পিতামহদের খোঁজে আমি করেছি পরিব্রাজন-
মাইলের পর মাইল, লক্ষ বর্গ কিলোমিটার!
খুঁজেছি অতীতের এ্যালবামে বিপন্ন ছবির ক্ষণ,
অবিরাম ক্লান্তিময়, স্মৃতিকাতরতায় অসাড়,
যে জীবন হারিয়েছি এই উত্তর আধুনিকতায়।
উর্বর শস্যের জমি যখন আনে নবান্নে ফলন-
তার লতাপাতায় আজো একাত্ম সুগন্ধি হয়ে ,
মিশে থাকে তাদের শরীরের ঘ্রাণ।
প্রথম ঊষায় তার শক্ত হাতে অবিরত কর্ষণ,
ভীরু মন; পাথরের হিম ঘরে দিমিতির স্তব,
এখনো সন্ধ্যাবেলা আমাদের চুপ করে দেয়।
আমিও তো হাঁটি আনমনে অই ক্ষেত ধরে,
মন খারাপের দিনে, নীল বিলের কিনারে!
জলের প্রবাহ ভেঙ্গে দেয়া বলিষ্ঠ বাহুর টানে-
আঁশটে জালের কৌশলে ফেলা বৃত্তীয় বিস্তার,
আজো সাম্পান ভাসিয়ে দেয়, রূপালী বানে,
ঝাঁকে ঝাঁকে মাছে ঝলসায় চোখের অনভ্যাস!
এখানো আধুনিক মন বিস্মৃত স্মৃতি ডেকে আনে।
সেইসব দৃড় মুষ্ঠি দিয়ে প্রথম করেছিলো চুরমার,
হিংস্র ঢেউ আর দাঁতাল হাঙ্গরের মত্ত অহংকার।
প্রথম যুদ্ধ, তার রক্তে সিক্ত তোমার অন্তিম শ্বাস,
অজান্তে আফিমের মতো অচিন রোমাঞ্চ আনে-
পরিশ্রান্ত এক পরদেশী মনে, উপকথার বিকালে।
শস্যের দিন শেষ হলে ভর করে অন্ধ ধোঁয়াশা,
ঢেকে রাখে চারপাশ, বৈকালিক মাতাল বাতাস।
দাদু নাকি হাঁটতেন, দূর মাঠে মোড়ানো চাদড়ে,
এমন মাতাল দিনে খুঁজে নিতে লোহিত আকাশ।
জমির প্রতিটি পাড়, মেঠোপথে মাখা ধুলা লাল,
এখনো ঠিক ধরে আছে তার হারানো স্বাক্ষর।
কথক আসরে জমাট কথার মালা; পুঁথির অক্ষর!
সুরেলা পাঠের সুরে হতো তন্ময় রাত্রি-জনতা,
তার কন্ঠে দেবতারাও পাড়ি দিতো কাব্য থেকে-
বস্তুলোকে; ভাবাবিষ্ট হতো নাকি উপস্থিত শ্রোতা!
স্বপ্ন দেখাতেন তিনি পুরাণ থেকে এ মর্ত্যলোকের!
কান পাতলেই শোনা যায় পুঁথির সুর খুব ভোরে,
গাছের তলায়, পুকুর পারে, ভিটাবাড়ির ওই ধারে।
প্রথম শিকারের দিনে দৃঢ় হাতে ধরা শক্ত শাবল,
অনন্ত শুন্যে ছুড়ে বিদ্ধ হতো শ্বাপদ হৃদয়!
লোহিত রক্তের ধারা শুকতারা বেয়ে নামতো গাঁয়।
এখনো নীল জোছনা ভাঙ্গলে ঢেউ আঁধার নদীতে,
ইচ্ছা জাগে খুব, একবার রক্ত রাঙ্গা শাবলটা ছুঁতে!