"আসলেই আমাদের বলে কিছু নেই!"
চোখ বুজলেই ছোট্ট বেলার যে ছবিটা চোখে ভাসে-
বড় বাড়ির বিশাল উঠান,
আকাশের পাশে ফসলের মাঠ, কাঁঠালের বন,
বাঁশের বাগান, সবগুলো পাখি; পুরোটা চাঁদ!
বলতো সবাই সব তোমাদের; তোমার খেলার-
পুরো অধিকার!
অনেক বছর হয়ে গেছে পার; হঠাৎ দেখি-
মিল নেই সেই অবুঝ কথার; কোনকিছুই ছিলো না,
বা কোনকিছুই নয় আমাদের!
পাশের বাড়ীর ওরা, দিয়েছিল এক আহত পাখি!
নামটি ছিল খুব মিষ্টি বসন্তবৌরি।
বলল সবাই এখন থেকে ওটা তোমাদের;
দেখে রেখো, যত্ন করো, খাবার দিও, স্নেহ দিও,
সবই দিলাম; ঘুমের ঘোরে তবুও শেষে মরেই গেলো!
স্কুলের বেলায় সবুজ এক মাঠ, বাড়ীর বুকের-
পাশেই ছিলো,
মাঠটা থেকে আকাশটাকে আলাদা করাই শক্ত ব্যাপার!
আমার অবুঝ মনটা তখন ঘাসফড়িঙের মতো;
উড়তো আর লাফাত খুব মজার খেলায়; ইচ্ছে যতো!
বলতো বাবা- ‘এই মাঠটা তোমার খেলার!’
‘আমাদেরই ভাবতে পারো!’
বুঝতে গিয়েই বড় হলাম; সেটাও কিন্তু নয় আমাদের!
কৈশোরেতে কলেজ গেলাম;
নতুন খাপের পুরনো জীবন, চেনা লোকের অচেনা মন,
রঙিন চশমায় ঘোলাটে সব; জুটেও গেলো বন্ধু কজন!
পৃথিবীটা নতুন ছিলো; স্যারদের চোখ এড়িয়ে,
পিছন সারির ডানের বেঞ্চে, গালগল্পের হাতছানিতে,
সবাই মিলে ঠিক বসতাম!
বলতো ওরা, অই বেঞ্চটা শুধু আমাদের!
রাস্তা দিয়ে যাবার সময় চোখ পড়লো দালানটাতে,
বুঝতে পারলাম, বেঞ্চটা আর নেই আমাদের!
ভানুমতীর খেলায় নাকি হারিয়ে গ্যাছে সব!
যৌবনেরই প্রথম প্রহর;
তোমার সাথে হঠাৎ দেখা, তরূণ চোখের দুষ্টামিতে-
মায়াবী চোখের আস্কারা!
দুজন মিলে রেস্তোরাতে; কফির কাপে খুনসুটি,
কোণার টেবিলে চীনা খাবার; অপেক্ষা বারবার!
বলতে তুমি- ‘কোণার টেবিল ঠিক আমাদের!’
‘ফাঁকা না পেলে আজ বসবো না আর!’
অনেকদিন পর কি এক কাজে, ঢুকেই গেলাম সোজা,
রেস্তোরাটা বদলে গেলেও কোণার টেবিল ঠিকই আছে!
কিন্তু সেই জায়গাটা আর নেই আমাদের!
হয়তো নতুন যুগল বসে দিচ্ছে মনের বায়না।
নেই আমাদের আগের মতো খুব চেনা!
অফিস যাবার একটু আগে, চোখটা রাখি আয়নাতে,
চুলের বহর হালকা অনেক, মুখের ভাঁজে বয়স নাচে,
দেয়াল ঘড়ির তিনটি কাঁটা দেয় ঘোষণা-
সময় সে কখনোই- নয় আমাদের! নয় তোমাদের!
আমাদেরই বয়স নিয়ে পালিয়ে যায় সে অজান্তে!