(১)
শুকনো বাতাসে অলিভের পাতা ঝরে;
মধ্যযুগীয় গ্রামে নিবিড় হাওয়ার টান।
স্টুডিয়োর ক্যানভাসে চঞ্চল তুলি খেলে।
সচেতনে ধরতে গোধূলির আলোছায়া,
প্রাচীন শিল্পীর কাটে ব্যস্ত সময়।
শিল্পের, শোকের নাকি প্রেমের আকন্ঠ-
সুরা করে পান; ম্যাডোনাও তন্ময়!
উদ্ধত গীর্জায় বাজে বেমানান ঘন্টারা -
ঢং ঢং ঢং!! ওহ, ম্যাডোনা! ওহ! লিসা-
এবার ফিরতেই হবে বাড়ী!!
(২)
পৌর বাজারে ভিড়, হাজারো লোকের-
যাওয়া আসা; অভাব সামান্য বিরতির।
অসম মিশ্রণ তাই আলো ও শব্দের!
চিরচঞ্চল কফিহাউসের চেয়ার ও টেবিলে,
মানুষের কোলাহলে; শব্দরা পাখা ম্যালে।
পলেস্তরা খসা দেয়ালের ইট হাসে,
আর হাসে দেয়ালে টাঙ্গানো মোনালিসা!
লুভরার রাণীর মতো যত্নে নয়,
সম্রাটের স্নানাগারের বিলাসিতায় নয়,
একান্তে নিজের মতো; আনন্দে বা বিদ্রুপে-
হাসে কফি হাউসের মোনালিসা!
(৩)
সম্রাটের শোভাযাত্রায় কাঁপে রাজপথ,
গলিপথে জীবনের সাধারণ আয়োজন!
ফ্লোরেন্স এখনো সাজে পৃথিবীর সব ফুলে,
পাথুরে বুলভার্দ ঘোড়ার খুরেতে ঝলসায়,
বসন্ত বাতাস ছোঁয় প্রাসাদের ব্যালকুনি।
তবু পৌছায় না তার রেশ এখানে,
ভাবে লিসা আধো অন্ধকারে বসে নিশ্চুপ,
কি ভাবনা খেলা করে শিল্পীর মনে!
সে কি প্রেম, অনুনয় নাকি আকাঙ্ক্ষা স্নেহের!
লিওনার্দোর স্টুডিয়োতে সময় ও কি স্থির হয়!
হায় লিসা! দিনপঞ্জিতে গত হলো চারটি বছর!
ম্যাডোনা লিসা! এবার ফিরতেই হবে বাড়ি!
(৪)
হঠাত এসেছো আজ, পরিচিত এই কফি হাউসে!
ময়লা চেয়ার খানা সযত্নে টেনে, বসেছো টেবিলে-
রেখে আড়াআড়ি হাত।
ওড়নার প্রান্তটা গাঙচিল হয়ে দেয় বাতাসে উড়াল!
আনমনা তুমি চায়ের কাপেতে দিয়ে ছোট্ট চুমুক,
জনসমুদ্রে তাকাও এক অজানা দৃষ্টিতে।
রহস্য, স্নেহ নাকি একরাশ ভালোবাসা,
কে জানে কি ছুঁয়ে আছে তোমার চোখের কোণে!
তোমার অগোছালো চুল, কিঞ্চিৎ কুঞ্চিত,
রাত্রির নদী হয়ে ঘাড় বেয়ে নেমে আসে।
হাতের কাগজটাতে কি যেন কি লেখা পড়ে,
বাঁকানো ঠোটের কোনে অদ্ভুত হাসি আনো।
চেয়ারের পিছনে চুন খসা দেয়ালের বুকের ভিতর-
হাসে কফিহাউসের মোনালিসা; কেটলির ধোঁয়ায়-
সে কিছুটা মলিন, তবু অনেকটা তোমারই মতো!
সন্ধ্যার প্রার্থনা ধ্বনি, সময়ের বোধ আনে, এবার-
তোমাকে ফিরতেই হবে বাড়ি, খুব তাড়াতাড়ি!
(৫)
মোনালিসা লা গায়োকান্ডা! চিনিনা তোমায় ঠিক!
তুমি শুধুই কি লিওনার্দোর তুলির আচড়!
ফ্লোরেন্স মিলান হয়ে যে বাতাস বয়ে আনে,
আনন্দ-দুঃখ আর হাসি-কান্না, বিরহের গাঁথা,
তোমায় কি তা ছুঁয়েছিল স্টুডিয়োর গহীন ভিতরে!
নাকি হারানোর শোকে নীল হয়ে,
ঈষৎ বাঁকিয়ে ঠোটের রেখাকে, হাসির ছলনায়;
চারটি শতাব্দী তুমি করে দিলে পার!