somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোরা একই বৃন্তে দুটি ফুল হিন্দু মুসলমান

০৩ রা মে, ২০১৬ দুপুর ১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত রবিবার ১লা মে ,সন্ধ্যায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বৈশাখী ঝড় ও বৃস্টির শীতল পরশে জনমনে স্বস্তি এনে দেয়। এই ঝড়ের কবলে পড়ে আমার ও আমার বেশ কজন বন্ধুর আশ্রয় মিলেছিল বন্দর উপজেলার শাবদী বাজারের শশ্মানঘাট লাগোয়া লোকনাথ বাবার মন্দিরে। এ প্রসংগেই লেখাটির অবতারনা ।
বিকেলে আমরা কজন ছেলেবেলার বন্ধু পরিবার পরিজন নিয়ে গিয়েছিলাম শীতলক্ষ্যা পাড়ি দিয়ে ব্রম্মপুত্র নদীর শাখা পাড়ে ঘুরতে। পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শাবদী বাজারের শশ্মানঘাটের পাশে গোসল ও সাতার কাটার কথা। ঘাটপাড়ে নেমে আমার ২/১ বন্ধু তীব্র অনীহা প্রকাশ করে শশ্মানের পাশের ঘাটে নেমে গোসলের। আশেপাশে শান বাধানো ঘাট না থাকায় আমি,উত্তম, কাজল এই ঘাটে গোসল করবো জোর দিয়ে বলার পরেও কয়েকজন দোনোমনো করতে থাকে। এর মধ্যে স্থানীয় একজন বয়স্ক মুসল্লীকে আসর নামাজের জন্য ঘাটে অজু করতে দেখে সেই বন্ধুদের দোনোমনোভাব কেটে যায়। ব্যাপারটা যে বন্ধুদের মনে সাম্প্রদায়িক হীনমন্যতা ছিল, বুঝতে পেরে চুপ থাকি।
যাহোক শশ্মানের পাশের ঘাটে ঘন্টাখানেক ডুবিয়ে,মাঝনদীতে সাতরিয়ে ক্লান্ত হয়ে উঠতেই মাগরিবের আযান দেয়। আমরা চারজন দ্রুত অজু করে ঘাটের পাশের মসজিদে নামাজ পড়তে যাই ভেজা কাপড়, মোবাইল,ট্যাব ইত্যাদী ভাবিদের জিম্মায় রেখে।
নামাজ শেষ মসজিদ থেকে বেরুতেই আকাশ ভেংগে ঝড়, প্রচন্ড দমকা হাওয়া এসে চারিদিক মুহুর্তেই লন্ডভন্ড করে দেয়। প্রান বাচাতে আমি, সেলিম, উত্তম, সুমিভাবি ও অন্যরা দৌড়ে আশ্রয় নেই শশ্মানের পাশের লোকনাথ বাবার আশ্রমে। আমাদের সাথে সেখানে আরো গোটা ৫০/৬০ জন মানুষ মন্দির প্রাংগনের টিনশেডের চাতালে আশ্রয় নিয়েছেন। যাদের মধ্যে সদ্য নামাজ পড়ে আসা বেশ কজন মুসল্লিও ছিল। বাকীরা সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ঝড়ের তান্ডবে ভীত সন্ত্রস্ত মানুষ কেউ উচ্চস্বরে আল্লাহ, আল্লাহ ডাকছেন। কেউ ভগবান বা ঈশ্বর কে ডাকছেন। মন্দিরে ঘন্টা বাজচ্ছে। শংখতে ধনি উঠে উলু উলু। আমরা হিন্দু -মুসলিম সবাই তখন বিপদগ্রস্থ মানুষ। আমাদের সাথে থাকা নারীদের জন্য মন্দিরের সেবায়েতের নির্দেশে একটি ছেলে ৩/৪ টা প্লাস্টিকের চেয়ার দিয়ে যায়। সেই সময় আমার খু ব মনে পড়ছিল মন্দিরে আশ্রয় নেয়া বন্ধুদের কেউ কেউ বিকেলে শশ্মানঘাটের সামনে আসা এবং ঘাটে নেমে গোসলের বিষয়টি জাত, ধর্ম চলে যাবে এরকমটাই ভেবেছিলেন। কিন্তু এখন এই ঝড়ের কবলে পড়ে মন্দিরে আশ্রয় নেয়াতে জাত, ধর্ম যায় না?
মেজাজটা খারাপ হলে অন্যদের শুনিয়ে শুনিয়ে
আমি আমার বন্ধু উত্তমকে বলি, তোকে কাটলে কি লাল রক্ত বের হবে?
আমাকে কাটলে কি হলুদ রক্ত বের হবে?
উত্তম চুপ।। অন্যরাও চুপ।
আমি আরো উচ্চস্বরে বলি, এই দুর্যোগের সময় আমাদের মধ্যে সবাই যার যার ধর্ম অনুযায়ী আল্লাহ ও ভগবান কে স্মরন করেছেন। তাহলে বাইরে আমরা কেন একে অপরের ধর্মকে, বিশ্বাসকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করি? বিপদের সময় ভিন্ন ধর্মের উপসনালয় আশ্রয় নেয়া যায়। তখন বিদাত হয় না?
সাধারন সময় ভিন্ন ধর্মের উপসনালয়ে কাজে বা দেখতে গেলেই ধর্ম চলে যায়?
এতোই সস্তা ঈমান বা বিশ্বাস? "
হায় ধর্ম কি এতো ঠুনকো?
মানবের কল্যানেই ধর্ম এসেছে। ধর্মের জন্য মানুষ নয়।
তাই সবার আগে মানুষ। মানবিকতা।
জয় হোক মানুষের।
জয় হোক মানবতার।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৬ দুপুর ১:২৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×