ছ্যাঁকার স্বাদ পাবার পর সে সিগারেটের প্রেমে পড়ে প্রায়ই বুলি ছুড়তো ‘লাইফ ইজ সিগারেট’। বলতেই হয় যে, তখন সে সত্যি বিড়ি টানার মধ্যেই তার লাইফের যাবতীয় সুখ খুঁজে নিয়েছিল। তো এক সময় আমার সেই বন্ধুটির বিড়ি টানায় ছেদ না পড়লেও তার লাইফ ইজ সিগারেট মার্কা দার্শনিক ভালোবাসায় পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে ঠিকই। এখন সে তার ভালোবাসায় ‘লাইফ শাইনিং মেথড’ অ্যাপ্লাই করছে। সেটা কেমন? জিজ্ঞাসা করতেই বন্ধুটি একটি গল্প শোনাল। বেশ পুরনো গল্প। বিখ্যাত ঔপন্যাসিক-কবি রুডইয়ার্ড কিপলিং এর বাড়ির সামনের একটি গাছ একটি গাড়ি ধাক্কা দিয়ে ভেঙে ফেলল। পরদিন কিপলিং েেপ গিয়ে গাড়ির মালিককে চিঠি লিখলেন তিপূরণ দাবি করে। গাড়ির মালিক কোন উত্তর কিংবা সাড়াশব্দ করলো না। কিপলিং আরো গোটা চারেক চিঠি লিখে উত্তর না পেয়ে েেপ গিয়ে গাড়ির মালিকের বাসায় হাজির!
- কী ব্যাপার াতিপূরণ দেয়ার ব্যাপারে আপনার মনে হয় কোন মাথাব্যথা নেই?
- জনাব, আপনি আরো গোটা দুয়েক চিঠি দিলেই আপনার তিপূরণের দাম ওঠে যাবে। প্রতিটি চিঠিই আমি ১০০ পাউন্ড করে বিক্রি করেছি!
আমি গল্পটি বুঝলেও এর সাথে ভালোবাসার কোন সম্পর্কই খুঁজে পেলাম না। আমার বন্ধুকে সেটা জানাতেই সে আমাকে প্রশ্ন করলো- ‘আচ্ছা, তুই কী সৎ?’ আমি কিছু না বুঝেই উত্তর দিলাম অবশ্যই। বন্ধুটি বরাবরের মতো সবজান্তা হাসি দিয়ে বললো - ‘আরেকটা গল্প শোন’। স্বামী আর স্ত্রীতে কথা হচ্ছে। স্ত্রী- নির্ঘাত নতুন বুয়াটাই টাওয়েলটা চুরি করেছে। খুঁজে পাচ্ছি না। স্বামী- আজকাল বিশ্বাসী লোক খুঁজে পাওয়া দুস্কর। চোর- ছ্যাঁচড়ায় দেশটা ভরে গেছে। কোন টাওয়েলটা বল তো? স্ত্রী- ঐ যে কক্সবাজার বেড়াতে গিয়ে হোটেল মুন স্টার থেকে এনেছিলাম। আমাদের সততা এমনই। বন্ধুর অকাট্য যুক্তির কাছে হার মানলাম। এবার বন্ধুটি মুখ খুললো। তার মতে যেহেতু আমরা সবাই কোন না কোনভাবে অসৎ কিংবা আমরা বিখ্যাত ঔপন্যাসিক-কবি রুডইয়ার্ড কিপলিং এর মতো সৎ নই তাই আমাদেরকে ঐ চালাক গাড়ি মালিকের মতো হতে হবে। ভালোবাসার েেত্রও কৈ এর তেল দিয়ে কৈ ভাজা কিংবা প্রফেশনালিজম চালু করতে হবে। আর এর নামই হলো বাণিজ্যিক ভালোবাসাঃ লাইফ শাইনিং মেথড। বোধ করি ভালোবাসার এমন আজব পদ্ধতির কথা কেউ ইতিপূর্বে শোনেননি কিংবা শুনে থাকলেও আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি কেউ সেটা বুঝতে পারেননি। আর কেউ যদি অতিরিক্ত বুদ্ধির জোরে বুঝেও নেন, তাহলে আমি আমার বন্ধুর সাথে সাথে তার জন্যও পাবনায় একটা সিট বুকিং দিতে চাই। আপত্তি থাকলে জায়গায় বসে আওয়াজ দিয়েন! রম্য লিখতে গিয়ে লেখাটা কেমন যেন নিরামিষ নিরামিষ হয়ে যাচ্ছে। তাই পাগল সংক্রান্ত একটা অতীব ছোট জোকস হয়ে যাক। এক পাগলকে জিজ্ঞাসা করা হলো-‘আচ্ছা, তোমার কাপড় চোপড় কে ধোয়?’ পাগল মুখ তুলে তাকালো। তারপর একটু হেসে বললো-‘এই নিজেও ধুই, আবার মাঝে মাঝে আমিও ধুই!’ সে যাই হোক। লাইফ শাইনিং মেথড বলতে আমি এতোদিন কেবল যৌন সমস্যা ও অন্যান্য সমস্যা সংক্রান্ত ওপেন চ্যালেঞ্জকেই বুঝতাম। ওই যে, রাস্তায় বের হলেই লিফলেট হাতে ধরিয়ে দেয় না....‘আপনার সমস্যাগুলো কী? কী? সংসারে অশান্তি? যৌন দুর্বলতা?.......’ বাকীটুক লেখার উপায় নেই। তো আমি লাইফ শাইনিং মেথড বলতে এরকমই একটি প্রতিষ্ঠানের সমাধান পদ্ধতিকে বুঝতাম। কিন্তু আমার সেই বন্ধুটির ভালোবাসা সংক্রান্ত শাইনিং মেথড শুনে আমারতো একেবারে আক্কেল গুড়–ম! ওর শাইনিং মেথডের সামনেতো ওই বেচারাদের মেথড একেবারে পানি ভাত! না পাঠক, এটাকে আবার যৌবন শক্তি শালসা ভেবে বসবেন না। এটি আসলে একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়া। আর এই মেথড অনুসারে ২০০৯ সালে এসে কারোরই প্রেমের েেত্র ধর্মপুত্তুর যুধিষ্ঠির হওয়া ঠিক না। প্রেমের েেত্র পুরোপুরি কমার্শিয়াল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসতে হবে। সে কারনে প্রেম করার আগে লোকসানের চেয়ে লাভের কথা আগে চিন্তা করতে হবে। সে অনুসারে প্রেম করতে হবে একসাথে ৪/৫ টা। আর প্রেমিকা নির্বাচনের েেত্র অবশ্যই বড়লোকের মেয়ে কিংবা চাকুরিজীবি মেয়েদেরকে প্রাধান্য দিতে হবে। সর্বোপরি চালাতে হবে পরীামূলক একাধিক ভালোবাসার প্রক্রিয়া। একাধিক ভালোবাসার মাঝ থেকে যেটা লাভজনক এবং সুইটেবল মনে হবে, সেটাকে চালিয়ে যেতে হবে। আর এর মধ্যে পেইনফুল কিছু হলেই ডিলিট। প্রেমিকাকে গিফট দেয়া, চায়নিজ খাওয়ানো আর মুভি দেখানোর পুরনো রীতি বদলে ফেলতে হবে। উল্টো প্রেমিকার প্রেমকে পুঁজি করে বাণিজ্য করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। কারন এতোদিন পর্যন্ত মেয়েরা এই কাজটি সাফল্যের সঙ্গে করে এসেছে। এবার পালা ছেলেদের। আর লাইফে চূড়ান্ত শাইনিং আনয়নের জন্য বড়লোকের কোন মেয়েকে পটিয়ে কাজী অফিস পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। অবশ্য সেই সাথে স্বাী যোগাড় সাপেে বিয়ের কাজটিও সেরে ফেলতে হবে। ব্যস, লাইফ শাইন করা আর কে ঠেকাবে কে? আমার সেই বন্ধুটির ভালোবাসা সংক্রান্ত এমন কাঠ-খোট্টা টাইপের দর্শন শুনে আমি প্রথমে একটু হতাশই হয়েছিলাম। কারন ভালোবাসা হল আবেগ আর ভালোলাগার বিষয়...কুছ খাট্টি আর কুছ মিট্টি। কিন্তু বন্ধুর অকাট্য যুক্তি আর আমার ভালোবাসা সংক্রান্ত অতীত অভিজ্ঞতা আমাকেও বদলে দিয়েছে। এখন আমিও লাইফ শাইনিং মেথডের একজন একান্ত অনুসারী। এক্সকিউজ মী, আপনার কাছে কী কোন বড়লোকের মেয়ের সন্ধান আছে?
পুনশ্চঃ
আমি প্রথমবারেই দাও মারতে চাই। কেননা পরে যদি না পাই! উল্টো বুঝিয়ে লাভ নাই। নিচের গল্পটা পড়লেই সব কীয়ার হয়ে যাবে! একজন আদর্শবাদী নেতা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন- ‘প্রিয় তরুণ বন্ধুরা পৃথিবীজুড়ে ফ্রি সেক্সের জোয়ার শুরু হয়েছে... হয়তো আমাদের দেশেও এই বিকৃত সংস্কৃতি হানা দিবে... একে আপনারা যে কোন মূল্যে প্রতিহত করবেন...’। শ্রোতাদের মধ্য থেকে এক তরুণ বলে উঠল- ‘একবার প্রতিহত করার পর যদি আর না আসে তখন কী হবে?’