দর্শনে আমি বরাবরই কাঁচা। আর সে কারনেই আমার বন্ধুর দর্শন ধার করে লেখার চেষ্টা। এটি হচ্ছে আমার সেই মিনি দার্শনিক বন্ধুর ভালোবাসা সংক্রান্ত সর্বশেষ দর্শন। অনেক দিন পর হঠাৎ করে কাঁটাবনে বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। আমাকে টেনে নিয়ে চা দোকানে বসালো। চা অর্ডার করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো-
: দোস্ত তুই বিয়ে করবি না?
আমি কোন উত্তর না দিয়ে মৃদু হাসলাম। বললাম-
: এখনোতো কোন বড়লোকের মেয়ের সন্ধান পাইনি!
বন্ধুটি বললো-
: তাহলে তোকে একটা গল্প শোনাই-
একটা ট্যুরিস্ট এলাকায় বেড়াতে গেছে এক তরুণ। সেখানে গিয়ে পাহাড়ি পথে একটি বিজ্ঞপ্তি দেখে সে থমকে দাঁড়ালো। বিজ্ঞপ্তিটা এরকম:
‘এই পাহাড়িয়া পথ অতিশয় বিপদসঙ্কুল, অতিশয় সাবধানে এই সংকীর্ণ পথে যাতায়াত করিবেন। এই সড়ক অধিকাংশ সময় বরফ অথবা বৃষ্টিতে অতি পিচ্ছিল, হঠাৎ পিছলাইয়া পড়িয়া গেলে গভীর গহ্বর, পাঁচ কিংবা ছয় হাজার ফুট খাদ। মৃত্যু অনিবার্য। তাই সাবধান।’
পুনশ্চ:
‘যদি সত্যিই পা পিছলাইয়া পড়িয়া যান, ডান দিকে তাকাইতে মোটেই ভুলিবেন না, ডান দিকের প্রাকৃতিক দৃশ্য অতিশয় অনুপম।’
গল্প শেষ করেই বন্ধু বললো-
: বিয়ের সঙ্গে এর কোন মিল খুঁজে পেলি?
আমি বললাম- না!
তখন বন্ধু বললো-
: তুই কী বিশ্বাস করিস যে, বিয়েটা হচ্ছে একটা ভাগ্যের ব্যাপার?
: হ্যাঁ করি।
: এটা সম্পূর্ণ ভুল!
: আশ্চর্য! কেন?
: কারন ভাগ্য তবু কখনো কখনো আমাদের কিছু দিতে পারে কিন্তু বিয়ে কিছুই দেয় না।
আমি বন্ধুকে জেঁকে ধরলাম। জানতে চাইলাম ওর কী এমন হয়েছে যে ভালোবাসা ছেড়ে এভাবে বিয়ের পেছনে লেগেছে! প্রথমে বলতে চাইলো না। পরে সিগারেট ধরিয়ে তারপর বললো-
: ‘আমি প্রত্মতাত্মিক ভালোবাসা: লাইফ কিলিং মেথডের’ খপ্পরে পড়েছি!
ওর কথার কোন মাথা-মুন্ডু খুঁজে পেলাম না। ওকে আবারো জিজ্ঞেস করলাম-
: দোস্ত আমাকে খুলে বল, তোর কী হয়েছে?
বন্ধু এবারো রহস্য করে বললো-
: আমি মরে গেছি!
আমি বললাম-
: গুল মারার জায়গা পাস না?
বন্ধুটি হাসলো। তারপর আরেকটা গল্প বলা শুরু করলো-
: পাড়ার ছেলেরা এক ভদ্রলোকের কাছ থেকে পাঁচশো টাকা চাঁদা নিয়ে তাকে কাবের মেম্বার করে দিল। তখন ভদ্রলোক বললেন-
- তাহলে আজ থেকে আমি তোমাদের তরুণ সংঘের মেম্বার হলাম। তা একজন মেম্বার হিসেবে আমি কী কী সুবিধা পাবো?
জবাবে কাবের সভাপতি বললেন- আগামী বছর আপনি আবারো পাঁচশো টাকা দেয়ার সুযোগ পাবেন।
আমিও এমন করে সারাণ দিয়ে যাবার ব্যবস্থা করেছি।
এবার বোধ হয় আমি বুঝতে পারলাম। উত্তেজনার সাথে ওকে বললাম-
: তু-তুই বিয়ে করে ফেলেছিস?
বন্ধুটি হ্যাঁ সূচক জবাব দিল। তার মানে ‘প্রত্মতাত্মিক ভালোবাসা: লাইফ কিলিং মেথড’ হলো ভালোবেসে বিয়ে করে ফেলা! প্রিয় বন্ধুর ভালোবাসার দর্শনের এমন পরিণতি হবে ভাবিনি। দুই মাসের বিয়ের অভিজ্ঞতা শোনানোর পর বন্ধুটি যা বললো তা শুনে আমার তো আক্কেল গুড়–ম। সব শুনিয়ে বন্ধু বললো-
: দোস্ত, আমার দর্শনের কসম আমি জীবনে আর বিয়া করমু না!
আমি মনে মনে বললাম একবার করেই বাঁচো না, আরেকবারের চিন্তা। বরাবরের মতো এবারও বন্ধুর দর্শন আমাকে সন্ধিগ্ন করে তুললো। কারন বন্ধু আমাকেও বিয়ে করতে বারণ করেছে। বলেছে আর যাই করিস না কেন বিয়ে করে জীবনটাকে হত্যা করিস না! সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত নিয়েই ফেললাম- ‘আমিও জীবনে বিয়ে করবো না!’