার সাথেও ভীষণ বাজে আচরণ করতো)... বাপরে এতো কিছু চিন্তা করতে করতে তো ক্ষিদেই লেগে গেলো। খাবার অবশ্য আছে, কিন্তু মানুষের বাচ্চাগুলোও যে আছে! খাবারের ধারেকাছেও ঘেঁষা যায় না ওরা থাকলে।
নাহ এরকম ঝামেলা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বেওয়ারিশ কুকুরদের কপালে দুর্ভোগ আছে দেখছি।
আচ্ছা, আমরা নাহয় বেওয়ারিশ কুকুর, কিন্তু মানুষ আবার কবে থেকে বেওয়ারিশ হওয়া শুরু করলো?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০০৮ দুপুর ২:২৪