প্রিয় বারীভাই ও সাইকেল ভ্রমন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারী ভাইয়ের একটি স্ট্যাটাস দেখে মনে পড়ে গেল সাপ্তাহিক বিচিন্তায় তাঁর লেখা পরিব্রাজকের পরিভ্রমনের (যদি স্মৃতি প্রতারনা না করে) কথা । একটা সময় গোগ্রাসে গিলেছি লেখাটি ।সারা সাপ্তাহ অপেক্ষায় থাকতাম এই লেখাটির জন্য ।সেই সময় বারীভাই ছিলেন আমার ও আমার কয়েকজন বন্ধুর স্বপ্নের নায়ক ।তিনি হেঁটে হেঁটে সারাদেশ ভ্রমন করেছিলেন ।১৮মাসে সাড়ে পাচঁ হাজার মাইল ।কত বিচিত্র ছিল তাঁর অভিজ্ঞতা ।নানান মানুষের সাথে মিশেছেন।খুব কাছ থেকে দেখেছেন মানুষের জীবনযাত্রা, তাদের দৈননিন্দন আচরন।সেইসব বিচিত্র অভিজ্ঞতা আর স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তিনি তাঁর লেখায় তুলে আনতেন। তাঁর লেখা পড়েই আমরাও আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম সাইকেলে সারাদেশ ঘুরে দেখার । সেই সময়টা ছিল এনালগ টেলিফোনের যুগ্ । নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায ফোনের লাইন পেতে রীতিমতন গলদঘর্ম হতে হতো। বহু কষ্ঠে ফোনে বাংলা বাজার পত্রিকায় বারীভাইকে পাওয়া গেলো ।তিনি আমাদের দেখা করার জন্য সময় দিলেন। একদিন রাতে বাড়ির কাউকে কিছু না বলে আমরা চারবন্ধু তাঁর সাথে দেখা করতে ছুটে যাই ৫ সেগুনবাগিচাস্থ দৈনিক দেশ পত্রিকা অফিসে । বারীভাই আমাদের এইখানে আসার জন্য বলেছিলেন । সে সময়টাতে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায় কাজ করতেন।সেই রাতে বারীভাইর সাথে তুমুল আড্ডা হয়েছিল । কখনো দৈনিক দেশের নীচতলায় ,কখনো প্রেসক্লাবের সামনে ফুটপাতে বসে,কখনো দৈনিক বাংলার সামনে সারারাত খোলা থাকা ফুটপাতের দোকানে পরোটা,ডিম,ডাল ভাজি খেতে খেতে ।সারারাত কেটে গিয়েছিলো রাজনীতি, সমাজনীতি,পরিবার,ব্যক্তিগত স্বপ্ন ইত্যাদী নিয়ে । যখন ফজরের আজান ভেসে আসে ,পুর্বদিকের আকাশ নীলাভ থেকে রক্তিম হয়ে উঠে তখন আমরা হেটে হেটে ফুলবাড়িয়ায় কোন একটি হোটেলে চা খেয়ে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের প্রথম বাসে চড়ে বাসায় ফিরে এসেছিলাম । এর পরদিন বারীভাই দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকার শেষ পাতায় ৪কলামে আমাদের ৪ বন্ধুর স্বপ্ন নিয়ে লিখেছিলেন ‘রাতের ঢাকা:অস্থির আগুনের পাখিরা ‘ । এই লেখার পর আমাদের জেলাশহরে আমরাতো হিরো বনে গিয়েছিলাম।চেনা জানা মানুষের মাঝে আমাদের নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছিলো । তারপর একদিন আমি জেসিন,স্ট্যালিন,লাবু ভাই ও আনুভাই বাড়ির কাউকে না বলেই চুপিসারে সাইকেল নিয়ে বাংলাদেশ ভ্রমনে বেড়িয়ে পড়েছিলাম ।আমার অনেকটাই শুন্যহাত । পকেটে সম্বল ছিলো মাত্র সাড়ে বারো টাকা মাত্র ! নিজের সাইকেল ছিলো না । জাতীয় দলের ফুটবলার গাউসের একটি নেভী ব্লু রঙের সাইকেল ছিলো , সেটা নিয়েছিলাম ২দিনের জন্য ধার করে।সেটা ফেরত দিয়েছিলাম সাড়ে তিনমাস পর । অসীম মনোবলই ছিলো আমার পুঁজি ।মানুষের ভালোবাসা ,প্রশাসন ও পুলিশের অসাধারণ সহযোগিতা ছিলো । প্রায় তিনমাসে সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়িয়েছি ।সেই গল্প না হয় আরেকদিন হবে। বারী ভাই ,আপনার অসীম অনুপ্রেরনার কথা কি করে ভুলি ?
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:২১