কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হিসাবে ধর্মনিরপেক্ষতাকে তুলে ধরতে চান। এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে বলে আমার জানা নেই। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পাকিস্তান ছিল ইসলামী প্রজাতন্ত্র, যদিও দেশ সে অনুযায়ী শাসিত হত না। স্বাধীন হওয়ার আগে এ দেশের মানুষ একটিবারের জন্যও ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে এমন কোন আন্দোলনের কথা শোনা যায় না। এদেশের মানুষ সবসময় নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার ছিল।
পাকিস্থান গঠনের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে। এদেশের মানুষ হতে থাকে শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত, অবহেলিত। এমন কি একটা বিশাল জনগোষ্ঠী হওয়া সত্তেও বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হয়। এমনি এক অবহেলা বঞ্চনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ।
এর মধ্যে এক নেতার আবির্ভাব হল। যাঁর বক্তৃতায় মানুষ আশা ফিরে পেতে লাগল। বক্তৃতায় তিনি ছিলেন অনেকটা অপ্রতিদ্বন্দী। তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৭ই মার্চে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন। .... বাংলার মানুষ বাঁচতে চাই...... এদেশের মানুষকে মুক্ত করেই ছাড়ব ইনশাআল্লাহ..... এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।.... বক্তৃতায় কোথাও ধর্মনিরপেক্ষতার কোন ধারণা ছিল না। দেশের মানুষের একটাই আকাঙ্খা ছিল মুক্তি। শুরু হল সেই মুক্তিযুদ্ধ। অন্যের তাঁবেদারী থেকে নিজেদের রক্ষার যুদ্ধ, পাকিস্তানি শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাওয়ায় ছিল মুক্তিযুদ্ধ করার একমাত্র চেতনা। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এলো স্বাধীনতা।
খুব বেশিদিন যেতে না যেতেই দেশের মানুষ আশাহত হল। ৭২-এ সংবিধান প্রণীত হল, সেই সংবিধানে লিপিবদ্ধ হল দেশের অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাসের পরিপন্থী ধর্মনিরপেক্ষতা, যাকে শুদ্ধ ভাষায় বলে ধর্মহীনতা, কম্যুনিস্টের সাথে যার খুব বেশি পার্থক্য নেই। দেশের মানুষকে সাইজ করতে তৈরি হল রক্ষী বাহিনী, সকলের মতামত যাতে স্বীকৃত না হয় সেজন্য সব দল ব্যান করে গঠিত হল বাকশাল। ২৫ বছর মেয়াদি ইন্দিরা-মুজিব মৈত্রি চুক্তি হল। দেশের মানুষ দেখতে থাকল জামাতের আশংকায় যেন ফলছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় সেক্টর কমান্ডার মেজর জলীলকে পাঠানো হলো কারাগারে। মুক্তি যেন অধরায় থেকে গেল।
৭৫-এ পট পরিবর্তন হল। দেশের মানুষকে মুক্ত করতে আসলেন আর একজন অন্যতম সিপাহ সালার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। দেশের আপামর জনসাধারণের বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সংবিধানে বসালেন আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস। রক্ষী বাহিনী দুর হল, বাকশাল উঠে গিয়ে গনতন্ত্রের দুয়ার খুলে গেল। মানুষ সত্যিকারের মুক্তি পেল। দেশনেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেন, নতুন নতুন দল গঠিত হল...... গনতন্ত্রের পথ প্রশস্ত হল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনা বলতে যারা ধর্মনিরপেক্ষতাকে বুঝাতে চান তারা একটি ডাঁহা মিথ্যা কথা বলেন। এদেশের মানুষের স্বাধীনতার চেতনা হিসাবে কাজ করেছে মুক্তি।
বাংলাদেশের গনতন্ত্রের মতে, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা যেমন তাদের আদর্শ প্রতিষ্ঠায় তৎপর থাকতে পারে, তেমনি ইসলামপন্থীরাও পারে। দুটিই আদর্শ, পার্থক্য শুধু এটুকু একটা রাষ্ট্রের কাঠামো নিয়ে ধারণা দেয় যা আদতেই কোন ফলদায়ক নয়, অপরদিকে ইসলাম মানুষের প্রতিটি দিক ও বিভাগেই সুস্পষ্ট ও অব্যর্থ নির্দেশনা দেয়।
আমি কোন অবস্থাতেই মনে করি না ইসলাম কেবল মুসলিমদের কোন ধর্মীয় বিশ্বাসের নাম। এটা হল সমগ্র বিশ্বমানবের মুক্তির একমাত্র সনদ। একজন মুসলিম যেমন একে অনুসরণের অধিকার রাখে, একজন হিন্দু, একজন বৌদ্ধ, একজন খৃষ্টানও সেই অধিকার রাখে। সেই অর্থে, এটি কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য নয়... বিশ্ব মানবতার জন্য আদর্শ। যারা এই আদর্শ নিয়ে পড়াশুনা করে নাই বা জানে না তারাই কেবল একে সাম্প্রদায়িক বলে। এখানে সকল মতাদর্শ পূর্ণ নিরাপত্তা পাই, সবাই ফিরে পায় তার অধিকার....... জবরদস্তির বা চরমপন্থার সুযোগ এখানে নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০০৭ বিকাল ৪:৪৬